নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতা এবং সমসাময়িক সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে গঠনমুলক লেখা লেখি ও মুক্ত আলোচনা

ডঃ এম এ আলী

সাধারণ পাঠক ও লেখক

ডঃ এম এ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরশ পাথর প্রাপ্তি: পর্ব-২ মুক্তিযুদ্ধের প্রাসঙ্গিক কিছু স্মৃতিচারণসহ বিলুপ্তপ্রায় দেশী প্রজাতির ধান, মরনের পথে নদ নদী, আর বিপন্ন শুশুক তথা গাঙ্গেয় ডলফিনের কান্না প্রসঙ্গ

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:১৯


প্রথম পর্বটি যারা পাঠ করেননি তাঁদের বুজার সুবিধার জন্য পরশ পাথর প্রাপ্তি :পর্ব-১ লিংক সহ ঘটনার শুরুটা সংক্ষেপ তুলে দেয়া হল ।

জীবনঘাতি করুনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের কেবিনে অসহায়ের মত নাকে মুখে অক্সিজেনের মুখোষ পরে অন্তিমের পানে ধাবিত হওয়ার সময় মনে হত, যা হয় তা হবে, হায়াত না থাকলে মরেইতো যাব, তবে ....... এ যাত্রায় যদি বেচে যাই তাহলে পরশ পাথর প্রাপ্তির কাহিনীটা জীবনের শেষ ট্রেনটা ধরার আগে সকলের কাছে বলেই যাব । সে ভাবনা হতেই লেখাটির অবতারনা।

১ম পর্বে বলা হয়েছে পরশ পাথর প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু সেই বাল্যকালে স্কুলের সৃজনী পরীক্ষার জন্য ছোট একটি মাটির ঘর বানাতে গিয়ে। প্রথম পর্বে কাহিনীটি বলতে গিয়ে পুরাটাই কেটে যায় লেখাটিতে প্রসঙ্গক্রমে চলে আসা দেশের বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যমন্ডিত মাটির ঘরকে পুনরুজ্জিবিত করার কথামালায় ।এর মাঝে একটি পোষ্ট দিতে হয়েছিল মাটির ঘর প্রসঙ্গে এ ব্লগের অনেক গুণী ব্লগারের মুল্যবান কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হরাইজনটাল বনাম ভার্টিকেল গৃহনির্মান প্রসঙ্গ নিয়ে । এখন পরশ পাথর প্রাপ্তি ১ম পর্বের সুচনা বক্তব্যের রেশ ধরে ২য় পর্বের কাহিনী বলা হলো শুরু।

স্কুলের সৃজনী পরীক্ষার জন্য সুন্দর মাটির ঘর তৈরী করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতে পারব বলে বদ্দমুল ধারনা হল । তবে সমস্যা দেখা দিল মাটির ঘর তৈরী উপযোগী মুল উপাদান কাদামাটি তৈরী করতে প্রায় ১৫দিনের মত সময় লেগে যাবে। এদিকে স্কুলের সৃজনী পরিক্ষার জন্য হাতে সময় আছে মাত্র ৭ দিন। তাই অল্প সময়ের মধ্যে বিকল্প ভাবে কি করে উপযুক্ত কাদামাটি পাওয়া যায় সে ভাবনায় পেয়ে বসে। রাতে বিছানায় শুয়ে ভাবতে গিয়ে মনে পরে যায় আমাদের নদীর তীরে পানি আর মাটি যেখানে মিলেছে সেখানে সহজেই উপযুক্ত মানের কাদামাটি পাওয়া যাবে। তাই ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠে সকাল সকাল সেখান থেকে কাদামাটি সংগ্রহ করার ভাবনা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম ।

[এখানে বলে রাখি রাত জেগে ছোটকালের কাদামাটি সংগ্রহের কথা জীবনের এ লগ্নে যখন লিখছি তখন নীজের অজান্তেই ঘটনা সংস্লিষ্ট স্থান কালের কিছু প্রাসঙ্গিক ইতিহাস, গৌরবগাথা ও বর্তমান দুর্দশার দু চারটি তথ্য চিত্র লেখাটিতে অনুপ্রবেশ করছে। সে সমস্ত অনুপ্রবেশকৃত তথ্য চিত্র ও কাহিনীগুলি যথাস্থানে বলার কারণে মুল কাহিনীতে মাঝে মাঝে কিছুটা যতি টেনে বিরোক্তির উদ্রেক ঘটানোর জন্য দু:খিত ]

ভোরে ঘুম থেকে জেগে নীমের ডালের মাজন দিয়ে দাঁত মেজে অজু করে দাদীর কাছে বসে সকালের কোরান পাঠের আসর শেষ করে নাস্তা পানি খেয়ে সকলের অগোচরে কোদাল একটি কাধে নিয়ে নদীর ঘাটে যাওয়ার জন্য ঘর হতে বেরিয়ে যাই । উল্লেখ্য আমাদের বাড়ীর অবস্থান নদীর তীর ঘেষা ছোট একটি টিলার উপরে, যা নদী লেভেল হতে প্রায় শখানেক ফুট উপরে। বাড়ী হতে নদীর ঘাট পর্যন্ত ৭/৮ মিনিটের হাটা পথে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে । প্রথম দুটি ধাপে পারিবারিক ফল ফলাদির বাগান ও শেষ দুটি ধাপে ফসলের মাঠ, মাঠ পেরিয়ে নদী । প্রথম ধাপের শেষ ধাপে রয়েছে খেজুর ,শুপারী আর কলা গাছের বাগান । এখানেই ছিল বাল্যকালের সাথীদের সাথে খেলার জন্য ছোট একটি মাঠ । দাড়িয়াবান্দা, গোল্লা ছুট,হা ডু ডু ,কানা মাছি, ছাল কুত কুত, কাঁচা জাম্বুরা (বাতাবি লেবু) দিয়ে ফুটবল, ডাংগুলি প্রভৃতি কত জাতের খেলাই যে খেলতাম সেখানে তা ভাবলে মনে এখনো পুলক জাগে ।
ডাংগুলি যে খেলাটি এখন আর দেখা যায়না কোথাও

কাহিনীটি যেহেতু জীবনের এই ক্ষনে বসে লেখা সেহেতু এটা লিখতে গিয়ে স্মৃতির গহীনে থাকা আরো কিছু কথা মনে পড়ে যায় ।বাড়ী হতে নদীর ঘাটে যাওয়ার প্রথম দুই ধাপে ছিল দাদার হাতে গড়া বেশ বড় আম কাঠালের বাগান। মনে পরে দাদার মাথায় ছাতি মেলে ধরে দুজনে মিলে বাগানের পাশে ফসলের খেতের আলের পাশে আমের চাড়া লাগানোর কথা, দাদা বলতেন ছাতা মাথায় দিয়ে আম গাছ লাগালে সেটা নাকি বড় হয়ে ছাতার মত চারিদিকে ডাল পালা মেলে বড় হবে । এখন দেখা যায় দাদার কথাই ঠিক, প্রায় শতবর্ষী গাছগুলি ছাতার মত ডালা পালা মেলে বড় হয়েছে, ঘন পত্র পল্লবে ভরা ফলবান গাছের দিকে তাকালে সে কি প্রশান্তি।

স্মৃতিকথা সম্বলিত লেখাটি লিখার সময় এই বাগানটিকে ঘিরে থাকা ১৯৭১ সনে সংগঠিত দেশের মুক্তি যুদ্ধের সেই ভয়াল ও ঘটনাবহুল দিনগুলির কিছু স্মৃতিকথা নীজের অজান্তেই মানসপটে ভেসে উঠে, বিশেষ করে ১৯৭১ সনের এপ্রিল মাসের প্রথম দিককার কথা । সেসময় ভাওয়াল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস হতে একজন সুবেদার মেজরের নেতৃত্বে বের হয়ে আসা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একদল সাহসি সৈনিক ময়মনসিংহের উদ্দেশে (ময়মনসিংহ তখনো ছিল পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত শহর) যাত্রা করেন ।

মুক্তি যুদ্ধে যোগদানের জন্য ঈস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই বিদ্রোহী সেনাদল পাকবাহিনীর নজরদারী এড়িয়ে ভাওয়াল শালবনের ভিতর দিয়ে আকাবাঁকা বনপথ ধরে পায়ে হেটে অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমাদের গ্রামে এসে উপনিত হন। পথ শ্রান্ত সৈনিক দল আমাদের বাড়ী সংলগ্ন আম বাগানের ছায়া তলে যাত্রা বিরতি করেন । গ্রামবাসীরা বিপুল আনন্দে তাঁদের স্বাগত জানাই । দেশের মুক্তি যুদ্ধাদের প্রথম দিককার একটি প্রশিক্ষিত সিপাহী দলের নিরাপদ যাত্রা বিরতির নিমিত্ত ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এ স্থানটি তাদের খুবই পছন্দ হয়ে যায়, কারণ আম বাগানের ছায়া ঘেরা স্থানটির একদিক দিয়ে বয়ে গেছে নদী, অন্যদিকে রয়েছে রাইফেল ও হালকা মেশিনগানের রেঞ্জের ভিতরে থাকা রেল লাইন। আম বাগানের ছায়াতলে বসে হালকা জলপানির আপ্যায়নের পরে তাঁরা এলাকার গন্যমান্য লোকজন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সেখানে সাময়িক ক্যাম্প গাড়লেন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এমনকি গৃহবধুরাও তাদের আপ্যায়নের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। গাজীপুর কেন্টনমেন্টের এই দেশপ্রেমী সাহসী সৈনিকদের কথা ও স্থানীয় মানুষের সহযোগীতার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে যায় ভাউয়াল এলাকার গাজীর গীত এর কথায় । উল্লেখ্য শত শত বছর ধরে গাজীপুর জেলার অন্যতম বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো গাজীর গীত। মানুষের মুখে মুখে ঘুরে গাজীর গীত এর কথা মালা। গাজী কালুর বিরত্বের কথা জঙ্গলাকীর্ণ ভাউয়াল এলাকার সকলের কাছে ছিল পরিচিত । এ পোষ্টের জন্য প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় গাজীর গীত এর বিখ্যাত কটি লাইন তুলে দিলাম নীচে ।
গাজী কালু দু্ই ভাই আড়াঙ্গি উড়াইল
জংলায় যত বাঘ দৌঁড়ায়ে পালাইলো
একি বাঘ, নেকি বাঘ, চোখ পাকাইয়া চায়
সুন্দর বন্য বাঘটা বৈরাগী লইয়া যায়
গোয়ালার মায় কয় কোমর ভাঙ্গা বুড়া
বাঘ মারিতে লইয়া যাও দোয়ার বান্দার লরা।

ভাওয়াল বনে একসময় ছিল বাঘ, চিতাবাঘ, কালোচিতা বাঘ , হাতি, মেছোবাঘ, ময়ূরসহ নানা জীব বৈচিত্রের বাস । শালবনের বৈচিত্রময় রুপমাধুরী এখন আর নেই ।এর ভিতরে বাহিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, এর বুক চিরে বয়ে গেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইন, বনের পরিবেশ বিপন্নকারী ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে। যন্ত্র দানবের বিকট শব্দ , কালোধোয়া আর মানুষের বিচরণ , বসতি স্থাপন ও বনদস্যুদের ধাপুটে করালগ্রাসে দেশের মধ্যভাগের এই উপকারী বনাঞ্চলকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব শধু ভাউয়াল বনের ভিতরে ছোট্ট একটি ভাউয়াল উদ্যানের মধ্যে সিমীত করে এলাকার পুরা বনাঞ্চলটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার মহা কর্মযজ্ঞ রোধ করা এখন সময়ের দাবী। সকলের সামান্য একটু সচেতনতায় সুন্দর এই বনটিকে রক্ষা করা যায় ধংসের হাত হতে ।

আমাদের আমবাগানে ক্যম্পের মুক্তিযুদ্ধাদের বিরত্বের কথামালার ফাকে মনে পড়ে যায় ১৯৭১ সালে এই এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহনের কথা । দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সারির সেই বীর নেতৃবৃন্দের প্রতি জানাই শ্রদ্ধাবনত কৃতজ্ঞতা ।

পরম শ্রদ্ধাভরে শ্মরণ করি ঐ আম্রবাগানে সৃষ্ট ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য শপথ গ্রহণের স্থানে নির্মিত মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স আর তার আঙ্গিনায় একটি বড় মানচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা মুক্তিযুদ্ধের ১১ টি সেক্টরের বীর মুক্তি যোদ্ধাদের বিরত্বের কথা ।তাদের বিরত্ব গাথা এমনি করেই ভাস্বর হয় থাকুক বাংলার প্রকৃতির বুকে ।

স্মরণকরি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স এর বাইরের অংশে ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ এর কথা।পুরা মুক্তিযুদ্ধ কালেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত বজ্রকন্ঠ নামে প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রতিদিন শুনতাম সেই ভাষনের অংশ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধিনতার সংগ্রাম “ভাইয়েরা আমার প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার কাছে যাই আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর” তার এই বর্জকন্ঠ আমাদের মাঝে উন্মাদনা জাগাত।

আরো স্মরণকরি সেখানে থাকা ২৫শে মার্চ বিভিষিকাময় কাল রাতে পাকিদের হত্যাযজ্ঞ শুরুর পরে রাজধানি ঢাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে গ্রামমুখী মানুষের কষ্টকর পথচলার কথা ।
পচিশে মার্চের পরে দেখেছি শত শত আবাল বৃদ্ধ জনতা কত কষ্ট করে পুটলা পুটলী নিয়ে রাজধানী ঢাকা শহর ছেড়ে এই বনপথ ধরে রেল লাইনের পাশ দিয়ে কংকটময় লতাপাতা ও নুরি পাথর মারিয়ে পথে হেটে চলেছে আবর্ণনীয় দু:খ দুর্দশাকে বয়ে নিয়ে ।তাদের পথচলার দু:খ দুর্দশার কথা এখনো মর্মে মর্মে উপলব্দি করি । পথমধ্যে একজন প্রসুতি মায়ের সন্তান প্রসব করার করুন কাহিনী সহ ঐসমস্ত মানুষদের কষ্টকর পথ চলার কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই আর এই জনপদে। কালের আবর্তে সেসকল ঘটনাবহুল কাহিনী ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে ।স্মরন করি তাদের অবর্ণনীয় দু:খ দুর্দশার কথা ।

তাই এই পর্বের লেখার সময় প্রসঙ্গক্রমে বৈদ্যনাথ তলার আমবাগানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্মৃতি কমপ্লেক্সটির তথ্যচিত্র মনের গহীনে উদিত হওয়ার সময় মনে হ’ল আমাদের এই আমবাগানে নাইবা নির্মিত হ’ল কোন স্মৃতি স্তম্ভ, তবে আমি কালির আঁচরে সামুর পাতায় রেখে যাইনা কেন দেশের মুক্তি যুদ্ধের প্রথম দিককার মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটনাবহুল কিছু স্মৃতি চিহ্ন । কিন্তু লিখে দেখতে পেলাম কাহিনী ও ঘটনা প্রবাহ এতই বড় হয়ে যাচ্ছে যে তা এখানে তুলে ধরা হলে পোষ্টের আকৃতি হবে বিশালাকার একটি পুস্তকের মত। তাই আমবাগানকে ঘিরে থাকা মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ নিয়ে পাক বাহিনীর সদর দপ্তরের নাকের ডগায় বসে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দু:সাহসী বিদ্রোহী সৈনিকদের কিছু সচিত্র ঘটনামুলক প্রতিরোধ যুদ্ধের কথামালা পরের পর্বে লেখার জন্য তুলে রাখা হলো। তবে এ মহুর্তে এখানে দু চারটি কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না কিছুতেই।

এখানে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন করায় আমাদের গ্রামের যুবকেরা বেজায় খুশী। ক্যাম্পে সৈনিকগন একটু গোসগাছ হওয়ার পরের দিনেই সুবেদার মেজর শুরু করলেন মুক্তি যুদ্ধে যোগদানে আগ্রহী যুবকদের জন্য প্রাথমিক প্রশিক্ষনের কাজ, তাঁকে সহায়তা করলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা ও সমাজের অন্যান্য সকল গুণী লোকজন। আমরা আগ্রহী যুবকেরা মাঠে জড়ো হয়ে হাফ পেন্ট পরে গেঞ্জি গায়ে সুবেদারের নেতৃত্বে শুরু করলাম লেফ্ট রাইট, এবাউট টার্ন, কুইক মার্চ, এবং হামাগুরী দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে চলার প্রশিক্ষন। গাজিপুর কিংবা ঢাকা কেন্টনমেন্ট হতে পাক পাকবাহিনী এই এসে পড়ল বলে গুজবের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ার কারণে এলাকার হাট বাজার বলতে গেলে ছিল বন্ধ। তবে হাট বাজার বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পের সৈনিকদের জন্য খাদ্য যোগানে কোন সমস্যা হয়নি । উল্লেখ্য সত্তর সনের শেষ দিকে আমাদের এলাকায় পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে সেচ যন্ত্রের প্রচলন শুরু হওয়ার ফলে প্রথমবারের মত উচ্চ ফলনশীল ইরি ধানের চাষাবাদ শুরু হয়। International Rice Research Institute কতৃক উদ্ভাবিত হয়েছিল বলে এই ধানের নাম ছিল IRRI । মুক্তিযুদ্ধ শুরুর বছরেই নতুন ইরি ধানের আবাদ ঘরে উঠায় এলাকার অনেকের মত আমাদের গোলাঘর ভর্তী ছিল ধানে আর ধানে, দাদা আর বাবাতো বেজায় খুশী ইরি ধানের ফলন দেখে।

ইরি ধান চাষাবাদের আগে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকার খবরে বলা হতো এটা নাকি একরে শত মন ফলন দিবে। দেশী জাতের ধান যেখানে একরে ফলন দেয় ৩০ হতে ৪০ মন সেখানে ইরি ধানের ফলন হয়েছে তার দ্বিগুণেরো বেশী । তবে মুসকিল হল এই ধানের চাল হতো খুবই মোটা এবং ভাতও হতো বেশ শক্ত। ভাত খাওয়ার সময় ভাতকে দুই অঙ্গুলের ভিতরে রেখে একটু হালকা চাপ দিলে ফুস করে ছুটে গিয়ে লেগে যেতো একসঙ্গে খেতে বসা কারো কারো চোখে মুখে কপালে, কেও হতো বিরক্ত, কেও বা দিত হেসে। ইরি ধানের চালের ভাত থেতেও ছিল বিস্বাদ। মিহি আমন ধানের চাল যথা লতা শাইল ,নাজির শাইল, ঝিংগাশাইল প্রভৃতি ধানের চালের ভাত খেয়ে অভস্থ গ্রামের বয়স্করা কাঁদত আর বলত আয়ুব খান এটা কি নামাইছে দেশে, আল্লাহ এতদিন বুজি বাঁচায়ে রাখছে এই মোটা শক্ত চাওলের ভাত খাওয়ার তরে। ইরি ধানের মোটা চালের শক্ত ভাত খাওয়া রপ্ত করতে আমাদের বেশ ক বছর লেগে যায় । স্বাধিনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা ভার্সিটির রেসিডেনসিয়াল হলে বসবাসকারি ছাত্র ছাত্রীদের হযতবা মনে আছে সেসময় হলের ডাইনিং রুমে ‘পি এল ৪৮০’ অধীনে আমিরিকান সাহায্য হিসাবে পাওয়া রেশনের মোটা চালের বেশ শক্ত ভাত পরিবেশন করা হতো ।

এখানে উল্লেখ্য ১৯৭৪ সালের দূর্ভিক্ষের অপর নাম ছিল ‘পি এল ৪৮০’ । এই পি এল ৪৮০ ( Public Law 480)যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক খাদ্য সহায়তা সম্পর্কিত একটি আইন । এটা শান্তির জন্য খাদ্য বা Food for Peace হিসাবেও বহুল পরিচিত । এই আইনের আওতায় বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধুপ্রতিম উন্নয়নশীল এবং দরিদ্র দেশসমুহের কাছে স্বল্পমুল্যে কৃষিজাতপন্য বিক্রয় করে । মার্কিন খাদ্য সাহায্য আইন ‘পিএল ৪৮০’ অনুসারে যে দেশ কিউবার সঙ্গে বানিজ্য করছে ,সে দেশ খাদ্য সাহায্যের জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন নয় ।কিউবার নিকট পাটজাত পন্য বিত্রয় করার দায়ে ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই আইন ব্যবহার করেই বাংলাদেশের ক্রয়কৃত খাদ্য চালান বাতিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল অসংখ্য বাঙ্গালীকে।)
ঢাকা ভার্সিটির ডাইনিং হলে খাবার মেনু ছিল লম্বা ঝুলের সাথে এক টুকরা মাছ/মাংসের ছোট এক বাটি কারী, আর থাকত পাইন্না মুসুরীর ডাইলের সাথে যত পার খাও রেশনের মোটা চালের ভাত । খাওয়ার সময় সেই ভাতেও দুই আংগুলের চাপ পড়লে তা ফুস করে ছুটে গিয়ে কারো নাকে, মুখে, ড্রেসে লেগে গেলে বিশেষ করে মাস্তান টাইপের কারো গায়ে লেগে গেলে মাঝে মাঝে ঘটে যেতো মহা বিপত্তি ।

আমরা সকলেই জানি এ দেশে এক সময় কয়েক হাজার দেশি জাতের ধান আবাদ করা হতো। ১৯১১ সালে ১৮ হাজার জাতের ধানের একটি রেকর্ড আছে। ১৯৮৪ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে করা একটি জরিপে ১২ হাজার ৪৮৭ জাতের হিসাব পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০১১ সালের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে আট হাজার জাতের ধান আছে সুত্র Click This Link । বিশাল সংখ্যক ধানের জাত আমাদের কৃষকরাই উদ্ভাবন করেছেন শত শত বছর ধরে। বয়স্ক গুরুজনেরা বলাবলি করতেন এত দেশি জাতের ধান থাকতে কেন সরকার বিদেশি জাতের ধানের বীজ আনল দেশে , আর কি একটা বিশ্রি নাম দিয়েছে ইরি । অথচ আমাদের দেশি ধানের নাম কতইনা সুন্দর আর অর্থবহ । ধানের নামের বিষয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কতই না নান্দনিকতা বোধ ছিল । কোনো কোনো জাতের ধানের নাম এমনই ছিল যে, নামেই তার গুণের প্রকাশ, যেমন রাধুনী পাগল । স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়, যে একবার খায় সে আবার এই ধানের চালের ভাত খাওয়ার জন্য হয় পাগল ।

নাম দিয়ে কৃষক চিনে নিত তার আকাঙ্খার ধানজাতটিকে। পরম যত্নে বুনে দিত এসব বীজ মাঠে। আবার ঠিকঠাক পরের বছর মাঠে বুনে দেবার জন্য জাতটির বীজকে আলাদা করে কৃষকগিন্নী সংরক্ষণ করত নিজস্ব পদ্ধতিতে। জাতে জাতে ধানের বীজ সঠিকভাবে সংরক্ষনে কিষানীই পালন করত মুল ভুমিকা।
দেশি জাতের ধানের নামকরণের বৈচিত্র্য নিয়ে ভাবলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। ফুলের নাম, ফলের নাম, নানা ঋতুর নাম, বস্তুর নাম, মাছের নাম, সবজির নাম , পশুর নাম , পাখির নাম ,স্থানের নাম , নদীর নামও বাদ যায়নি ধানের জাতের নামকরণে । পছন্দের ধানকে কত যে আদুরে নাম দিয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষরা তা ভাবলে অবাক হতে হয়। একালে এসেও ধানের কথা ঘুরে ফিরে আমাদের সাহিত্যেও এসেছে নানাভাবে, নানা প্রসঙ্গে। কবি ফররুখ আহমেদ ধানের বিচিত্র সব জাতের মহিমায় এতটাই বিমুগ্ধ ছিলেন যে, তাঁর একটি কবিতার নামই ছিল ‘ধানের কবিতা’। কবিতাটির প্রথম আট লাইন হলো:
কুমারী, কনকতারা, সূর্যমুখী, হাসিকলমী আর
আটলাই, পাশলাই ধান এ বাংলার মাঠে মাঠে।
আউষ ধানের স্বপ্নে কিষাণের তপ্ত দিন কাটে;
আমনের বন্যা আনে ফসলের সম্পূর্ণ জোয়ার।
শোকর গোজারী ক’রে তারপর দরবারে খোদার
গোলায় তোলে সে ধান-রূপসা’ল তিলক কাচারী,
বালাম, ক্ষীরাইজালি, দুধসর-মাঠের ঝিয়ারী
কৃষাণ পল্লীতে আনে পরিপূর্ণ সুখের সম্ভার।


হাজার হাজার দেশি ধানের জাত আজ বিদায় নিয়েছে কৃষকের মাঠ থেকে। এদের অনেকেই বিলুপ্ত হয়েছে চিরদিনের তরে । অনেকগুলিকে সংরক্ষণ করা হয়েছে জিন ব্যাংকের অন্ধকার ঘরে । আমাদের মন থেকেও মুছে গেছে অনেক ধানের নাম। দিনে দিনে মুছে যাবে এসব বাহারি ধানের নাম। দিনাজপুরের কাটারীভোগ আআর বরিশালের বিখ্যাত বালাম তো এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।হারিয়ে যাচ্ছে সুগন্ধিকলিজিরা ধান

এ কথা ভাবতে মন কিছুতেই সায় দেয় না বটে কিন্তু বাস্তবতা তো আমাদের সে দিকেই নিয়ে যাচ্ছ। এখন বাংলাদেশের গবেষনাগার হতেই ধানের নাম দেয়া হচ্ছে নম্বর ধরে যথা বিরি-১, বিরি-২, বিরি-৩ ,বিরি-৪ ইত্যাকারে । অথচ জিন ব্যাংকে যাদের সংরক্ষণ করা হয়েছে এদের জিন আমাদের আধুনিক উচ্চ ফলনশল জাতের ধানের নামের সাথে সংযোজন করে দিয়ে আদি নামেই তাদেরকে সম্বোধন করা যেতে পারে । মাঠ থেকে হারালেও গবেষণার প্রয়োজনে দেশিজাতের ধানগুলি যেন একেবারে বিলুপ্ত না হয়ে যায় সেটিও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বাধিনতা প্রাপ্তিকে সর্বদিক দিয়েই গৌরবান্বিত করতে হবে ।

লেখার মধ্যে ধানের কথা এসে যাওয়ায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে পরশ পাথর প্রাপ্তির মুল কাহিনী বলার কথায়।কি আর করা বিষয়টির গুরুত্বওতো একেবারে কম না ।
যাহোক, এবার শুরু করা যাক পুর্ব কথায়, নদীতে নেমে যাওয়ার শেষ দুই ধাপে ছিল ফসলের ক্ষেত । এই দুই ধাপ বর্ষার সময় জোয়ারের পানিতে যেত ভরে। বর্ষাকাল শেষ হলে জলের ধারা বইত শুধু মুল নদীতে । আর নদী তীরের জমিতে হতো শর্ষের চাষ । জোয়ারের সময় ক্ষেতে জমা পলিমাটি একটু শুকিয়ে যাওয়ার পরে জমিতে পরত নাঙ্গলের আচর। সে সময় উঠে আসত ছোট বড় অনেক ঢেলা ।পরশ পাথর প্রাপ্তির সাথে এই সব ঢেলার একটি গভীর সংযোগ আছে বলেই এত কথা বলা । নদীতে আমাদের ঘাট হতে মাত্র অর্ধ কিলোমিটর উজানে ছিল ত্রিমোহনা। সেখানে ভালুকার দিক হতে ক্ষিরো নদী ও ত্রীশালের দিক হতে ব্রম্মপুত্রের শাখা নদী সুতিয়া এসে একসাথে মিলিত হয়ে সুতিয়া নদী নাম ধারণ করে আরো মাইল তিনেক বয়ে বরমীর কাছে গিয়ে মিলিত হয়েছে শিতলক্ষার সাথে । সে সময় নদীটি ছিল বেশ খরস্রোতা ( বর্ষাকালে )এবং যৌবনা । নদীতে হতো জোয়ার ভাটা । জোয়ারের সময় নদীর পানি প্রায় ৩/৪ ফুট স্ফীত হয়ে ডালিমের রসের মত টলমল করত । নদীতে চলত পালতোলা নৌকা ,হাজারমনি নৌকায় পাল তুলে গুন টেনে পাট ও ভাওয়াল শালবনের কাঠ বোজাই করে পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদ ও শীতলক্ষা নদী দিয়ে ভেসে যেতো দুর দুরান্তের গ্রামে গঞ্জে।

