নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অাল- হেলাল ৭৩

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান

মোহাম্মদ আতীকুর রহমান

ড.েমাহাম্মদ অাতীকু রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটাধিকার

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১২

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হওয়ায় ভোট ও নির্বাচন ইসলামিক বিষয় এবং ইবাদাতের অংশ। ভোট প্রদান দেশের প্রতিটি যোগ্য নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। ভোট ব্যক্তির নিজস্ব মতামত কিংবা জনমত প্রতিফলনের একটি গণতান্ত্রিক মাধ্যম ও পদ্ধতিবিশেষ। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ভোটের প্রয়োজন হয়। রাজনীতিতে ভোট এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একজন প্রার্থী গণতান্ত্রিক পন্থায় কোনো না কোনো পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
ভোট কী?
ভোট প্রধানত মতামত প্রকাশের একটি গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক মাধ্যম বা পদ্ধতি। কোনো সভা কিংবা নির্বাচনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ব্যক্তির নিজস্ব মত কিংবা জনমত যাচাইয়ের প্রয়োজনে ভোট একটি বহুল প্রচলিত মাধ্যম। ভিন্নমতে এটাকে জনমতের প্রতিফলনও বলা চলে।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটের ৪টি প্রয়োগিক অর্থ রয়েছে : ১. সাক্ষ্য দেওয়া; ২. প্রতিনিধি নিযুক্ত করা ৩. সুপারিশ করা; ৪. আমানত রাখা।
সাক্ষ্য : দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে নিজের সমর্থন ও সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা দলকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত করা হয়। প্রার্থীকে তার প্রার্থিত পদে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো, ভোটার এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এই প্রার্থী উক্ত পদের জন্য সার্বিক বিবেচনায় সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। বাস্তবে যদি তিনি উক্ত পদের জন্য যোগ্য না হন, তাহলে ভোটার মিথ্যা সাক্ষ্যের দোষে দোষী হবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সত্য ও ইনসাফের সাথে সাক্ষ্যদান ওয়াজিব এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হারাম। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়” (সূরা নিসা : ১৩৫)। আল্লাহ আরো বলেন, “(রহমানের বান্দা তারাই) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সাথে তা পরিহার করে চলে” (সূরা ফুরকান : ৭২)।
সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় হযরত আবূবকর (রা) বলেন যে, মহানবী (সা:) একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন তিনবার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহের মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব? সাহাবীগণ হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্যতা (এ দু’টির কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহ। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)।
উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস থেকে দু’টি বিষয় স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়-
ক) সর্বাবস্থায় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে
খ) সত্য সাক্ষ্য এবং কথা বলতে পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।
প্রতিনিধি : সমাজ কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্য নেতা নির্বাচন প্রত্যেক পরিণত নাগরিকের সামাজিক অধিকার ও জাতিয় দায়িত্ব। দলীয় সঙ্কীর্ণতা, স্বজনপ্রীতি, বৈষয়িক ব্যক্তি স্বার্থের লোভ বা কোনোরূপ প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার না করে সৎ, যোগ্য ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করার মাধ্যমে এ অধিকার প্রয়োগ ও পালন করতে হবে। কিন্তু এর বদলে অর্থ, প্রতাপ বা বংশীয় সম্পর্কে প্রভাবিত হয়ে কেউ যদি অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেন, তাহলে হাদীসের ভাষায় তিনি খিয়ানতকারী (অপব্যবহারকারী) সাব্যস্ত হবেন। মহানবী (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলিমদের পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্বে নিযুক্ত হয়, তারপর সে তাদের উপর এমন কাউকে কোনো কাজে কর্মকর্তা নিযুক্ত করে যার চেয়ে চরিত্রে ও কুরআন হাদীসের জ্ঞানে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তি আছে বলে সে জানে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা:) এবং মুসলিম সমাজের অধিকারের খেয়ানত করল” (তাবারানী)। তাই কোনো অযোগ্য লোককে প্রতিনিধিত্বের জন্য ভোট প্রদান করা এবং তাকে জয়যুক্ত করা হলে পুরো জাতির হক নষ্ট করার গুনাহ হবে।
সুপারিশ : ভোটদাতা প্রতিনিধি নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কাউকে ভোট প্রদান করার অর্থ হলো তিনি এ্ই মর্মে সুপারিশ করছেন যে, ঐ প্রার্থীকে প্রতিনিধি মনোনয়ন করা হোক। সুতরাং শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট গ্রদান করা কোনো পদের জন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করার নামান্তর।
সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হলে তিনি যেসকল ভালো কাজ করবেন ভোটদাতা তার উত্তম প্রতিদান লাভ করবেন। পক্ষান্তরে ঐ প্রার্থী যদি অযোগ্য হয়ে থাকেন এবং ভোটারের ভোটের কারণে জয়ী হন, অত:পর কোনো অন্যায় কাজ করেন তাহলে ভোটারও পরোক্ষভাবে গোনাহে শরীক থাকবেন। আল্লাহ বলেন, কেউ কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোনো মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে” (সূরা নিসা : ৮৫)।
