![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সে একা নিঃসঙ্গ বসবাস করতো, তার সাথি-সঙ্গি কেউ ছিল না পাশে। সে নিজের নিজেত্বে মাঝে- মধ্যে হারাতো, কিন্তু কখনো কারো মাঝে হারায়নি। একা একা হাঁটতো রাস্তার পাশ দিয়ে, কিন্তু কখনো হাত ধরে সে হাঁটেনি। তবুও সে নিজেকে কখনো অসুখী ভাবেনি। একাকিত্বই ছিল তার সুখি হওয়ার মূল মন্ত্র। সে যে শান্তিপ্রিয় ছেলে নাম তার শান্ত। সে ভদ্র-নম্র, শান্তশিষ্ট লাজুক একটি ছেলে। শান্ত কখনো কাউকে দুঃখ দিতে চায় না আর নিজেও চায় না দুঃখ পেতে। অন্যকে খুশি করতে গিয়ে জেনে- বোঝে নিজের দুঃখকে আনন্দ চিত্তে করে ফেলে এতে তার মন মোটেই ভেঙ্গে পড়ে না। শান্ত ভাবে কোনো একদিন হয়ত সুখ এসে তার সব দঃখ গুছিয়ে দেবে, মুছে দেবে তার সব কষ্ট-যাতনা। এ বলে শান্ত নিজেকে শান্তনা দেয় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। শান্ত স্বপ্ন দেখতে খুব ভালবাসে।
ছোট বেলা থেকে তার বড় একটা স্বপ্ন ছিল সে বড় হয়ে একজন ভালো ক্রিকেটার হবে, সে জাতীয় দলে খেলবে। এটা তার জীবনের গ্রেট ড্রিম। শান্ত যখন ক্লাশ
নাইনে পড়ে তখন তার সামনে সেই সুযোগ আসে তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ নিতে। একটি বিদেশি সংস্থা তার স্কুলে আসে ষ্পোর্টস ক্যাম্পেইন করতে। শান্ত’র স্কুলের সাথে সংস্থাটির ২ বছরের চুক্তি হয়। সংস্থাটি ২ বছর ক্যাম্পেইনের সকল ধরনের খরচ বহন করবে এবং প্রতিটি ইভেন্ট থেকে বাছাই করে কিছু সংখক খেলোয়াড় উচ্চ পর্যায়ে খেলার জন্য নিয়ে যাবে। শান্ত সেই সুযোগ হাত ছাড়া করে না।
ক্যাম্পেইন -এ যোগ দেয় শান্ত। শুরুটা একটু কষ্টকর লাগছিল শান্ত’র তার পরও সে হাল ছাড়েনি লেগেছিল কাঠালের আঠার মতো। হাজারো কষ্ট হওয়া সত্তে শান্ত চালিয়ে যায় ঘাম জরানো অনুশীলন। কিছু দিন যাওয়ার পর শান্ত মানিয়ে নেয় সব কিছুর সাথে। আস্তে আস্তে শান্ত’র উন্নতি হতে তাকে। সে নিজে লক্ষ করে দেখে তার সংঙ্গিদের থেকে তার অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। শান্ত আরও উৎসাহ পায় নিজের পরিবর্তন দেখে। অক্লান্ত পরিশ্রম করতে তাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। প্রায় ছয় মাস পর শান্তদের টিম অন্য একটি টিমের সাথে খেলতে যায়। শান্ত এগারো জনের টিমে আছে, সে ৪ নম্বরে ব্যাট করবে। শান্ত’র আনন্দ তখন দেখে কে ? ম্যাচটি শান্তদের জেলা স্টেডিয়ামে হবে। যথা সময়ে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। স্টেডিয়ামে গ্যালারি বর্তি দর্শক, মাঠে বিশিষ্টজনেরাও রয়েছেন। শান্ত একজন ব্যাটস ম্যান ও পার্টটাইম বোলার। শান্ত তাদের টিমের সহ-অধিনায়ক।
শান্ত’র আত্মবিশ্বাস ছিল সে ভাল করবে। শান্ত নিজের বিশ্বাসের অমর্যাদা করেনি। ব্যাট হাতে করেছে ৬৭ রান এবং পার্টটাইম বোলার হয়ে ২টি উইকেট শিকার
করে নেয় শান্ত। সেই ম্যাচে শান্ত’র টিম জয়ী হয়। আর পুরো ম্যাচে শান্ত একাই স্টেডিয়ামের সকল দর্শককে হৈ- হুল্লোড় করতে সাহায্য করেছে। সেই ম্যাচের ম্যান অব দ্যা ম্যাচ শান্ত হয়। খুশিতে মাঠের মধ্যেই শান্ত’র দু’চোখ গড়িয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ে। স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি শান্ত বাড়ি ফিরে। ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে গিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের ক্রেস্ট হাতে নিয়ে মনযোগ সহকারে দেখে শান্ত আর ভাবে আজ সে তার স্বপ্নের প্রথম ধাপে জয়ী হয়েছে এবং ম্যান অব দ্যা ম্যাচও হয়েছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে গেছে শান্ত। দু’দিনের ছুটি ক্রিকেট টিমের। ছুটি শেষে আবার শুরু হয় সেই ঘাম ঝরানো অক্লান্ত পরিশ্রমের অনুশীলন। শান্ত একদিনও অনুশীলন ফাঁকি দেয় না এমন কি অসুস্থ হলেও চলে যেতে চায় অনুশীলন করতে। কোনো কিছু শান্তকে থামিয়ে রাখতে পারে না।
