নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাল- হেলাল ৭৩

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান

মোহাম্মদ আতীকুর রহমান

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ পবিত্র শবেবরাত

০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮


শাবান মাস হলো আরবী বছরের অষ্টম এবং রমযান মাসের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক মাস। এ মাসটি রমযানুল মুবারকের আগমনী বার্তা বহন করে মুসলিম উম্মাহর প্রাণে এক মহিমাপূর্ণ আনন্দের সঞ্চার করে। শাবান মাস †থকেই রমযান মাসের ফযিলত ও বরকত লাভের জন্য মহানবী (সা:)-এর সাথে সাহাবাগণও (রা:) নফল †রাযা, কুরআন তিলাওয়াত ও নানা ইবাদতের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি অতিশয় মর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে উদযাপিত হয়ে থাকে। এ রাতটি ‘শবেবরাত’ হিসেবেই অধিক পরিচিত।
‘শবে বারাআত’ এর পরিচয়
‘শব’ ফারসী শব্দ। এর অর্থ রাত। আর ‘বরাত’ অর্থ নিস্কৃতি বা মুক্তি। সুতরাং শবেবরাত অর্থ হচ্ছে নিস্কৃতি বা মুক্তির রাত। মহানবী (সা:) এ রাতটিকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ (শাবান মাসের মধ্য রজনী) হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাভাষী মুসলিমগণের নিকট রাতটি ভাগ্য রজনী হিসেবে সুপরিচিত।
আল-কুরআনে ‘শবেবরাত’
"শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি †তা এ কিতাব নাযিল করেছি এক মুবারক রজনীতে; আমি †তা সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার আদেশক্রমে, আমিতো রাসূল †প্ররণকারী” (সূরা দুখান, ৪৪ : ২-৫)।
শবেবরাতের পক্ষে †যসকল মনীষী কুরআনের এ আয়াতগুলো দলীল হিসেবে উল্লেখ করেন, তাদের দলীলটি যথাযথ বলে মনে হয় না। কারণ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ †নয়াটাই অধিক যুক্তিসঙ্গত। †কননা কুরআন মাজীদের দু’ জায়গায় স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভাষায় মহান আল্লাহ বলেছেন ঃ
১. “রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে” (সূরা বাকারা, ২:১৮৫)।
২. “নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে” (সূরা কদর, ৯৭:১)।
তাই বলা যায়, আলোচ্য আয়াতে মুবারক রজনী বলতে ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদরের রজনীই উদ্দেশ্য। শবেবরাত উদ্দেশ্য নয়।
হাদীস শরীফে ‘শবেবরাত’
১. হযরত আয়েশা (রা:) বলেন, এক রাতে আমি মহানবী (সা:)-†ক বিছানায় খুঁজে †পলাম না। তাই আমি তাঁর তালাশে †বর হলাম। আমি (মসজিদে নববীর পূর্ব পাশের) বাকী নামক কবরস্থানে তাঁকে আকাশের দিকে মাথা উ?ানো অবস্থায় †দখতে †পলাম। তিনি বললেন, †হ আয়েশা! তুমি কি ধারণা করছো †য, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:) †তামার উপর যুলুম করেছেন? আয়েশা (রা:) বলেন, আমি বললাম, আমি তদ্রƒপ ধারণা করিনি। তবে আমি †ভবেছিলাম, আপনি আপনার অন্য †কান স্ত্রীর ঘরে †গছেন। মহানবী (সা:) বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে প্রথম আকাশে আসেন। অতঃপর তিনি কালব †গাত্রের †মষপালের পশমসমূহের †চয়ে †বশী সংখ্যক †লাককে ক্ষমা করেন” (ইবনে মাজা, তিরমিযী)।

২. হযরত আলী (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন ১৫ই শাবানের রাত আসে তখন †তামরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করো এবং দিনে †রাযা রাখো। †কননা সূর্য অস্তমিত হবার পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর নিকটস্থ আকাশে আসেন। তারপর তিনি বলেন, আমার নিকট †কউ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কী? আমি তাকে ক্ষমা করে †দব। †কউ জীবিকার প্রার্থী আছে কী? আমি তাকে জীবিকা †দব। †কান †রাগাগ্রস্ত আছে কী? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। ফজর হবার পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তিনি বলতে থাকেন” (ইবনে মাজা)।

৩. হযরত আবূ মূসা আল আশআরী (রা:) †থকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “আল্লাহ ১৫ শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেনএবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত অন্য সকলকে ক্ষমা করে †দন”(ইবনে মাযা)।

আলোচ্য হাদীসত্রয় পর্যালোচনা করে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় †য, মহান আল্লাহ এ রাতে প্রথম আকাশে আগমন করে ঐ সমস্ত পাপীদের ক্ষমা করেন যারা এ রাতে জাগ্রত †থকে ইবাদত করেন। ক্ষমা প্রত্যাশীদের মধ্য †থকে মুশরিক এবং হিংসুকদের বাদ †দয়া হলেও মাজাহেরে হক কিতাবের ভাষ্য অনুযায়ী আরও ১০ †শ্রণির †লাক আন্তরিক তওবা ব্যতীত ক্ষমার আওতায় আসবে না। তারা হলো- ১. মাতা পিতার অবাধ্যচারী ২. আত্মীয়তার সম্পর্ক কর্তনকারী ৩. মদ পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি ৪. †যনাকারী ৫. যুলুম করে কর আদায়কারী ৬. যাদুকর ৭. গণক ৮. বাদ্যযন্ত্র বাদক ৯. ভবিষ্যত বক্তা ১০. পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরিধানকারী।

