![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাসু এশার নামাজ পড়ে ফেরার পথে পায়ে টান অনুভব করে। বয়সের দোষে আর দশটা ছেলে যখন রঙ্গিন ছবি দেখার ধান্দা করে বেড়ায় । বা সময় কাটানোর জন্য প্রেম করে , খেলাধুলা করে। হাসু সেরকম নয়। কোন ছবি কবে রিলিজ হকে তাও হাসু জানে না। হাসু শুুধু জানে পড়াশুনা।
মাঝে মাঝে এক টুকরো মাংস খুব আবদার করে বসে। হাসু আর ধৈর্য ধরতে পারে না। এটা সেটা বুঝিয়ে নিজেকে অনেক থামিয়েছে সে। আজ আবার সে নিজেকে থামায়। আবার ঘুরে মসজিদে যায়। নফল নামাজ পড়া শুরু করে। তারপর ঘরে ফিরে আসে।
আবার তার ভেতরে রক্ত মাংসের ক্ষুদা জেগে উঠে। হাসু ঢাকা শহরের পথ ধরে হাঁটা শুরু করে। চলতে চলতে ঢুকে পড়ে মগবাজারের একটি হোটেলে। যেন জানেনা সে কিজন্য এসেছে। এই তার প্রথম হোটেলে আসা। এই পথ দিয়ে যাবার সময় এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিল- ‘ এই হোটেলে খারাপ কাজ হয়।’ কিভাবে মানুষ খারাপ কাজ করে, কোথায় হয় হাসু শুধু দেখতে এসেছে। চারিদিকে তাকায় হাসু। একগাদা মহিলা সামনে বসে। গা ছোম ছোম করতে থাকে হাসুর ।
এক মহিলা বলেঃ আমার কাছে এসো। অল্প টাকাতেই হবে ।
আরেক মহিলাঃ যা মনে চাই দিও। তুমি ভালো ছেলে।
হাসুঃ না, না আমি দেখতে এসেছিলাম। আমি চলে যাবো। আরেক দিন আসবো। আমার কাছে কোন টাকা নেই।
অনেক মহিলা তাকে তোষামোদ করতে থাকে ‘ আমার কাছে এসো,আমার কাছে এসো।’ এক মহিলা তাকে হঠাৎ টেনে নিয়ে যায় ছোট একটি ঘরে। হাসু ভয়ে কাতর । ভয়ে তার পুরুষাঙ্গ উত্থিত হয়নি। মহিলা অনেক চেষ্টা করেছিল। না পেরে পকেটের যে পঞ্চাশ টাকা ছিল কেড়ে নিয়ে অপমান করে হোটেল থেকে বের করে দিয়েছে হাসুকে। আর বলেছে- ‘ এইবার আসলে অনেক টাকা নিয়ে আসবি।’
হাসু হাটতে মোহসিন হলে ফিরে আসে। গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে সে। মনে মনে বুঝতে পারে -এই কি পুরুষের আশ্রয়স্থল। ভয়ে তার পা কাঁপতে থাকে।
আবার প্রতিদিন হাসুর ভেতরে শিহরণ জাগে। প্রতিদিন হাসু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবেই মনে অজান্তেই হাসু চলে যাই –গরম জায়গাটিতে। পকেটে নেই ৩০০ টাকা। এইবার আর ভয় লাগে না হাসুর। হোটেলে ঢুকে একেবারে ভেতরে যাই হাসু। অনেকগুলো মহিলার মধ্যে একজনকে পছন্দ করে হাসু। ছোট একটি কামরার ভেতরে হাসুকে নিয়ে ঢুকে যায় মহিলাটি। হাসু নিজেকে প্রস্তুত করবে এমন সময় হোটেলে ঢকে পুলিশ ও সাংবাদিক। হাসুকে বের হয়ে আসতে বলে । হাসু দেখে সব পুরুষ পুলিশ ও সাংবাদিকের পা চেপে ধরা শুরু করেছে। হাসু নিরবে দাড়িয়ে থাকে। আর কাঁপতে থাকে।
পুলিশ হাসুকে বলে-তোর বাড়ীর ফোন নম্বর দে?
হাসু বলে- এই নেন ।
পুলিশঃ কার ফোন নম্বর এটা?
হাসুঃ আমার আপন বড় ভাইয়ের।
পুলিশ বাড়ীতে ফোন দেয় বড় ভাইয়ের কাছে।
পুলিশঃ আপনার ছোট ভাই খারাপ হোটেলে এসেছে রাত যাপন করতে।
বড় ভাই পুলিশকে বুঝিয়ে বলে । ‘ হাসু ভালো ছাত্র , ভালো ছেলে । ওকে ছেড়ে দেন’।
পরে ভাবিশুদ্ধ পুলিশকে বললে পুলিশ হাসুকে ছেড়ে দেয়।
তারপর হাসু হলে ফেরে। বাড়ীতে বড় ভাই জেনেছে,ভাবি জেনেছে। হাসু আত্মহত্যার পথ বেছে নেইনি। হাসু হাসুই আছে।
কিন্তু পরের দিন বড় ভাই ভাই ও বড় ভাবি গ্রাম শুদ্ধ প্রচার করে দেয়- ‘ হাসু হোটেলে রাত কাটায়,ওর এত বড় সাহস।’
ভাবি পরের দিন ননদদের ফোন করে জানাতে থাকে- ‘হাসু খারাপ, হোটেলে যায়।’
ইদের সময় হাসু বাড়ী ফিরলে এই সব জানতে পারে। গ্রামের মসজিদে এশার নামাজ পড়ে বাবা মার কবর জিয়ারত করতে যায় সে।গভীর রাতে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে হাসুর। পেয়ারা চুরির অপরাধে কাশেম চাচার মার আর খালি গায়ে দবির মোল্লার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় ২ টাকা বকশিস পাওয়া । তারপর বিছানায় বসে বসে সে কবিতা লিখতে বসে। হাসু কবি বনে যায়।
আর বড় ভাই ও বড়ে ভাবিকে ধন্যবাদ দেয় -তার কুৎসা রচনার জন্য।
©somewhere in net ltd.