অনেক সময় দেখতাম বাঁশের জোয়ালে গুন বেধে ঘাড়ের কাছে কাধে চেপে গুন টেনে হাজার মনি নৌকা বয়ে নেয়া হতো । সে যে কি কষ্টকর কাজ তা ভাবলেও শিহরিয়া উঠতে হয় । ছোটকালে আমাদের নদী তীর দিয়ে মাঝিদের গুন টেনে যাওয়ার কালে মাঝির কাছ হতে চেয়ে নিয়ে অল্প কিছু দুর গুন টেনে দেখেছি গুন টানার কষ্ট কাকে বলে । খালি পায়ে এবরো থেবরো উচা নিচা পথে চলার সময় পঁচা শুকনো ঝিনুকের আচরে পায়ের পাতার কত জায়গা যে কেটে যেতো তা টের পাওয়া যেতো ঘরে ফিরে।
AA13 Guntana Naoka

এই গুন টানার কিছু কষ্টকর দিক নিয়ে অনেকেই সাজিয়েছেন সুন্দর কবিতা যেমনটি দেখা যায়
সোনালি দরজার ব্লগে থাকা রিতু জাহান Click This Link এর লেখা ‘গুন টানা মাঝি’ শীর্ষক কবিতাটিতে, কৃতজ্ঞতার সহিত কবিতাটি তুলে ধরছি এখানে ।
গুণ টানা মাঝি, নৌকার দিশা দিতে টেনে গেছে তার নাও।
মাঝির ঘাড়ের ঐ যে কালসিটে কালো দাগ, আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী।
নির্বাক যন্ত্রের মতো এগিয়ে গেছে সে,
খাড়া ঐ বিস্তৃত নদীর কিনার দিয়ে।
ঝড় আসে, বৃষ্টি আসে, মেঘ গর্জায় জোরেশোরে,
তবু খালি পায়ে তাঁর এ হাঁটা থামে না।
ভরা পূর্ণিমার চাঁদের সাথে হাঁটে সে,
নিশীথ রাতে চাঁদ বিহীন ঘোর অন্ধকারে,
নদীর পানির ছলাৎ শব্দও তাকে বলে দেয় এই পথে চলতে।
আকাশের ঐ তারার দলও পিছু নেয় তাঁর
হিসেব রাখে মাঝির শরীর থেকে খসে পড়া, হাজার ফোটা পানির
তারার দল কাৎরায় তাকে দেখে
সূর্যের ঐ তপ্ত, আগুন ঝরা রোদেও
মাইলের পর মাইল হেঁটে চলে সে
এ নৌকা ভিড়াতে হবে তরীর ঘাটে।


নদীটির একপারে ঘন পাতার জংলি গাছের সারি, অপর পারে ফসলের ক্ষেত মারিয়ে ঘন পাতায় ঘেরা ফলজ বৃক্ষের সমাহার, এমন সুন্দর দৃষ্টিনন্দন নদী খুবই বিরল ।

বছরের একটা সময় বিশেষ করে আগ্রানী ধান ঘরে উঠার সময়ে দুর দুরান্ত হতে বেদে নৌকার বহর এসে ভিরত নদীটির তীরে । সে সময় গ্রামে যেন লেগে যেতো উৎসবের আমেজ ।
AA15 Beder Naoka Bahor

বেদে নৌকার বহরে থাকা যুবতি বেদে মেয়েরা মাথায় বিভিন্ন প্রকারের প্রসাধনি সামগ্রি যথা আয়না,কাকই, চিরুনী , রংগীন চুরী, কানের দুল , নাকের ফুল ,গলার হার ( বলা হত নদীতে কুড়িয়ে পাওয়া ঝিনুকের মুক্তার হার) ও আলতা ফিতা নিয়ে ঢুকে যেতো গৃহস্তের বাড়ীর ভিতর আঙগিনায়। গৃহস্ত বাড়ীর বউ ঝিদের মাঝে মহাসোরগোল পরে যেতো সেগুলি কেনারতরে , পণ্যের দাম পরিশোধ হতো ধানের মাপে , যথা এক গুচ্ছ চুড়ীর জন্য দিতে হতো বেদের কাছে থাকা এক ঠিলা পরিমান ধান । টাকার অংকে যা সেসব পণ্যের বাজার দামের থেকেও বেশী । কিন্তু তাতে গৃহস্ত বাড়ীর বউ ঝিদের কোন আপত্তি নেই ,ঘরে বসে নীজের পছন্দ অনুযায়ী প্রসাধনি সামগ্রি কিনতে পারছে, এতেই তারা বেজায় খুশী ।এর সাথে বসত নেচে গেয়ে বেদে/বেদেনীদের সাপ খেলা দেখানোর আসর।

হাত নেরে সাপকে ফনা তুলে নাচানোর সময় সুর করে গাইতো
খারে খা বক্ষিলারে খা
কামরুক কামাক্ষার দোহাই
মা মনসার দোহাই
খারে খা সোহার মারে খা।
খেলা দেইখ্যা যারা
পয়সা দেয়না তাদের
ধইরা খা। খেলা দেইখ্যা
পয়সা দিলে নাগমনি
পইবে গাঙ্গের ধারে।
একদিন সাপের খেলা দেখার পরে সাহস করে বেদেনীর কাছে গিয়ে জিগাইছিলাম, তোমরা গাঙ্গের পারে নৌকায় থাক, নাগমনি পাইছনি কোন দিন ।
বলল সে হ নাগমনি পাওয়া যায়ত , মনি থাকে নাগের মাথায় ,দেখস না সাপে ফণা তুললে মাথার পিছনে মনির মত চিহ্ন দেখা যায় ।

বললাম নাগমনি পাইলে আর নৌকায় ঘুরে ডেঞ্জারাস বিষধর সাপের খেলা দেখায়ে জীবন কাটাও কেন?। বলল সে আরে বোকা , মনি যারা পায় তারাতো রাজরানী অইয়া যায় তারা আর কি তখন সাপের খেলা দেখায় ,দেখস না রাজা রানীরা কেমন করে বিলাসী জীবন কাটায়, তবে বেদ বেদেনীর স্বভাব তাদের কভু নাহি যায় ,হরেক রকম কায়দা করে তারা মানুষের পকেট খালি কইরা যায় ।
সাপ খেলা দেখানোর সাথে ছিল ঝাড়ফুক আর বাতের ব্যথা নিরসনের জন্য ব্যথার স্থানে সিংগা লাগিয়ে মুখ দিয়ে বিষ টেনে মানুষের বিষ নামানো ও গাছগাছলীর শিকড় দিয়ে দাতের পোকা বের করা প্রভৃতি কত প্রকারের টুটকা চিকিৎসাই না তারা করত। শুধু কি তাই. সাপের কামড়ের হাত হতে রক্ষার জন্য জঙ্গলে থাকা গোপন গাছের শিকরের রক্ষা কবজের তাবিজ। প্রেমে আসক্তি কিংবা ব্যর্থ প্রেমিকের প্রেম জোড়া দেয়া সহ নানাবিধ যথা কামরুপ কামাখ্যা থেকে শিখে আসা যাদু টোনা ভরা মাদুলি, যা নাকি অংগে ধারনে অব্যর্থ সফলতা আনে । উল্লেখ্য কামরূপ কামাখ্যাকে বলা হয় জাদু টোনা, তন্ত্র-মন্ত্রের দেশ। আসামের গুয়াহাটি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কামরূপ কামাখ্যা । হাজার বছরের রহস্যময় স্থান কামরূপ কামাখ্যার আশপাশের পাহড়ী অরণ্য আর নির্জন পথে নাকি ঘুরে বেড়ায় ভালো-মন্দ আত্মারা।

কামরূপ কামাখ্যার রহস্যে ভরা আখ্যানের কথা শুনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কামাখ্যার জাদুবিদ্যা আর সাধকদের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার গল্প ঘুরত সবার মুখে মুখে।

ভূত-পেত্নি-ডাকিনী-যোগিনী-শাকচুন্নি, অশরীরী, প্রেত, পেত্নী, ব্রহ্মদৈত্য, পিশাচ, ডাইনী বা ডাকিনীবিদ্যার অতিব ভয়ঙ্কর সাধনা চলে আসামের কামরূপ-কামাখ্যা মন্দিরে।
AA19 Kamrup Mondir

এক ভয়ংকর জায়গা ওখানে পৌঁছালে আর ফিরে আসা যায় না।আশেপাশে অরণ্যে আর নির্জন পথে দেখা যায় ভূত-পেত্নী আর ডাকিনী-যোগিনীর।

নারী শাসিত পাহাড়ী ভূ-খন্ড কামরুপ –কামাখ্যার নারীরা ছলাকলা আর কাম কলায় নাকি ভিষন পারদর্শী।কামরূপ-কামাখ্যার ডাকিনী নারীরা পুরুষদের মন্ত্রবলে নাকি ভেড়া বানিয়ে রাখে ।
আবার বাংলাদেশের সাপুরেদের মুখেও কামরূপ কামাখ্যা নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে।তারা সেখান থেকে বিভিন্ন মন্ত্র তন্ত্র শিখে আসে। শিখে আসা বিদ্যা দিয়ে পশরা সাজায়
বিবিধ ফন্দি ফিকিরে।
বসন্ত রোগের জন্য শিতলা দেবীর পানি পড়া দিত

এই নদীতে এখন আর বেদে বহর আসেনা ।এতে চলেনা আর পাল তোলা সওদাগরী নৌকা, কেরায়া নৌকা ( স্বল্প দুরত্বের যাত্রীবাহী নৌকা ) আর গয়না নৌকা(অধিক দুরত্বের যাত্রীবাহী বড় নৌকা)। নদিটির মুল ধারার উজানের অংশ এখন শুকিয়ে গিয়ে হয়েছে ফসলের মাঠ, মাঝ খান দিয়ে কোনমতে একফালি সুতার মত বয়ে চলছে মৃত প্রায় নদীর ধারা । এটা এখন আর দেখলে মনে হবেনা যে মাত্র কিছুদিন আগেও ছিল ব্রম্মপুত্র নদের একটি প্রমত্তা শাখা নদী ,বরং এটা এখন দেশের নদী নালার মানচিত্র হতে হারিয়ে যেতে বসেছে চির দিনের মত ।

নদীটিকে বাঁচানোর জন্য দৃশ্যমান কোন কর্মসুচী বা উদ্যোগ নেই বরং দুই তীরের নদীখোড়দের মহা উয্যোগ দেখা যায় নদীটিকে গ্রাসের তরে।
এখানে উল্লেখ না করে পারছিনা যে বৃহত্তর বঙ্গের বিখ্যাত পঞ্চ কবির একজন অতুলপ্রসাদ সেনের সমাধি আছে এই সুতিয়া নদীর তীরেই।
ঢাকার অদূরবর্তী গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষীন প্রান্তে সুতিয়া নদীর তীরে ছিল ভাওয়ালের রাজা কালীনারায়ণ গুপ্তের কাছারিবাড়ি। এখানেই কালীনারায়ণ গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি ব্রাহ্মমন্দির।

এই ব্রাহ্মমন্দির লাগোয়া সমাধিতে শুধু অতুল প্রসাদেরই নয়, রয়েছে তার দাদামশাই কালীনারায়ণ ও মামা কেজি গুপ্ত নামে সমধিক পরিচিত স্যার কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্তের সমাধিও। কেজি গুপ্ত ছিলেন প্রথম ভারতীয় প্রিভি কাউন্সিলর ও পূর্ববঙ্গ থেকে প্রথম আইসিএস। পাশেই রয়েছে কালীনারায়ণের পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাধিও।সমাধিতে কারোরই মৃতদেহ নেই, চিতাভস্ম রয়েছে। তাদের কেউ লখ্নৌ, কেউ আবার লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। যে যেখানে মারা গেছেন, সেখানেই তাদের চিতা হয়েছে। পরে চিতাভস্ম এনে এই নদী তীরে এখানে সমাহিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ব্রাহ্ম ও হিন্দু রীতি অনুযায়ী সবারই পিণ্ডদান করা হয়েছে পাশের সুতিয়া নদীতেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় অতুল প্রসাদ সেনের স্মৃতিফলকটি পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করে ভেঙে ফেলেছিল। তখন স্মৃতিফলকে তার 'মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা' গানের চরণটি লেখা ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে অতুল প্রসাদের সমাধিতে মার্বেল পাথরে নতুন একটি স্মৃতি ফলক পুণস্থাপন করা হয়

মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!
কি যাদু বাংলা গানে!- গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে
এমন কোথা আর আছে গো!
গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।।’


অতুল প্রসাদের লেখা মাতৃভাষার প্রতি প্রেমপূর্ণ সঙ্গীতটি বাঙালির প্রাণে আজও ভাষা প্রেমে গভীর উদ্দীপনা সঞ্চার করে। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উপলক্ষে এই গানটিতে বাঙালি এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতুলপ্রসাদ সেন। গানটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অসীম প্রেরণা যুগিয়েছে।

বিভিন্ন তথ্যসুত্রে জানা যায় যে একদা এই ব্রাম্ম মন্দিরে কিছু সময়ের জন্য এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুরও। রাজা রামমোহন রায় ১৮২৬ সালে একেশ্বরবাদী মণ্ডলী স্থাপন করে নাম দেন 'বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্ম'। পরে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্মের নামকরণ করেন ব্রাহ্মধর্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চদশ সন্তানের অন্যতম।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন। ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন ময়মনসিংহে যান, তখন কাওরাইদে ব্রাহ্মধর্মের অনেক বড় মণ্ডলী ছিল। তাই পথে তার যাত্রাবিরতি করা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ্য ঢাকা –ময়মনসিংহগামী রেললাইন ধরে সে সময় চলাচল করত স্টীম ইঞ্জিনচালিত রেলগাড়ী ।মাঝপথে কাওরাইদ রেল ষ্টেশনে থেমে ইঞ্জিনে পানি ও কয়লা লোড করে নিত । কাওরাইদ ষ্টেশনের কাছে ছিল বিশাল ১০০০০গ্যালনের একটি অভারহেড পানির ট্যাংক।সুতিয়া নদী হতে ট্যাংকে পানি তোলা হত । এই স্টেষনে প্রতিটি ট্রেনকেই প্রায় ঘন্টাখানেক যাত্রাবিরতি দিয়ে কয়লা ও পানি লোড করে ইঞ্জিন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ষ্টীমের ব্যবস্থা করা হত। তাই এই যাত্রা বিরতীর সময়টিতে নিকটবর্তী ব্রাম্মমন্দির ও সে সময়কার দেশের বিখ্যাত ব্রাম্ম মনিষীগনের সমাধিসৌধে কবি গুরুর গমন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।

উল্লেখ্য খ্যাতিমান জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে আসেন। সেসময় কবির সফরসঙ্গী ছিলেন তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইতালির অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি প্রমুখ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কবি গুরু সূর্যকান্তের বাগান বড়ি আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থান করেছিলেন । সেই সময় থেকে কবির অবস্থানে গর্বিত ময়মনসিংহের আম জনতা । সেই আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল এখন ময়মনসিংহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহসহ অনেক রাজপরিবারের সদস্য এই বাগান বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন।

কবিকে ময়মনসিংহ টাউনহলে নাগরিক সস্বর্ধনা দেয়া হয় । মিউনিসিপ্যাল কমিটির অভিনন্দন গ্রহণ করে তার উত্তরে কবিগুরু যে মুল্যবান ভাষনটি দিয়েছিলেন তার সংক্ষিপ্তরূপ তুলে ধরা হলো নীচে-
ময়মনসিংহের পুরবাসীগণ, আজ আপনাদের কাছে সর্বপ্রথমেই আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমি এই ক্লান্ত দেহে আজ আপনাদের অতিথি। যখন আমার শক্তি ছিল, স্বাস্থ্য ছিল, যৌবন ছিল, তখনই এখানে আমার আসা উচিৎ ছিল ।
...........দেশমাতার এই যে শক্তির পীঠস্থান, এখানে যে পূজা নিবেদন করতে পারি, সেরকম সম্পদ বা ক্ষমতা আমাতে নেই; কেবলমাত্র আপনাদের সহিত পরিচয়ের জন্য এসেছি ;পরিচয়ের আভাস আপনাদের দিয়ে যাব এবং নিয়ে যাব এইটুকু মাত্র প্রত্যাশা করি। যথার্থ পরিচয় শুধু ত্যাগ ও সেবা দ্বারা সম্ভব।.............................আমরা দুঃখ-দৈন্যের ম্লান রূপ দেখেছি। বিরাট মহিমাময় রূপ দেখতে হলে বিশ্বাস ও ত্যাগের ভিতর দিয়ে দেখতে হবে। দেশের রূপ সত্য উপলব্ধি করতে হলে সংকীর্ণ বর্তমান দিয়ে চলবে না। সেই সুদূর অতীত হতে সুদূর ভবিষ্যতের মাঝে দেশের সত্তা অনুভব করতে হবে।
দেশের সেবায় শ্রদ্ধা আছে বলে সেখানে গিয়ে কেউ নত না হয়ে থাকতে পারে না। দেশমাতার পূজাবেদীর সামনে ঈর্ষা অশুচি ও বিদ্বেষে- জর্জরিত হচ্ছি বলেই দেশমাতার পরিপূর্ণ স্বরূপ তার নীজ আবরণ ভেদ করে প্রকাশ পাচ্ছে না। আত্মার এত অপমান কখনও সহ্য হতে পারে? পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষের ন্যায় কুৎসিত আর কিছুই নয়। দেশের পরিচয় সংকীর্ণতার মধ্যে নয়। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝেই যে দেশের সত্যিকার পরিচয়;-- সেই ধ্যান আমাদের সত্য হোক, উজ্জ্বল ও নির্মল হোক।
......দেশের দৈন্যতা দুর হতে পারে ত্যাগের দ্বারা, সেবা দ্বারা ও আত্মনিবেদন দ্বারা। সেই শ্রদ্ধার সঙ্গে নত হয়ে আমরা যেন দেশকে জানতে চাই --দেশের ভবিষ্যৎ বিরাট মূর্তি যেন ধ্যাননেত্রে দেখতে পাই।
আমি আপনাদের এখানে আসবার সময় গাড়ীতে বাতায়ন থেকে দেখতে চেষ্টা করেছিলাম আজকের দিনের জর্জরিত দেশকে নয়--দুঃস্থ দেশকে নয়—শ্রদ্ধা বিশ্বাসহীন অপমানিত দেশকে নয়-- দেখতে চেষ্টা করেছিলুম ভাবীকালের হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গমাতার সুন্দরী মূর্তি।সেই দূরের মূর্তি ধ্যানের মধ্যে আনবার চেষ্টা করেছিলুম; কি করে সকলের কাছে সেরূপ প্রকাশ পাবে এই ইচ্ছা আমার হচ্ছিল।
সেই সুজলা, সুফলা,শ্যামলা মধুকর-গুঞ্জিত নবচ্যুতমঞ্জরী-শোভিত সুন্দরী বঙ্গমাতার মধুর মূর্তি আমার অন্তরে জাগ্রত হয়ে উঠেছিল।
আজ নতুন যুগ এসেছে --রথের ঘর্ঘর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে--বঙ্গদেশ আশার বাণীতে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

আমার স্বাস্থ্য নেই, যৌবনের তেজ নেই , কিন্তু তৎসত্ত্বেও আমার ইচ্ছা আছে, সেই ইচ্ছাই আজ আপনাদের কাছে নিবেদন করতে চাই। এই দেশের আকাশে-বাতাসে স্নেহ আছে,মাদকতা আছে-- সৌন্দর্য আছে--তার কথা চিন্তা করতে করতে আমার জীবন শেষ হবে, এই আমার কামনা; সেই আশার সঙ্গীতধ্বনি দেশের আকাশে-বাতাসে মুখরিত হবে এই আমার চিরন্তন বিশ্বাস।–বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর আমরাও কামনা করি বিশ্ব কবির এই বিশ্বাস বাস্তবায়ন হোক ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থানকালে একটি বিশালাকার বৃক্ষতলে বসে বেশ কয়েকটি কবিতাও রচনা করেছেন।

কবিগুরুর মত বৃক্ষটির নীচে বসে ব্রহ্মপুত্র নদের শীতল বাতাসে শরীর মন জুড়িয়ে নেন অনেকেই।

অতীব দু:খ্যের সাথে বলতে হয় মাত্র পঞ্চাশ বছর আগেও যে ব্রম্মপুত্র নদ ছিল প্রমত্তা তা আজ জীর্ণদশায় পতিত, বলতে গেলে মরা নদী, ফলে এর শাখা নদীগুলিও আজ পরিনত হয়েছে মরা নদীতে ।

অপরদিকে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত শিল্প বর্জ নিস্কাসন কারণে ভালুকায় অবস্থিত শিল্পকারখানা বিশেষ করে বস্রশিল্পের ডাইং ও ফিনিসিং কারখানার বিভিন্ন রং ও কেমিকেল মিশ্রিত বর্জের কারনে সুতিয়া নদীটির অপর উৎস ধারা ক্ষিরো নদীর পানি হয়েছে ভিষণভাবে দুষিত এবং দুষনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই ।

দেশের পোশাক শিল্প বিশেষ করে টেক্সটাইল ডায়িং কারখানাগুলো যদিও সরকারী বিধানের কারণে নামকাওয়াস্তে প্রচলিত ব্যবস্থায় তাদের বর্জ্য শোধন করে তা মোটেই মানসন্মত নয় ।ফলে ২০২১ সাল নাগাদ তৈরী পোষাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে পৌঁছতে পানি দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নেবে। উল্লেখ্য ২০১৬ সালে ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার এবং পরের বছর ২৩ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য নিঃসরণ হয়েছে এ শিল্প থেকে। সাম্প্রতিককালে বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে বস্ত্র শিল্পের বর্জ্য পানির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৪ কোটি ঘনমিটার । এর মধ্যে ভালুকা এলাকা হতেই নিস্বারিত বিপুল পরিমান দুষিত বর্জ্য যুক্ত হয়ে মিশবে গিয়ে দেশের মুল ধারার নদ নদীর পানিতে।

ডাইং ফিনিসিং কারখানার বর্জে ক্ষিরো নদীর উজানে উৎস মুলে নদীর পানি অনেক আগেই রক্তিম রং ধারণ করেছে ।

এ রংগীন দুষিতপানি নীচের দিকে গড়ায়ে ভাটিতে আসতে আসতে ধারন করে কুচ কুচে কাল রঙ। নদীর মাছতো কবেই মরে সাফ। এখন জনস্বাস্থ্য ও জীব বৈচিত্রও দারুন হুমকির মুখে ।
প্রথমে ক্ষীরো নদী পরে সুতিয়া নদী হয়ে ভালুকায় চালু বস্ত্র শিল্পসহ অন্যন্য শিল্প কারখানার দুষীত পানি গিয়ে পড়ছে শীতলক্ষা নদীতে । ফলে শীতলক্ষার পানি হতেছে দুষিত যা আবার ঢাকার কাছে গিয়ে মিসতেছে বুড়ীগঙ্গার পানির সাথে। বর্জ দুষন রোধের অভিপ্রায়ে রাজধানী ঢাকা হতে ৩০ মাইল দুরে এসমস্ত শিল্প কারখানা স্থাপিত হলেও ভালুকার দুষিত পানি ক্ষীরো, সুতিয়া, শিতলক্ষা আর বুড়িগঙ্গা হয়ে রাজধানীতে ফিরে যেতে সময় নিচ্ছে ৩০ ঘন্টারো কম।

তাই এমহুর্তেই কতৃপক্ষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে বেশ বড় ধরনের পরিবেশ দুষনের শিকার হবে রাজধানী শহর ঢাকাসহ এইসব নদী অববাহিকার জীব বৈচিত্র । সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বিপর্যস্ত করে তুলবে । এর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে ক্ষিরো নদীর শেষ প্রান্তে (সুতিয়ার মোহনার কাছে) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত রাবার ডেমটি যা আরো অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ যেন মরার উপর খারার ঘা ।

রাবার ডেমটি ক্ষিরো নদীর উজানের কিছু অংশের কৃষি কাজে সেচের সুবিধা দিলেও এর ভাটিতে নদীর নাব্যতা বিনষ্ট করেছে । এখন দুষিত বর্জের কারনে রাবার ডেমের উজানে আটকানো দুষিত পানি সেচের কাজে ব্যবহারেও ঝুকি পুর্ণ হয়ে গেছে ।নদীর দূষিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের সবজি ও ধানের চারা। এই এলাকায় সেচ যোগ্য পানির সঙ্কট দেখা দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। তাই পরিবেশবাদী ও সচেতন সকলকে এগিয়ে আসতে হবে ভালুকা এলাকা সহ দেশের সকল শিল্প কারখানা বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পের অনিয়ন্ত্রিত বর্জ নিষ্কাষন ব্যবস্থাসহ দেশের সকল নদ নদীর পানি দুষন প্রতিরোধে ব্যপক গনসচেতনতা সৃজনের জন্য।

নদীর পানি দুষিত হওয়ার কারণে দেশের জীব বৈচিত্রের আরেকটি মারাত্তক ক্ষতির বিষয়ে দু একটি কথা না বলে পারছিনা । সেটা হলো স্থানীয়ভাবে ‘শুশুক’ নামে পরিচিত বিশ্বের বিরলতম প্রাণী বাংলাদেশের স্বাদু পানির রিভার ডলফিন ( শুশুক বা শিশুমাছ) আজ শুধু বিপন্ন প্রাণী্ই নয় এখন এটা একেবারে বিলুপ্তির পথে ।ডলফিন সাধারণত লবণ পানিতে বাস করে৷ শুধুমাত্র গাঙ্গেয় ডলফিন তথা শুশুক আর আমাজনের ‘বোতো’ এই দুই প্রজাতির ডলফিন সারা বছরই স্বাদু পানিতে থাকে৷ সেদিক দিয়ে শুশুক বিশ্বে খুবই বিরল একটি প্রাণী যা শুধু বাংলাদেশের নদ নদীতেই দেখতে পাওয়া যায় ।
আমাজনের বোতো প্রজাতির স্বাদু পানির শুশুক ।

বাংলাদেশের নদিতে ডুব সাতারে বিচরণকারি শুশুক যা শিশু মাছ নামেও পরিচিত । আমাদের নবপ্রজন্মের অনেকেই হয়তোএকে নদীতে ডিগবাজী দিতে দেখেননি। স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি মাঝনদী বরাবর চলার পথে একটু পরে পরেই পানির উপরে ডিগবাজী দেয়ার মত ভেসে উঠে ,এরা শ্বাস প্রস্বাস নেয় মানুষের মতই।

উল্লেখ্য ৩০-৪০ বছর আগেও বাংলাদেশের নদীগুলোতে অনেক শুশুক তথা রিভার ডলফিন দেখা যেত৷ কিন্তু এখন আর সেটা দেখা যাচ্ছে না৷ তাই ১৯৯৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম উঠে গেছে শুশুকের৷