হাদীসত্রয় সম্পর্কে কিছু কথা

উপরোক্ত হাদীসত্রয়কে †কউ †কউ যঈফ হিসেবে সাব্যস্ত করে বলেন †য, যঈফ হাদীস অনুযায়ী আমল করা যাবে না। সুতরাং এ রাতের ইবাদত ভিত্তিহীন।
যারা এ ধরনের কথা বলেন তাদেরকে অর্বাচীন বলে মনে হয়। হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমামগণের †কউই এ ধরনের কথা বলেননি। ইমাম আবূ হানীফা (র:) বলেছেন, আমাদের ইজতিহাদভিত্তিক মতামতের বিপরীতে †তামরা যদি একটি যঈফ হাদীসও পাও তবে আমাদের মত পরিহার করে যঈফ হাদীস গ্রহণ করবে।
হাদীস শাস্ত্রের মূল নীতি অনুযায়ী দুর্বল হাদীসের সমর্থনে যদি সহীহ হাদীস থাকে তবে উক্ত দুর্বল হাদীস †মাতাবেক আমল করা যাবে। শবেবরাতের সমর্থক হাদীস সমূহের সমর্থনে নিুোক্ত সহীহ হাদীস বিদ্যমান।
“মহান আল্লাহ প্রতি রাতের †শষভাগে নিকটবর্তী আকাশে এসে বান্দাদের সম্বোধন করে বলেন, †ক আছো আমার নিকট প্রার্থনাকারী, আমি তার প্রার্থনা কবুল করবো। †ক আছো আমার নিকট কিছু চাওয়ার আমি তাকে তা দান করবো। †ক আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করবো। (বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)।
করণীয় কার্যাবলী সাধ্য অনুযায়ী ইবাদাত বন্দেগী করা
ক্স দান খয়রাতের হাত প্রসারিত করা
ক্স অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা
ক্স নফল †রাযা রাখা
ক্স নিজের কৃত গুনাহ স্মরণ করে অধিক পরিমাণে তওবা করা
ক্স মাতা পিতার প্রতি সর্বদা দয়ার হাত প্রসারিত থাকবে এ প্রতিশ্র“তি করে তাদের প্রতি যতœবান হওয়া
ক্স আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজার রাখা
ক্স মদ, সুদ, ঘুষ পরিহার করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জনে সচেষ্ট হওয়া
ক্স †যনা-ব্যভিচার পরিহার করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজ পরিহার করা
ক্স অন্যায়ভাবে অর্থ আদায় এবং আত্মসাৎ না করা
ক্স গণকের কাছে ভাগ্যলিপি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য যাওয়াকে চিরতরে বন্ধ করা
ক্স অশালীন গান, বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন অনুষ্?ান বর্জনের মানসিকতা তৈরী করা
ক্স ভবিষ্যত সম্পর্কে মন্তব্য করা বা তা বিশ্বাস করা পরিহার করা
ক্স পুরুষের টাখনুর নিচে †পাশাক পরিধান বর্জন করা
ক্স গীবত, †চাগলখুরি, পরনিন্দা ইত্যাদি পরিহার করা।
এক কথায়, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হবার জন্য যা যা গুণ অর্জন প্রয়োজন শবে বারাতের ইবাদাত বন্দেগী করার সাথে সাথে †স গুণগুলো অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা।
বর্জনীয় কার্যাবলী
শবেবরাত একটি ফযিলাতপূর্ণ রজনী। এ রাতে শরীয়তের নির্দেশ †মাতাবেক ইবাদত করলে বিপুল †নকী হয়। কিন্তু কিছু ভাগ্যাহত মুসলিম এ রাতে এমন কতকগুলো শরীয়ত বিরোধী কাজ করেন, যার ফলে গুনাহ মাফ হবার পরিবর্তে আরও নতুন গুনাহ †যাগ হয়। †যমন-
ক্স সারারাত ইবাদাত করে ফজর নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়া
ক্স আতশবাজী ফুটানো
ক্স হালুয়া রুটি বিতরণ
ক্স সরকারী-†বসরকারী ভবনে আলোকসজ্জা করা
ক্স কবরস্থানগুলোতে আগরবাতি, †মামবাতি জ্বালানো
ক্স মৃত ব্যক্তিদের রুহ নিজেদের বাসস্থানে আসে এ ধারণা বর্জন করা
ক্স এ রাতে ঘুমানোকে অন্যায় মনে করা
ক্স কমপক্ষে ১০০ রাকাআত নামায পড়তেই হবে এ ধরনের ধারণা পরিহার করা
ক্স দলবেধে কবরস্থানে যাওয়াকে আবশ্যক মনে করা ইত্যাদি।
†শষ কথা
শবেবরাত আসে আবার চলে যায়। অনেক মুসলিম এ রাতটিকে নাজাত পাবার উছিলা মনে করে সারা রাত ইবাদাত করে থাকেন। তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে ফজরের নামায কাযা না হয় এবং ইসলাম বিদ্বেষী কাজ করে ছাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ কামাই না হয়। মনে রাখতে হবে, আনুষ্?ানসর্বস্ব প্রাণহীন ইবাদাতের †কান মূল্য ইসলামে †নই। ইসলামের রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনকা?ামো।। তাই ভাগ্য উন্নয়ন এবং নাজাত লাভের জন্য দুই এক রাত †জগে ইবাদত করা বা তওবা ইস্তেগফার করাই যথেষ্ট নয়; বরং সামগ্রিক জীবনকেই কুরআন-সুন্নাহ মুতাবেক গ?িত ও পরিচালিত করতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.