![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজাকার! বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি রাজনৈতিক গালি। ১৯৭১ সালে যেসকল গ্রুপ অখণ্ড পাকিস্থানের পক্ষে কাজ করেছিল তারা হল রাজাকার, আল বদর, আস–শামস ও শান্তি কমিটি। এদের মধ্যে রাজাকার বাহিনীকে সরকারি অর্ডিন্যান্স জারি করে আধাসামরিক বাহিনীতে পরিণত করা হয়। তবে এক কথায় বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী সবাইকে রাজাকার হিসেবে আখ্যায়িত করে।
আমাদের সবার মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা আছে রাজকার মানে-যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছিল বা হত্যা করতে পাকিস্থান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নি-সংযোগ করেছিল এবং যুদ্ধের সময় অনেক নারীর সম্ভ্রমহানি করেছিল।
অর্থাৎ রাজাকারের বৈশিষ্ট্য হল বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, হত্যাকারী, লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগকারী, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণকারী। আবার রাজাকাররা যেহেতু বাংলাদেশের অধিকার লুণ্ঠনকারীদের সমর্থন করেছিল তাই বলা যায় রাজাকাররা সাধারণ মানুষের অধিকারহরণকারী। তেমনিভাবে ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে ভোটের অধিকার হরণকারীদের সমর্থন করেছিল রাজাকাররা। তাই রাজাকারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা জনগণের ভোটের অধিকারহরণকারী।
এখন আমরা যদি ১৯৭১ সালের রাজাকারদের যে বৈশিষ্ট্য ছিল সে বৈশিষ্ট্যগুলো আজ ২০১৯ সালে এসে খুঁজে বের করি তাহলে কাদের মধ্যে রাজাকারদের উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাবো?
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য বর্তমান পাকিস্থান হুমকী নয়, বরং হুমকী হচ্ছে নিকট পার্শ্ববর্তী একটি দেশ। এদেশের অর্থনীতি, সাংস্কৃতি, সীমান্ত আজ তাদের আগ্রাসনের শিকার। বাংলাদেশে ক্ষমতায় কারা বসবে সেটাও দাদা বাবুদের সুদৃষ্টি ছাড়া মোটামুটি অসম্ভব। আর কোন দলটি বাংলাদেশকে এ অবস্থায় এনেছে তা কারো অজানা নয়।
আবার স্বাধীনদেশে মানুষের ভোটাধিকার কারা হরণ করেছে তা এখন মানুষকে বুঝানোর কিছু নেই। বিরোধীদলগুলোর সাথে বিমাতাস্বরূপ আচরণ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সময় যেরূপ করা হচ্ছে পাকিস্থান আমলেও তারা এরূপ করার স্পর্ধা দেখায়নি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যত মানুষ গুম হয়েছে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে; তা বর্তমান সরকারের এক বছরের থেকে অনেক কমই হবে। এখানে মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই, মিছিল-মিটিং করার স্বধীনতা নেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই, যা পাকিস্থান আমলে এর থেকে ভাল ছিল।
তৎকালীন সময়ে চাকরির ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল পূর্ব পাকিস্থানীদের চাকরি দেওয়া হয় না।তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়। বর্তমানে আমরা একই অবস্থা দেখি। আপনি মেধাবী কিন্তু আপনি যদি সরকারি দল না করেন, বা আপনার আত্মীয়স্বজন যদি কেউ বিরোধী দল করে থাকেন তাহলে আপনার সরকারি চাকরি পাওয়ার নূন্যতম কোন অধিকার নেই।
আপনি নতুন কোন ব্যবসা খুলবেন? আপনার অনুমতি দেওয়া হবে না। অথবা আপনাকে বড় একটি আম্যাউন্ট চাঁদা দিতে হবে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের। বিরোধী দলের ব্যবাসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আজ সরকারি দলের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। আপনি একটি নতুন বাড়ি তৈরি করবেন? তাহলে চাঁদার টাকা পরিশোধ করা ছাড়া আপনি নতুন বাড়িতে ওঠার কোন সুযোগ পাবেন না।একাত্তরের আগেও মানুষ এতটা জিম্মি ছিল না।
বিগত কয়েক বছরে যদি আপনি ধর্ষণ এবং ইভটিজিং এর খতিয়ান খুলে দেখেন, তাহলে খুব সহজেই দেখতে পাবেন কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা এগুলোর সাথে বেশি জড়িত।
এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা যদি আপনি প্রণয়ন করে থাকেন তাহলে দেখতে পাবেন তাদের অধিকাংশ কোন দলের পৃষ্ঠপোষকতা পায়।
রাজনৈতিক সহিংসতা, ক্ষমতার দাপট, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও অপহরণ-খুনের সাথে কারা জড়িত ও কারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, সচেতন নাগরিকমাত্রই তা জানে।