শুশুকের তেল মাছ ধরার জন্য বেশ কার্যকর৷ তাই জেলেরা গণহারে শুশুক ধরছে৷ এছাড়া জাটকা ধরার জন্য যে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জেলেরা, তাতেও মারা পড়ছে শুশুকের দল৷ ছবিতে এমনই একটি মৃত শুশুক দেখা যাচ্ছে৷

নদীতে বাঁধ দেয়া, সেতু তৈরি ইত্যাদি কারণে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শুশুকের আবাস ও প্রজননস্থল৷ এছাড়া যেখানে সেখানে ফেলে রাখা পলিথিন নদীর পানিতে মিশে গিয়েও নষ্ট করছে শুশুকের আবাস৷ শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্যও শুশুকের শত্রু৷
পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের জালে ধরা পড়া বাংলাদেশের স্বাদুপানির বিপন্ন স্তন্যপায়ী শুশুকের একটি সদস্য।

পুর্ণবয়স্ক শুশুকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট, গড় পরিধি ৫ ফুট ও ওজন ১৬৫ কেজি । নীচের এবং উপরের চঞ্চুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১.৩০ ও ১.২০ ফুট।১৯৯৬ সালে এটি বিপন্ন (Endangered) প্রজাতির তালিকায় স্থান পায়। প্রাণী-প্রেমীদের জন্য যা মোটেও সুখের সংবাদ নয়। বিপন্ন এই জলজ স্তন্যপায়ীকে মাত্র তিন দশক আগেও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী এবং এদের শাখানদীতে বড় বড় ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যেতো।

আমাদের এলাকায় শীত লক্ষা ও সুতিয়া নদীতেও এই স্বাদুপানির শুশুক প্রানীটিকে দেখা যেতো ।বর্ষাকালে নদীতে এর আনাগোনা বেড়ে যেতো। তখন নদীতে গোছল করার সময় আমরা শুশুকের মত পানির উপরে পিঠ বাকিয়ে ডিগবাজি দিয়ে ডুব সাতার খেলতাম । মুরুব্বিরা ধমক দিয়ে মাঝ নদীতে শুশুকের মত আমাদের ডুব সাতার খেলা বন্ধ করাতেন কুমিরে ধরার ভয় দেখিয়ে।তবে কুমিরকে আমরা দেখিনি বলে তাদের ধমকে কুমিরকে আমরা ভয় পেতামনা মোটেও। বই এর ছবিতে কুমিরকে দেখেছি খুব ছোট একটি প্রাণী হিসাবে।

বাংলাদেশের স্বাদু পানির বিপন্ন এই স্তন্যপায়ী শুশুককে বাঁচাতে এখনই বড় পরিসরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রথমেই শুশুক শিকার, বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে নদীর পরিবেশ উন্নয়নে নদীকে তার মত চলতে দিতে হবে। সকল বাঁধ অপসারণ, যৌক্তিক সেচ ব্যবস্থা প্রবর্তন, রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার বন্ধ এবং শুশুক অধ্যুষিত এলাকায় যন্ত্রচালিত নৌযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবী।উল্লেখ্য রিভার ডলফিন বা শুশুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পুরো নদীর বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের নির্ভরযোগ্য সূচক। যে নদীতে ডলফিন থাকে সেই নদীতে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং নদীর পরিবেশ সুস্থ থাকে। এটিকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসাবে ঘোষণা করা একান্তভাবে কাম্য । বর্তমান অবশ্য বাংলাদেশে ডলফিন ও তিমি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০১২ সালের প্রণীত আইন অনুযায়ী ডলফিন অথবা তিমি শিকার করা হলে তিন বছরের কারাদণ্ড, ৩ লাখ টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ড দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান নাকি রয়েছে দেশে।তার পরেও এটা এখন বিলুপ্তির পথে ।দেশে বর্তমানে নাকি মাত্র ৪০০ গাঙ্গীয় ডলফিন রয়েছে । আস্তে আস্তে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে নদী পরিবেশগত প্রভাব বোঝার নির্দেশক এই শুশুকগুলো বর্তমানে ভালো নেই। পৃথিবীজুড়েও এদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। এখানে উল্লেখ্য যে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্যে দেখা যায় জাপানে তাইজির ডলফিন শিকার উৎসবে নাকি খুন হয় প্রায় পনেরো হাজার ডলফিন।

সারা পৃথিবীর কাছে জাপান মানেই শান্তির সাদা পায়রা। সেই জাপান বিশ্বের চোখের আড়ালে গর্বিত ভাবে বয়ে নিয়ে চলেছে এক কলঙ্কময় ইতিহাস। হ্যাঁ, হত্যার ইতিহাস। মানুষ নয়, ডলফিন। শান্তিপ্রিয় সামুদ্রিক প্রাণী ডলফিনদের সবচেয়ে নৃশংস ঘাতক হলো শান্তির পূজারী জাপান। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি সত্য। তাইজী উপকুলে প্রতি ১লা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় কুখ্যাত তাইজি ডলফিন হান্টিং ড্রাইভ। শেষ হয় পরের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনে। মাত্র ছয় মাসে মারা যায় পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ও নিরীহ প্রাণী ডলফিন, হাজারে হাজারে । জাপান সরকার প্রতি বছর কম বেশি ২০০০ ডলফিন মারার অনুমতি দেয়। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে ডলফিন শিকাড় ড্রাইভে ১০-১৫ হাজার ডলফিন মেরে ফেলা হয় সুত্র Click This Link । অবশ্য সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠার পর, তাইজিতে এখন দিনের আলোয় ডলফিন হত্যা প্রায় বন্ধ । তবে রাতের অন্ধকারে চলে ডলফিন নিধন যজ্ঞ। বোঝাই যাচ্ছে, বিলুপ্তপ্রায় ডলফিন প্রজাতিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার আগে থামবে না জাপান। উদীয়মান সূর্যের দেশ জাপান। বিশ্ব শান্তির পূজারী জাপান। বুদ্ধময় জাপান। ফলে ডলফিনেরা আজ সুর্যোদয়ের দেশে অকাল সুর্যাস্তের অপেক্ষায়। মনে হয় এই নিধন যজ্ঞের কারণে অচিরেই ডলফিনের কান্নার হবে চীর অবসান ।

মাটির ঘর বানাবার জন্য কাদামাটি সংগ্রহের লক্ষ্যে নদীর পানে চলার কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘদিনের স্মৃতির পাতায় জমে থাকা অনেক প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক কত কথাই না বলে ফেলেছি, সম্বিত যখন ফিরে এল তখন দেখা গেল পরশ পাথর প্রাপ্তির বিষয়ে মুল কথা বলা হতে অনেক দুরে ছিটকে পরেছি।

যাহোক, আম কাঠাল আর শুপারির বাগান পার হয়ে বড়বিল থেকে নেমে আসা নদীমুখী খালের পাশ দিয়ে নদীর ঘাটের দিকে এগিয়ে চলেছি । জীবনে কত ছোট খালই না দেখেছি, দুই ধারে ঘন বন এমন খাল দেখেনি কভু এ তল্লাটে ।এ খালটিরও রয়েছে অনেক মজার ইতিহাস । এ খাল দিয়েই বর্ষাকালে বড় বিলের সব পানি নামে নদীতে আর নদী হতে উজানে বিলে ঢুকে নদীর যত ছোট বড় মাছ । নদীতে শুশুকের দাবরানী খেয়ে এখাল বেয়েই বড় বড় রুই, কাতল , বোয়াল, চিতল উঠে যেতো বড় বিলে। বর্ষা শেষে বিলের পানি নেমে গেলে চলত গ্রামের সকলে মিলে পলো দিয়ে মাছ ধরার জন্য হাত বাওয়ার মহা উৎসব। আর রাত নিশীতে এখালের উপর দিয়েই উড়ে যায় ভুত প্রেত,ডাকিনি যোগীনী আর মায়াবিনীর দল । সেসব কাহিনী আসবে পরের পর্বে।

বিবিধ প্রকারের কথামালা এসে ভির করায় পোষ্টটি লম্বা হয়ে যাওয়ায় পরশ পাথর প্রাপ্তির প্রান্তিক বাকি কথা গুলি পরের পর্বে তুলে ধরার প্রয়াস নেয়া হয়েছে।

পরের পর্ব দেখার জন্য আমন্ত্রন রইল ।

এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

তথ্য সুত্র : যথাস্থানে লিংক আকারে দেয়া হয়েছে ।
ছবিসুত্র : কৃতজ্ঞতার সহিত গুগল অন্তরজল


মন্তব্য ৮৭ টি রেটিং +২৩/-০

মন্তব্য (৮৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




ডঃ এম এ আলী ভাই, আপনার পোস্টে ধান নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমার প্রিয় অনুজ ভাই ব্লগারকাজী ফররুখ আহমেদ কে অনুরোধ করবো ব্লগে আপনার পোস্টে যেনো উপস্থিত হোন। আমার জানামতে ব্লগে কাজী ফররুখ আহমেদ একজন ধান চাল বিষয়ে উস্তাদ মানুষ। আমি ধান চাল বিষয়ে জানি তবে আমার চেয়ে কমপক্ষে দশগুন বেশী জানেন এই পাগলা ভাইটি।

পুরো পোস্ট পড়তে ফিরে যাচ্ছি, বিস্তারিত মন্তব্য নিয়ে আবার আসবো। ধন্যবাদ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:১৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




ব্লগার কাজী ফররুখ আহমেদ এর লিংকটি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সুগন্ধী ধান ও তাদের অপার সম্ভাবনা নিয়ে দেয়া তাঁর মুল্যবান
লেখাটি দেখে এসেছি। এ পোষ্টে অবশ্য প্রখ্যাত কবি ফররুহ
আহমদের ধান নিয়েলেখা কবিতার কটি চরণ তুলে ধরেছি ।
হ্যা ধীরে সুস্থে এই পোষ্টটি পাঠ করুন । আপনার মুল্যবান
মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:



বিশাল তথ্য ভান্ডার; আমরা বুঝার আগেই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো হারিয়ে গেছে: আমাদের ধান, মাছ, শুশুক, পাখী, হাতী, বাঘ, কিছুই নেই; পুরোদেশ ক্যান্সারের রাজ্যে পরিণত হবে, জন্ম নেবে স্বাস্হ্য সমস্যা নিয়ে ভংগুর প্রজন্ম।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

মুল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
পাকৃতিক সম্পদগুলি রক্ষার জন্য আমাদের
সকলকে সচেতন হতে হবে ।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:১১

কল্পদ্রুম বলেছেন: পুরোটাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। আপনি প্রসঙ্গান্তরে গেলেও সেগুলো অবান্তর মনে হয় না। আন্তরিক ধন্যবাদ এই স্মৃতিচারণের জন্যে।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:২২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



পুরোটাই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন শুনে ভাল লাগল।

প্রসঙ্গান্তরে গেলেও সেগুলো অবান্তর মনে হয় না শুনে
অনেকটা আশ্বস্ত হলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:


কেন্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা সেইসব মুক্তিযোদ্ধারা (বেংগল রেজি:) পরে কোন সেক্টরে গেলেন? আপনাদের এলাকা থেকে কি পরিমাণ মানুষ যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন? আপনাদের এলাকা থেকে ভারতীয় বর্ডার কতদুরে ছিলো?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৫৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



কেন্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা সেইসব মুক্তিযোদ্ধারা (বেংগল রেজি) পরে একটি সময়ে ছত্র ভঙ্গ হয়ে যান ।অনেকেই পরে ১১ নং সেক্টরে সমবেত হন । আপনি হয়তবা জানেন যে ১১ নং সেক্টর ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম সেক্টর।ময়মনসিংহ জেলা, টাঙ্গাইল জেলা এবং রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমা নিয়ে গঠিত হয় এই সেক্টর। ভারতীয় সীমান্ত এলাকার ভারতীয় সিকিউরিটি পোস্ট মাইনকারচর থেকে মহেশখোলা পর্যন্ত এটি বিস্তৃত ছিল। ময়মনসিংহ জেলার প্রায় সম্পূর্ন এলাকা ২৪ শে এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পাক সেনারা ময়মনসিংহে শক্তিশালী অবস্থান নেয় । মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের পথে পা বাড়ায় এবং বেশীরভাগ লোক ভারতের ডালু এবং মহেন্দ্রগঞ্জে সমবেত হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে উল্লেখযোগ্যভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এদের মধ্যে টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী,ময়মনসিংহের ভালুকার আফসার উদ্দিন এবং সিরাজগঞ্জের লতিফ মির্জার নাম উল্লেখযোগ্য। আমাদের এলাকাটি মুলত দেশের সেন্ট্রাল এলাকা । ভারতীয় বর্ডার উত্তরে প্রায় ৭০ মাইল , উত্তর সীমান্ত পুরাটাই গাড়োপাহার বেষ্টিত ও পুর্বে প্রায় ৬০ মাইল কসবা দিয়ে ত্রিপুরা সীমান্ত,নদীপথে এটাই সীমান্ত পারি দেয়ার আনেকটা নিরাপদ পথ । আমাদের এলাকা হতে প্রচুর মানুষ মুক্তিযুদ্ধে যোগদন করেছিল ।

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


স্বাধীনতা এসে গিয়েছিলো অনেক হঠাৎ করেই; নতুন দেশের জন্য শেখ সাহেব ও উনার দলের কোন সঠিক রোডম্যাপ ছিলো না; খুবই কষ্টের ব্যাপার।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




রোড ম্যাপ অবশ্যই একটি ছিল
তাইতো বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা বঙ্গবন্ধুকে নিতে হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শিতাতেই মাত্র নয় মাসে বিজয়
অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিছ্ছিন্নতাবাদী তকমা গায়ে
জড়াতে পারলে পাকি বন্ধু আমিরিকা সরাসরী
হস্তক্ষেপের সুযোগ পেত । যাহোক সে অনেক
কথা। ভিতরের অনেক কথাই সম্ভবত ফাঁস হয়ে
যাওয়ায় হঠাৎ করেই ২৫শে মার্চে পাক বাহিনী
রাতের অন্ধকারে নিরস্র বাংগালীর উপরে
যাপিয়ে পড়ায় অনেক পরিকল্পনায় বিঘ্ন
ঘটে যায় ।ধারণা করি সঠিক ইতিহাস
একদিন উঠে আসবে সকলের কাছে।
শুধু সময়ের অপেক্ষা ।

আর স্বাধিনতা হঠাৎ করেই আসেনি ।
অনেকগুলি পথ পারি দিয়ে তবেইনা
স্বাধিনতা এসেছে। এ প্রসঙ্গে এ সামু
ব্লগে আমার প্রথম পোষ্ট
একুশের চিরায়ত স্লোগান নামে প্রকাশিত
কবিতাটি তুলে দিলাম বুঝার সুবিধার জন্য

আট চল্লিশে গর্জে উঠা
ভাষা আন্দোলনের পথ মারিয়ে
বায়ান্নের একুশে ফেব্রোয়ারীতে এসে
রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতদের
রক্তে রচিত ভাষার স্লোগান ।

মায়ের ভাষার দাবী নিয়ে
গর্জে উঠা একুশের স্লোগান
বাংলার আঙ্গিনা পেরিয়ে
আছরে পরছে বিশ্বের
এ প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ।

একুশের ঊষালগ্নে
প্রান্তর থেকে প্রান্তরে
আজ গেয়ে উঠে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি তোমায় ভুলিতে পারি।

এ গানের শেষ নেই
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গাইবে
বাংলার আকাশ, নদী, খাল-বিল,
গাছ-গাছালি, বনের পাখি, কাঠ-বিড়ালী।

এ গানের মুর্ছনায়
বাংলার কিষান-কিষানির কন্ঠে
ভাসে মুক্তির অভিধান
ছাত্র-শিক্ষক , কবি ও শিল্পীর
রচনায় আসে নতুন নতুন গান
শিল্পীরা আঁকলেন
নাট্যজনেরা লিখলেন
পেশাজীবিগন নেমে এলেন
কৃষক-শ্রমিকের আঙ্গিনায়
ঘরে ঘরে জম্ম নিল
গণঅভ্যুত্থান।

এভাবেই বায়ান্নর পথ বেয়ে
একুশের শহিদের
রক্ত দিয়ে লেখা হলো
অমর সব স্লোগান ।

তোমার ভাষা আমার ভাষা
বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,
দিতে হবে, দিতে হবে ।

আমার ভাইয়ের বুকে গুলি কেন,
জবাব চাই, জবাব চাই
আমার বোনের বুকে গুলি কেন,
জবাব চাই, জবাব চাই ।

গণআন্দোলনের পথ বেয়ে
শ্লোগান এলো
সোনার বাংলা শ্মশান কেন
জবাব চাই, জবাব চাই
তুমি কে আমি কে
বাঙালী বাঙালী ।

পদ্মা-মেঘনা-যমুনা
তোমার আমার ঠিকানা
পিন্ডি না ঢাকা- ঢাকা ঢাকা
জিন্নাহ মিয়ার পাকিস্তান
আজিমপুরের গোরস্তান ।

বীর বাঙালী অস্ত্র ধর
বাংলাদেশ স্বাধীন কর
বীর বাঙালী অস্ত্র ধর
সোনার বাংলা মুক্ত কর ।

ভাষার জন্য ৫২এর
পথ পরিক্রমায়
৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
সংগ্রামী জনতার
ক্লান্তিহীন পথচলায়
সমৃদ্ধ আজ বাংলার পথ-ঘাট
কিষান কিষানির আঙ্গিনা ।

একুশের বুক চিরে জেগে উঠা
বাংগালীর শাশ্বত স্লোগান
দিচ্ছে যোগান
বাংলাকে দাবায়া রাখার শক্তি
আজ আর কারও নেই
ঘরে বাইরে কোথাও না ।

এই চেতনার পথ বেয়েই
দেশের অপামর জনতার
অসীম ত্যাগ তিতিক্ষার
বিনিময়ে্ আসল বাংলার
বহুল কাঙ্খিত স্বাধিনতা।

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:১৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ এসেছিলেন এ ব্যাপারে আমার কাছে যথেষ্ট পরিমান তথ্য আছে আমি আপনার পোস্টে তা শেয়ার করছি।

------------------------------------------------------------------
মধ্যহ্ন - হুমায়ূন আহমেদ
------------------------------------------------------------------

রঙিলাবাড়ির ঘাটে মাঝারি আকৃতির বজরা এসে থেমেছে। বজরায় আছেন মোহনগঞ্জের বাম গ্রামের শৈলজারঞ্জন মজুমদার। রসায়নশাস্ত্রে M.Sc করা দারুণ পড়ুয়া মানুষ। তিনি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে ডাক পেয়েছেন। শান্তিনিকেতনের বিজ্ঞান ভবনে যোগ দেবার চিঠি। মানুষটা গানপাগল। চান বিবি নামের অতি সুকণ্ঠী গায়িকার খবর পেয়ে এসেছেন। রঙিলাবাড়িতে উপস্থিত হতে তার রুচিতে বাঁধছে। তিনি চান বিবিকে খবর পাঠিয়েছেন। যদি সে বজরায় এসে কয়েকটা গান শোনায়। অপ্রচলিত গান সংগ্রহেও তার ঝোক আছে। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় (শ্রাবণ মাস এবং ভদ্র মাস) নৌকায় ঘুরে ঘুরে গান সংগ্রহের বাতিকও তাঁর আছে তিনি শুধু যে গান লিখে রাখেন তা না, গানের সুরও আকার মাত্রিক স্বরলিপিতে লিখে ফেলেন। স্বরলিপি লেখার বিষয়ে তার দক্ষতা আছে। চান বিবি সন্ধ্যাবেলায় বজরায় উপস্থিত হলো। তার সঙ্গে দুজন দাসি। একজনের হাতে কার্পেটের আসন। অন্যজনের হাতে রূপার পানদানিতে সাজানো পান। চান বিবি কর্পেটের আসনে বসতে বসতে বলল, কী গান শুনবেন গো? শৈলজারঞ্জন মজুমদার বললেন, তুমি তোমার পছন্দের গান কর। চান বিবি বলল, আমার পছন্দের গান আমি করি আমার জন্য। আপনের জন্য কেনো করব?
শৈলজারঞ্জন বললেন, সেটাও তো কথা। তোমার যে গান গাইতে ইচ্ছা করে গাও।
ধামাইল শুনবেন?
শুনব।
নাকি আমিন পাশার পাগলা গান শুনবেন।
পাগলা গান কী?
পদে পদে তালফেরতা মজা আছে।
তোমার সঙ্গে তো তবলা নেই। তাল আসবে কোথেকে।
আমার গলায় তাল আছে।
শৈলজারঞ্জন তিনটি গান শুনেই বললেন, আর লাগবে না। চান বিবি তীক্ষ্ণ গলায় বলল, আমার গান কি আপনার পছন্দ হয় নাই? পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আর শুনব না। আমি অতি বিখ্যাত একজন মানুষকে তোমার গান শোনার ব্যবস্থা করে দেব। উনাকে গান শুনিও। উনি যদি খুশি হন তাহলে তোমার মানবজন্ম ধন্য হবে।
চান বিবি অবাক হয়ে বলল, এই মানুষ কে?
শৈলজারঞ্জন বললেন, উনি বাংলাগানের রাজার রাজা। তার নাম রবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুর। তুমি নিশ্চয়ই তার গান কখনো শোন নি? আমি উনাকে চিনেছি। উনার গানরে বলে রবিবাবুর গান। একটা গানের সুর পরিষ্কার মনে আছে। কথা মনে নাই। এক দুই পদ মনে আসে।
শৈলজারঞ্জন অবাক হয়ে বললেন, এক দুই পদ শোনাও তো।
চান বিবি শুদ্ধ সুরে গাইল–
চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে–
নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।
শৈলজারঞ্জন আগ্রহের সঙ্গে বললেন, আমি গানটা ঠিক করে লিখে দেই? তুমি ভালোমতো শিখে রাখ। সত্যি যদি কোনোদিন সুযোগ হয়। রবীন্দ্রনাথকে গানটা শোনাবে।
চান বিবি হ্যাঁ-সূচক ঘাড় কাত করল।
মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নিমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছেন ময়মনসিংহে। তিনদিন থাকবেন শিক্ষা বিস্তার কার্যক্রমের উপর কয়েকটা বক্তৃতা দেবেন। ময়মনসিংহের ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চে থিয়েটার দেখবেন। তার জন্যে পাখি শিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। তিনি শিকার পছন্দ করেন না বলে সেই প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে। তার বদলে ব্ৰহ্মপুত্র নদে বিহার এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান। রবীন্দ্ৰনাথ ময়মনসিংহে পৌঁছে জমিদারদের টানাটানিতে পড়ে গেলেন। কোথায় রাত কাটাবেন এই নিয়েও সমস্যা। শশীকান্ত আচার্য চাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ থাকবেন তাঁর বাড়ি শশীলজ’-এ। গৌরীপুরের মহারাজা ব্ৰজেন্দ্র রায়চৌধুরী চাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ রাত কাটাবেন ‘গৌরীপুর লজ’-এ। তাঁর ধারণা সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এই দোতলা বাড়ি কবিগুরুর পছন্দ হবে বাড়িটা তিনি চীনা মিস্ত্রি দিয়ে তৈরি করেছেন। সুদূর বাৰ্মা থেকে আনা হয়েছে সেগুন কাঠ। এদিকে মুক্তাগাছার আরেক জমিদার রাজা জগত কিশোর আচাৰ্য চাচ্ছেন রবীন্দ্ৰনাথ থাকবেন তার নতুন বাড়ি ‘আলেকজান্দ্ৰা ক্যাসেল’-এ। তিনদিনের ক্লান্তিকর ময়মনসিংহ ভ্রমণের শেষে রবীন্দ্ৰনাথ চলে এলেন কেন্দুয়ার আঠারোবাড়িতে। আঠারোবাড়ির জমিদার বাবু প্রমোদ রায়চৌধুরী মহাসমাদরে তাকে নিয়ে এলেন। যে বাড়িতে তাকে রাখা হলো সেই বাড়িটা কাঠের। বাড়ির দোতলায় বিশাল বারান্দা। বারান্দায় কবির জন্যে আরামদায়ক কেদারা পাতা। ভ্ৰমণে ক্লান্ত কবি আরাম কেদারায় শুয়ে সারা সন্ধ্যা বাংলাদেশের ঘন বর্ষণ দেখলেন

রাতে গান রচনা করলেন–

আজি ঝরে ঝরো মুখর বান্দরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।।
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদভ্ৰান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বিলাকার পথখানি নিতে চিনে।।
মেঘমাল্লারে সারা দিনমান
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা— মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে।।

কবিকে আনন্দ দেবার জন্যে নৈশভোজের পর গানবাজনার আয়োজন করা হলো। একজন বংশীবাদক বাঁশি বাজাল। কবি মন দিয়ে শুনলেন না। হাই তুলতে তুলতে বললেন, শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। আজ শুয়ে পড়ি। মহারাজা বললেন, অবশ্যই। শোবার আগে একটা গান কি শুনবেন? আপনার রচিত গান। সুকণ্ঠী গায়িকা। মনে হয় আপনার ভালো লাগবে। বাবু শৈলজারঞ্জন মজুমদার আমাকে পত্র দিয়ে এই গায়িকার কথা বলেছেন। তাকে পালকি করে আনিয়েছি। অবশ্য সামান্য কিন্তু আছে। রবীন্দ্রনাথ বললেন, কিন্তু আছে মানে কী? মেয়েটির বাস ভদ্রঘরে না। তার বাস পঙ্কে। পঙ্কে বাস তো পদ্ম’র। শুনি পদ্ম’র গান।
মহারাজা ইশারা করতেই পর্দার আড়াল থেকে জুলেখা বের হলো। জড়সড় হয়ে বসল। পায়ের কাছে। মহারাজা বললেন, এর উচ্চারণ শুদ্ধ হবে না, কিন্তু কণ্ঠ মধুর।
জুলেখা খালি গলায় গাইল, চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে—
কবি চোখ বন্ধ করে গান শুনলেন। গান শেষ হবার পর চোখ মেলে। বললেন, কণ্ঠের মাধুর্যে উচ্চারণের ত্রুটি ঢাকা পড়েছে। তোমার নাম কী? জুলেখা বিড়বিড় করে বলল, চান বিবি। তুমি তাহলে চন্দ্রের স্ত্রী? ভালো তো। তুমি শান্তিনিকেতনে আসবে? গান শিখবে? কোনোকিছু না বুঝেই জুলেখা ঘাড় কাত করল। রবীন্দ্রনাথ মহারাজার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার এই গান পূজাপর্বের। কিন্তু মেয়েটির গলায় গানটা শোনার পর মনে হচ্ছে গানটা প্রেমের। মানব-মানবীর প্রেম। কথা শেষ করেই তিনি জুলেখার দিকে তাকিয়ে বললেন, চন্দ্র-স্ত্রী, কাছে এসো, আশীর্বাদ করে দেই। জুলেখা এগিয়ে এলো। রবীন্দ্রনাথ তাঁর মাথায় হাত রাখলেন। জুলেখা কি টের পেল যে আজ তার পঙ্কের জীবন ধন্য হলো?* ১৯২৬ ইংরেজি।


মধ্যাহ্ন ১, মধ্যাহ্ন ২ - ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন আর্কাইভ



০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৪৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




আপনার এই মুল্যবান মন্তব্য পোষ্টটিকে পুর্ণতা দিয়েছে।
গত ১৫দিন ধরে অনেক খুঁজেছি ময়মনসিংহে অবস্থানকালে বিশ্বকবি কি কবিতা লিখেছিলেন । সেটা পাচ্ছিলাম না সঠিকভাবে ।
যে কবিতা গুলি তিনি ময়মনসিংহে থাকাকালীন রচনা করেছিলেন বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন সে গুলি একটু ঘেটে দেখতে পাই তাদের রচনা স্থান জোড়াসাকু ও রচনা কাল অনেক আগের বলে দেখা যায় । যাহোক, আপনার এই মন্তব্যে কবির ময়মনসিংহে অবস্থানকালীন সময়েলেখা একটি গানের সাক্ষাত পেয়ে ধন্য হলাম ।