আমানত : ভোট ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। সৎ, যোগ্য ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিকে ভোট দিলে এ আমানতের সদ্ব্যবহার করা হয়, আর অযোগ্য ও ধর্মবিমুখ ব্যক্তিকে ভোট দিলে আমানতের খিয়ানত করা হয়। অধিকন্তু ভোটের আমানতের খিয়ানত ব্যক্তিগত খিয়ানতের চেয়ে গুরুতর, কেননা এর ফলে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে আমানত যথাস্থানে প্রত্যার্পণ ওয়াজিব এবং এর অন্যথা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে” (সূরা নিসা : ৫৮)। হাদীস শরীফে এসেছে, “কিছু সাহাবা (রা:) রাসূলকে (সা:) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! কেয়ামত কখন হবে? রাসূল (সা:) বললেন, যখন আমানতের খিয়ানত হবে। সাহাবারা আবার প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা:) আমানতের খিয়ানত কিভাবে হয়? রাসূল (সা:) বললেন, যখন অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করবে”। মহানবী (সা:) অন্যত্র অত্যন্ত কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, “যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার মধ্যে ইমান নেই এবং যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার তাগিদ নেই, তার ধর্ম নেই” (বায়হাকি)।
কাকে ভোট দেব :
যারা ভোট প্রয়োগ করেন তাদেরকে ভোটার বলা হয়। সে হিসেবে বলা চলে, জনপ্রতিনিধিদের নিয়োগকর্তা ভোটাররা। ভোট দেওয়া শুধু আবেগ বা দলীয় বিষয় নয় বরং এটি একটি ধর্মীয় বিষয়। সুতরাং জেনে-শুনে অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ইসলামসম্মত নয়। চিন্তাভাবনা করে †ভাট দিতে হবে। দলীয় আবেগ, আত্মীয় বা প্রতিবেশি হওয়া †ভাট পাওয়ার †যাগ্যতার মাপকা?ি হতে পারে না। মূলত: ভোট পাওয়ার যোগ্য ওই ব্যক্তিই হবেন, যিনি ইসলামকে ভালবাসবেন। যার দ্বারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না, সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে না, সংখ্যালঘুদের ক্ষতিসাধন হবে না। ভোট তাকেই দেওয়া উচিত যিনি দেশকে ভালবেসে দেশের উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, যিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিবেন না, যিনি সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবেন, যিনি সমাজকে ইয়াবা, মাদকমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন। সর্বোপরি যে প্রার্থী সৎ, যোগ্য এবং ইসলাম ও দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক যোগ্য বিবেচিত হবেন তাঁকেই ভোট প্রদানের মাধ্যমে জয়ী করা উচিত।
নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত :
নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ব্যক্তির সততা, যোগ্যতা, আল্লাহভীতি, ইমান, জ্ঞান, আমল, চারিত্রিক গুণাবলীকে প্রাধান্য দিয়েছে ইসলাম। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া যেমন প্রয়োজন, প্রার্থী বা নির্বাচিত ব্যক্তিও তেমন সৎ, যোগ্য, জ্ঞানী, চরিত্রবান, আল্লাহভীরু, আমানতদার, ন্যায়পরায়ণ, দেশপ্রেমিক, মানবদরদী ও দায়িত্বানুভূতি সম্পন্ন হওয়া তার চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন। তাই জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিতে হবে। যারা ভোটারদের মিথ্যা কথা বলে লোভ-লালসা দিয়ে প্রলুব্ধ করে, নির্বাচনী বৈতারণী পার হতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়, অন্যায় ও অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত হয়, ভোট ক্রয়-বিক্রয় করে, জাল ভোট প্রদান করে তাদের বর্জন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ভোটের বিষয়টি শুধু পার্থিব নয়, পরকালেও এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। মহানবী (সা:) বলেছেন, “প্রত্যেক কাজের সফলতা, ব্যর্থতা, সুফল ও কুফল ব্যক্তির নিয়তের উপর নির্ভর করে” (সহীহ বুখারী)। সুতরাং প্রার্থী যদি নির্বাচিত হয়ে দেশ, ধর্ম ও মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং সওয়াবের কাজ করেন শুধু তখনই তিনি সে সম্মান ও মর্যাদা পাবেন। যারা ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন তারাও অনুরূপ সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। কারণ ভোটারদের কারণেই তিনি এমন পূণ্যময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, “যারা ভালো বা মন্দ কাজ করে বা করার ক্ষমতা ও সুযোগ করে দেয় তারা ঐ কর্ম সম্পাদনকারীর সমান সওয়াব বা গুনাহ অর্জন করবে”।
শেষ কথা :
চিন্তা চেতনার বাস্তবায়ন মানুষ দ্বারা হয় বলেই সে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। অসংখ্য ভোট প্রার্থীর মধ্যে আমাদের তাকেই জয়ী করা উচিত, যিনি কথা ও কাজে এক, যিনি দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসেন, যিনি ইসলামকে ভালবাসেন, সর্বোপরি যিনি তার নির্বাচনী এলাকার উন্নতির জন্য কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিবেন এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


ইসলাম রাজতন্ত্রের সময় এসেছে, আরব সাম্রাজ্য গড়েছে; গণতান্ত্রিক দেশ গড়েছে ইংরেজ ও ফরাসীরা; ইসলামে গনতন্ত্র, ভোট ভুট কিছুই থাকার কথা নয়, আপনি যোগ করছেন?

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.