অর্থাৎ একাত্তরের সময় রাজাকারদের সে বৈশিষ্ট্যের জন্য তাদের ঘৃণা করা হয়, তার সকল উপাদানই আছে বর্তমান কালের কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ী সংগঠনের অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের। সুতরাং আধুনিক যুগের রাজাকার কাউকে বলতে গেলে তাদের বলাই বেশি যুক্তিসঙ্গত।
ইদানিং কালে কিছু ঘটনা বেশ লক্ষ্যণীয়। ঢাবিসহ সারাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা নামক বৈষম্যের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন শুরু করে, তখন সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্তা ব্যক্তিদের মুখে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে গালি দিতে দেখা যায়। সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির ও রাজাকার ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন শুরু করে।নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকেও রাজাকার ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করা হয়। আবার ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনসহ সরকারের অনৈতিক কাজের যারা সমালোচনা করেন তাদেরকে রাজাকার ট্যাগ লাগানোর বারবার বৃথা চেষ্টা করা হয়। সম্প্রতী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদেরকেও রাজাকার হিসেবে গালি দেওয়া হয়।অর্থাৎ বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কেউ সমালোচনা করলেই সে রাজাকার উপাধি পাচ্ছে। অথচ একাত্তরের রাজাকারদের যে বৈশিষ্ট্য ছিল, আমরা প্রায় সবগুলোই বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে খুঁজে পাই। আর ক্ষমতাসীনরা যাদের রাজাকার বলে গালি দিচ্ছে তাদের মধ্যেই বরং মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু ছায়া দেখা যায়।
এই একাত্তরের চেতনা ব্যবসায়ীদের মতে যারা অন্যায়ের প্রতিবাদকারী তারা রাজাকার, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার-তারা রাজাকার, যারা নিরাপদ দেশ চাই- তারা রাজাকার, যারা ভোটের অধিকার চায়-তারা রাজাকার, যারা সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচক- তারা রাজাকার। আর তারা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার তাই তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো যদি আমাদের নতুন প্রজন্ম ধরে নেয় এগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের বৈশিষ্ট্য! অর্থাৎ যত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, প্রশ্নফাঁসকারী, দুর্নীতিবাজ ভোটের অধিকারহরণকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী আছে তারা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনধারী।
হায়, সেলুকাস! এটা কি তাহলে একাত্তরের শহীদ ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা নয়? তাই আসুন এই চেতনা ব্যবসায়ী নব্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। তারা যেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্কিত করতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কেউ যেন প্রশ্নফাঁসের সাথে না জড়াতে পারে, তারা যেন অন্যায়ভাবে কারো অধিকার হরণ করতে না পারে, মানুষের বাক-স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন না করতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কেউ যেন খুন, গুম, চাঁদাবাজী, অপহরণ, ধর্ষণের সাথে যুক্ত হতে না পারে।যারা এই অপরাধ করবে তাদেরকেই বলা হবে ‘নব্য রাজাকার’।।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:০৯
অলস বেলা বলেছেন: এটাও একটি রাজাকারি কথা । বৈষম্য ও ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। রাজাকার বংশগত কোন বিষয় নয় নিশ্চয় স্বীকার করবেন। আর রাজাকারী বৈশিষ্ট্য এখন চেতনাধারীদের মধ্যে বেশী।
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:১১
রাজীব নুর বলেছেন: আজ ( চার এপ্রিল) পাকিস্তানি বর্বরা লালমনিরহাট শহরে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল। সেদিনের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:১৭
অলস বেলা বলেছেন: আল্লাহ তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুর করুন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:০০
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
রাজাকার ও চিহ্নিত রাজাকার সমর্থকদের ভোটাধিকার থাকা উচিত না।