নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছুটা আত্মতৃপ্তিবোধ

লেখার প্রচেষ্টা

লেখার প্রচেষ্টা

লেখার প্রচেষ্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাদিউলের নামাজি হওয়ার গল্প

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৭


…………………
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে বিড়ি ধরাতো হাদিউল। স্ত্রীর ঠেলায় ও রোগ বালায়ের দরুন সে অভ্যাসটাও বাদ দিতে হয়েছে তাকে। সকালে সানপুকরে বিড়ির টান অনুভব করে হাদিউল। সফরউদ্দীর বিড়ি ধরোনো দেখে ওর লোভ লাগে। মনের চিন্তাকে অন্য দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করে।

একাত্তরের যুদ্ধ বিধ্বস্ত সময়ে হাদিউলের দাদা ও বাবাকে ধরে নিয়ে যায় পাক সেনারা। তখন হাদিউলে ১০ বছর বয়স। হাদিউল দাদী খুব অঝোর ধারায় কাঁদতো।আর সারা দিন রাত মা আর দাদি বাবা ও দাদার জন্য প্রার্থনা করত। বাবাকে আর ফিরে পাওয়া গিয়েছিল না। তবে যুদ্ধের পর দাদা ফিরে এসেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার দু মাস পরে দাদা ছেলে শোকে মারা যায়। ছয় মাস পরে দাদী মারা যায় দাদা ও বাবার শোকে। হাদিউল সেগুলো ভাবে আর শান পুকুরের উপরে চুপকরে বসে বসে মাছ দেখার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মা ওকে মাদ্রাসায় পাঠায় কারপাশ ডাঙ্গায়। কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে আর না পেরে পালিয়ে আসে । তারপরে আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় ওর মা। পরে কোনরকম ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশুনা।
দেখতে দেখতে পঁচাতত্তরে পা রাখলো হাদিউল্লাহ। গ্রামের মানুষ হাদিউল বলে ডাকে। চাষ বাস করে। অল্প বিস্তর জমি জমা। গ্রামের নাম রাধানগর থেকে ইসলাম নগর করায় হাদিউল বেশ ভূমিকা রেখেছিল।
সকাল রোদ ওঠে আর হাদিউল শান পুকুরের কাছে দাঁড়ায় । মনে মনে ভাবে রাধানগরের বিবর্তনের কথা। শুধু তাই নই-মাঝখানে দশ বছর হাদিউলের নামাজ কালামের বালাই ছিল না।কিন্তু মাঝে মাঝে মসজিদমুখী হত বা বাড়ীতেই নামাজ পড়ত সে।
একাবার ইন্ডিয়ার বিশাল উচু পানি বাংলাদেশে আসা শুরু করলো । হাদিউদের বাড়ি ছিল সীমান্তের কাছে ।আর বন্যার ভয়তে বা অন্য কারনে হাদিউল অমনি নামাজ পড়া শুরু করে দিল।একবার খুনের মামলা হয়েছিল তার বাপচাচাদের নামে। জেলে গিয়ে ছিল সে দুইমাস। জেলে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছিল। গত দশ বছর কারন ছাড়া হাদিউল নামাজ পড়নি। তবে গভীর চেতনাবোধ থেকে নামাজী হওয়ার তাড়না অনুভব করত।এখন হাদিউল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চুল সব সাদা হয়ে গেছে। পুরানো স্বভাব বদলেছে। স্ত্রী বানু খাতুন শয়ন করে বারান্দায় আর হাদিউল শয়ন করে বিছানায়। যে হাদিউল বউ ছাড়া একরাত-ও বিছানায় শুতে পারত না।

