![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
…………….
নুরুউদ্দীন ত্রিশ বছর আগে একবার জাল ভিসায় চুরি করে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল। নদী পথে নৌকা ডুবে সমুদ্রের ভেতরে হাবুডাবু খেতে খেতে তার অর্ধমৃত শরীর থামে সমুদ্রের পাড়ে। তাকে কুড়িয়ে পায় জাহাজের ডাকাতরা।তারপর ছয়মাস পর মুক্তিপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তার পথ পাড়ি দিয়ে বিদেশ সফর সফল হয়নি। ডাকাতদের অত্যাহারে আর অনাহারে নুরু্উদ্দীন সারাদিন শুধু বলত– ‘খোদা বাঁচাও , না হয় মারো’
সারাজীবন সৃষ্টিকর্তার কাছে- ভালো করে চলার প্রতিজ্ঞা আর বাকী জীবন ভালো থাকার প্রতিজ্ঞা করত নুরুউদ্দীন। আবার খুব অধৈর্য হয়ে গেলে বলত- ‘মাবুদ আমার মৃত্যু দাও,আমার মৃত্যু দাও,।।’
পরে আবার মনে মনে বলত- ‘না এরকম কষ্টতে আমার যদি মঙ্গল হয়।’ নুরুউদ্দীন তার পূর্বের কোন পাপকে স্মরণ করে মনকে সান্ত্বনা দিত। যেমন মুদি দোকানি থাকা অবস্থায় দু পাঁচ টাকার ভোগি যোগি, বাড়ীর পাশের আমেনা বেগমের সাথে রাতে সময় কাটানো ইত্যাদি। এগুলোয় তার পাপ,ঘুরে ফিরে এসব ভাবত নুরুউদ্দীন।
জীবনে চাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে যারা খুব দ্বিধাদন্দ্ব নিয়ে মরে নুরু্উদ্দীন সেরকম।জীবনে কিছুই করতে পারেনি সে। শুধু একবুক আশা আর আশা। দেশে ফিরে আবার নুরুউদ্দীন সিগারেট টানা ধরেছে। কেরাম খেলা আর তাশ তার সঙ্গি। আর গাঁজা খেয়ে অনেক রাতে ফেরে। একবার চাষবাস ,একবার মুদি দোকান ইত্যাদি পেশা নিয়ে নুরুউদ্দীনে চলে। কিছু দিন শহরে পোশাকের দোকান দিয়েছিল কিন্তু ব্যবসা নষ্ট হয়ে যায়।
স্ত্রীর রাগ। স্ত্রী কামিনি তাকে মাঝে মাঝে খুব ঠেলে ঠুলে নামাজে পাঠায়।হাত উঠিয়ে নুরুউদ্দীন মৃত্যু চায়। পরক্ষণেই ভাবে আর স্ত্রীর রুপসী মুখটা দেখলে ওর বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়।তখন বলে- ‘ইয়া যতদিন কল্যান হবে ততোদিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন,যখন কল্যান হবে তখন আমার মৃত্যু দিন।’অথবা সে আরো বেঁচে থাকার আশা ফিরে পায়।
নুরুউদ্দীন হাটে মাঠে যায় । একটু গাঁজার আসর,ধুমপান তাকে কখনো কখনো সান্ত্বনা দেয়। আবার জেগে ওঠে কষ্টবোধ-‘ জীবনে আমি কি করলাম ,কিছুই করতে পারলাম না!’
নুরুউদ্দীন রোগ হলে ঔষধ খায়না। যদি মৃত্যটা একটু ডেকে আনা যায়। আবার সে বউ ও সন্তানদের মায়ায় আত্মহত্যাও করতে পারেনি।রাস্তার মাঝ দিয়ে হাটে নুরুউদ্দীন , মরে না। রাস্তার চালকরা কি বুঝতে পারে না যে নুরুউদ্দীনে সড়ক দূর্ঘটনায় মরার প্রয়োজন।
জীবনে রাত হয়, দিন হয়। নুরুউদ্দীন বিড়ি ধরায় ,গাঁজা ধরায় আর বলে – ‘একটু ভালো সময়ে যদি আমার মরণ হতো ,তাহলে হয়তো গরের আযাব হতো না।’ এপারে নেশা ছাড়তে পারে না ও, ওপারের সুখ –ও ছাড়তে পারে না।
কিন্তু মৃত্যুতো এলো না। নুরুউদ্দীন ভাবে –‘না বিড়ি হাতে নিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে না।’ তাড়াতাড়ি দাঁত মেজে বিড়ি না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে নুরু উদ্দীন। এরকম প্রতিজ্ঞা প্রায়-ই করে আবার প্রায়-ই বিড়ি খায় নুরুউদ্দীন।
রাতে ফিরে এসে স্ত্রীর কাছে শয় ও।আর ভাবে-‘ না সব কিছু বাদ দেব,সব খারাপ কাজ বাদ দেবো, সারা জীবনের জন্য বাদ দেব। আমার দোয়া কবুল করি নিয়ার লাগবি। আমি চলি যাব।’
ওর বুকভরা আর্তি চলে অবিরাম,কেউ বুঝতে পারে না।
মৃত্যুর সাত দিন পূর্বে কঠিন প্রতিজ্ঞা করে নুরুউদ্দীন।তারপরে আর গাজা মদ তাড়ি সিগারেট কোনকিছুই খায়নি। আর পাচঁবার মসজিদে গিয়ে খুব নামাজ পড়ত সে।
নুরুউদ্দীন মারা গেছে।হঠাৎ মারা যাওয়া বউ ছেলে মেয়ে ,নাতি-নাতনি কাঁদতে শুরু করেছে।মৃত্যুর আগে স্ত্রী কামিনি বেগমকে বলেছিল- ‘আমি আর মনে হয় বাঁচবু না।’ স্ত্রী কান তখন দেয়নি।
হঠাৎ মাঝ দুপুরে নোনা ডাঙ্গা মাঠ থেকে লাশ আসলো।
কিছুদিন আগে ওর স্ত্রী বলল- ‘ওগো তুমি আর সিগারেট খাচু না যে? ছেড়ি দিলি নাকি?’
নুরুদ্দীনঃ ‘হ্যাঁ ছেড়ি দিয়িচি। এবির কটিন প্রতিজ্ঞা’ বউ হেসেছিলো,কারণ এরকম প্রচষ্টা এর আগে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে নুরুউদ্দীন শেষবার আরো ভালো করে পণ করেছিল।
নুরুউদ্দীন মৃত্যুর দোয়া কবুল হয়েছে হয়তো। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে ও নাতি নাতনী রেখে সে চলে গেছে না ফেরার দেশে।
পাশে কিছুটু দূরে আলোচনা চলে ওকে নিয়ে ।কেউ বলে- ‘ব্যাটা আর ব্যাটার বউ এর সাথে ঝগড়া করি ট্যানশন হয়িচুলু ,তাই স্টর্ক করিচে।’
কেউবা বলে- ‘ক’দিন আগেইতো চেলিদের সাথে মারামারি হলু ,তাইনা?’
©somewhere in net ltd.