জুলেখা তথা চান বিবির কণ্ঠে গাওয়া রবিন্দ্র গীতিটির লিরিক সত্যিই অপুর্ব ।
তার কন্ঠে গাওয়া গনটি জানি কতই না হয়েছিল সুমধুর।
যাহোক এখন জয়তি চক্রবর্তীর কন্ঠে
চরণ ধরিতে দিয়াে গাে আমারে, নিয়াে না, নিয়াে না সরায়ে
গনটিশুনতে শুনতে এই প্রতি মন্তব্যটি লিখলাম
গানের কথাগুলি অপুর্ব লাগছে

চরণ ধরিতে দিয়াে গাে আমারে, নিয়াে না, নিয়াে না সরায়ে—
জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে বক্ষে ধরিব জড়ায়ে।
স্খলিত শিথিল কামনার ভার বহিয়া বহিয়া ফিরি কত আর—
নিজ হাতে তুমি গেঁথে নিয়াে হার, ফেলো না আমারে ছড়ায়ে।
চিরপিপাসিত বাসনা বেদনা বাঁচাও তাহারে মারিয়া।
শেষ জয়ে যেন হয় সে বিজয়ী তােমারি কাছেতে হারিয়া।
বিকায়ে বিকায়ে দীন আপনারে পারি না ফিরিতে দুয়ারে দুয়ারে—
তােমারি করিয়া নিয়ো গাে আমারে বরণের মালা পরায়ে।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:২৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনি অনেক কষ্ট করে অনেক মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করে লেখার গভীরতা সৃষ্টি করেন । কিন্ত দেশের শাসকমণ্ডলী কেন এইসব বুঝে না জানি না । আমাদের এলাকায় এখন ইরি ধান চাষ করে না মানুষ বলে খরচ বেশী পড়ে । আগে শীতের দিনে শাকসবজি করতো তাও এখন করতে চায় না । আর বলে দাম বেশী ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:১৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

আপনি অনেক তথ্য মন্তব্যের ঘরে তুলে ধরেছেন ।
অনেকেই বলতেছেন ইরিতে খরচ বেশী ।
যেমন লাগে সেচ তেমনি লাগে সার ও কীট নাশক
,সাথে নিরানী ও ইদুরের উপদ্রব। তার পরে যাও হয়
ধান ,ঘরেতুলে কৃষক পায়না তার উপযুক্ত দাম ।

শুভেচ্ছা রইল

৮| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৪৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: এক বসাই পড়ে ফেললাম। চেনা স্মৃতিগুলো সবগুলোই তুলে এনেছেন, সব স্মৃতির সাথে একাত্ব অনুভব করলাম। নিজের অনেক স্মৃতি মনে পরে গেল। বর্তমান প্রজন্ম এসব চিনবে না।

ইরি ধানের ভাত কখনো খেতে পারিনি। বিদেশে এসে প্রথমে গ্রেস নামের এমন একটা মোটা চাল প্রথমে খেতে হয়েছিল। অন্য চাল কোথায় পাওয়া যায় জানতাম না এবং দাম কম ছিল। তবে মোটা চালের জীবন থেকে বেড়িয়ে বিদেশে বসে, স্বস্থিতে দু মুঠো ভাত খেতে পারি এটা অনেক ভালোলাগার।
দেশি সুঘ্রাণ যুক্ত মজাদার চালের চাষবাস খুব জরুরী। কদিন ধরে পোলাউ রান্না করছি, দিনাজপুরের বিখ্যাত কালিজিরা চালের। বাসমতি থেকে ঘ্রাণে স্বাদে, শতগুনে সমৃদ্ধ অথচ আমরা বিদেশিদের কাছে পরিচিত করতে পারলাম না এখনো।
নদীর পানিতে বজ্য ফেলে দেয়ার পুরানো সিস্টেম বন্ধ করার কি উপায় বের হয়েছে। ভিন্ন পদ্ধতি চালু করা জরুরী পরিবেশ রক্ষার জন্য।
কাপড় কারখানাগুলির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ শুরু থেকেই বুড়িগঙ্গার অবস্থা খারাপ হওয়ার সময় থেকে। এখনো কি কোন রকম পদ্ধতি নেয়া হয়েছে পরিবেশ নষ্ট না করার জন্য।
অনেক কিছুর সমাহর লেখায় কিছুটা বিষয়ে মন্তব্য করলাম

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৪৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



এক বসাই পড়ে ফেলেছেন শুনে খুশি হলাম । চেনা স্মৃতিগুলো সবগুলো স্মৃতি তুলে আআনতে পারলাম,অআরো অনেক বাকি আছে ।পরশ পাথর প্রাপ্তির সাথে আরো কিছু স্মৃতিকথা উঠে আআসবে পরের পর্বগুলিতে । সব স্মৃতির সাথে একাত্বতা অনুভব করায় ভাল লাগল । আপনার মনে পড়া স্মৃতিগুলি নিয়ে পোষ্ট দিলে ভাল লাগবে । বর্তমান প্রজন্মকে পুরানো কিছু ইতিহাস জানানোতো আমাদের পুরানোদের একটি দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে । অবশ্য সঠিক লাইনটি একটু ধরিয়ে দিতে পারলে এই প্রযুক্তির দিনে ইন্টারনেট ঘেটে নতুন প্রজন্ম অনেক পুরানো ইতিহাস আরো ভাল করে জানতে পারবে ।

নদীর পানি দূষন রোধের অন্যতম উপাই হলো সলিড বর্জ্য গুলিকে ছেকে তুলে ফেলা, নদীতে বর্জ্য ফেলা রোধ করা ও ড্রেজিং এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করা । তবে নদীর পানি দুষনের অন্যতম বাহন হলো শহরের পয়োবর্জ্য শোধনাগারে পরিশোধন করা ।
ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার কোটি লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই পরিবর্জ্য শোধনের জন্য ঢাকার পাগলায় একটি মাত্র শোধনাগার আছে । ২০১৪ সালে ঢাকা শহরের শোধনাগার ও সেপটিক ট্যাংকের ওপর বিশ্বব্যাংক একটি ‘ডায়াগ্রাম’ তৈরি করেছিল। তাতে বলা হয়, পাগলা শোধনাগারে বর্জ্য শোধন (আউটকাম) হচ্ছে মাত্র ২ শতাংশ। এর যন্ত্রপাতি বেশ সেকেলে । ইতোমধ্যে ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। সে অনুসারে ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ রোধে পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালে মাত্র একটি তথা দাসেরকান্দি শোধনাগারের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। ওয়াসার দাবী ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ মানুষের বর্জ্য পরিশোধনের আওতায় আসবে। এখন আশায় থাকা ছাড়া কোন উপায় নাই ।

মুল কথাগুলির উপরেই আপনি মুল্যবান মন্তব্য রেখেছেন ।

শুভেচ্ছা রইল

৯| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মনোমুগ্ধকর পোষ্ট ।অনেক কিছু জানতে পারলাম,বিশেষ করে মুক্তি যুদ্ধের প্রথম দিক কার কথা।

পোষ্ট টি কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ধারাবাহিক দিলে বুঝতে সুবিধা হত।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


পোষ্টটি মনোমুগ্ধকর অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ নিয়ে পৃথক একটি পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে ।
ঠিকই বলেছেন পোষ্টটি ধারাবাহিক ভাবে দিলে ভাল হতো ।
তবে জানেনইতো ' ল অফ ডিমিনিশিং ইউটি লিটি', পর্ব বাড়তে
থাকলে পরের পর্বগুলির প্রতি পাঠকের চাহিদা বা তৃপ্তি
ক্রমেই কমতে থাকে । পরের পর্বে লেখার মান আরো
বেশী হলেও দেখা যায় পঠক সংখ্যা কমেই যাচ্ছে । পর্বাকারে
সকল লেখার ক্ষেত্রেই এমনটি দেখা যায় । তাই পরের পর্ব
লেখার উৎসাহও তখন কমে আসে।

শুভেচ্ছা রইল

১০| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ছবি ও বর্ণনায় সমৃদ্ধ অসাধারণ পোস্ট। এই ধরণের লেখা একমাত্র আপনার দ্বারাই সম্ভব। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। পুরো পোস্টে একটি বিষয় নয়, নানা বিষয়ের অবতারনা করা হয়েছে। সবগুলো বিষয়ই প্রাসঙ্গিক। তাই পড়ার গতিতে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।
একটি বিষয়ের উপর কিছু বলতে চাই। সেটা হলো ধান। শুধু ধানের উপর আলাদাভাবে আপনি একটা পোস্ট দিতে পারেন। আপনার মতো জ্ঞানী গুনী মানুষের পক্ষে এটা কঠিন হবে বলে মনে হয় না। আমাদের পরিবারে দীর্ঘদিন যে চাল খাওয়ার প্রচলন ছিল, সেটা হলো দাদখানি। এই দাদখানি চালের ধান আমার দাদাজান তাঁর জমিতে নিয়মিত আবাদ করাতেন। ১৯৭১ সালে এবং তারপরেও ১৯৮৫-৮৬ সাল পর্যন্ত আমাদের জমিতে বাড়িতে খাওয়ার জন্য এই ধানেরই আবাদ হতো। স্বাধীনতার আগেও আমরা এই চালের ভাত খেতাম। এত সুস্বাদু চালের ভাত খুব কমই আছে। যাই হোক, যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। কিছু করার নেই।

ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



পোষ্টটি অসাধরন অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
আমার ভাবনাগুলি স্মৃতিকথার মোরকে এক জায়গায়
সমবেত করে রাখলম , পরে এখান হতে কাজে লগানো
যাবে বলে।

ধান নিয়ে একটি পৃথক পোষ্ট দিব ইনসাল্লাহ ।
যদিও কৃষক পরিবারের সন্তান হিসাবে গর্ববোধ করি
তার পরেও ধানের বিষয়ে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত।
তাই আশংকা করি ধান নিয়ে লেখতে গিয়ে প্রিয় কবি
যোগিন্দ্রনাথ সরকারে কাজের ছেলের মত বলে না ফেলি

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল,চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,”
” ছিঁড়ে দেবে চুল।

তার পরে হয়তবা বলে ফেলব
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!

ইত্যাদি ইত্যাদি

আপনার দাদাজান প্রসিদ্ধ দাদখানি চালের চাষ
করতেন শুনে খুশী হলাম ।
খাটিকথা বলেছেন
যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। কিছু করার নেই।

তবে চলুন সকলে মিলে একটু চেষ্টা করে দেখি আবার
দেশী জাতের ধানের চাষকে লাভ জনক করা যায় কিনা ।

শুভেচ্ছা রইল

১১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৯

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: প্রচুর তথ্যসমৃদ্ধ সময়োপযোগী একটি অসাধারণ পোস্ট। ধন্যবাদ ডঃ আলী। পোস্টটি কয়েক পর্বে দিলে বোধহয় আরো আকর্ষণীয় হতো।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে যেভাবে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করে ফেলছি তা বোঝার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের তথাকথিত শিক্ষিত ( ! ) সমাজের আছে কি ? নাকি সবাই অর্থ ও বিত্তের পরশপাথরের পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটে চলার কারণে প্রকৃতিকেই সেক্রিফাইস করে ফেলেছে ?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



লেখাটি অসাধারণ অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
আপনার পরামর্শ অনুযায়ী এর পর হতে পর্বাকারে দিব।

আপনি ঠিকই বলেছেন পরিবেশ আমরা সেক্রিফাইস করেই ফেলেছি ।
অনেকেই মনে করে সে তার নীজ প্রয়োজনে পরিবেশের সামান্য ক্ষতি করেছে ।
ভেবে দেখেনা একটুও তার সামান্য ক্ষতি মোটা দাগে দেশের কত বড় ক্ষতি করেছে।
এদের জন্য বিশ্ব কবির সমান্য কবিতায় বলা কথামালা অনুযায়ী শাস্তি প্রযোয্য ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতার কাশীর মহিষী নদীতে স্নান শেষে
কৃষকের পর্ণকুটিরে আগুন দিয়ে শীত নিবারণ করেছিলেন। তাঁর শীত নিবারণের
তুলনায় এটা ছিল সামান্য ক্ষতি, কিন্তু কৃষকের কাছে ছিল সর্বস্ব হারানো।
কৃষকের দুর্দশার কথা শুনে রাজা রানীকে কঠীন শাস্তির বিধান দিয়েছিলন।
পুরা কবিতাটি এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন সামান্য ক্ষতি

কবিতার শেষে রাজার বিধান
লেখা আছে এমন করে

যতদিন তুমি আছ রাজরানী
দীনের কুটীরে দীনের কী হানি
বুঝিতে নারিবে জানি তাহা জানি—
বুঝাব তােমারে নিদয়ে।

রাজার আদেশে কিঙ্করী আসি
ভূষণ ফেলিল খুলিয়া।
অরুণ-বরন অম্বরখানি
নির্মম করে খুলে দিল টানি,
ভিখারী নারীর চীরবাস আনি
দিল রানীদেহে তুলিয়া।

পথে লয়ে তারে কহিলেন রাজা
“মাগিবে দুয়ারে দুয়ারে;
এক প্রহরের লীলায় তােমার
যে ক’টি কুটীর হােলো ছারখার
যতদিনে পারো সে ক’টি আবার
গড়ি দিতে হবে তােমারে।


শুভেচ্ছা রইল

১২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৪

নতুন নকিব বলেছেন:



বরাবরের মত অনেক কষ্ট আর বিপুল ধৈর্য্যের সমন্বয়ে অসাধারণ একটি পোস্ট। মোবারকবাদ আপনাকে।

বিস্তারিত পাঠের পরে পুনরায় মন্তব্যে আসার ইচ্ছে। আপাতত + দিয়ে গেলাম।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



একটুকষ্ট হলেও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি
সকলের সাথে শেয়ার করলাম।
আপনার প্রতিও রইল মোবারকবাদ ।
আপনার মুল্যবান মন্তব্যের প্রতিক্ষায় রইলাম।

১৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৫

জোবাইর বলেছেন: স্মৃতিচারণ করতে গেলে এক কথা থেকে অন্য কথা চলে আসে - সেটাই স্বাভাবিক। অনেক কিছু জানলাম। আজকের তরুন প্রজন্ম এসবের অনেক কিছুই জানে না। অনেক পরিশ্রম করে লেখা মহাপোস্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আমার মনে হয় আপনার এই পরশ পাথর সিরিজটি আরো ছোটো ছোটো পর্ব করে নিয়মিতভাবে লিখলে লেখক ও পাঠক উভয়ের জন্য সুবিধা হতো এবং বিষয়ের ব্যপ্তিও আরো বাড়ানো যেতো। পরিশেষে সবগুলো পর্ব একত্রিত করে লেখকের স্মৃতিচারণ গ্রন্থ হিসাবেও হয়তো প্রকাশ করা যাবে।

এই পোস্টে পর্বগুলো এভাবে হতে পারতো:
পরশ পাথর পর্ব ২ : ধান
পরশ পাথর পর্ব ৩ : বেদে-বেদেনী
পরশ পাথর পর্ব ৪ : কামরূপ-কামাখ্যা
পরশ পাথর পর্ব ৫ : কালীনারায়ণ
পরশ পাথর পর্ব ৬ : ময়মনসিংহে রবীন্দ্রনাথ
পরশ পাথর পর্ব ৭ : সুতিয়া নদী
পরশ পাথর পর্ব ৮ : শুশুক

শুভেচ্ছা নেবেন, ভালো থাকুন।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

ধন্যবাদ মুল্যবান মন্তব্যের জন্য।
পোষ্টটি আর মহাপোষ্ট হল কোথায় :)

যাহোক, বিষয়গুলি নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত
পোষ্ট দেয়ার জন্য অনুপ্রানীত হলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

১৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: এক কথায় বলি- অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর একটি পোস্ট।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



পোষ্টটি মনোমুদ্ধকর অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

শুভেচ্ছা রইল

১৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
দেশ মাতৃকা, যুদ্ধ, ধান, বেদে-বেদেনী, নদী ও শুশুক, যাদুবিদ্যার কামরূপকামাক্ষা সবই যেন উঠে এসেছে ইতিহাস থেকে। সাপের মনি থেকে এরা কম কিসে।++++++++

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


মনযোগ দিয়ে পোষ্টের সবগুলি বিষয় পাঠ
করে কথা বলেছেন দেখে ভাল লাগল ।
পোষ্টে এত এত প্লাস দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

শুভেচ্ছা রইল

১৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: ডঃ এম এ আলী,



পরশ পাথর খুঁজতে গিয়ে সব ধুলো-বালি-ছাই উড়িয়ে দিয়ে গেছেন। নিঃসন্দেহে তার অনেকটা আমাদের চোখে নাকে ঢুকে চোখ জ্বালা আর সশব্দ “হাচি”র জন্ম দেবেই ।
সে কারনেই চোখ জ্বালা করছে, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাজানো আপনার এই বিশাল পোস্টের ভেতরে নদী-ডলফিন প্রসঙ্গের অবতাড়নায়। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার যোগান দিয়ে গেছে সবটাই। সেই জ্বালা থেকেই মন্তব্য করছি ।

নদীর হারিয়ে যাওয়া আর ডলফিন তথা জলজপ্রানীদের বিলুপ্তির পেছনে পরিবেশের প্রতি আমাদের বৈরী আচরণ যে শতভাগ দায়ী তা বোধহয় বুঝিয়ে বলার দরকার করেনা। আমাদের পরিবেশ দূষনের চিত্র ভয়াবহ।
দেশের পরিবেশ আইন ঘাটলে আপনি দেখবেন যে, সেখানে এতো এতো ধারার আইন আছে যে তা যদি সত্যিসত্যিই বাস্তবে প্রয়োগ হতো তবে পরিবেশ দূষনের নাম ভুলেও আমাদের মুখে আসতোনা কখনই!
সত্তরের দশক থেকে বাংলদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে শুরু হয়েছে, পরিবেশ সংরক্ষণে প্রচলিত পরিবেশ আইনের বাস্তব কর্মকাণ্ড। ফলে জারি হয় ‘ এনভায়রনমেন্ট পলিউশান কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ১৯৭৭ এবং গঠিত হয় এনভায়রনমেন্ট পলিউশান কন্ট্রোল বোর্ড। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পরিবেশ অধিদপ্তর। ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয়ভাবে স্বীকৃত ও ঘোষিত হয় জাতীয় পরিবেশ নীতিমালা।
এরপর প্রণীত হয় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫। আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর।
পরে আইনটি কার্যকর করতে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ ও পরিবেশ আদালত আইন, ২০০০ প্রণীত হয়।
এ ছাড়া পরিবেশ সমস্যার মোকাবিলায় বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহার, বায়ু ও পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য, কঠিন বর্জ্য, বন সংরক্ষণ, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, খনিজ সম্পদ, উপকূলীয় বনাঞ্চল ব্যবস্থাপনা, শিল্প, স্বাস্থ্য ও পয়োনিষ্কাশনবিষয়ক দুই শতাধিক আইন রয়েছে।

পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণের জন্য ১২ ধারার বিধান মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এতে বলা আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের সরকার নিয়োজিত মহাপরিচালকের কাছ থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া কোনো এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। ১২ ধারার এই বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দণ্ড হলো অনধিক তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এই আইনের ১৫ ধারায় আরো বলা হয়েছে, পরিবেশ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই শাস্তির পরিমাণ সর্বনিম্ন ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডপূর্বক পলিথিনসামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা, মহাপরিচালকের নির্দেশ অমান্যকরণ এবং অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণ নির্গমন ইত্যাদি অপরাধের জন্য অনধিক ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।

অথচ মজার বিষয় হলো, ক্ষতির পরিমান নির্ণয়ের কোন ব্যবস্থাই এইসব আইনে নেই পাশাপাশি
এসব অপরাধ জামিনযোগ্য।
আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য যে আইন আছে তা জামিন অযোগ্য ধারার অপরাধ বলে বিবেচিত তাই আমাদের দেশে পাহাড় কাটা সহ ক্ষতিকর ও অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য ছড়িয়ে পরিবেশ দূষনের মতো অপরাধও জামিনযোগ্য হওয়ায় অপরাধীরা পরিবশে দূষণ জনিত অপরাধ সংঘটিত করতে সাহস পাচ্ছে।
ফলে আপনার পোস্টে নদী ও জলজ প্রানী নিয়ে যে ভয়াবহ চিত্র এঁকেছেন তেমন চিত্রের ছড়াছড়ির শেষ নেই।

আবার মানবাধিকার সংগঠন “বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ” কর্তৃক পরিচালিত “পরিবেশ সংরক্ষণে আইনী দুর্বলতা ও কর্তৃপক্ষের ত্রুটি' নির্ণয়ে এক তথ্যানুসন্ধান ও গবেষণা কর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ যা পরবর্তীতে ২০১০ সালে সংশোধন করা হয় এবং নতুন আইন হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন (সংশোধন) আইন ২০১০ প্রণীত হয় এবং পরিবেশ আদালত আইন ২০০০, পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ এর মধ্যে ব্যাপক আইনী দুর্বলতা, প্রয়োগে ঘাটতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নানাবিধ অনিয়ম, ত্রুটি ও অজ্ঞতা সুস্পষ্ট ।

এখন বুঝুন, আমাদের চিল্লিয়ে কোনও লাভ আছে কি ? আছে হয়তো। এটাও একধরনের তৃপ্তি যে আমরা গলা তুলেছি। কিন্তু সেই গলা যদি লক্ষ কন্ঠের না হয় তবে কাজের কাজ কিছুই হবেনা।
সোচ্চার হতে হবে সবাইকে বজ্রকন্ঠে এবং একই সাথে।

ভালো থাকুন আর এভাবেই আমাদের চোখ খুলে দিন বারেবারে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৩৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আপনার এই দীর্ঘ মুল্যবান মন্তব্যটি আমার পোষ্টটিকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে,সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন । দেশের পরিবেশ সংক্রান্ত গুরুত্বপুর্ণ আইনের সংক্ষিপ্ত বিবরন সাথে তাদের বাস্তবায়ন দুরাবস্থার কথা আপনার মন্তব্যে উঠেএসেছে সুন্দরভাবে ।

এটা সকলে একবাক্যে স্বীকার করছেন যে পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের মানচিত্রে ধারাবাহিকভাবে অবনতি হয়েছে।যদিও সংবিধান থেকে শুরু করে সকল দলিল দস্তাবেজে সব সরকারের আমলেই পরিবেশ সুরক্ষা সব সময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। তবে পরিবেশ , বন ও নদী রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার ও দায়িত্ব শুধু কাগজে-কলমের মধ্যেই মুলত সীমাবদ্ধ।পরিবেশ সুরক্ষায় বড় বাধা হিসেবে রাজনৈতিক চাপ, প্রভাবশালীদের আইন না মানা, দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার নদীদূষণ বন্ধ করার জন্য কিছু উদ্যোগে নেয়া হলেও গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে গড়ে ওঠা শত শত শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন শর্তে বৈধতা দেওয়া হয়।সুন্দর বনেও একই রকম অবস্থা ।রাজধানীর চারপাশের চারটি নদীর পানি পান ও প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বহু বছর আগে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মেঘনা, ধলেশ্বরী ও শিতলক্ষার পানি দূষন। এসব নদীর তীরে গড়ে ওঠা দূষণকারী শিল্পকারখানার বেশির ভাগের মালিক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদেরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যতম কাজ হয়ে উঠেছে যেন বিভিন্ন শিল্পকারখানাকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া ও তা নবায়ন করা। কিন্তু এসব কারখানা পরিবেশ রক্ষার শর্ত ঠিকমতো মানছে কি না, তা তদারকি নিয়ে দুর্বলতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে দুর্নীতি ও অদক্ষতার অভিযোগও পুরোনো।

পরিবেশ ও বন রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করতে হবে। তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।সরকারি সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব ও অঙ্গীকার সঠিকভাবে পালন করবে এটা দেশবাসি আশা করতেই পারে । কিন্তু সে আশার বাস্তবায়ন বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত । তা না হলে পরিবেশের এমন বিপর্যয় হতে পারতনা কোনমতেই ।

আপনার মুল্যবান এ কথাগুলির সাথে একান্তভাবে সহমত আমাদের চিল্লিয়ে কোনও লাভ আছে কি ? আছে হয়তো। এটাও একধরনের তৃপ্তি যে আমরা গলা তুলেছি। কিন্তু সেই গলা যদি লক্ষ কন্ঠের না হয় তবে কাজের কাজ কিছুই হবেনা।
সোচ্চার হতে হবে সবাইকে বজ্রকন্ঠে এবং একই সাথে।

তাই সকলকে সচেতন হয়ে বজ্রকন্ঠে পরিবেশ দূষনের বিরোদ্ধে কথা বলতে হবে ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

১৭| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৯

সোহানী বলেছেন: হায় আল্লাহ্ কি নেই এ লেখায়!!! সমস্যা, সম্ভাবনা, সমাধান, ইনফরমেশান, আকুতি............. কি নেই এখানে!!

আহ্ দেশের বুদ্ধিজীবিগোষ্ঠি যদি একবার আপনার লেখাগুলো পড়তো আর একটু ভাবতো তাহলে দেশ আজ কোথায় চলে যেত।

জোবাইর এর সাজেশান মতো আপনার লেখার বিষয়গুলো যদি ভাগ করা যেত তাহলে মনে হয় পাঠক আরো বিষয় সম্পর্কিত চিন্তা করার সুযোগ পেত। তবে আমার মতে আপনার প্রতিটা বিষয়ই পূর্নাঙ্গ পোস্টের দাবী রাখে। এতে সবার অংশগ্রহনও নিশ্চিত হয়। এই যেমন আমার আপনার দেয়া প্রতিটা বিষয় নিয়েই কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু এতো লম্বা পোস্টের কারনে বারবার যেয়ে বিষয়গুলো দেখতে হচ্ছে। তারপর একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে করতে আরেকটি বিষয় নিয়ে চিন্তা মাথায় ঢুকে যাচ্ছে। যার কারনে আমার চিন্তাগুলোও কিছুটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

যাহোক, অতো ডিটেইলস্ এ যাবো না কিন্তু কিছু বিষয়ের সাথে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। যেমন সাপের মাথার মনি নিয়ে আমার মজার কিছু কাহিনী যেমন আছে তেমন কামরুপ কামাঙ্খা নিয়েও তেমন কিছু আছে। এক সময় হয়তো সেসব নিয়ে আসবো।

ও পিএল৪৮০ এর আন্ডারে কিন্তু এখনো বেশ কিছু প্রজেক্ট আছে। আমি প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার এনেছিলাম পিএল৪৮০ এর একটা প্রজেক্ট থেকে। যা তখন আইসিসিডিআরবি এর আন্ডারে ছিল।

আপনার পরশপাথর প্রাপ্তির অপেক্ষায় থাকলাম। যদিও অসংখ্য পরশপাথর আপনি এর মাঝেই পেয়েছেন!!!!

