![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চার বছর আগে সমুদ্রের পাশে আমার ভাইয়ের সাথে মজ্জেলের দেখা হয়েছিল। মজ্জেলের সাথে কথোপকথন নিয়ে ভাই একটি গল্প লিখেছিল।যতদূর মনে পড়ে প্রথম আলো পত্রিকা পড়তে গিয়ে ভাইয়ের গল্পটি আমার চোখে পড়ে। সামান্য একটু পড়ে বিরক্তির স্বরে –‘ কি সব লিখেছে ,ছাই’ বলে আমি পড়া বন্ধ করে দিই। তারপর থেকে মজ্জেল সম্পর্কে আমার আরো ধুয়াশার জন্ম নেই।
তবে মজ্জেলকে নিয়ে ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে। স্কুলে পাশে ফুঁটো ছাতা মাথায় দিয়ে গরু চরাতো ও। আমি ওকে কৌতুলবশত দেখতাম। ছোট বেলায় আমার ও ভাই বোনদের নাপিত বলতে ছিল একজন- শুধু -মজ্জেল।
গত বছর গ্রামে মিনু চাচার জানাজায় গিয়েছিলাম। দুই বছর পরে গ্রামে গিয়ে আমার পুরানো স্মৃতি রোমমন্থন হতে থাকে। চাচার জানাজা হয় সন্ধ্যা বেলায়। বাড়ীতে আমরা ভাই বোনরা রাত বারোটা পর্যন্ত গল্প করে ঘুমোতে যাই। পাশ ঘরে অনেক দিন মানুষ জন শয়নি।খুব স্যাঁতস্যাঁতে ও বাঁদুড়ের পায়খানার গন্ধ ।ঐ রাতে বোন দুলাভাই ও ভাই ভাবি নিজেরা একেকটি রুম বেছে নেই। আমার ভাগে পড়ে পুরানো চকি ও আর স্যাঁতস্যাঁতে পাশ ঘর।
রাতে ঘুম এলো না। পাশঘরের একাপাশের দরজা খুলে বাইরে হাঁটতে বের হলাম। কিছুক্ষণ হাটার পর মজ্জেলের বাড়ীর কাছে এসে থেমে গেলাম। ভাইয়ের লেখা গল্পটার কথা মনে পড়ল।মনে হলো – ‘ইশ! কেন যে গল্পটা ভালো করে পুরোটা পড়লাম না, শুনেছি গল্পটা খুব ভালো পুরস্কার পেয়েছে, দেশের একটি নাম নামি গল্প হয়ে গেছে।’
মজ্জেলের মাটির বাড়ীটা আর নেই। ওখানে হাবু মোল্লা তিন তলা বাড়ী ফাঁদিয়েছে। পাশে যেখানে মজ্জেলের বাব দাদাদের কবর ছিল ওখানে – একটি বড় গডুয়ান ঘর হয়েছে।
মজ্জেলের কবর এখানে আছে কি না জানিনা। তবে না থাকার ই কথা। কারণ গ্রামে নতুন আরেকটা গরুস্থান হয়েছে। যতদূর মনে পড়ে মজ্জেল শেষ কালের ভ্যান চালানো বাদ দিয়ে বাদাম বিক্রি ধরেছিল। মাঝে মাঝে সাইকেলে করে তেল-ও বিক্রি করত ও। কিন্তু হঠাৎ একদিন ট্রাক চাপায় ও মারা যায়। আমরা শহরে থাকতাম। মজ্জেল মরার সংবাদ মৃত্যুর দুদিন পরে আমাদের বাড়ী এসে পৌছায়। যতদূর মনে পড়ে ওর লাশের জানাজা ও ময়না তদন্ত কোন কিছুই হয়েছিল না। ওর জানাজা দিয়ে কোন মোল্লা মাতুব্বর সময় নষ্ট করতে চাইনি হয়তো। না কি অন্য কিছু । হয়তো অন্য কোন ব্যাপার ছিল।
শুনতাম মজ্জেলের দশটা ছেলে মেয়ে । দুটো ইন্ডিয়ায় থাকে। মজ্জেলের বউ সম্পর্কে কিছু খারাপ কথাও শুনতাম।থাক ওগুলো। ওরা কেউ এখন গ্রামে থাকে না। কেউ গেছে –ধবল পুর। কেউ গেছে –হাতু নগরে। বড়টা ঘর জামাই হয়ে শ্বশুরবাড়ী ছেলে হয়ে গেছে আরকি।
গডুয়ান ঘরের একপাশে গিয়ে বসলাম। কেউ নেই। পুরো গ্রাম শান্ত।পৌষ মাস ।শীর শীর বাতাস। পাশে আওয়াজ- ‘ কি কচ্চির তুই একিনে।’
আমি আশ্চর্য হয়ে যায়। ভাই এর গল্প পড়ে হেসেছিলাম। কিভাবে আত্মার সাথে মানুষ কথা বলতে পারে। ‘বাস্তবে কি এরকম হয় নাকি!’ ইশ ভাইয়ের গল্পটা কেন যে পুরো পড়লাম না। যে দুটি লুঙ্গি ছিল দুলা ভাইরা পরে ঘুমিয়েছি। আমার পরনে শার্ট -প্যান্ট ও পকেটি অবশ্য এখনো কলম –প্যাডের একটি পাতা রয়েছে । আমি এরকম-ই । পকেট থেকে অনেক সময় জিনিসপত্র বের না করেই ঘুমাবার চেষ্টা করি।
লেখার চেষ্টা করি –মজ্জেলের কথাগুলি। মজ্জেল বলে- ‘ কি নিকচু বাবা; নিকতি পারবা না। ঘুটঘুটি অন্ধকার।’ সেই অন্ধকারে সর্বস্ব চেষ্টা করে লেখার চেষ্টা করি। লেখা হয়ে ওঠে না। বিছানার বালিশের নীচে মোবাইলটা রেখে চলে এসেছি।
