একটি পুরুষ ও একাকী আমি মিলে দুটি মুহুর্ত

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৯

তখন মাঝ রাত। সে দোলনায় শুয়ে শুয়ে দুলছিলো। আর প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্য্য কে উপলব্ধি করছিলো। আমিও গিয়ে তার পাশেই শুয়ে পড়লাম। গাছের পাতাগুলীর ফাঁকে ফাঁকে চাঁদের আলো এসে গায়ে পড়ছিলো। মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছিলো। হ্যাঁ, তার একখানা হাতকেই বালিশ বানিয়েছিলাম। খানিক দুর থেকেই গানের সুর "ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া, বন্দিনী হইয়া মনোয়া পাখি হায়রে কান্দে রইয়া রইয়া।"
অদ্ভুত এক মুহুর্ত। স্বপ্নময় মুহুর্ত। স্মরণীয় মুহুর্ত।
ভোররাত পর্যন্ত কেটে গেলো।
আমি মনে মনে তার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়েছিলাম। সে উত্তীর্ণ।

পরদিন সন্ধ্যা থেকেই প্রচুর মাথা ব্যাথা। যদিও আমার দু'চোখ ঘুমে ঢল ঢল ছিলো তবুও যেনো আমি সব দেখতে পাচ্ছিলাম ঠিক।
মাঝে মাঝে চোখ লেগে এলেই বাসের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যেতো।
গাড়ি চলছে তো চলছেই।
এর যেনো আর থামাথামি নেই।
হঠাৎ ই কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করলাম। হ্যাঁ, আমার কপালে হাত। পুরুষের হাত। সেই পুরুষ, যিনি আমার পাশেই বসা।
আমি হাটু আড়মোড়া দিয়ে বাসের সীটে বসে তার বা-কাঁধে মাথা রাখলাম।
কিন্তু সে আমার মাথা টা আরেকটু নিচু করে তার বুকের কাছে নিলো, বা হাতে আমার মুখটা জড়িয়ে নিলো।
চোখ মেলে চাইলাম জানালার বাহিরে।
আকাশে দু-একটি তারা জ্বলছিলো মিটিমিটি।
তারাগুলিও যেনো বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছিলো।
আমি চেয়ে চেয়েই দেখছিলাম আর ভাবছিলাম তাকে নিয়েই যার বুকে মাথা রেখে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছি।
ভাবছিলাম তার প্রতি আমার বিশ্বাস নিয়ে।
সে ভাবছিলো আমি হয়তো ঘুমিয়ে।
আমার ঘুমের যেনো ডিস্টার্ব নাহয় শুধু এইজন্য বেচারা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে নিজেকে বালিশ করে পুতুলের মতো বসে থেকে।
তখনো আমি শুধু তার ধৈর্য্যকে পরখ করছিলাম। অতঃপর শেষ অবধি সে উত্তীর্ণ।

নিজেকে স্বার্থপর মনে হয়েছিলো। কেননা আমি তো স্বার্থপরের মতোই সুবিধা নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি তো তার পরীক্ষা আগেই নিয়েছিলাম। ততোক্ষনে আমি তো তাকে বিশ্বাস করেছি। আমি বিশ্বাস করি যে কোন পরিস্থিতিতেই সে তার সীমারেখা অতিক্রম করবেনা। তবুও কেনো নিজের আরাম আয়েশের জন্য অন্যকে এভাবে কষ্ট দিলাম? এ দুটি মুহুর্ত ভুলার মতো নয়। হয়তোবা সেই প্রথম কেউ যে এভাবে এতোটা কাছে এলো অথচ অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে। নয়তো সে আমার বন্ধু নয়, বন্ধুর চেয়ে একটু খানি বেশী।

০ টি +০/-০