অনেক ভালো থাকুন আর অপেক্ষায় থাকলাম বাকি অংশের।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



সুন্দর মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

পর্বগুলিকে ছোট করে দেয়ার পরামর্শটি উত্তম প্রস্তাব ,তাহলে পাঠকের জন্য পাঠে সুগম হয় । তবে আমি পর্ব যতই ছোট করিনা কেন যে বিষয় নিয়ে লিখতে চাই তা একটু বিষদভাবে প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি সচিত্র তুলে না ধরলে মনে তৃপ্তি আসেনা ।তাই পর্ব যতই ছোট করিনা কেন তা প্রায় ৫০০০ শব্দ ছাড়িয়ে যাবেই ।ব্লগে পোষ্ট প্রকাশের জন্য যেহেতু কোন শব্দ সংখার কঠিন লিমিটেশন নাই তাই মনের আবেগে লিখে যাই। জানি প্রিয় পাঠকদের জন্য তা পাঠে কষ্ট হবে, তবে বিষয়টি যারা বিষদভাবে জানতে চান, দেখতে চান তারা একটু কষ্ট করে পুরাটা পাঠ করে যাবেন । এছাড়া প্রতিটি ছবিই একটি বিষয়ের সাবটাইটেল হিসাবে কাজ করে । যার যে বিষয়ে ইন্টারেষ্ট তিনি ঐ ছোট অংশ টুকুতে লেখা বিরবন পাঠান্তর ঐ বিশেষ বিশেষ বিষযের উপর মন্তব্য দিয়ে তাঁর মতামত তুলে ধরে সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন ।লাইক দেখেই বুঝা যায় পাঠক পুরা পোষ্টটি মনযোগ দিয়ে পাঠ করেছেন ।

যহোক, আপনার মন্তব্যে থাকা পি এল ৪৮০ নিয়ে এর আগে পরের দুটো চারটা কথা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই ।

দেশকে বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ বলে দাবী করা হলেও দেখা যায় রয়েছে খাদ্য ঘাটতি, বিভিন্ন সংবাদ ভাষ্যে দেখা যায় দেশে বিপুল পরিমান গম আমদানি করা হচ্ছে । খাদ্য ঘাটতির জন্য সরকারীভাবে দায়ী করা হচ্ছে বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে। বন্যা বঙ্গবাসীর জীবনে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি দুই বছর অন্তর আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যা আমাদের জীবনে বয়ে আনছে অবর্ণনীয় দুঃখ, দুর্দশা ও ক্ষয়-ক্ষতি। সরকারীভাবে বলা হচ্ছে যে, বন্যা ও প্রকৃতির দুর্যোগের পরে মানুষের হাত নেই। এর জন্য মানুষ দায়ী নয়।

দ্বিতীয়তঃ বলা হচ্ছে যে, উন্নয়নের জন্য যা কিছু করা হচ্ছে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য। জনসংখ্যার মতবাদের প্রচারকদের যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ সার্থকভাবে না করা হয় তবে ধ্বংস অনিবার্য। জনসংখ্যা ত্বত্তের পতাকাবাহীরা খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে অনেক অনেক গুণ। এর অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু ও ধ্বংস ।

কিন্তু বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা অঞ্চল বর্তমানের তুলনায় আরও ৫ হতে ৭ গুন বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদান করতে সক্ষম। এই অঞ্চল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সামন্যতম প্রচেষ্া ও লক্ষ্য এই অঞ্চলকে বিশ্বের এক বিরাট ধনভান্ডারে পরিণত করতে পারে। জনসংখ্যা ও খাদ্য সমস্যা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কলিন ক্লার্ক বলেছেনঃ বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতি বৎসর শতকরা এক ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু কৃষি উৎপাদনের কৌশলের উন্নতির ফলে কৃষি উৎপাদন প্রতি বৎসর শতকরা দেড় ভাগ অথবা কোন কোন দেশে শতকরা দুই ভাগ বৃদ্ধি পাবে। ম্যালথাসবাদীরা যে সুগভীর হতাশার জাল বিস্তার করেছে তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে গিয়ে ছে বিশ্ব জনসংখ্যার বৃদ্ধিজনিত সমস্যাকে মোকাবিলা করবার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারই যথেষ্ট বলে প্রমান করে।

উল্লেখ্য সমুদ্রের জলসীমার নীচে অবস্থিত হল্যান্ড। হল্যান্ডের আক্ষরিক অর্থ হলো নীচু ল্যান্ড অর্থাং জমি। সমুদ্রের বাঁধ বেঁধে হল্যান্ডকে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে চীনের দুঃখ হোয়াংহোকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাইয়াগ্র জলপ্রপাতকে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

অথচ সে পথে না হেটে খাদ্য ঘাটতির জিকির তুলে সহজ উপাই হিসাবে ক্ষতিকর পি্ল ৪৮০ এর উপর জোকে পড়া হয়েছে ।আমাদের দেশের উপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নয়া ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের কব্জা সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে পি,এল ৪৮০ আর্ভিভুত হয়েছে। যা মুলত আমেরিকার উদ্ধৃত্ত পণ্য সাহায্য পরিকল্পনা। ১৯৫৪ সালে বগুড়ার মোহাম্মাদ আলীর আমলে সর্বপ্রথম আমেরিকার সাথে পণ্য সাহায্য চুক্তি সম্পাদিত হয়। প্রেসিডেন্ট কেনেডীর আমলে এই চুক্তির পরিধি সম্প্রসারিত করা হয়। ১৯৬১সালের আগষ্ট মাসে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা পাকিস্তানকে ৩৫০ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার পণ্যসামগ্রি, যথা গম, গুড়া দুধ, খাবার তেল, চর্বি, মাখন ইত্যাদি সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।সআমার মনে পরে ষাটের দশকের শেষ ভাগে আমাদের হাই স্কূলে ছাত্রদের টিফিনের জন্য বড় পরিমানের, গম,গুড়াদুধের প্যকেট ও বাটার ঘি আসত ,স্যারেরা বলতেন এটা আমিরিকান সাহায্য। আমরা কৃতজ্ঞতায় গদ গদ হয়ে যেতাম সআমিরিকানদের বদান্নতা দেখে । কিন্তু ঐ খাদ্য সাহায্য যতটা না স্কুলের বাবুর্চি দিয়ে খিচুরি পাকিয়ে আমাদেরকে টিফিনের জন্য খেতে দিতে তার চেয়ে বেশী চলে যেতো স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও টিচারদের বাড়ীতে। সেটা টের পেতাম দদা স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন
বলে ।এর মাধ্যমে এলাকার প্রভাবশালী মহলকে কব্জা করা হতো বিবিধ প্রকারে ।

যাহোক, পি এল ৪৮০ অন্যতম একটি খারাপ দিক ছিল এই প্রোগ্রামের অধীনে স্বল্পমুল্যে বিক্রয়লব্দ অর্থ আমিরিকা সাহায্যপ্রাপ্ত দেশের ভিতরে যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবে, এ অর্থের কেরামতিতেই তারা ঐ সমস্ত দেশে তাদের অপছন্দের সরকারের পতন ঘটায় ও পছন্দের সরকারকে ক্ষমতার গদিতে বসায় । এই পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দ্বারাই গ্রাম্য ওয়ার্কস প্রোগ্রামের কর্মসুচী চালু করা হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের দেশের কুমিল্লায় গবেষণাগার তথা পল্লী উন্নয়ন একাডেমী স্থাপন করা হয়। এইভাবে গ্রাম্য ওয়ার্কস প্রোগ্রামের জন্ম হয়েছে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীদের বদৌলতে এবং ঐ পরিকল্পনার সাহায্যে আমেরিকা আমাদের দেশের গ্রাম্যঞ্চলেও প্রবেশ করেছে এবং গ্রাম্য অর্থনীতিকে কব্জা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এড শিক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্র ও মিলনায়তন( TSC) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে আমেরিকার টাকায়। নয়া-উপনিবেশবাদী শাসন ও শোষণের হোতারা আমাদের দেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ইপিআইডিসি, কৃষি উন্নয়ন সংস্থা প্রভূতি সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহও পি এল ৪৮০ এর সহায়তায় আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে জড়িত হয়ে পরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এই ধারা অব্যাহত থাকে।যার কুফল দেশবাসীকে দেখতে হয়ছে।

এই পিএল ৪৮০ অধীনেই নয়া উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ ও মুৎসুদ্দী আমলাপুঁজি এ তিন শক্তি আমাদের দেশে গড়ে তুলেছে শাসন ও শোষেণের এক ইমারত। আর শোষণের এই ইমারতকে রক্ষা করবার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে পাহারাদার। এই পাহারাদার হল আমাদের সরকার। যুগের পর যুগ পর যুগ ধরে আমাদের দেশে যতগুলো সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমন্ত সরকারই শাসন ও শোষণের এই ইমারতকে রক্ষা করে চলেছে। সরকারের সমন্ত কার্যকলাপ এই তিন শক্তির স্বার্থের সেবায় নিয়োজিত হয়েছে। এর প্রভাব যে কত ভয়ংকর তা আমরা এখন মর্মে মর্মে অনুভব করছি বিবিধ প্রকারে । নদী দূষন ,পরিবেশ দূষন , অর্থনৈতিক শোষন ,রাজনীতি কলুষীকরন , বাক স্বাধীনতা হরন, দলীয় করন এসবের যাতাকলে হচ্ছে আমাদের যাবতীয় মঙ্গলাকাঙ্খার অকাল মরণ।

ইত্যাদি কারণে আমাদের সকলের সচেতনতা প্রয়োজন ।

শুভেচ্ছা রইল

১৮| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হায়রে পরশ পাথর...

কই থেইক্যা কই লইয়া যায় ;)
দিনে শেষে দেখি যে জ্ঞান গুলোকে অবহেলায় পাস করে যেতে চাই
সেগুলোই একেকটা পরশ তুল্য

সোহানীপুর কথা সহমত।
অনেক অনেক বিষয় এবং এত এত ডিপ টাচ দিয়ে লেখা প্রত্যেকটাই স্বতন্ত্র পোষ্টের দাবীদার।
তাই সে সব আলোচনার বদলে সাপের মনির মতো মাথায় তুলে রাখলাম

অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:২১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:





পরশ পাথরের এখনই দেখলেন কি?
হপাইতো শুরু ।
দিন যত যাবে এটা তত ঘনিভুত হতে থাকবে।
পরশ পাথরের ইতিহাস যে কোথাই গিয়ে
শেষ হবে তা ভেবে কুল পাচ্ছিনা ।

সাপের মনির মত মথায় তুলে
রাখার কথা শুন আপ্লুত হলাম ।

পরবর্তী পর্ব শীঘ্রই আসছে
সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রন রইল ।

ভাল থাকার শুভকামনা রইল ।




১৯| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৭

কাজী ফররুখ আহমেদ বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম

সুজলা, সুফলা, শস্য, শ্যামলা এই দেশে আউশ, আমন, বোরো মৌসুমে ধানের জাতে ও ব্যবহারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যতা। সেই বৈচিত্র্যতা উঠে এসেছে কবি জসীমউদ্দীনের একটি কবিতায়। তিনি লিখেছেন আমার বাড়ি যাইও ভোমর, বসতে দেব পিঁড়ে, জলপান যে করতে দেব শালি ধানের চিঁড়ে। শালি ধানের চিঁড়ে দেব, বিন্নি ধানের খই...বাড়ীর গাছের কবরী কলা, গামছা বাঁধা দই।

ধান চাষের তিনটি মৌসুমের মধ্যে আমন ও বোরো মৌসুম সুগন্ধি সরু বা চিকন ধান চাষের এর উপযুক্ত মৌসুম। এই ধানের রয়েছে দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা। সুদীঘর্ কাল থেকে গ্রাম বা শহরে ধনী কিংবা গরিব সবার ঘরোয়া কোনো উৎসবে, গায়ে হলুদ, বিয়ে, ঈদ, পূজায় অতিথি আপ্যায়নে সুগন্ধি চালের তৈরি পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, জদার্, পায়েস, ফিন্নি, পিঠাপুলিসহ নানান মুখরোচক খাবার আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে স্থান করে নিয়েছে সুগন্ধির চালের তৈরি খাবার হোটেল, রেস্তোরাঁ এমনকি আলো ঝলমলে পাঁচতারকা হোটেলে কোনো উৎসব কিংবা সেট মেন্যুতে।

হাজারো বছর ধরে কৃষকরা আমন মৌসুমে প্রচলিত জাত কাটারিভোগ, কালিজিরা, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, বাদশাভোগ, খাসকানী, বেগুনবিচি, তুলসীমালাসহ বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি ধান চাষ করে আসছে। প্রচলিত এসব জাত চাষাবাদে ফলন কম হওয়ায় অনেক কৃষক সুগন্ধি ধান চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কৃষি বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম ও দীঘর্ গবেষণায় সুগন্ধি ধানের স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুণ রেখে বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ সুগন্ধি ধান উৎপাদনের উপযোগী। বিশেষ করে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, নওগাঁ, রাজশাহী জেলায় সুগন্ধি ধান বেশি উৎপাদিত হয়।

ব্রি ধান৭০ ও ব্রি ধান৮০ আমন মৌসুমের উচ্চফলনশীল ধান এবং আলোক অসংবেদনশীল। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.৫-৫.০ মেট্রিক টন। যা প্রচলিত জাত কাটারিভোগ ধানের চেয়ে দ্বিগুণ। ব্রি ধান৭০ ধানের চাল দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগের চেয়ে আরও বেশি লম্বা। আর ব্রি ধান৮০ থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় জেসমিন ধানের মতো, সুগন্ধিযুক্ত এবং খেতেও সুস্বাদু। অন্যদিকে বোরো মৌসুমে সুগন্ধিযুক্ত আধুনিক জাত হচ্ছে ব্রি ধান৫০ যা বাংলামতি নামে পরিচিত। হেক্টরপ্রতি ফলন ৫.৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন। বাংলামতি ধান বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন জাতের ধানের চেয়ে দাম অনেক বেশি হওয়ায় লাভ বেশি হয়। এ জাতের চালের মান, স্বাদ, গন্ধ, বাসমতি চালের মতোই। দিনে দিনে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বাসমতি চালের স্থান দখল করে নিচ্ছে আমাদের বাংলামতি চাল। আমদানিকৃত বিদেশি বাসমতি চালের চেয়ে দাম অনেক কম, দেশি অন্যান্য সুগন্ধি জাতের ধানের চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় বাংলামতি ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে। সব ধরনের মাটিতেই সুগন্ধি ধানের চাষ করা যায়। তবে দো-অঁাশ ও পলি দো-অঁাশ মাটি সুগন্ধি চাষাবাদের জন্য বেশি উপযোগী।

বোরো মৌসুমে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ এবং রোপা আমন মৌসুমে ১৫ থেকে ২৫ জুলাই পযর্ন্ত বীজতলায় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। তবে স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে জুলাইয়ের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহে বপন করা ভালো। মূল জমি ভালোভাবে তৈরি করে আমন মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ দিনের এবং বোরো মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ দিনের চারা রোপণ করতে হয়।

সুগন্ধি ধানের ভালো ফলনের জন্য সারব্যবস্থাপনা খুব জরুরি। সুগন্ধি ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি বা ৩৩ শতকে আমনে আধুনিক জাত ব্রি ধান৩৪, ৩৭, ৩৮, ৭০, ৮০ বা বিনাধান১৩-এর ক্ষেত্রে ইউরিয়া ১৮-২০ কেজি, টিএসপি ১০-১২ কেজি, এমওপি ৯-১০ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, দস্তা ১ কেজি হারে সার প্রয়োগ করতে হয়। আমনে স্থানীয় জাত যেমনÑ কাটারিভোগ, কালিজিরা ইত্যাদি জাতের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি ইউরিয়া-ডিএপি/ডিএপি-এমওপি-জিপসাম যথাক্রমে ১২-৭-৮-৬ কেজি হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। সব ক্ষেত্রে প্রতিকেজি ডিএপি সারের জন্য ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া কম ব্যবহার করতে হবে।

বোরো মৌসুমে ব্রি ধান৫০ জাতের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি বা ৩৩ শতকে ইউরিয়া ৩০-৩৫ কেজি, টিএসপি ৭-১০ কেজি, এমওপি ৯-১০ কেজি, জিপসাম ৮-১০ কেজি, দস্তা ১ কেজি হারে সার প্রয়োগ করতে হয়। মাটির উবর্রতাভেদে সার প্রয়োগের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। তবে চাষাবাদ করার আগে মাটি পরীক্ষা করে নেয়া ভালো।

রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদ করলে সুগন্ধি চাল সুঘ্রাণ বেশি হয়। এজন্য শতক প্রতি ৪ কেজি ভামির্ কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে জমির উবর্রতা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ফলন ভালো হয়, খরচ কম, লাভ বেশি। আমন ও বোরো উভয় মৌসুমে ভালো ফসল পেতে জমিতে সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় সেচ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি সাশ্রয়ী এডাবিøউডি (অডউ) প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পানি অপচয় কম হয়।

সুগন্ধি ধানের জাতগুলো সাধারণত বøাস্ট রোগের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সেজন্য শীষ বের হওয়ার আগে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে ছত্রাকনাশক ট্রাইসাইক্লাজল (ঞৎরপুপষধুড়ষব) গ্রæপের যেমন ট্রুপার বিঘাপ্রতি ৫৩ গ্রাম অথবা টেবুকোনাজল গ্রæপের যেমন নেটিভো বিঘাপ্রতি ৩৩ গ্রাম অনুমোদিত মাত্রায় শেষ বিকালে ৫-৭ দিন অন্তর দুবার স্প্রে করতে হয়। তা ছাড়া উৎপাদন সময়ে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ফসলের মাঠে নিয়মিত নিবিড় পযের্বক্ষণসহ সমন্বিত বালাইব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, এবং যে কোনো সমস্যায় স্থানীয় কৃষি কমর্কতাের্দর পরামশর্ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ধান পরিপক্ব হলে অথার্ৎ অধিকাংশ ধানের ছড়ায় শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে ধান কেটে ফেলা ভালো। মাড়াইয়ের পর ধান কয়েকবার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যেন আদ্রর্তা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকে। লম্বা আকারের সুগন্ধি ধান থেকে আস্ত চাল পেতে হলে রাবার রোলার মেশিন বা অটো রাইস মিল ব্যবহার করা ভালো।

দেশি উন্নতমানের সুগন্ধি চাল সম্পকের্ ধারণা ও প্রচারণার অভাব থাকায় নামি-দামি হোটেল, রেস্তোরঁায় আমাদের জনপ্রিয় সুগন্ধি চালের পরিবতের্ বিদেশি চাল ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়। অধিক পরিমাণে সুগন্ধি ধান চাষাবাদে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে আমাদের সুগন্ধি চালের ব্যাপক চাহিদা। গবের্র বিষয় বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত সুগন্ধি চাল ১৩৬টি দেশে রপ্তানি করছে।

বতর্মান সরকারের সদ্বিচ্ছা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট দিক-নিদের্শনায় আধুনিক উচ্চফলনশীল সুগন্ধি ধানের এলাকা ও উৎপাদন বৃদ্ধি হবে, নিদির্ষ্ট জেলাভিক্তিক চাষ হওয়া সুগন্ধি ধানের চাষাবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে, কৃষক সমাবেশ, মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে সুগন্ধি ধান চাষে আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে। কৃষকের পরিশ্রমের ফসলের ন্যায্যমূল্যে নিশ্চিত করতে সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে এবং ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে বাংলার সুগন্ধি ধানের মান, পুষ্টিগুণের কথা দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবার মধ্যে বিদেশি সুগন্ধি জাতের চালের ওপর নিভর্রতা কমিয়ে বাংলামতিসহ দেশীয় সুগন্ধি চালের তৈরি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর নতুন নতুন আকষর্ণীয় খাবারের প্রতি উৎসাহিত করতে পারলেই সুগন্ধি ধানের হারানো ঐতিহ্যে ফিরে আসবে। কৃষকরা আথির্কভাবে লাভবান হবে এবং অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে।

লেখক:
ডঃ আফরোজা বেগম
কৃষিবিদ মো. গোলাম মাওলা
কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
কাজী ফররুখ আহমেদ

ধন্যবাদ: ঠাকুরমাহমুদ ভাই। আপনার স্নেহ ভালোবাসায় আমি চিরো কৃতজ্ঞ।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৩৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আপনার প্রতিউ ছালাম রইল
আপনাকে আমার সন্ধান দেয়ার জন্য
ঠাকুরমাহমুদের প্রতি রইল ধন্যবাদ ।
কবি জসিমউদ্দিনের কবিতার কথা দিয়েই
আমার ব্লগে শুভাগমনে স্বাগতম জানাই।
শাইল ধানের পাতলা চিড়া
বিন্নি ধানের খই
ঘরে আছে তুলসীমালা
পায়সের অভাব কই ॥
.........................।
চাপাল ধানের মুড়ি দিয়ে
খাইবো বসে সবাই মিলে ॥


ধানের জাত সম্পর্কে আপনার উপস্থাপিত লেখাটি হতে অনেক
গুরুত্বপুর্ণ তথ্য জানতে পারলাম।

আমাদের দেশের কৃষি বিজ্ঞানীগন নিরলশভাবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের বীজ উদ্ভবাবন করে দেশকে
খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণতার দিকে নিয়ে গেছেন। এর জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্জ্ঞতা জানাই ।

উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজ উদ্ভাবনের ফলে অবশ্য দেশী জাতের অনেক ধান কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে ও এখনো যাচ্ছে। দেশী জাতের ধানবীজ সংরক্ষন ও একে কৃষকের মাঝে লাভজনক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে প্রচেষ্টা বলতে গেলে খুবই সীমীত। তবে বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংগঠন বিশেষ করে উবিনিগ উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করলেও তা খুবই সীমিত । ধান আমাদের পরিচয়, ধান আমাদের সংস্কৃতি।ধানের বৈচিত্র আমাদের সম্পদ।এখনও বাংলাদেশে কৃষকের নিজের উদ্যোগেই স্থানীয় জাতের ধান টিকে আছে এবং আমাদের খাদ্যর চাহিদা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজন মেটাচ্ছে। দুঃখের বিষয় যে স্থানীয় জাতের ধানের প্রতি অবহেলার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে যথা খরা,শীত ও বন্যাপ্রবন এলাকায় আমাদের ভবিষ্যত ধান আবাদকে হুমকি মুখে ফেলতে যাচ্ছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারীং করা ধানের প্রবর্তন করা হচ্ছে। অথচ আমাদের স্থানীয় জাতের অনেক ধান আছে যা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারে।

আমরা একটি বিষয় লক্ষ করছি যে কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও তাদের অবদানের তেমন স্বীকৃতি নেই। নারীর জ্ঞান স্থানীয় জাতের সুরক্ষা, সংগ্রহ, পুনরুৎপাদনসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে। ধানের বীজ রক্ষার পেছনে রয়েছে নারীর সক্রিয়তা ও সহজাত জ্ঞান। কৃষকের সাথে কিষানীকেও ধানের বীজ সংরক্ষনের জন্য প্রশিক্ষন দেয়া হলে তাঁরা আরো অনেক বেশী অবদান রাখতে পারবে।

শুনেছি আদি ধান জাতের প্রথম আবির্ভাব নাকি ঘটে বর্তমান ভারত উপমহাদেশে। বাংলাদেশের মধুপুর অঞ্চলে এখনও বুনো ধানের জাত পাওয়া যায়। দেশের আদিবাসি এলাকায় চাষ কৃত বিন্নি ধান নাকি খুবই পুরাতন জাতের একটি ধান ।

দেশে চাষ করা হতো এমন নান্দনিক নামের অনেক ধান যথা আউশ ধানের মধ্যে ধারিয়াল, দুলার, হাশিকলমী, কটকতারা, কুমারি, পানবিরা, কালামানিক, শনি, শংকবটি, ষাইটা, জাগল, কালোবকরি, ভইরা, মূলকে আউশ, ভাতুরী, দুধেকটকী, কাদোমনি, খরাজামরি ইত্যাদি।আমন মৌসুমে চাষ হতো এমন ধান যথা দাদখানি, দুধসর, হাতিশাইল, ইন্দ্রশাইল, যশোবালাম, লতিশাইল, পাটনাই, ঝিংগাশাইল, তিলককাচারী, বাদশাভোগ, কাটারীভোগ, কালিজিরা, রাধুনিপাগল, বউআদুরী, চিনিগুড়া, মহোনভোগ, বড়চালানী, দিঘা, বাঁশফুল ইত্যাদি। এবং বোরো মৌসুমে চাষ করা হতো এমন ধানের মধ্যে খৈয়াবোরো, জাগলীবোরো, টুপাবোরো, মুখকালালী, গঞ্জালী, কালোসাইটা, সোনালীবোরো, তুফান, টেপাবোরো, বলংগা, ষাটেবোরো, বোয়ালীবোরো ইত্যাদি জাতের ধান বলতে গেলে আজ হারানোর পথে ।

সুগন্ধী জাতের ধানের মধ্যে রাধুনী পাগল,কালিজিরা,কাটারীভোগ, চিনিগুড়ি ও বিরই বাদে বাকী অনেক সুগন্ধী ধানের জাত যথা বেগুনবিচি ,বউআদুরী,চিনিআতব,পাকরী,বাদশাভোগ,মোহনভোগ,সাহেবচিকন প্রভৃতি জাতের ধান বলতে গেলে হারিয়েই গেছে।

আমরা অনেকেই হয়ত জানিনা পৃথীবীতে যে কত জাতের ধান আছে ।আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জিন ব্যাংকে ধানের মোট জাত সংখ্যা রয়েছে ১০৮২৫৬ টি।এর মধ্যে বাংলাদেশ হতে সংগৃহীত জাতের সংংখ্যা ৫৯২৩টি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জিন ব্যাংকে ধানের জাত মোট সংগ্রহে রয়েছে ৭৪৩৯টি। এই ৭৪৩৯ টি ধানের জাতের মধ্যে স্থানীয় ধানের জাত সংখ্যা (ইন্ডিকা জাত)রয়েছে ৩৭৮৪টি ও বন্য ধানের জাত সংখ্যা রয়েছে ৮০ টি বাকিগুলি বিদেশ হতে সংগৃহিত জাত।

জিন ব্যাংকে যাদের সংরক্ষণ করা হয়েছে এদের জিন আমাদের আধুনিক উচ্চ ফলনশল জাতের ধানের নামের সাথে সংযোজন করে দিয়ে আদি নামেই তাদেরকে সম্বোধন করা যেতে পারে । মাঠ থেকে হারালেও গবেষণার প্রয়োজনে দেশি জাতের ধানগুলি যেন একেবারে বিলুপ্ত না হয়ে যায় সেটিও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বাধিনতা প্রাপ্তিকে সর্বদিক দিয়েই গৌরবান্বিত করতে হবে ।

ধানের জাত নিয়ে কাজ করছেন শুনে ভাল লাগল , দোয়া করি আপনি ও আপনাদের টিমের সকলের উত্তরোত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটুক।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল


২০| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: পোষ্টটি মনোমুদ্ধকর অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
শুভেচ্ছা রইল


ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। করোনা ভাইরাস থেকে সাবধান থাকুন।

সবার মন্তব্য গুলো মন দিয়ে ধীরে ধীরে পড়লাম।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:৪৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




আবার এসে সকলের মন্তব্যগুলি মন দিয়ে
ধীরে ধীরে পড়েছেন জেনে খুশী হলাম ।
এর মধ্যে আরো কিছু মন্তব্য জড়ো হবে
সে সকল দেখার জন্যও আমন্ত্রন রইল ।

২১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩২

ওমেরা বলেছেন: পরশপাথর নাম দেখে একটা পরশ পাথরই খুঁজতে এসেছিলাম কিন্ত অনেক গুলো পেলাম ।
একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছা করছে ——- বলেই ফেলি ভাইয়া ।
ব্লগেই এই কথাটা শুনেছি আমি , একটা লিখা নাকি
লেখকের কাছে সন্তানের মত । কিন্ত আমার এটা বিশ্বাস হত না কারন আমার মন যখন যা চায় লিখি - সেই লিখার প্রতি আমার কোন ধরনের মায়া লাগে না।
আপনার লিখাগুলো পড়ে মনে হল সত্যি একজন লেখকের কাছে তার লিখা সন্তানের মত। কত পরিশ্রম কত সময় ব্যায় করে এমন একটা লিখা লিখতে হয় তার জন্য তো দরদ হবেই ।
আপনার সব লিখাই পড়ি কিন্ত কমেন্ট করা হয় না
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

