![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
…………….
ভোর বেলায় গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে ফয়জুল্লাহ। পথে দেখা রিন্টু মিয়ার সাথে ।
ফয়জুল্লাহঃ কোতাই যাচু গো সেজিকুজি?
রিন্টু মিয়াঃ ঢাকায় যাচি। বেতন বাড়ানুর আন্দলনির জন্যি।
ফয়জুল্লাহঃ গেলুবার যে বেতন বাড়লু গো?
রিন্টু মিয়াঃ এবির ঘর ভাড়া ,চিকিৎসা ভাতা আর বেতন সদ্যু বাড়ানোর জন্যি আরেকটু আন্দোলন করার ডাক পড়িচে।
ফয়জুল্লাহ গরু নিয়ে মাঠে যাই। আর আলহামদুলিল্লাহ করে। বড় ছেলে মালায়শিয়ায় গিয়ে ভিসা জনিত কারণে জেলে চলে গেছে।
ছোট বেলায় দাদির মুখে আলহামদুলিল্লাহ দুআ শিখেছিল ফয়জুল্লাহ। তারপরে মক্তবে কিছু দিন পড়েছিল। ১৩ বছর বয়সে মা তাকে নতিপুতা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিল। তারপর এক বছর পড়ে পালিয়ে এসেছিল। তবে মাদ্রাসা মক্তব আর নামাজ যাই –ই ছুড়ে যাক না কেন –ফয়জুল্লার মুখ থেকে আলহামদুলিল্লাহ সরে না।
মাঠে বিড়ি খেতে খেতে হাচি বের হয় ফয়জুল্লার, বলে আলহামদুলিল্লাহ। এতে আশকারের ফাকা মাঠে গলা ছেড়ে গানের কিছুটা ব্যঘাত ঘটে।অমনি আশকার তাকে জিজ্ঞেস করেঃ আচ্চা ছোট বেলায় থেকি তোকে দেকছি আলহামদুলিল্লাহ কতি, তুই জানিস এর অর্থ কি?
ফয়জুল্লাহ বলেঃ জানবুনা কেনে? এক বছর মাদ্রাসায় পড়িলাম না? আলহামদুলিল্লার অর্থ সকল প্রশংসা আল্লার।
চার ছেলে ছিল ফয়জুল্লাহর। ছোট ছেলে দুলু ফাঁকির কলার মুনিশ হিসেবে ট্রাকে করে ঢাকায় কলা বিক্রি করতে গিয়েছিল। রাতে কলা ভর্তি ট্রাকের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ ট্রাক থেকে পড়ে মারা যায় মিনাজ, মানে তার এক ছেলে।
মেজো ছেলেটা মালয়েশিয়ার জেলে আছে। আরেক ছেলে বিদেশ থেকে কাজ না পেয়ে চলে এসেছে। বড় ছেলে ভাত দেয় না।
প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফেরে ফয়জুল্লাহ। মাঝে মধ্যে রাত-ও হয়। আলহামদুলিল্লাহ দুআ পড়তে পড়তে ফয়জুল্লাহ ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঠে চাষ করে , হাল বয়, কখনো মনে মনে আবার কখনো জোরে জোরে বলে আলহামদুলিল্লাহ। কাজ করতে করতে জোর কমে গেলে বলে আলহামদুলিল্লাহ। আবার গরু হাল বইতে বইতে হেদিয়ে গেলে ফয়জুল্লাহ বলে –আলহামদুলিল্লাহ। অন্য সব যেরকম-ই হোক না কেন ,আলহামদুলিল্লাহ উচ্চারনে তার মাখরাজ হরকতের কোন ভুল হয়না।
এইভাবে ফয়জুল্লাহ অবলিয়ার মাস ,বছর আর জীবন চলে গেল শেষের দিকে। ফয়জুল্লাহর ঘর হয়নি ,বাড়ী হয়নি। টাকা হয়নি ,পঁয়সা হয়নি, ধানের দাম বাড়েনি।
ফয়জুল্লাহ ফসলের দাম পাইনি। কারোর কাছে অভিযোগ দিতে যাইনি। কখনো করেছে দিন মজুরি। লিজের টাকা বাড়িয়েছে বজলু মিয়া। ফয়জুল্লাহকে বেশী টাকা দিয়েই লিজ নিতে হয়েছে। ছেলেকে এনজিও থেকে সুদসহ টাকা ধার করে বিদেশে পাঠিয়েছিল। অবশেষে জমি বিক্রি করে সে টাকা শোধ করতে হয়েছে।
একবার স্ত্রী তাকে বলেছিল- ‘ আলহামদুল্লিল্লাহ তো কও বেশ- কি হয় এত আলহামদুলিল্লাহ কয়ি?’
ফয়জুল্লাহ চুপ করে থাকে। পরের দিন বিদেশ থেকে ছেলে খবর পাঠিয়েছে- ‘ ওর ছয়মাস জেল হয়েছে।’
ফয়জুল্লাহর বুকের ভেতরে কষ্ট হয়। ছুটে যেতে মন চাই ছেলের কাছে। অবলিলায় বলে- আলহামদুলিল্লাহ।
এটা ফয়জুল্লার ফরিয়াদ, নাকি প্রতিবাদ তা ফয়জুল্লাহ নিজেও জানে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে ফয়জুল্লাহর ব্যাথা ও দুঃখের হিসেবের চেয়ে এক প্রবল অসহায়ত্ব আর সৃষ্টিকর্তামুখী চেতনা বড় হয়ে উঠে। আর আত্মতৃপ্তির সাথে আলহামদুলিল্লাহ ওর মনে দুঃখ দুর করে দেয়। সমস্ত দুঃখকে সুখ বানানোর প্রচেষ্টা সফল হয় ওর। ও সুখ খুজে পায় আলহামদুলিল্লাহ –এর মাঝে। মনে মনে বলে এত সুখ! আজ থেকে আরো বেশী বেশী আলহামদুলিল্লাহ বলব । পরের দিন সত্যিই আরো বেশী বেশী আলহামদুলিল্লাহ বলে সে। বয়স বেশী হওয়ায় বুকের মাংস শুকিয়ে গেছে ফয়জুল্লার। যখন সে আলহামদিল্লাহ বলে গলার শীর,কপালের শীর আর বুকের হাঁড়গুলো বেরিয়ে আসে।
আর শুধু বলে আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। খুব শান্তি পায় ও।
©somewhere in net ltd.