খাদিনগর গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় বসবাস করে হাদিউল।
আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা মনে করে হাদিউলের।যখন হাদিউল মাঝ বয়সী । দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের ঘটনা।একদিন সকাল সাতটার সময় ঘুম থেকে ডাব হাত দিয়ে জোরে জোরে বাড়ী মারছিল সে। মা দেখে জিজ্ঞাসা করে- ‘কি ব্যাপার হাদিউল গাছে হাত দি ঘাই মারিস কেনে?’
হাদিউলঃ ও তুমি বুজবানা মা।
মাঃ খারাপট স্বপ্ন দেখিচিস নাকি?
হাদিউলঃ না মা তোমাকে বুলচি নি ,বুজবা না।
হাদিউল দাঁত মাজতে মাজতে বাইরে যাই। গতকাল রাতে এশার নামাজ পড়ে শুয়ার সময় হাদিউল প্রতিজ্ঞা করে শুয়েছিল। সাথে আয়তুল কুরসি আর কুল সুরাগুলো পড়ে শুয়েছিল। কিন্তু সকালে ফরজের নামাজে উঠতে পারেনি সে । তাই হাদিউল গাছে হাত ঘাই মেরে দুঃখ প্রকাশ করছে।
মা শখ করে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিল হাদিউলিকে।ছয়মাস পড়ে পালিয়ে এসেছিল সে। মাঝেমাঝে তবে তার মগজের ভেতরে মাদ্রাসার আলো বাতাসের চিন্তা খেলা করত। মাদ্রাসার প্রাঙ্গনে বিশাল খেলার মাঠের হাদিউলের ফুটবল খেলা দেখার জন্য গ্রামের মানুষ ছুটে আসত।
মাঝে মাঝে দাদার খক খক কেরে কাঁশতে কাঁশতে আযান দেওয়ার শব্দ অনুভব করত হাদিউল। কখনো কখনো হারানো বাবার জন্য একটু দোয়া করতে মন চাইত।
দাঁত মেজে হাদিউল কাজা নামাজ আদায় করতে দাড়ায়। মা বলেঃ আমি নামাজে ডাকনু ,উটলিনি।’
হাদিউলঃ শিরায় টান ধরি ছিলো।উঠবু কি করি। ফজরির সময় খুব আসে কেনেতো কিজানি।
হাদিউল বউ বাপের বাড়ি গেছে। মাসের অর্ধেক সময় স্বামীর জালাতনে বাপের বাড়ী পালিয়ে থাকে ।
যখন বউ এখানে থাকে। রাতে শুতে শুতে আসল কাজটা সেরে ফেলে খইরদ্দি। বউ তাকে বাঁধা দিতে চাই। ‘পরে করু, ফজরের নামাজ পড়ি।’
হাদিউল তশ মানে না। বউকে পুরুষত্ব দেখানোর জন্য এক মিনিটি-ও দেরি করে না হাদিউল। আবার ফজরের নামাজের লোভ-ও সামলাতে পারে না সে। সকালে কোন দিন ফজরের কাজার নামাজ পড়ে না হলে না।
গতশুক্রবার হাদিউল ফজরের নামাজে কষ্টফষ্ট করে উঠেছিল। তাও আবার মোবাইলে তিনটি এলার্ম ও মা এবং বউ এর ডাকের ঠেলায়।

মসজিদের ইমাম বলেছিল- ‘হাদিসে আছে ফজরের সময় জান্নাতের বাতাস আসে।’ মসজিদ থেকে আসার পথে সে জান্নাতি বাতাস অনুভব করার চেষ্টা করে। বাড়ি এস বউকে বলে- ‘ দ্যাখ দ্যাখ কত সুন্দর বাতাস ।এগুনো জান্নাতের ঠান্ডা বাতাস।’
শীতকালে কম্বলের আরামের নেশায় একদিন-ও ফজরের নামাজ পড়া হয়না হাদিউলের। যদিবা একদিন পড়তে পারে-সারাদিন তার আনন্দের শেষ থাকে না।
হাদিউল টেন পর্যন্ত পাশ চাকুরি না পেয়ে মেহেরপুরের হানিফ লাইব্রেরী সেলসম্যানের চাকুরি নিয়েছেল। পরে কিছুদিন কাজ করে আর যায়নি। কোন রকম চাষবাস করে জীবীকা নির্বাহ করা শুরু করেছিল । খুব সৎ লোক ও। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে ওর মনের অজান্তে সবচেয়ে বড় সুখ হয়ে উঠেতো প্রতিদিন ফজরের সময় আরামের ঘুমটি।এই ঘুমটির একটু ব্যাঘাত ঘটলে হাদিউল সারাদিন মেজাজ খিটখিট করত।
যখন থেকে হাদিউল নামাজ ধরেছিল । তখন থেকে হাদিউলর একদিকে ফজরের নামাজ আর একদিকে আরামের ঘুম। মাঝে মাঝে অন্য নামাজ-ও ফসকে যেত ওর।
মাঝে কাজে যাওয়ার আগে যখন সে কাজা নামাজ পড়ে শহরে যায় বাড়ীর আশেপাশের লোক হাসাহাসি করত।
বউ বলেঃ প্রতিদিন একুন নামাজ পড়লি নামাজ হয়।
হাদিউল কথা শুনতে রাজি নয়।
হাদিউলঃআমাকে মুসলমান হতিই হবে। কারণ নামাজ না পড়লি মুসলমান হওয়া যাবি না। কাফির হয়ি থাকতি হবে।
এসব ঘটনা হাদিউলের অনেক আগের । কোন মাসে নামাজ পড়ত। কোন মাসে নামাজ ছাড়তো। মাঝখানে একেবারে নামাজ-ই পড়েনি হাদিউল।
এখন হাদিউল প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে শান পুকুরের উপরে বসে। অনেক মানুষের সাথে গল্প করে । তারপরে রোদ উঠলে বাড়ী এসে ভাত খায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.