একটি পরশ পাথর খুঁজতে গিয়ে অনেকগুলি পরশ পাথর পেয়েছেন শুনে খুশি হলাম ।
বলতে চাওয়া কথা বলে ফেলায় ভাল লাগল ।
মাত্র তিনটি অক্ষরে গঠিত লেখক মানুষটির মনের মাঝে যে কত লক্ষ লক্ষ শব্দ খেলা করে তার খবর কেইবা রাখে! একজন লেখকের কাছে তার প্রতিটি লেখা আপন সন্তানের মত তাতে কোন সন্দেহ নাই । কোনটা কখনোই সে খাঁটো করে দেখেনা- তার আপন সন্তান যে! কোন লেখা লিখতে সময় লাগে ৫ মিনিট, কোনটা ঘণ্টা, কোনটা দিন, কোনটা মাস! আবার এমনও লেখা আছে যা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও শেষ করতে পারেনা। আবারঅনেকের লেখা তার মৃত্যুর প্রকাশিত হয় । ছাপার অক্ষরে তাঁর লেখাটিদেখে যেতে পারেন না ।কামনা করি একজন লেখক যেন তার জীবদ্দশাতেই ছাপার অক্ষরে তাঁর প্রিয়লেখাটিদেখে যেতে পারেন ।

লেখক যখন একটি লেখা লেখেন তিনি আত্মসন্তুষ্টি না পাওয়া পর্যন্ত তা শেষ করেন না, আআমার বেলাতেও তাই ঘটে , লেখা পর্বাকারে দিলেও তা বিশাল আকারধারণ করে । আবার লেখাটি কোন জায়গায় কারও কাছে দেয়ার আগে নিজে তা যে কতশত বার পড়েন , পরিবর্তন পরিমার্জন করেন তারই বা খবর কে রাখে! একজন লেখকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হল যখন তার লেখা পাঠক সমাজে প্রকাশিত হয়। তার যেকোন লেখা যখন কোন গণমাধ্যম কিংবা প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত হয় তার মনে হাজারও শঙ্কা কাজ করে, পাঠকদের কেমন লাগবে? তারা গ্রহণ করবে তো? আমার মনে হয় এটা সব লেখকের জন্য প্রযোয্য ।

কমেন্ট না করলেও আমার সবলেখা পড়েন শুনে অনুপ্রানীত হলাম ।
জানলাম কমেন্ট না করলেও অনেক গুনী ব্লগার আমার লেখা পড়েন ।

শুভেচ্ছা রইল

২২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১

জুন বলেছেন:
ক্ষ্যাপা খুজে খুজে ফেরে পরশপাথর
মাথায় বৃহত জটা ধুলোয় কাদায় কটা
মলিন ছায়ার মত ক্ষীন কলেবর ।

রবীন্দ্রনাথের পরশপাথর কবিতার মত আমিও পরশপাথর খুজতে এসে দেখি অনেক মুল্যবান মনি মুক্তাই ছড়িয়ে আছে আপনার লেখায় । এত বিষয় কোনটা রেখে কোনটা নিয়ে লিখি তাই বুঝে উঠতে পারছিনা ।
ধান, চাল, বাংগালী এসব যেন মিলেমিশে আছে আমাদের সবকিছুতে । কিন্ত এত জাতের ধান আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে গেল কেউ কিছু করলো না ? রাধুনী পাগলের কথা বলেছেন এটা মনে হয় উত্তর বংগে হতো । আমার বড় ভাই ট্যুরে গিয়ে একবার এনেছিলো । সুগন্ধময় এক চাল, খেতেও দারুন । আরেকটা চাল দেখেছিলাম নেত্রকোনা থেকে আনা বাশফুল নাম। চালটা সাবুদানার মত একদম গোলাকৃতির । রান্নার আগে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে রান্না করলে ভাতগুলো চিকন লম্বা হয়। খেতেও অসাধারন স্বাদ । এখন যে মিনিকেট সবাই খায় এটাও নাকি মেশিনে কেটে মোটা চালকে চিকন করে বানানো । এতই যদি বুদ্ধি আমাদের তাহলে সেই বালাম চালকে কেন ফিরিয়ে আনি না আমরা ?
থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল ১১ জাতের ধানকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন । সেই চাল এখন সারা দুনিয়ায় এক্সপোর্ট হচ্ছে ।



প্রতিটি ধান সেখানকার এক একটি প্রদেশে উৎপাদিত ।
জাপান যে কত নৃশংস জাতি ছিল তার প্রমান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সারা পৃথিবী টের পেয়েছে । এই ইমেজকে মুছে ফেলার জন্য তারা পাঠ্যপুস্তক থেকে গোটা সেই যুগকে ডিলিট করে ফেলেছে । কথার আগে পিছে আরিগাতো বলছে । এতে কি ভেতরের নিষ্ঠুরতাকে মুছে ফেলা যায় ? নইলে ডলফিন আর তিমির মত প্রানী যারা মানুষের কোন ক্ষতি করে না তাদের মেরে উজাড় করছে কি ভাবে ?
আপনি কামরূপ কামাখ্যার কথা লিখেছেন । আমি গিয়েছিলাম সেই মন্দিরে । কিন্ত স্বামীটাকে সশরীরে নিয়ে আসতে পেরেছি ডঃ এম এ আলী ভাই B-)
অসম আসাম(১ম পর্ব)
খুবই ছোট তিন পর্বে আমার প্রথম দিকের লেখা :)
আগামী পর্ব মানে পরশপাথরের অপেক্ষায় ।
ভালোলাগা আগেই দিয়ে গেছি আলী ভাই ।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




ক্ষ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর।
রবিঠাকুরের কবিতা হতে
উদ্ধৃতি যতার্থই দিয়েছেন
আমার দশাও মিলে যায়
তার লেখা কবিতার নীচের
কটি চরণের সাথে-
........................
পথের ভিখারী হতে আরো দীনহীন,
তার এত অভিমান, সোনারূপা তুচ্ছজ্ঞান,
রাজ সম্পদের লাগি’ নহে সে কাতর,
দশা দেখে’ হাসি পায়, আর কিছু নাহি চায়
একেবারে পেতে চায় পরশ-পাথর!

আমার দশা হল উহারি মতন ।

আমার এ পর্বটিতে অনেক কথার মিশেল, তবে এর ভিতর হতে তুলে নিয়েছেন চুম্বক কথা গুলি ।
রাজা ভুমিবল জেসমিনকে তুলে দিয়ে গেছেন জাতে, তাই সেটা এখন স্থান পেয়েছে সারা বিশ্ববাসির পাতে ।
এখন জেসমিন আর বাসমতির প্রতিযোগীতা চলছে সারা বিশ্ব জুরে । এখানকার সুপারস্টোরে গেলে দেখা মিলে
সেলফের একদিকে জেসমিন আর দিকে বাসমতি ।দামে প্রায় সমান সমান তবে আমাদের দেশের প্রাণের
কালিজিরা্ প্রতিযোগীতায় না থাকলেও দামে সেরা । থাই জেসমিন আর টিলডা বাসমতি যেখানে বাংলাদেশী
টাকায় কেজি প্রতি প্রায় ২৫০ হতে ৩৫০ টাকার মধ্যে উঠানামা করে সেখানে আমাদের দেশের কালিজিরা
বাংলাদেশি মুদ্প্রারায় য় ৫০০ টাকা কেজিতে বিকায় তাও পাওয়া যায়না সময় মতে । দুই ঈদ পার্বনে কিছটা
দেখা মিলে এশিয়ান গ্রসারী শপে ।

রাজা ভুমিবলের মত এদেশের কোন রাজা বাদশাহ রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধান ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন ধান চালের নামে রেখেছেন কিনা কিংবা দেশিজাতের ধান চাষে বিশেষভাবে পৃষ্টপোষকতা করেছেন কিনা তার কোন বিবরন এখনো জানতে পারিনি । তবে কথিত আছে আজ হতে প্রায় ৫০০ বছর আগে বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খান কররানি’র (১৫৭৩-১৫৭৬) আমলে বঙ্গদেশে দাদখানি চালের চাষাবাদ শুরু হয়। সুলতানের দরবারে চালটির বেশ চাহিদা ছিল। দাউদ খান নিজেও চালটি পছন্দ করতেন। তাই এর নাম হয়ে যায় দাউদখানি চাল< দাদখানি চাল।
সুলতান দাউদ খান কররানি

ঠিকই বলেছেন বাশফুল চালটা সাবু দানার মত একদম গোলাকৃতির। মেয়েরা চাল ভাল চিনে প্রমান রেখেছেন এখানে :)

রাধুনী পাগল চালের মত দাদখানি চালও নাকি উত্তর বঙ্গেই বেশি ফলে ।এটা অনেকটা স্নো-ফেড জাতীয়. উত্তরবঙ্গে শীত বেশি
তাই এগুলি সেখানে ভাল ফলে । ঢেকী ছাটা মিহি রাধুনী পাগল আর দাদখানি চাল দেখলেই ভোজন লালসা যায় বেড়ে ।

শিশুকালে পড়া কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার এর ‘কাজের ছেলে’ কবিতায় বর্ণিত ‘দাদখানি চাল’ এখনও সকলের স্মৃতিকে উদ্বেল করে তোলে।

দাদখানি চালের মত রাধুনী পাগল,কালিজিরা,কাটারীভোগ, চিনিগুড়ি ও বেগুনবিচি ,বউআদুরী, চিনিআতব,বাদশাভোগ,মোহনভোগ,সাহেবচিকন, কবিরাজশাল , রাধাতিলক , কালোজিরে , তুলসীমুকুল , চামরমণি ,
কনকচূড়ের মতো বহু দেশি প্রজাতির সুগন্ধী চালই হারিয়ে যেতে বসেছিল বাংলা থেকে৷ এই ধানগুলি সংরক্ষণে পাল্টা
উদ্যোগও কিছুটা চালু হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে৷ শুধুমাত্র দেশীয় ধানের বীজগুলি সংরক্ষণই নয় , কৃষকের খেতে
সেগুলিকে ফিরিয়ে আনার কাজও শুরু হয়েছে কয়েকটি বেসরকারী উদ্যোগে ।

জাপানীরা আমাদের বন্ধু , বড় মাপের উন্নয়ন অংশীদার।জাইকাতো জেকে বসে আছে প্রায় সকল মেগা প্রকল্পের পরামর্শক ও তদেরকে অর্থ যোগানের জন্য চালকের আসনে। তাদের কথা বেশী করে বললে কি ঘটে যায় কে জানে। ষাটের দশকে দেশের ৭টি টেক্সটাইল ফেসিলিটি সেন্টারের(TFC) জন্য বিনামু্ল্যে গুটা কুয়েক পাওয়ারলুম , গুটি কয়েক টয়োটা সেলাই মেশিন ও সরকারী কাজের জন্য টয়োটা কার দিয়ে পরে সারা দেশে যুগ যুগ ধরে কেমন বানিজ্য করেছে তাতো আপনার জানা কথাই ।

কামরুপ কামাখ্যায় গিয়ে পতিদেবকে সশরিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছেন রক্ষা কবজ হিসাবে সাথে ছিলেন বলে :) ,
একা ছেড়ে দিয়ে দেখেন অবস্থা কি আকার ধরে!!

আপনার অসম আসাম পর্ব ৩টি দেখে এসেছি, ছোট খাট মন্তব্যও রেখেছি সেথায় দেখে আসতে পারেন একটু ঘুরে ।

পরশ পাথর ৩য় পর্ব আসতেছে অল্প সময়ের ভিতরে ,সেটা আপনার প্রিয় বিষয় ইতিহাসে ঠাসা ।
এ পোষ্টে আপনার ভাল লাগার চিহ্ন দেখেছি আমি সে সময়েই । জানতাম আসবেন সুবিধামত সময়ে ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

২৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৩০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:

মানুষের অত্যাচারে বিলুপ্তির পথে শকুন: চারিদিকে বরফ। বরফের চাদরে ঢেকে গেছে বসবাসের জায়গা। খাবারের সংকট তীব্র। তাই জীবন বাঁচাতে ২-৩ হাজার কিলোমিটার দূরের কোনো এক নতুন গন্তব্যে আসে। বাসস্থান আর খাবারের সন্ধানে সমতলের খোঁজে পৌঁছতেই প্রাণশক্তি নেমে আসে শূন্যের কোটায়। যে শরীরের স্বাভাবিক ওজন ৯-১৩ কেজি, তা নেমে আসে ৫-৭ কেজিতে। রুগ্ন এবং মৃতপ্রায় শরীর নিয়ে উড়ে এসে যখন সমতলের কোনো মাটিতে পড়ে; তখনই শুরু হয় অন্যরকম অত্যাচার। কেউ ঢিল ছোড়ে, কেউ দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে, কেউ পা ভেঙে দেয়, কেউ বা পিটিয়ে হত্যা করে।

মৃতদেহ থেকে মাংস খেয়ে অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষা করে শকুন। একমাত্র শকুনই অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত মৃত গরুর মাংস খেয়ে হজম করতে পারে। এছাড়া যক্ষ্মা ও খুরা রোগের জীবাণু শকুনের পেটে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। মৃতদেহ থেকে ক্ষতিকর জীবাণু ছড়ানোর আগেই তা শেষ করতে পারে শকুন।

বাংলাদেশ শকুন গবেষণা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুনের বাস। তার মধ্যে ৭ প্রজাতির শকুন ছিল বাংলাদেশে। ৭ প্রজাতির শকুনের মধ্যে রাজ শকুন প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকি ৬ প্রজাতি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে প্রতি বছর গড়ে ১০০টি শকুন শীত মৌসুমে বাংলাদেশে আসে। চলতি বছর এ পর্যন্ত দুটি দল এসেছে। তার প্রথমটি আসে নভেম্বরের ২৪ তারিখে। সে দলে শকুনের সংখ্যা ছিল ২২-২৫টি। আরেকটি দল আসে ডিসেম্বরের ২৩-২৪ তারিখে। যার সংখ্যা ৪০-৪৫টি।

বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি: “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে”। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটির নায়ক আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির শৈল্পিক কারিগর বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। আবহমান গ্রাম বাংলার চিরাচরিত প্রকৃতির নিপুণ বাসা তৈরির দক্ষ কারিগর বাবুই পাখি ও এর বাসা এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, নতুন বনায়নে বাসযোগ্য পরিবেশ ও খাদ্যের অভাব, নির্বিচারে তালগাছ কর্তন, অসাধু শিকারীর ফাঁদসহ বহুবিধ কারণে কালের আবর্তে প্রকৃতির স্থপতি, বয়ন শিল্পী এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি বাবুই পাখি ও এর দৃষ্টিনন্দন বাসা ক্রমান্বয়ে আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও গ্রামগঞ্জে ব্যাপকভাবে বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। কিচিরমিচির শব্দে মানুষের ভোরের ঘুম ভাঙ্গতো। অপূর্ব শিল্প শৈলীতে প্রকৃতির অপার বিস্ময় এদের সেই ঝুলন্ত বাসা বাড়ির তালগাছ সহ নদীর পাড়ে, পুকুর পাড়ে, বিলের ধারে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। আগের মতো বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রাম বাংলার জনপদ।

ডঃ এম এ আলী ভাই, অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে বলছি শুকুন বাবুই, ঘুঘু সহ বক শালিক টিয়া ময়না শুধু বিলুপ্তির পথে না, বাংলাদেশে কাক পর্যন্ত বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে! আমাদের দেশের পাঠ্য বইয়ে জরুরী সচেতনতা সহ টিভি পত্রিকাতে সচেতনতার বিজ্ঞাপন জরুরী। এবং জরুরী আইনের প্রয়োগ। নয়তো ভবিষ্যত প্রজন্ম ভয়ঙ্কর ঝুুঁকিতে চলে যাবে।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

একটু পরে আসতেছি মুল্যবান মন্তব্য দুটির বিষয়ে কথা বলার জন্য ।
গিন্নীর তাগাদা মুখোষ পরে বেশ লম্বা সময়ের জন্য শপিং এ যেতে
হবে, তা না হলে রান্না বান্না বন্ধ জনিয়ে দিয়েছে । কি আর করা
লেখা ছেড়ে এ বেলা উঠতেই হবে ক্ষনিকের তরে ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




মুল্যবান মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ ।
জীবেপ্রেম করে যেই জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর,একথা এদেশের মানুষ বুজবে কবে তা কেবল ঈশ্বরই জানেন ।

দশক দুই-তিন দশক আগেও আমাদের দেশে সহজেই শকুনের দেখা মিলত। মৃত গবাদিপশু খাল বা মাঠে পড়ে থাকলে আকাশে শকুনের ঝাঁক চক্কর খেতে দেখা যেত। তারা দল বেঁধে নেমে আসত।
আমার মনে পড়ে ছোটকালে আমার দাদা বাড়ীর গরু মহিমের বাতানের কোন গরু কিংবা মহিশ মারা গেলে সেটাকে টেনে নিয়ে গিয়ে বেশ দুরে ফসলের খেতের পাশে পতিত জমিতে ফেলে রাখা হতো । মৃত গরু মহিশের খবর কিভাবে জানি দ্রুত পৌঁছে যেত এলাকার মুচী সম্প্রদায়ের কাছে।তারা দ্রুতএসে মৃত পশুর চামড়া তুলে নিত তরিতে । মুচী চলে যাওয়ার পরেই আসত কাকের দল ,কিন্তু কাককে তারিয়ে দ্রুত পোঁছে যেত কুকুর বাহিনী । কুকুর এক জীব বটে এসে প্রথমেই লেগে যেত নীজেদের মধ্যে মারামারিতে , এরি মধ্যে কোথা থেকে দল বেদে শকুন এসে মরা গরুর মাথার উপরে চক্কর লাগাত। আমরা দুরে দাঁড়িয়ে শব্দ শুনতাম দশ দশ দশ আমরা জানি কুকর রেগে গেলে এমন দশ দশ শব্দ করে । কুকুরের এই দশ দশ দশ শব্দ করাকে আমরা ভাবতাম কুকুর শকুন দেরে বলছে দশ টাকা দিয়ে এই মরা তারা কিনেছে। কুকরের দশ দশ দশ শব্দের পাশাপশি উপর হতে শুনা যেতো শুকুনের তিলিশ তিলিশ হাক ডাক । আমরা বলতাম শুকুন বলতেছে তারা তিরিশ টাকা দিয়ে এখন এই মরা গরু কিনে নিয়েছে । একটু পরেই দেখতাম শকুন ঝাপিয়ে পড়েছে মরা গরুর উপরে , কিছুক্ষনের মধ্যে গরুর মাংস সব ঠুকরিয়ে খেয়ে ফেলেছে শকুনে, শুধু হাড় গুর সেখানে পরে রয়েছে । শকুন চলে গেলে কুকর এসে হাড়গুর নিয়ে করত টানাটানি। শেষ বেলায় কুকুর চলে গেলে আসত কাকবাহিনী,এরা সুশৃঙ্খল, তাই ছিলনা কোন টানাটনি , যা পেয়েছে দল বেদে খেয়ে গেছে । সন্ধার পরে শুনা যেতো শিয়ালের কেওহা হেওহা ডাক । কত শিয়াল যে ছিল বনে তা আজকের দিনে ভাবতেও অবাক লাগে।

শকুন নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে ভারত উপমহাদেশে প্রায় ৪ কোটি শকুন বাস করত বলে দেখা যায়। একই সময়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডেও কয়েক লাখ শকুনের বাস ছিল এবং তারাও প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে মৃত প্রাণী খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে আসছিল।১৯৯০-এর দশক থেকে দ্রুত শকুনের সংখ্যা কমতে থাকে; বাংলাদেশে এখন শকুন আছে মাত্র কয়েক শ। শকুনের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার ফলে পশুর মৃতদেহ থেকে প্রকৃতিতে দূষণ ছড়াচ্ছে। শকুনের খাবার খাচ্ছে শিয়াল ও কুকুর। মানুষ ও গবাদিপশুর মধ্যে জলাতঙ্ক, অ্যানথ্রাক্স, খুরা রোগ, কলেরাসহ নানা ধরনের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। মৃত গবাদিপশু খেয়ে কুকুরের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটছে এবং লোকালয়ে রোগবালাইয়ের সংক্রমণ বেড়েছে।

শুনছি শকুনের বিলুপ্তির আশঙ্কা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। ২০১৩ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এ দেশের ৪৭ হাজার ৩৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় শকুনের জন্য দুটি ‘নিরাপদ এলাকা’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট ও খুলনা-বরিশালে শকুনের নিরাপদ এলাকায় শকুন সংরক্ষণ দলের নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থেকে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তসংলগ্ন রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বন দেশের অন্যতম বড় বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য। সেখনে নাকি এখন গাছের ডালে ও আকাশে শকুন দেখতে পাওয়া যায়। রেমা-কালেঙ্গার বনে গর্জন, চাপালিশ, ডুমুর, মেহগনি, শিমুল, বাঁশ প্রভৃতি গাছপালার বিচিত্র সমাহার এখনো আছে। এই প্রাকৃতিক পরিবেশ অসংখ্য পশুপাখির নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বহাল রয়েছে। সেখানে অসংখ্য পাখি বিরতিহীন ডেকে যায় নিজের খেয়ালে। বাঙলা শকুন দেশের অন্যত্র বিলুপ্ত হলেও এ বনে নিরাপদে বাসা বাঁধে, ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায়, তাদের আহার জোগায়, লালন-পালন করে। বনের উঁচু গাছের ডালে শকুনের বাসায় ছানার সঙ্গে মা-শকুনেরা এখনো এ বনকে নাকি নিরাপদ মনে করে ।

শকুনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও তাঁদের সচেতনতার মধ্য দিয়ে প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শকুন সংরক্ষণে সকলে এগিয়ে আসি এ কামনাই করছি।

বাবুই শালিক টিয়া ময়না এদের সংখ্যা কমে গেছে এবং এগুলি এখন বিলুপ্তির পথে শুনে কার না মন খারাপ হবে ? মনে হয় ফসলের মাঠে কীট নাশকের প্রয়োগই এদের জীবনের মুল হুমকি । যাহোক বিপন্ন প্রায় এসব পাখীদেরকে প্রকৃতির বুকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরী ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

২৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৪৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




মাত্র ২০ বছর আগেও নদী, বিভিন্ন খাল-বিল ও মজাপুকুরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। অথচ এখন খুব সামান্যই পাওয়া যায় সেসব মাছ। শত শত প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে।

‘মহাবিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে টাটকিনি, বাঘা আইড়, রিঠা, নদীর পাঙাশ, চিতল, মহাশোল ও সরপুঁটি, কাইক্কা মাছ। ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে চেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, ফলি, গুজি ও আইড় মাছ। ‘বিপন্ন’ অবস্থায় রয়েছে দাড়কিনা, বড় বাইম, গজার, তিতপুঁটি, কালিবাউস, তিলা শোল, খলিশা, মেনি, কাজলি, চান্দা মাছ।

আমি গত ১০ বছরে আমি রানী বাইম মাছ দেখিনি। এই মাছ বাংলাদেশ থেকে নাই হয়ে গেছে। তাছাড়া লাল টেংরা (গোলসা) রুপা পুঁটি।




১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



মুল্যবান তথ্যের সমাহার রয়েছে মন্তব্যটিতে। ঠিকই বলেছেন শত শত প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে।
আথচ একসময় বাংলাদেশের নদ, নদী, হাউর, খাল, বিল ও পুকুরে চারশতের মত দেশী প্রজাতীর মাছ ছিল ।
কড়কড়ে পুঁটি মাছ ভাজা কিংবা টেংরা মাছের ঝোল, ছোট মাছের চচ্চড়ি কিংবা গনিয়া, কালিবাউস, ভাগনা, মহাশোলের অপূর্ব স্বাদ, অথবা চিতল দিয়ে কোপ্তা! পঞ্চাশোর্ধ যারা আছেন, তারা দেশি এসব মাছের স্বাদ-গন্ধ মনে গেঁথে রেখেছেন। আর নতুন প্রজন্মের কাছে এসব মাছের প্রাচুর্য ও স্বাদ কেবলই এখন গল্প।

তবে আশার কথা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর প্রচেষ্টায় ফিরে আসছে বিপন্ন দেশি প্রজাতির মাছের সুদিন। বিলুপ্ত প্রায় দেশি মাছের পোনা উৎপাদনে বর্তমানে চার শতাধিক হ্যাচারি কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা যায়। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে পাবদা, গুলশা, শিং, টেংরা, মাগুর, কৈ, ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে, বাটা মাছের চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিএফআরআই সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ২৩ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে পাবদা, গুলশা, টেংরা, শিং, মাগুর, গুজি আইর, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালী, রাজপুঁটি, মেনি, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, বাটা, দেশি সরপুটি, কালবাউশ, কৈ, গজার এবং গনিয়া। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে রানী মাছ, কাকিলা, গজার, শাল বাইম, বৈরালী মাছ, আঙ্গুস ও খোকসা মাছের প্রজনন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

তবে দেশী মাছকে আমাদের পাতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিএফআরআই ছাড়াও নদী দুষন রোধের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বেসরকারী পর্যায়ের মৎস খামারীদেরকে আরো সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে ।

শুভেচ্ছা রইল

২৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০২

জুন বলেছেন:

এমন রান্না করা ব্ল্যাক জেসমিন আর পিংক জেসমিন রাইস কিনে নিয়ে আসেন বাসায়, ভাবীকে আর কষ্ট করে ভাত রান্না করতে হবে না । এই প্যাকেটগুলো ৫/১০ বাথ করে । ওরা ভাতের সাথে কিছু মিশিয়ে খায়না । সব কিছু আলাদা আলাদা , ভাতটাও পরে কেকের মত হাতে ধরে বা চপস্টিক দিয়ে শুধু শুধু খায় । ওরা আমাদের মত তরকারী বা ডাল দিয়ে ভাত মাখিয়ে খাওয়ার আনন্দই বুঝলো না ।
এক থাই পরিবার দাওয়াত দিল , অনেক কিছু আসলো আমরা খাচ্ছি , সব কিছু খাবার পর ছোট ছোট বাটিতে তরকারির চামচের দুই চামচ ভাত আসলো, অবশ্য ওরা স্টিকি রাইস খায়। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম ওরা শুধু শুধু ভাত খেলো । আমরা আর খাইনি :(

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ব্ল্যাক জেসমিন আর পিংক জেসমিন রাইস এখানে পাওয়া যায়না । তবে হোয়াইট সুগন্ধী জেসমিন গ্রসারী সুপার স্টোরে ও অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায় । আমরা পায়েস রান্নার জন্য মাঝে মাঝে অনলাইনে কিনি, এতে দাম একটু কম পরে ।
আমি পায়েস তথা ক্ষীর খেতে খুবই পছন্দ করি । থাই সুগন্ধী জেসমিন বেশ স্টিকি ,এটা দিয়ে ক্ষীর হয় ভাল । তাই সুগন্ধী জেসমিন চাল , নারিকেল কুচি , ঝুলা খেজুরের গুর আর ঘন দুধ দিয়ে পাকানো পায়েশ তথা ক্ষীর আমি নিয়মিত খাই । গিন্নী পাক করে ফ্রিজে রেখে দেয় । বেশী খেলে নাকি ডায়াবেটিক হবে । তাই গিন্নির চোখ ফাকি দিয়ে চুপি সারে দিনে দু তিন বার একটু একটু করে খাই। উপর ওয়ালার প্রতি বিশ্বাস রেখে ডায়াবেটিকরে আমি না ডরাই ।

৫/১০ বাথ দিয়ে রান্না করা ব্ল্যাক জেসমিন আর পিংক জেসমিন রাইস খাওয়ার সুযোগ আর পেলাম কোথায়।
গতকাল অনলাইনে ১ কেজি থাই অরগানিক হোয়াইট ফ্রেগরেন্ট রাইস কিনেছি যার দাম কনভার্টেড থাই মুদ্রায়
প্রায় ১৬০ থাই বাথ।