‘ন্যাকবা ,নেকো, আমার বাপের অনিক জমি চিলু, তিক্কা আলী নেকি নিলো।আর বাপ হঠাৎ মরি গেনু আমরা অনেক জমি হারিনু সেবার।’
আমি ভাইয়ের গল্পটাকে ভাবি। যাক বাবা ! ভাইয়ের গল্পটা পড়িনি, ভালোই হয়েছে। কারণ পড়লে হয়তো হুবুহু ভাইয়ের মত লিখে ফেলতাম।’
লেখার প্রচেষ্টা বন্ধ করি। ঘন গাছ ও বাগানের নীচে কোন আলো আসে না। পাশে বড় গডুয়ান।সেটা আলো আসতে খুব বাঁধা দিচ্ছে। ‘তোমার অনেক কষ্ট তাইনা মজ্জেল ভাই।’ মজ্জেল বলে – ‘কষ্ট ফষ্ট বুঝিনা। ভালো ছিনু ,ভালো আচি। আচ্চা তুই কে,তোকে চিনা চিনা নাগচি।’
আমি বললাম- ‘ মনে পড়ে সঞ্জি বেলায় শহর থেকি আসার পথে, ঘুটঘুটে সেই সঞ্জিতে তোমায় নিঝুপুরের কাচে চড়া নিয়িলাম। তুমি হেটি আসচিলি।’
মজ্জেল বলে- ‘ তাতো নিয়িলি বুজনু, ক্যান্ত মনে কত্তি পাচ্চিনি-তুই কার চেলি। তবে তুই চড়া না নিলি আমি পানিতে ভিজি যাতুন। আমি মেহেরপুরে ভিক্ষি কত্তি গিনু। পতে হেঁটি আসচিনু।’
মজ্জেলের তেমন কোন পরিবর্তন আমার চোখে পড়েনা। আগের মতোই মূর্খ প্রকৃতির-ই আছে।
মজ্জেল বলে- ‘ আচ্চা তুই কেমন আচির?’ মজ্জেলের গা দিয়ে ঘামের গন্ধ বের হচ্ছে। ঠিক যেমন চৈত্র মাসে ও ভ্যানে করে আমার মাকে খালার বাড়ী নিয়ে যেত। আমি বসে থাকতাম সামনে একেবারে মজ্জেলের কাছে। যাতে বাইরেটা ভালো করে দেখো যায়। ভ্যানটা ভালো করে চারিদিক শাড়ী দিয়ে বাধা থাকতো। যাতে বাইরে থেকে কেউ দেখতে না পায়। মজ্জেল ভ্যান ঠেলার পর মাঝে মাঝে থামতো। খুব হাফ লাগতো ওর। তখন ও মনে হয় পয়ষট্টি কি সত্তর বয়সী হবে।
মজ্জেল বাঁশি বের করে ।একেবারে কাঁচি বের করার মত। আমি ভাবলাম ছোট বেলার মত করে আমার চুল কেটে দেবে-এরকম একটি ভাব। বাঁশি বাজানো শুরু করে মজ্জেল আর আমি শুনতে পায়। গ্রামের মানুষ কেউ শুনতে পায়না। ‘তুমি থাকো কুতাই ,চাচা।’
মজ্জেল বলে- আগে থাকতাম নতুন গরুস্তানে। এখন পূর্বপুরুষদের এই গরুস্তানে চলি এসিচি।’
ভাইয়ের লেখা গল্পটি পড়িনি সম্পূর্ণ। দুই কিংবা তিন স্তবক মানে এক পৃষ্ঠা মত ওর গল্পটি পড়েছিলাম। তারপরে ধুয়াশায় বিরক্ত হয়ে আর না পড়ে ভেবেছিলাম- ‘কি সব লেখে আর সুনাম নেই।’
ততক্ষণে মজ্জেল বলে – ‘ বাড়ী যাও’- ‘ আমি যাবার মত টান অনুভব করি।’ আর ভাবি এই কথাগুলো দিয়ে কি গল্প লেখা যাবে। আরো একটু থাকলে হতো না। না থাক। আরেকটু পরে ফজরের আযান দেবে।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবি ভাইয়ের মত একটি গল্প লিখব। গল্প নিয়ে ভাবছি আর মনে হচ্ছে- ‘ গায়ের প্রতি প্রাকৃতিক এক টানের কথা।যেটা আমার ভাই-ও ঢাকায় থেকে অনুভব করেন। আমরা পিট পিট মানে পর পর দুই ভাই হয়েছি। বয়সের ব্যবধান দু বছর। কিন্তু গল্পেরে ভাবনা আমাদের আরো কাছে নিয়ে আসে।
মজ্জেলকে ভাবতে গিয়ে, লিখতে গিয়ে বুঝতে পারি- রক্তের বাঁধন তাহলে হয়তো আরো বড়। দুজনের দেখার দৃষ্টিও হয়তো অনেকটা এক। আমার এ গল্প মানুষের কতটুকু সুনাম বয়ে আনবে জানি না- তবে ‘মজ্জেল’ নামক লেখাটি পড়ে আমি যেভাবে অনুভব করেছি । আর কেউ সেভাবে অনুভব করেনি। ‘ইশ! কেন যে ভাইয়ের লেখা- ‘ মজ্জেল ’ গল্পটি, আজ পর্যন্ত লেখাটি পুরোপুরি পড়া হলো না।’
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৭
লেখার প্রচেষ্টা বলেছেন: THANKYOU
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৭
হাবিব বলেছেন: ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আপনার ব্লগীয় পথচলা সুন্দর হোক