সিঁদুরে বিশ্বাস

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৬

সিঁথী বৌদির সাথে সংসারের কারোরই বনিবনা হচ্ছিলো না কিছুতেই। ছয় বছরের একটা মেয়ে ও আছে তাদের। বিণু দাদার খুব পছন্দের ছিলো সিঁথী বৌদী, তবুও এখন আর সে তাকে নিয়ে সংসার করতে চায়না।

কিন্তু সেদিন ঘটা করে মজলিষ বসলো, গ্রাম মোড়লগণ সিদ্ধান্ত দিলেন এ সংসার বিচ্ছেদ হওয়াই ভালো। সিঁথী বৌদী নাকি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো। আট বছরের সংসার সেদিনই ভেঙে গেলো। পূনরায় অনাথ হয়ে গেলো। উনার পরিজন বলতে কেউ নেই। উনার বাবা ছিলেন, তাও বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন।

বিণুদার বাড়ী ছেড়ে যাবার সময় কিচ্ছু টি নিতে রাজী হন নি। নিজের পড়নের বাড়তি কোন কাপড় ও নেয়নি। একমাত্র মেয়েটিকেই যখন নিতে পারবেনা তখন আর কাপড় নিয়ে কি হবে। এক কাপড়ে কাদঁতে কাঁদতে বাড়ীর উঠোন ছাড়লো। বাড়ী থেকে বের হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে চললো। বিণুদাও সাথে সাথে হাটছিলো এগিয়ে দেবার জন্য। পিছনে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দল বেধেঁ পিছু ছুটছিলো বাজার অবধি। আশে পাশের বাড়ির সবাই কাছে-দূরে থেকে এ দৃশ্য দেখে কষ্ট পাচ্ছিলো। একটা অনাথ মেয়ে। কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে? কি করে চলবে?

পাশে একজন ফেরিওয়ালা যাচ্ছিলো। আলতা, স্নো, লিপষ্টিক, টিপ, কানের দূল, গলার মালা, মাথার ফিতা বলে আর আজ চেঁচালো না। সেও এ দৃশ্য দেখে দাড়িয়ে রইলো। কিন্তু সিঁথী বৌদি? সে হঠাৎ করেই কান্না থামিয়ে বিণুদার কাছে বায়না করে বসল।
- এক পাতা টিপ কিনে দিবা? লাল লাল, বড় টিপ, সিদুঁ্র লাল।
:- নে, নে, "ওই আবুল কাহা, সিঁথী রে এক পাতা টিপ দেওতো।

সিঁথী এবার খুব খুশি। কান্না ভূলে গিয়ে সে টিপ বাছাইয়ে ব্যস্ত।

বিণু দা হঠাৎ বললো "তোর তো তালাক হয়ে গেছে, তুই লাল টিপ দিয়ে কি করবি?" এবার ছেলেমেয়ের দল গুলী এক সাথে হেসে উঠলো। দূর থেকে যারা আমরা দেখছিলাম, বুকের মাঝে কেমন যেনো হু হু করে উঠলো। কিন্তু সে টিপ বাছাই করেই চললো। টিপ আর সিদুঁরই তার স্বামীকে সমস্ত অকল্যান থেকে রক্ষা করবে।

০ টি +০/-০