আপনার ভাবীর জন্য ভাত রান্না কোন ঝামেলাই না । চাল ধোয়ে পরিমান মত পানি দিয়ে ইলেকট্রিক রাইস কুকারে
চাপিয়ে দেয়,বাছ তার কাজ শেষ। ভাত হয়ে গেলে লাল বাতি নিবে গিয়ে হলুদ বাতি জ্বলতে থাকে , সারাদিন ভাত
গরম থাকে ।সেজন্য রান্না করা ভাত কেনার তেমন প্রয়োজন পরেনা ।

থাই পরিবারে দাওয়াতে গিয়ে অনেক কিছু খেলেন বটে ,তবে সব কিছু খাবার পর ছোট ছোট বাটিতে তরকারির চামচের যে দুই চামচ ভাত আসলো সেটা না খেয়ে বড়ই মিস করেছেন সেটা ছিল সুস্বাদু থাই জেসমিন পুডিং তথা মজাদার ক্ষীর , এটা এখানে কিনতে পাওয়া যায় , আমার ছেলে মেয়েরা বেশ মঝা করে খায় ।

২৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বিজ্ঞ ব্লগার আপনার এই সুদীর্ঘ পোস্ট খানি পাঠ করার নিমিত্তে আমার আজকের এই ব্লগে সাময়িক বিচরণ। সুদীর্ঘ পোস্টে অনেকগুলো বিষয় তুলে ধরেছেন। আমাদের সংস্কৃতি, গ্রাম বাংলার বলতে গেলে খাটি অকৃত্রিম দৃশ্যপট, মহান মুক্তিযুদ্ধ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ অনেক কিছুই । বিপন্ন প্রায় প্রাণি, বিপন্ন পরিবেশ আর বিপন্ন নদী সভ্যতার অপরিকল্পিত অগ্রযাত্রার রোষানলে । আমি উদ্বিগ্ন আমাদের নদীগুলো নিয়ে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ । নদী মায়ের মতো আর আমরা যেন শিশু। নদীগুলোকে বাচোতে হবে সাবার আগে। তাহলে আমরা বাচবো। কলকারখানার বর্জ্র রাসায়নিক উৎপাদ গুলো সরাসরি নদীতে ফেলা আইন করে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিৎ । সে ক্ষেত্রে কার্যকর ওয়েস্ট মেনেজমেন্ট নীতি মালা বাধ্যতা মূলক করে শিল্পকারখানা গুলো যেন স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের কঠোর অনুশাসন মেনে চলতে হবে । টেকসই উন্নয়নের প্রথম শর্ত সুষ্ঠু পরিবেশ সেটা প্রাকৃতিক হতে পারে হতে পারে কর্মক্ষেত্রের। চমৎকার একখানি পোস্টের জন্য অশেষ কতজ্ঞতা ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




খুবই মল্যবান মন্তব্য রেখেছেন ।
আপনি শুধু এ ব্লগের একজন গুণীকবিই নন আপনি জিউলজী অধিদপ্তরের একজন অধিকর্তা হিসাবে
দেশের পাকৃতিক লুকায়িত সম্পদ অনুসন্ধান ও প্রকাশিত সম্পদের বিষয়ে একজন বিশেযজ্ঞ । বিপন্ন
প্রকৃতির বিষয়ে আপনার উদ্ভিগ্নতার কথা ফুটে উঠতে দেখেছি আমার অন্যান্য পোষ্ট সহ আপনার
লেখা অনেক কবিতাতে ।

নদীগুলির দূষন প্রতিরোধে বলা আপনার কথামালা যথা কার্যকর ওয়েস্ট মেনেজমেন্ট নীতি মালা বাধ্যতা মূলক করে শিল্পকারখানা গুলো যেন স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। এর সাথে আমি একান্তভাবে
সহমত পোষন করি ।

পোষ্টের বিষয়ে মুল্যবান কথা বলে আমাকেও কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন ।

শুভেচ্ছা রইল


২৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১০

জুন বলেছেন:
পিংক জেসমিন রাইসের একটা ছবি দিলাম :)
দুই পিস ফ্রাইড চিকেন , একটু সব্জী তরকারী সাথে এক প্যাকেট ভাত । এখানকার কর্মজীবি মানুষ হাটতে হাটতে বা সিড়িতে বসে খেয়ে নিল দুপুরের খাবার । অথবা সন্ধ্যায় কিনে নিল বাসার জন্য ।
রাইস কুকারে আমি শুধু পোলাও বা খিচুড়ি রান্না করি , কারন আতপ চালের ভাত খেতে পারি না। রাইস কুকারে সিদ্ধ চালের ভাত রান্নার চেষ্টা করি নাই ।
আপনি যাকে ক্ষীর বলছেন আসলে ওটা ভাতই। আমি অনেক বছর ধরেই ওখানে যাই আসি থাকি। ভাত আর ক্ষীর চিনবো না তাই কি হয় ! থাই এয়ার ওয়েজে যাতায়তের সুত্রে অনেক বারই তাদের ঐ চালের পায়েস খাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার :)
খাও স্যুয়ে বললে আপনাকে সিদ্ধ চালের ভাত দেবে আর খাও নিউয়ে বললে আতপ চাল ।

লাস্ট আইটেম দেয়ার পর ঐ ভাতটা দিয়েছে । এটা ভাতই আলী ভাই , ক্ষীর না :)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আবার এসে মজাদার খাবার পরিবেশন করে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

প্রথম ছবিটাতে 55 এর নীচে nn/nn দিয়ে কত বাথ দিয়ে কত পরিমান ভাত লেখা আছে তা থাই ভাষা জানিনা বলে বুঝতে পারছিনা, একটু বলে দিলে থাই ভাতের বাজারদর জানতে পারতাম । বিষয়টি আমার জানা দরকার নীজের প্রয়োজনে ।

যে আপনি চাল দেখে নাম সহ বলে দিতে পারেন সেটা কি জাত সে আপনি সেটা ভাত না ক্ষীর তা চিনবেন না তাকি হতে পারে । উপরের ২৫ নং মন্তব্যে নীচে লেখা আপনার কথামালা যথা সব কিছু খাবার পর ছোট ছোট বাটিতে তরকারির চামচের দুই চামচ ভাত আসলো, অবশ্য ওরা স্টিকি রাইস খায়। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম ওরা শুধু শুধু ভাত খেলো লেখা দেখে মনে হলো সেটা শুধু ভাতই কোন তরকারী নেই এতে , এটা আমারই বুঝার ভুল , এখন ক্ষমা চাওয়া ছাড়া উপাই কি আছে বলুন।

নীচের ২ নং ছবিতে থালায় মধ্যে সুসজ্জিতভাবে পরিবেশিত খাবারটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে । গিন্নিকে বললাম এমন খাবার আজকেই চাই । ইউটি্‌উবে রেসিপি দেখে গিন্নী লেগে গেছে এখনই , থাই জেসমিন চাল সহ রেসিপির সব উপাদান ঘরেই আছে।

আপনার দেয়া এই খাবার পুর্ণ থালাটি দেখে মনে পড়ে গেল ১৯৮০ সনের শেষ দিকে বগুড়া পল্লি উন্নয়ন একাডেমিতে গিয়েছিলম আমার ভিলেজ স্টাডি রিপোর্টের উপরে আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ নিতে । সে সময় দেখেছিলাম বগুড়া শহরে থাকা বটগাছের নীচে ভাগ্যলক্ষী নামে একটি ভ্রাম্যমান হোটেল থেকে পাতার টৌঙ্গায় করে নিরামিশ লাবড়া জাতীয় খাবার দুপুরে লাঞ্চের সময় মানুষে কিনে নিচ্ছে লাইন ধরে । আমি ও আমার সাথে সহকর্মীরা এক ঠোঙ্গা কিনে নিলাম ।তবে এটা কিনার সময় জিজ্ঞসা করেছিলাম এটা হালাল কিনা? এবং এর মধ্যে কিকি খাবার দ্রব্য আছে । বিত্রেতা গড় গড় করে মুখস্তের মত বলে গেল এর ভিতরে ফুলকপি , মিষ্টি কুমড়া , বরবটি , বেগুন, কাঁচা পেঁপে , চিনা বাদাম , পাঁচফোড়ন , তেজপাতা , কাঁচা মরিচ, লবণ, আদা ছেঁচা, হলুদ গুঁড়া , ধনিয়া পাতা, তেল, শুকনা মরিচ সাথে কিছু রান্না করা ভাত আছ।

বছরকয়েক আগে দেশে গিয়ে বগুড়ায় কর্মরত এক নিকট অআত্মিয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে খুঁজ নিয়েছিলাম সেই লাবড়ির বিষয়ে।ঠিকানা পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম লাবড়ী বানিজ্য ঠিক্ই আছে । তবে আগে বিক্রি হত শুকনা বড় কাঠাল পাতা দিয়ে তৈরী বড় ঠোঙ্গায় ।এখন আর ঠোঙ্গা দিয়ে পরিবেশন করেনা , তারা এখন বড় হোটেল মালিক বনে গেছে ,তাই পরিবেশন করে সুন্দর করে সাজিয়ে চিনা মাটির বাহারী থালাতে ।
দামও বেশ চড়া ,তাই আগের মত লাইন ধরে মানুষ আর তা কিনে খায়না।
মানুষে বলে গাছের ছায়ায় থাকা ভাগ্যলক্ষিকে তারা ঘরের ভিতরে টেনে নিয়ে বন্ধি করেছে, বেচা কেনা বাড়বে কি করে !!

রাইস কুকারে পছন্দের খাদ্য পাকের কথা শুনে ভাল লাগছে ।

শুভেচ্ছা রইল

২৮| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

আখেনাটেন বলেছেন: আপনার ট্রেডমার্ক পোস্ট। পড়ে কত কিছুই না জানা যায়। :D

ছোটকালে গ্রামের বাড়িতে দেখতাম নানা জাতের ধানের সমারোহ। খইয়ের জন্য একধরণের শুংওয়ালা ধান, মুড়ির জন্য একধরণের পেটটেপা ধান, পোলাও এর জন্য ভীষণ সুবাসিত দুই তিন পদের ধান। ভাতের চালের জন্যও তাই, পাইজাম, বিআর এলেভেন, স্বর্না আরও কত কি! অথচ এখন সবকিছু কিনে খেতে হচ্ছে.......ধানের জমিতে আম, লিচু, পেয়ারা, কমলা, ড্রাগন, মাল্টা নানা ধরনের ফল গাছ লাগাচ্ছে......কারণ ধানচাষে লাভ নেই। এখনও যে কয়টা বন্য ধানের জাত মানুষ শখ করে রোপন করছে, সেগুলো আর কিছুদিনপর থাকবে না।

রাজশাহীতে ২০০০ সালেও পদ্মাতে শুশুক বেশ দেখা যেত। পাড়ে বসে ভোদড়ের ছুটাছুটি উপভোগ্য ছিল। এখন সেই পদ্মাও নেই, সেই ভোদড়ও নেই......আজকেই সিবিএস নিউজের একটি রিপোর্টে পড়লাম বায়োডাইভারসিটি লসের একটি চিত্র। ৫০ বছরে প্রায় ৭০% প্রাণী জগতের বিলুপ্তি......ভাবা যায়...

নগরায়ন ঠিক যতটা মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, ততটাই জীববৈচিত্রের জন্য কঠিন করে তুলেছে.....।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৩৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



দারুন বলেছেন মন্তব্যের ঘরে
হোঙ্গাওয়ালা খৈ এর ধান ও
পেটটেপা মোটা মুরির ধানের
কথায় ছোট কালের কথা মনে পড়ে ।
সে সময় গরু জোড়ে দিয়ে
ধান মারাই দেয়ার কালে খালি
পায়ে গরুর পিছন ঘুরার সময়
হোঙ্গাোয়ালা ধানের কত হোঙ্গা
যে বিধে যেত পায়ের পাতা জুরে
ব্যথা টের পাওয়া যেতো রাতে
বিছানায় গিয়ে ঘুমানোর কালে ।

ঠিকই বলেছেন ধান চাষ এখন
অলাভজনক হয়ে পড়েছে ।
তাই ডাইভারসিফিকেশন
এখন বেশী প্রয়োজন কৃষিতে
শাকসবজি ফল বেশী ফলালে
নীজেরা খেয়েও বিদেশে
কিছু পরিমানে বেচে তা
দিয়ে চাল ডাল কিছু
আমদানী করা যাবে
লাভজনক ভেল্যু এডিসনময়
কোন কৃষি কাজের প্রতি
ঝুকে পড়া মনে হয়
এড়ানো যাবেনা কোন মতেই ।

আপনার মন্তব্যের ঘরে থাকা
সিবিএস নিউজের রিপোর্টে
অনেকক্ষন করলাম বিচরণ
অনেক মুল্যবান তথ্যই
পাওয়া গেল পাঠে ।

মনুষ্য সৃষ্ট পরিবেশ দূষন
বিশেষ করে গ্রীনহাউজ ইফেক্টের
কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র
এখন দুনিয়ার সর্বত্রই হুমকির মুখে,
বাকি নেই মেরুর বরফ গলাও।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নাকি
লাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের বিশাল
এলাকা সাগরের নোনা পানির
তলে ডুবে যাওয়ার হুমকির মুখে
সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র সহ
দেশের নিন্মাঞ্চলের প্রায় কোটি
মানুষের বাড়ীঘর যাবে নাকি ডুবে।

আপনার লিংকের বিষয় দেখে ফিরার কালে
কানাডার হারবার আইল্যান্ড উপকুলে
সাগরে গলা বরফখন্ডের উপর দন্ডায়মান
মেরু ভাল্লুকটির ছবি তুলে নিয়ে এলাম
সকলে এই করুন দৃশ্য শেয়ার করব বলে ।

মুল্যবান মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা রইল

২৯| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:২৯

কাজী ফররুখ আহমেদ বলেছেন:




ধানের বীজ সংরক্ষণ
ভালো ফলন পেতে হলে ভালো বীজের প্রয়োজন। আমন মৌসুমে নিজের বীজ নিজে রেখে ব্যবহার করাই উত্তম। এ কথা মনে রেখেই কৃষকভাইদের ঠিক করতে হবে কোন জমির ধান বীজ হিসেবে রাখবেন। যে জমির ধান ভালোভাব পেকেছে, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি এবং আগাছামুক্ত সে জমির ধান বীজ হিসেবে রাখতে হবে। ধান কাটার আগেই বিজাতীয় গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে গাছের আকার-আকৃতি ও রঙ, ফুল ফোটার সময় ও শীষের ধরন, ধানের আকার আকৃতি, রঙ ও শুঙ এবং সর্বশেষ ধান পাকার সময় আগে-পিছে হলেই তা বিজাতীয় গাছ। সব রোগাক্রান্ত গাছ অপসারণ করতে হবে। এরপর বীজ হিসেবে ফসল কেটে এবং আলাদা মাড়াই, ঝাড়াই, বাছাই করে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে মজুদ করতে হবে।

আপনার প্রতিও অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।


১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ধানের বীজ সংরক্ষন বিষয়ে মুল্যবান
নির্দেশিকা রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয়টি অনেকরই উপকারে লাগবে ।

শুভেচ্ছা রইল

৩০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:০০

সোহানাজোহা বলেছেন: আপনার অনুমতি পেলে আমি আপনার লেখা পোস্টটি পিডিএফ ভার্সন সহ আপনার পোস্ট লিংক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করবো। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কিন্তু ছাত্রছাত্রী অনলাইনে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আপনার লেখাটি তারা পেলে পড়বেন এবং লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে ভাববেন বলে আশা রাখি।

ব্লগার আহমেদ জী এস সাহেবের একটি লেখা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ ই-মেইলের মাধ্যমে প্রেরণ করেছি যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা পড়তে পেরেছেন এবং উক্ত বিষয়ে ভাবনারও সুযোগ পেয়েছেন। আমি আশা করছি ব্লগে ইতিমধ্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র ছাত্রী লগইন হয়েছেন।

আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকুন।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


ধন্যবাদ সোহানাজোহা ।
লেখা লেখিইতো করি পাঠকের পাঠের জন্য।
আমি সানন্দে আপনার প্রস্তাবে সন্মতি দিচ্ছি ।
আমি ঠিক জানিনা সামুতে প্রকাশিত নীজের
লেখার লিংক কাওকে দিলে ইউজার নেম ও
পাশওয়ার্ডের উপর কোন প্রভাব পড়ে কিনা
কিংবা তা প্রকাশ হয়ে পড়ে কিনা ।
এ বিষয়টি আপনার জানা থাকলে
আমাকে জানালে বাধিত হব ।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও শিক্ষকদের
গবেষনার ফলে বাংলাদেশের কৃষি আজ এতদুর
এগিয়েছে । তাই এই মেধাবী নবীন ও প্রবীন
কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা
ছিল বরাবরই । তাদের গবেষনা প্রয়োগীক
ক্ষেত্রে আরো সম্প্রসারিত হোক
এ কামনাই করি সবসময় ।

শুভেচ্ছা রইল

৩১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৮

শায়মা বলেছেন: একের পর এক স্মৃতি থেকে তো স্মৃতির উথাল পাথাল হয়ে সব্বাই মুগ্ধ হয়ে গেলো ভাইয়া। এটা মনে হয় সামু ব্লগের সর্বকালের সবশ্রেষ্ঠ লেখা। প্রিয়তে নিয়ে গেলাম।

ভাওয়াল রাজার বাড়িতে আমিও গেছি।

এই সুতিয়া নদীটাকেও দেখেছি মনে হয়। নাম ভুলে গেছি।

যাই হোক নদ নদী বেঁদে বেঁদেনী মাটির বাড়ি রবিঠাকুর মুগ্ধ হলাম ভাইয়ামনি।

অনেক অনেক ভালোবাসা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:২১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




এতদিনের কিছু জমানো স্মৃতি বলে কি শেষ করা যায়। পাঠক মুগ্ধ হয় শুনে ভাল লাগল ।
মনে হওয়া কথামালায় লেখা য়অনেক উৎসসাহ জাগে। প্রিয়তে নেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানবে।

ট্রেনে ঢাকা হতে ময়মনসিংহ , জামালপুর ,নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গ গামী যাত্রীগন সুতিয়া
নদীর উপর দিয়তো অবশ্যই যাবেন , তবে নদীর নাম না জানা খুবই স্বাভাবিক ।

পরের পর্বেও থাকবে একটি নাম করা বেদে কাহিণী , সেটা লেখা নিয়েই ব্যস্ত আছি ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।


৩২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: স্মৃতিকথা আর তথ্যের সমন্বয়ে অসাধারণ একটি লেখা পড়লাম ! সত্যি বলতে শৈশবে সব অসম্ভব কে ই সম্ভব মনে হয়। তাই তো আঙিনা আম লিচুর বাগান এবং ধানের মাঠ পেরিয়ে নদী তীর থেকে এঠেল মাটি সংগ্রহ আপনার কাছে সম্ভব মনে হয়েছে।
আগের দিনের মুরুব্বী দের প্রতিটা কাজের পিছনে কিছু কারন যুক্ত ছিল, ছিল কিছু বিশ্বাস। ইরি ধান গরীবের খাবার হিসেবে শুনে এসছি। বালাম চালের নাম শুনেছি দেখি নাই যেমন শুনেছি মুক্তি যুদ্ধের গল্প।
মুনশগিঞ্জ যাবার রাস্তায় নারায়ণগঞ্জের শিল্প নগরীতে কিছু কাপড়ের ফ্যাক্টরি আছে , সেখানকার রঙ ধোয়া পানি তে আশেপাশের খাল ছোট নদী প্রচণ্ড ভাবে দূষিত হয়ে বিকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু আফসোস দেখার কেউ নেই । এমন ছড়িয়ে আছে সারা দেশেই।

শৈশবে যখন সদরঘাট হয়ে লঞ্চে গ্রামে যেতাম সে ভ্রমণে সব সময়েই শুশুক দেখার চেষ্টা করতাম সবাই । এবং পরে কে কতবার শুশুকের ডুব সাঁতার দেখেছি সে গল্প ও চলত কিছুদিন। জানি না এখন কি অবস্থা ।

তবে গ্রামে আমাদের ধানি জমিতে প্রতিবছর ই কালোজিরা চালের আবাদ হয় সামান্য হলেও।


ধন্যবাদ চমৎকার একটি লেখার জন্য।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



বিলম্বিত উত্তরের জন্য দু:খিত।
পোষ্টটি অসাধারন অনুভুত হ ওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

মুন্মিগঞ্জেরমেয়ের জন্য বালাম চাল দেখা খুবই সহজ ।
ধান নদী খাল এই নিয়ে বরিশাল।
সেখানে জলের উপর ও বসে বালাম চালের হাট ।
সদরঘাট থেকে বানরীপাড়া যাওয়ার লঞ্চে চাপলেই
বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ভোরের দিকে গেলেই চোখে পড়বে
একটি ভাসমান হাট। নীল আকাশের নীচে প্রায় ৫০০টি ছোট বড় নৌকায়
বাঁশের তৈরি বড় বড় পাত্রে বালাম চালের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রথম দেখাতেই কৌতূহলী যে কারোরই নজর কাড়বে এই দৃশ্য।
দেখতে পাবেন না দেখা সরু সুস্বাদু বিখ্যাত বালাম চাল ।
এটা আকৃতিতে বিশ্ব বিখ্যাত বাসমতি চালের মতই
যদিও এটা সুগন্ধী নয়। তবে খেতে বেশ সুস্বাদু।


নারায়নগঞ্জের কলকারখানার বর্জে শীতলক্ষার পানি
দুষীত করার সাথে এটা এখন গড়িয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানির
নদী মেঘনার দিকে , জানিনা কি হবে দেশের সকল
নদী নালার ।

শুশুক দেখার সৌভাগ্য হয়েছে শুনে খুশী হলাম ।
এটা এখন মনে হয় একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে
বাংলার নদী থেকে । শুশুকের উপস্থিতি নদীর
সুস্বাস্থের একটি ইনডিকেটর ।

আপনাদের গ্রামের কৃষি জমিতে কালীজিরা ধানের চাষ হয় শুনে
ভাল লাগল । এর দেশে বিদেশে বিশাল চাহিদা রয়েছে ।
এখানে এক কেজি চাল কিনি প্রায় ৫০০ টাকায় । তাই
এই সুগন্ধী ও সুস্বাদু বাংলাদেশী চালের আবাদ বৃদ্ধি
পাক আরো বেশী করে এ কামনাই করি।

আপনার নতুন কবিতা দেখার আশায় রইলাম ।

শুভেচ্ছা রইল



৩৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৫৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

অসাধারণ পোস্ট।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে আমি দীর্ঘ দিন ময়মনসিংহে ছিলাম।
এই সব স্থাপনা আর প্রকৃতি আমার খুবই চেনা।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



পোষ্টটি অসাধারণ অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

আমি আগেই শুনেছি আপনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন ।
সে সুবাদে দীর্ঘ দিন ময়মনসিংহে থাকাটাই স্বাভাবিক ।সেসময় সেখানকার
অনেক বেশী দৃশ্যই আপনি দেখেছেন সে গুলি আপনার কাছে খুবই পরিচিত।

নীচে থাকা আমেনা বেগম চৌধুরীর মন্তব্যে রাখা প্রশ্নটির
বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।

শুভেচ্ছা রইল ।



৩৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:২৭

আমেনা বেগম চৌধুরী বলেছেন: মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন আপনি কতো সনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন?

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ব্লগে স্বাগতম ।
আপনার মন্তব্যটির প্রতি
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের
দৃষ্টি আকর্ষন করেছি । তিনি
নিশ্চয়ই আপনার মন্তব্যটি
দেখবেন বলে আশা করছি।

আমার পোষ্টি কেমন লাগল
জানতে পারলে খুশী হতাম।

শুভেচ্ছা রইল

বলে

৩৫| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬

নাসরিন ইসলাম বলেছেন: আবহমান বাংলার চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আমার ব্লগে স্বাগতম।
সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম ।

শুভেচ্ছা রইল ।

৩৬| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: পরশ পাথর প্রাপ্তি! নামটা দেখেই ভেবেছিলাম রসায়ন বা আলকেমির কোন গবেষনা তুলে এনেছেন। পুরোটা পড়ার পর নামের স্বার্থকতা প্রকাশ পায়। গ্রাম-বাংলার বিলুপ্ত ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, কৃষ্টি আপনার লেখায় তুলে এনেছেন নিছক “পরশ পাথরের ছোয়া” থাকে কম নয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।

মোটা দাগে অনেকগুলো বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেছেন যা ছিল আমার মত তরুন প্রজন্মের কাছে একেবারেই অজানা। বিভিন্ন রকম ধানের প্রজাতি, নৌকার নাম আজকে প্রথম জানলাম। কবিগুরুর ময়মনসিংহ পদচারন এবং তার দেওয়া ভাষনটি আপনি লেখায় প্রকাশ করেছেন যা সতিই প্রশংসার দাবী রাখে।

আপনার শব্দ চয়ন এবং ভাষার ব্যবহার আমাকে অবাক করেছে “ জাপান মানে শান্তির সাদা পায়রা”। জাপানীদের স্তন্যপায়ী প্রানী শিকারের কথা যেহেতু তুলে ধরেছেন “অধমের জাপান ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় দেখা- জাপানে তিমি মাছের মাংস এখনো অনেক জনপ্রিয় বৃদ্ধদের কাছে। একটু চড়া দাম হওয়ায় তরুন জাপানিরা একটু কম পছন্দ করে। টোকিও সহ আরো কিছু রেস্টুরেন্ট এ রীতিমত তিমি মাছ বিক্রি করে। ১২ শতাব্দি থেকে নাকি জাপানিরা তিমি শিকার করে আসছে, এইটা নাকি জাপানি সংস্কৃতির একটা অংশ। ১৮ শতকের পর তো জাপানি ওয়াটার টেরিটরি ছেড়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় তিমি সিকার শুরু করে দেয়।

আপনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর পাঠক এবং ব্লগারদের কথা মাথায় রেখে লেখাটি শেষ করেছেন। আপনার সু-সাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি। আর একটা প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পাড়ছি না? ছোট বেলায় নানুর কাছে শুনতাম “যা দিন ভাল, আসে দিন খারাপ”। আপনাদের শৈশবে হয়তো বড়দের কাছে তাদের কাটানো সুন্দর অতীতের অনেক ঘটনা শুনে এসেছেন? ধন্যবাদ।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আপনি ঠিকই বলেছেন , গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পরশ পাথর হতেও বেশী মুল্যবান ।
ময়মনসিংহের টাউন হলে বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেয়া নাগরিক সম্বর্ধনার জবাবে
রবি ঠাকুরের ভাষনটি আমার কাছে খুবই মুল্যবান একটি দলিল হিসাবে মনে হওয়ায় তা
সকলের সাথে শেয়ার করেছি ।

দেশের তরুন প্রজন্ম যেন আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি , ইতিহাস ,
কবিতা সাহিত্যের সাথে একটি যোগসুত্র বজায় রাখে সে কামনা আমি
সবসমই করি । আমাদের এ প্রজন্মের মেধাবী তরুনদের প্রতি আমার
অগাধ আস্থা রয়েছে। আমার বিশ্বস তারা আমাদের দেশের ভাগ্যকে
আমুল পরিবর্তন করার ক্ষমতা রখে । আমি এ প্রজন্মের তরুনদের
উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি ।

জাপানী বৃদ্ধদের তিমি ভক্ষন কর্মটি এখনো চালু থাকা বেশ চমকপ্রদ ।
জাপানীদের এখন নীজেদের জলসীমা ছেড়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র জোনে
তিমি শিকাড় বেশ উদ্বেগ জনক । বিবিসির নিউজে দেখলাম দিন
কয়েক পুর্বে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিনে তাসমানিয়া উপকুলে প্রায় শতিনেক
তিমি উককুলের কাছাকাছি অগভীর সমুদ্র জলে আটকা পড়েছে ,এর
মধ্যে প্রায় শতাধিক তিমি নাকি মারা গেছে। এটা মনে হয় বড় কোন
বিপর্যয়ের ঈংগীত দিচ্ছে ।

আগেকার মুরুব্বীগন ঠিকই বলতেন 'যায় দিন ভাল যায় , সামনের দিন গুলির
জন্য থাকে অনেক অশংকা' ।

আমার সুস্বাস্থ কামনার জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার জন্যও রইল শুভ কামনা ।

৩৭| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৮

মিরোরডডল বলেছেন:



শৈশবের যে খেলাগুলোর কথা বলা হয়েছে, তার কিছু খেলার সাথে পরিচিত । ছোটবেলায় যখন আমরা সবাই বছর শেষে গ্রামে বেড়াতে যেতাম ওখানে দেখেছি । বউচি বলেও একটা খেলা ছিলো ।

আম গাছটা দেখেও মনে পড়ে গেলো, গ্রামে অনেক আমগাছ থাকলেও বাড়ীর ভেতরে একটা বিশালাকার আমগাছ ছিলো, ঠিক এই ছবির মতো । ওটাকে বলতো কালো আম গাছ, গাছের নীচের চারদিক অন্ধকার হয়ে থাকতো এতো বড় ।

৭১ এর কিছু বর্ণনা আর খুব সুন্দর ছবিগুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো । আশা করা যায় শুধু সেই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে হয়তো কখনও একটা পোষ্ট হবে ।

বাংলাদেশে দেখা হয়নি কিন্তু এখানে ডলফিন দেখেছি, অনেকই ভালো লাগে ।

অনেক ইনফরমেটিভ আর সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে একটা সমৃদ্ধ পোষ্ট ।
সাপের অংশটুকু স্কিপ করে গেছি । দেখতে ও পড়তে ভয় লাগে :|

প্রিয় পোষ্টের জন্য একটি প্রিয় গান ।







২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




বউচি খেলার কথা বলেতো আমাকে নিয়ে নিয়ে গেলেন অনেক পিছনের স্মৃতিতে ।
মাঠ অথবা বাড়ির উঠোন যেখানে খুশি সেখানে এই খেলা খেলতাম ছোটকালে । খেলার শুরুতে ২০-২৫ ফুট দূরত্বে মাটিতে দাগ কেটে দুটি ঘর তৈরি করতাম। পাঁচজন পাঁচজন করে খেলায় দু্টিদল থাকত ।দুই দলের মধ্যে যারা প্রথমে খেলার সুযোগ পেতো তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বউ নির্বাচন করতাম। দুটি ঘরের মধ্যে একটি বড় ঘরে এক পক্ষের বউ বাদে সব খেলোয়াড় থাকত। আর ছোট ঘরে থাকত বউ। বউয়ের বিচক্ষণতার ওপর খেলার জয় পরাজয় নির্ভর করত। খেলায় বউ ঘর থেকে বউকে ছুটে আসতে হত বড় ঘরটিতে। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা সব সময় পাহারায় থাকত যেন বউ ঘর থেকে বের হতে না পারে। বউ বাইরে এলে যদি বিপক্ষ দলের কেউ তাকে ছুঁয়ে দিত তাহলে ওই পক্ষের খেলা শেষ হয়ে যেতো। পরে বিপক্ষ দল খেলার সুযোগ পেতো ।এভাবে পর্যায়ক্রমে খেলা চলতে থাকত।

বউচি খেলা ছাড়াও আরো মঝার মঝার অনেক খেলা ছিল যথা -
ইচিং বিচিং,ওপেন টু বাইস্কোপ,কড়ি খেলা,কানামাছি,লাঠি খেলা,কাবাডি,কুতকুত, গোল্লাছুট, টোপাভাতি,ডাংগুলি,দাড়িয়াবান্ধা,নুনতা খেলা,পুতুল খেলা,ফুল টোকা,বাঘ ছাগল খেলা
মার্বেল খেলা, মোরগ লড়াই,লাটিম,লুডু,ষোল গুটি,এক্কাদোক্কা,ঘুড়ি উড়ানো,পানিঝুম্পা
রুমাল চুরি এলাটিং বেলাটিং ইত্যাদি ।
কিছু কিছু খেলার ছড়া গান এখনো মনে আছে যথা -
১) ইচিং বিচিং চিচিং ছা/প্রজাপতি উড়ে যা ( ইচিং বিচিং খেলার ছড়া গান)
২)ওপেন টু বাইস্কোপ/নাইন টেন তেইশ কোপ/সুলতানা বিবিয়ানা/সাহেব বাবুর বৈঠকখানা (ওপেন টু বাইস্কোপ ছড়া গান )
৩)খুশুর খুশুর দুর্গা মাসুর/তিন তালিয়া মার কেলিয়া?কুমড়ার চাক ধাপ্পা দিয়া/হাতের কড়ি হাতে থাক। ( কড়ি খেলার গান )
৪)কানামাছি ভোঁ ভোঁ/যারে পাবি তারে ছো ( কানামাছি খেলার গান )
৫)লাইলি লুইলি বাঁশের চোঙ?বাঁশ কাটলে টাকা থোং ( কুতকুত খেলার গান )
৬)নুনতা বলোরে/এক হলোরে/নুনতা বলোরে/দুই হলোরে....(এভাবে সাত পর্যন্ত)
কয় ভাই? কয় বোন??-পাঁচ ভাই, পাচঁ বোন/একটা বোন দিয়ে যা..?ছঁতে পারলে নিয়ে যা( নুনতা খেলার গান )
৭)চম্পা ফুলের গন্ধে/জামাই আইছে আনন্দে/চম্পা ফুলের সুবাসে /জামাই আইছে আহাসে
হলদি গুটি গুটি/চিরা কুটি কুটি/আজ ফুতলির বিয়া/ ফুতলিরি নিয়া যাবে/ঢাকে বাড়ি দিয়া ( পুতুল খেলার গান )
৮)এলাটিং বেলাটিং/তেলাটিং চোর/মাই ফোর ডি ফোর/টুয়েনটি ফোর ( এলাটিং বেলাটিং খেলার গান )

সাপ দেখে ভয় পান শুনে আপনার জন্য এটা রেখে গেলাম । এটায় কিন্তু সাপের কোন ছবি নাই। আছে বাইদ্যাদের ছবি।
বাপু রাম সাপুরে, কোথা যাছ বাপুরে ,আয় বাপু দেখে যা ..
এটা দেখলে ও শুনলে সাপকে আর ভয় পাবেন না,
বরং সাপ নিয়ে আরো অনেক কিছু ভাববেন।
আপনারদেয়া গান টি শুনলাম ,অনেক ভাল লাগল।

পোষ্টটি প্রিয় মনে হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

৩৮| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩১

আমেনা বেগম চৌধুরী বলেছেন: আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। আমি আমার পরিচয় গর্বের সাথে আপনাকে দেওয়ার কারণ আমি আপনার ও ব্লগার আহমেদ জী এস এর লেখার দাওয়াত পেয়ে ব্লগে রেজিষ্টার করেছি। আপনাদের লেখা পোস্ট ওয়েবলিংক সহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট হেড থেকে শুরু করে নতুন পুরাতন ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌছেছে। যিনি এই কাজটি করেছেন তাঁকে সহ আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৫৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ছিলেন শুনে খুশী হলাম ।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার স্মৃতি মধুর কিছুটা সংস্লিষ্টতা ছিল ।
১৯৮১ সনে কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন একটি অংগ সংগঠনের সিনিয়র সাইন্টিফিক
অফিসার হিসাবে নিয়োজিত খাকা কালীন সময়ে সেখানকার গ্রাজুয়েট
ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে একটি স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষন কোর্সে অংশ গ্রহন
করেছিলাম । সমাপনী দিবসে সে সময়কার ইন্সটিটিউট এর পরিচালক
ডক্টর হালিম চৌধুরী ও তখনকার ভাইস চেন্সেলর ডক্টর আমিনুল হকের
ভাষনের কথা আজো মনে পড়ে । তাঁরা বলেছিলেন যখন সেথায় যে
অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমরা যেন বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও
কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নের কথা কখনো ভুলে না যাই । জীবনের এ
পড়ন্ত বেলায় তাদের মুল্যবান কথাগুলি এখনো মনে গেথে আছে।

আর মনে আছে গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের ডরমিটরিতে
থাকা কালিন আনন্দ মুখর স্মৃতিময় দিনগুলির কথা ।

আমার পোস্ট ওয়েব লিংক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট
হেড থেকে শুরু করে নতুন পুরাতন ও প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের কাছে
পোঁছেছে শুনে খুশী হলাম। এ সংবাদটুকু জানানোর জন্য ধন্যবাদ ।
এই কাজটির উদ্বোক্তা সোহানাজোহাকেও জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ।

আমাদের লেখার দাওয়াত পেয়ে সামু ব্লগে নিবন্ধিত হয়েছেন শুনে
অনেক খুশী হলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

৩৯| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৩

করুণাধারা বলেছেন: এমন পোস্ট পড়ার পর যে কথাই মন্তব্যে লিখতে যাই তা মনে হয় উপযুক্ত হলো না। ফলে এতদিনেও আমি এই পোস্টে আমার মনোমত মন্তব্য করতে পারিনি। তবে লাভ হয়েছে এটাই, বারবার পোস্টে আসার ফলে অন্য ব্লগারদের ঋদ্ধ মন্তব্য আর আপনার তথ্য সমৃদ্ধ উত্তর পড়তে পারছি আর জানতে পারছি।

আশাকরি পরে আরেকবার আসবো। আপনাকে এই পোস্টের জন্য ধন্যবাদ, এবং শুভকামনা জানাই।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:০২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনার মত একজন গুণী ব্লগারের আগমনে
সব সময়ই আমার ব্লগ ধন্য হয়। যে মনোমুগ্ধকর
মন্তব্যটুকু রেখেছেন তাতে আমি আপ্লুত ।
মন্তব্যকারীদের মুল্যবান মন্তব্যগুলি আমার
জানার পরিধিকে বিস্তৃত করে দারুনভাবে ।
আরো একবার আসবেন শুনে ভাল লাগল ।

শুভেচ্ছা রইল

৪০| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: ছোটবেলায় ডাংগুলি, গুল্লী (মার্বেল), লাট্টু (লাটিম) আর তাস (সিগারেটের খালি প্যাকেট দিয়ে) খেলে খুব মজা পেতাম। ঘুমের মাঝেও এসব খেলা নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম।

"বজ্রকন্ঠ" আমাদের মনে উন্মাদনা জাগাতো - একদম ঠিক কথা! কানের কাছে রেডিও চেপে ধরে অপেক্ষায় থাকতাম, কখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এর অনুষ্ঠান শুরু হবে! এম আর আখতার মুকুল এর কন্ঠে পাঠকৃত "চরমপত্র" শুনে জাতির মনোবল অনেক বেড়ে যেত। রাত সাড়ে দশটায় শুরু হতো আকাশবাণী কোলকাতার রাতের সংবাদ এবং দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এর ভরাট কন্ঠে ও তেজস্বী ভাষায় "সংবাদ পরিক্রমা"
আমি নিয়মিত ভাবে বিবিসি এবং ভয়েস অভ আমেরিকার বাংলা এবং ইংরেজী উভয় প্রোগ্রামদ্বয় শুনতাম, যতক্ষণ পারতাম। এ ছাড়া তখন আরেকটি উচ্চমানের রেডিও'র সংবাদ মাধ্যম ছিল এবিসি বা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এর সংবাদ। সেটাও শুনতাম।
কিউবায় পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানী করার অপরাধে সে সময় আমেরিকা আমাদের পিএল-৪৮০ এর খাদ্য চালান বাতিল করে দেয়ায় এ দেশের লক্ষাধিক লোক না খেয়ে মারা যায়, এটা ছিল ভীষণ মর্মান্তিক একটা পরিস্থিতি। আমাদের পরিবারেও তখন আমরা মাস কয়েক একবেলা ভাত আর এক বেলা রুটি খেয়ে দিন কাটাতাম। আমি নিজে রেশন শপে সারাদিন লাইন দিয়ে সামান্য কিছু রেশন সামগ্রী নিয়ে ঘরে ফিরতাম। আমেরিকার ভোটারগণ জানতেনই না তাদের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার কিভাবে একটা সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুর একটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছিল!

আপাততঃ এটুকু বলেই বিদায় নিচ্ছি। পরে আবারো আসবো ইন শা আল্লাহ!

০২ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:০৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



বিলম্বিত উত্তর দানের জন্য দু:খিত ।
আমার ভুত নিয়ে একটি পোষ্ট প্রসবের জন্যএকটু ব্যস্ত থাকায়
সময় নিয়ে এ পোষ্টে আসতে বিলম্ব হল ।
সমসাময়িক মানুষদের সাথে মন্তব্য চালাচালির মঝাই আলাদা ।
দুজনের স্মৃতি কথা যেন মিলে যায় একসাথে।

মুক্তি যুদ্ধের পুরাটা সময় কেটেছে আমার বনে বাদারে ।
তিন ব্যন্ডের একটি পুরানো সনিউ রেডিও ছিল সম্বল আমাদের ।
ব্যাটারী শেষ হয়ে গেলে তা যোগার করাও ছিল মহা মুসকিলের
ব্যপার । যাহোক আমরাও শুনতাম , ব্জ্রকন্ঠ , চরমপত্র ও গৌহাটি
থেকে প্রাচিত রেডিও সিলোন এর আসামী ভাষায় প্রচারিত সংবাদ ।
সংবাদ পাঠকের শেষ এক টিলাইন এখনো মনে আছে
সেটি হল " ইমানে আমানে বটর" তার মানে
এখনকার মত সংবাদ শেষ "

চুয়াত্তরে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের করুন চিত্রগুলি এখনো মনের গহীনে
কষ্টের কাটার মত গেথে আছে । মনে পরে ঢাকা হতে উত্তর বঙ্গে
যাওয়ার পথে ময়মনসিং স্টেশনে যাত্রা বিরতির সময়
দেখতাম স্টেশনের প্লাটফর্মে সারি সারি ক্ষুধার্থ মানুষ
শুয়ে আছে । আর কয়েকজন মানুষ সমস্বরে বলছে
ঐ যে আরেকটা মইরা পইরে রইছে ঐখানে । মরা মানুষটিকে
টেনে হিচরে নিয়ে তুলে স্টেশনে বাইরে থাকা ট্রাকে ।একজনকে
ট্রাকে তুলে নিয় ফিরে এসে দেখে আরেকজন মরে পরে
আছে প্লাট ফর্মের উপরে।ট্রাকে স্তুপ করে রাখা অআছে
অনেক মানুষের লাছ । সে যে কি করুন দৃশ্য! যে না দেখেছে
সে কিছুতেই বুঝবেনা চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ কাকে বলে ।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।

শুভেচ্ছা রইল

৪১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আমাদের মন থেকেও মুছে গেছে অনেক ধানের নাম" - একদম ঠিক কথা! ছোটবেলায় আমাদের দাদীমা কে দেখতাম, নিজ ক্ষেতে অল্প করে কিছু পোলাও'র চাউলের ধান আবাদ করতে। সেটা করতেন শুধুমাত্র নিজেদের খাবারের জন্য। দাদীবাড়ী বেড়ানো শেষে আমরা ফিরে আসার সময় উনি সে ধান ছেঁটে চাউল বানিয়ে আম্মাকে দিতেন, ঢাকায় ফিরে পোলাও রেঁধে আমাদেরকে খাওয়ানোর জন্য। কি স্নেহ- মহব্বত-ভালবাসায় জড়ানো ছিল সেদিনের সেই মধুর সম্পর্কগুলো!

হায়রে! আপনার এ পোস্টে এসেও পেলাম সেই সুতিয়া নদী আর গুণটানা নৌকার কথা! এ দুটো বিষয়ই তো আমার গতকালের পোস্টে স্থান পেয়েছে অনেক স্মৃতির সম্ভার নিয়ে! আশাকরি, আমার সে পোস্টটা একবার পড়ে আসবেন। পাগলা জগাই এর একটি পোস্টে "সুতিয়া নদীতে জলবাস" শীর্ষক একটি ছবি দেখে আমার সে স্মৃতি রোমন্থনমূলক পোস্টটি লিখে ফেলি।

পরশ পাথরের খোঁজে পরে আবারো আসবো ইন শা আল্লাহ!

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:১৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


পরশ পাথরের খোঁজে আবারো আসছেন দেখে ভাল লাগল ।

আপনার মন থেকে সে যুগের ধানের নাম যে যায়নি মুছে তা হলফ করে বলতে পারি । তবে কিছু জাতের ধানের চাষ মাঠ হতে উঠে গেছে চিরতরে । আমাদের দাদীমাগন যে কি পরিমান গুনী কিষানী ছিলেন তা আজকার যুগের কোন কৃষক গৃহিনী ভাবতেও পারবেনা । দাদী বাড়ী বেড়ানো শেষে ফিরে আসতেন ঢেকি ছাটা কালিজিরা ধানের চাল নিয়ে শুনে ভাল লাগল। যেহেতু রংপুর এলাকায় এখনো কালীজিরা ধানের আবাদ হয় ব্যাপকভাবে তাই দেশের বাড়িতে গেলে নিয়ে আসতে পারবেন বস্তা ভরে ।রংপুরের আদি কৃষক পরিবাের অনেকেই বেশ বড় ধরনের তালুকদার ,উনারা নীজেরাও জনেননা কত জমি আছে তার । সুগন্ধী কালিজিরা ধানের আবাদ এখনো শুনেছি রয়েছে তাঁদের ধানের খেত জুরে। আমার মনে পড়ে রংপুরের বদর গঞ্জের বিঞ্চুপুর গ্রামের আমার পরিচিত একজন বেশ অবস্থা সম্পন্ন একজনের সাথে ব্যাংকে গিয়েছিলাম তার একটি বড় মাছ চাষ প্রকল্পের লোনের ব্যপারে । ম্যানেজার উনাকে জিজ্ঞেস করেছিল উনার পেশা কি , জবাবেতিনি বলেছিলেন '' সেলিং অফ প্যাটারনেল প্রপার্টি" এ কথাশুনে ম্যনেজার সহ আমরা হাসতে হাসতে খুন হওয়ার দশা হযেছিল । এটাপ্রায় বছরচল্লিশেক আগের কথা
এখন তাদের কি অবস্থা তা ঠিক জনিনা ।

কি সৌভাগ্য আমার আমার এ পোস্টে এসেও পেলেন সুতিয়া নদী আর গুণ টানা নৌকার দেখা। সুতিয়া নদী আমার জীবন, জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছি সুতিয়া নদীকে ঘিরেই । এই পোষ্টটি লেখার সসময় আমি 'পাগলা জগাই' এর কাছে এ নদীর ভরা বর্ষা মৌসুমের ছবি চেয়েছিলাম । তিনি কয়েকটি ছবি দিয়ে সহায়তা করেছেন , কিন্তু সেগুলিকে আমার লেখার সাথে খাপ খাওয়াতে পারিনি বলে আমার পোষ্টে যুক্ত করিনি। গুণ টানা নৌকার একটি সুন্দর ছবির জন্য হন্যে হয়ে গুগল ইমেজে ও বিভি্ন্ন লেখায় গুণ টানা নৌকার ছবি সার্চ করেছি । অবশষে গুগলে গুন টানার একটি উপযুক্ত ছবি পেয়ে সেটাকেই টেনে এনে বসায়ে দিয়েছি এ পোষ্টে । মাঝিদের সাথে আমি ছোট কালে গুণ টেনে দেখেছি এটা আসলেই খুব কষ্টের কাজ ।

আপনার পোষ্টটি দেখব ইনসাল্লাহ

শুভেচ্ছা রইল

৪২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: ময়মনসিংহ মিউনিসিপ্যাল কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত সম্বর্ধনার জবাবে দেয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষণটি পড়ে মুগ্ধ হ'লাম এবং ক্ষীরো নদীর দূষণের মাত্রা দেখে রীতিমত শঙ্কিত হ'লাম! আর শিশুক নিধনের মহোৎসবের কথা পড়ে যারপরনাই ব্যথিত! বিশেষ করে সেপ্টেম্বর টু ফেব্রুয়ারী মাস ধরে ডলফিনদের প্রতি জাপানীদের নৃশংসতা এক কথায় ভয়াবহ! "সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে ডলফিনেরা আজ অকাল সূর্যাস্তের অপেক্ষায়" কথাটা পড়ার সময় হৃদয়টাকে মোচড় দিয়ে গেল!

সব শেষের দলে বলে মাছ ধরার ছবিটা বড়ই চমৎকার! পোস্টে ভাল লাগা + +

০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষনটি আরো অনেক লম্বা চওড়া ছিল ,
আমি শুধু পোষ্টের সাথে প্রসঙ্গিক বিষয়টুকু তুলে ধরেছি ।
ক্ষীরো নদীর দোষন সত্যিই অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে ।
আরেকবার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে সুর্যদয়ের দেশ
জাপান ঘুরে, দেখে আসতে পারবেন সেখানে কিভাবে
ডলফিন নিধন চলছে।

মাছ ধরার ছবিটি চমৎকার অনুভুত হওয়ায় ভাল লাগল ।

শুভেচ্ছা রইল ।


৪৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: "আমরা বুঝার আগেই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো হারিয়ে গেছে: আমাদের ধান, মাছ, শুশুক, পাখী, হাতী, বাঘ, কিছুই নেই; পুরোদেশ ক্যান্সারের রাজ্যে পরিণত হবে, জন্ম নেবে স্বাস্হ্য সমস্যা নিয়ে ভংগুর প্রজন্ম" - চাঁদগাজী এর এ কথাগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক, কিন্তু সত্য।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ময়মনসিংহ ভ্রমণ বৃত্তান্তের কিছু দুর্লভ কথা ও স্মৃতি ৬ নং মন্তব্যে উল্লেখ করে ঠাকুরমাহমুদ এ পোস্টকে সমৃদ্ধ করেছেন, এ কথা আপনি নিজেই উল্লেখ করেছেন। চমৎকার মন্তব্য এবং প্রতিমন্তব্যের জন্য আপনাদের উভয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যদি ঠাকুরমাহমুদ পুনয়ায় কোনদিন এ ব্লগে আসেন, আমার এ ধন্যবাদটুকু তিনি নিয়ে যাবেন।
নদীতে বর্জ্য ফেলা রোধ করা ও ড্রেজিং এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে আপনার এবং রোকসানা লেইস এর উদ্বেগকে সাধুবাদ জানাই। পরিবেশ আইন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য আহমেদ জী এস কে সাধুবাদ।
এক সময় হয়তো সেসব মজার কিছু কাহিনী নিয়ে আসবো - ১৭ নং মন্তব্যে দেয়া সোহানী'র এই প্রতিশ্রুতির কথাটা তাকে মনে করিয়ে দিতে হবে। :)
"ব্লগে পোষ্ট প্রকাশের জন্য যেহেতু কোন শব্দ সংখার কঠিন লিমিটেশন নাই তাই মনের আবেগে লিখে যাই" - জ্বী, আপনি বরং সেটাই করুন। আপনি যেভাবে মন চায়, সেভাবেই লিখে যান, আমরা সানন্দে পড়ে যাবো। :)
আমরাও স্কুলে থাকতে আমেরিকার দেয়া সয়া প্রোটিন বিস্কুট এবং গুঁড়ো দুধ খেয়েছি। এখন জানি, সেগুলো পিএল-৪৮০ এর আওতায় আনীত হয়েছিল। ১৭ নং প্রতিমন্তব্যে এই পিএল-৪৮০ এর উপর চমৎকার কিছু কথা বলার জন্য আপনাকে সাধুবাদ। কাজী ফররুখ আহমেদ এর ১৯ নং মন্তব্য এবং তদুত্তরে আপনার প্রতিমন্তব্য, দুটোই এ ব্লগের একটি ঐশ্বর্য হিসেবে টিকে থাকবে।
একা ছেড়ে দিয়ে দেখেন অবস্থা কি আকার ধরে!! - ছোট্ট এ কথাটাতে (২২ নং প্রতিমন্তব্য) বড্ডো মজা পেলাম!! :)
"একমাত্র শকুনই অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত মৃত গরুর মাংস খেয়ে হজম করতে পারে। এছাড়া যক্ষ্মা ও খুরা রোগের জীবাণু শকুনের পেটে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। মৃতদেহ থেকে ক্ষতিকর জীবাণু ছড়ানোর আগেই তা শেষ করতে পারে শকুন" - ২৩ নং মন্তব্যে ঠাকুরমাহমুদ এর এ কথাগুলো পড়ে চমৎকৃত হ'লাম। ষাটের দশকের শেষের দিকেও খোদ এই ঢাকা শহরেই আমি অনেক শকুন দেখতাম। আমাদের বাসার কাছেই উঁচু উঁচু গাছের মগডালে ওদের বাসা ছিল। এখন ওরা শুধু রাজধানী কেন, গোটা দেশ থেকেই নিশ্চিহ্ন প্রায়!
"আপনার ভাবীর জন্য ভাত রান্না কোন ঝামেলাই না । চাল ধোয়ে পরিমান মত পানি দিয়ে ইলেকট্রিক রাইস কুকারে
চাপিয়ে দেয়,বাছ তার কাজ শেষ"
(২৫ নং প্রতিমন্তব্য) - এ বছরের শুরুতে যখন মেলবোর্নে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তখন আমিও গিন্নীর কাছ থেকে এ পদ্ধতিটা শিখে নিয়েছিলাম! :)
"নগরায়ন ঠিক যতটা মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, ততটাই জীববৈচিত্রের জন্য কঠিন করে তুলেছে....." - আখেনাটেন এর সাথে একমত!

এখানেই বন্ধ করে দিচ্ছি আপনার দীর্ঘ পোস্টের উপর আমার দীর্ঘ মন্তব্যের ডালা। পোস্ট যেমন সমৃদ্ধ, পাঠকদের মন্তব্য এবং আপনার প্রতিমন্তব্যগুলোও ততটাই সমৃদ্ধ। মন্তব্যগুলোতে আপনার অগাধ পান্ডিত্যের প্রতি পাঠকদের ভালবাসা ও সমীহ প্রকাশিত হয়েছে, যার সাথে আমিও নিজেকে যুক্ত করতে চাই। সবশেষে, আমার কাছে যেটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে প্রতিভাত হয়েছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের লাইফলাইন নদীগুলোর ধীরে ধীরে মরে যাওয়া। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের নদীগুলো এখন আর সুজলা নেই, আগেকার মত প্রমত্তা তো নয়ই। নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা আশু প্রয়োজন! বিষয়টির প্রতি রাজা-প্রজা, উজির নাজির, গুরু-শিষ্য, পন্ডিত -মূর্খ- সকল নাগরিকের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ভাল থাকুন সপরিবারে, সুস্বাস্থ্যে। শুভকামনা নিরন্তর!!!


০৩ রা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:





বিভিন্ন গুরুজনের মুল্যবান মন্তব্য সমুহের চমৎকার
মুল্যায়ন করেছেন দেখে আমি অভিভুত হয়েছি ।
মন্ত্রমুগ্ধের মত আপনার এই মন্তব্যটি পাঠ করেছি।
কোন পোষ্টের সাথে পোষ্টের মন্তব্য গুলির মুল্যায়ন
সামু ব্লগে আমি খুব কমই দেখেছি । এক্ষেত্রে আপনি
অনন্য। আপনি আপনার এ ধরনের মন্তব্য রেখে
সেই পোষ্টটিকে নিয়ে যান অনেক উচ্চতায় ।
আপনার এইমন্তব্যটি আমার পোষ্টটিকেও
নিয়ে গেছেন অনেক উচ্চতায় ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.