একের পর এক ম্যাচ খেলতে থাকে শান্ত। ৪ মাসে শান্ত প্রায় বিশটি ম্যাচ খেলে তার টিমের হয়ে। এর মধ্যে প্রায় ৭-৮ টি ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয় শান্ত। শান্ত নিজের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে একটু একটু করে বাস্তবে রূপ দিতে থাকে নিজের মত করে। তার একটা লক্ষ্য সে একদিন একজন বড় ক্রিকেটার হয়ে বিশ্বকে মাতাবে, সবাই তাকে চিনবে এক নামে। ভালই যাচ্ছিল শান্ত’র দিন অনুশীলন আর ম্যাচ খেলে। হঠাৎ করে কোথায় থেকে এক অজানা ঝড় এসে শান্ত’র সকল আশা সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে যায়। শান্ত বুঝতেও পারে না কেন এমন হলো তার সাথে ? কেনই বা তার স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে গেল এমন করে ? এই প্রশ্নের উত্তর শান্ত খুজে পায় না ! অজানাই থেকে যায় তার সকল প্রশ্নের উত্তর।
স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ায় শান্ত নিঃস্বের মতো হয়ে যায়। কোনো কিছুতে মন বসেনা তার। পড়তে ভাল লাগে না, খেতে ভাল লাগেনা, রাতে ঘুম আসেনা দু’চোখে। কোনো কিছুই শান্ত’র ভাল লাগেনা। রাস্তার পাশ দিয়ে একা একা হাটে এর কানে হেডফোন গুজে দিয়ে গান শুনে যায় আনমনে। মাঝে-মধ্যে পড়ার টেবিলে বসে। কিন্তু পড়াতে মন বসেনা। এই ভাবে চলছিল শান্ত’র দিনগুলো। ৪ বছর পর হঠাৎ একদিন একটি মেয়ে শান্ত’র দিকে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেয় ! শান্ত চায় না হাতটা ধরতে। চায় না হাতটি ধরে তার নিঃস্ব জীবনের সঙ্গী করে নিতে। তার পরও কেমন করে হাতটি ধরে শান্ত। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে শান্ত। ভুলে যায় পুরোনো দিনগুলোকে, নতুন করে স্বপ্ন বুনে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানুষটিকে নিয়ে।
এভাবে কাটতে থাকে শান্ত’র দিনগুলো। শান্ত’র জীবনে কখনো কেউ ভালবাসার হাত বাড়ায়নি। শান্তর জীবনে এই প্রথম ভালবাসা। শান্ত তার ভালবাসার মানুষকে খুব ভালবাসে তার নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে এবং নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করে। নিজেকে এখন আর একা মনে করেনা। সব সময় দু’য়ে মিলে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। শান্ত’র কাছে মাঝে-মধ্যে সব কিছু স্বপ্ন মনে হয়। শান্ত মনস্থির করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালবেসে যাবে তার ভালবাসার
মানুষটাকে এবং জীবন সঙ্গিনী করে নিজের কাছে রাখবে পুরো জীবন। কখনো হারাতে দেবে না এই ভেবে রাখে শান্ত। নিজের জীবনের যত গোপন কথা, স্বপ্নের কথা একে একে সব কিছু বলে ভালবাসার মানুষকে শান্ত। শান্ত ভাবে আর একা থাকতে হবে না একাকি দিনও আর কাটাতে হবে না। এই ভাবে যেতে থাকে দিনের পর দিন মাসের পর মাস শান্ত বুঝতেও পারে না কেমন করে দিন চলে যায়।
একদিন যদি শান্ত তার ভালবাসার মানুষের সাথে কথা না হয়, তাহলে শান্ত’র কোনো কিছু ভালো লাগেনা, কোনো কাজে মন বসে না। যদি একদিন না দেখে তাহলে শান্ত’র কাছে নিজেকে বৃথা মনে করে। শান্ত তার ভালবাসার মানুষটাকে একপলক দেখার জন্য হেটে যেত অনেকটা পথ। তার কাছে কোনো কাজের মূল্য
ছিলনা সেই মুখটা দেখার আগ পর্যন্ত। শান্ত’র অন্ধবিশ্বাস ছিল তার ভালবাসার মানুষ তাকে একা করে কখনো চলে যাবে না, কখনো তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। শান্ত’র একটা কথা হয়ত জানা ছিলনা যে সবার জীবনে সুখ সয়না আবার ক্ষনিকেরও হয়। শান্ত জানেনা তার জীবনে সুখ নামক জিনিসটা ক্ষনিকের দীর্ঘস্থায়ী নয়। তার সব স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নয়। এর মধ্যে শান্ত জানতে পারে সে যাকে নিজের থেকে বেশি ভালবাসে, অন্ধের মতো বিশ্বাস করে সেই মানুষটা তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করতেছে। শান্ত’র সাথে প্রতারণা করতেছে। অথচ শান্ত কিছুই বুঝতে পারল না। এর পর আস্তে আস্তে শান্ত তার ভালবাসার মানুষটার সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে আনে।
শান্ত বিশ্বাস করতে পারে না যে মানুষ ভালবাসার হাত নিজ থেকে বাড়িয়ে ছিল সেই মানুষটা তার সাথে প্রতারণা করে চলেছে একের পর এক। যাকে নিজের
থেকে বেশি ভালবাসত বিশ্বাস করত অন্ধের মতো। শান্ত নীরবেই শুধু দেখে গেল কিছু আর বলল না। শান্ত ভাবল হয়ত বা তার কপালে সুখ নামক জিনিসটা ক্ষনিকের। তাই হয়ত এমন হয়েছে। নিরবে একা বসে এভাবে ভেবে চলেছে শান্ত। এখন আর শান্ত কাউকে ভালবাসে না কাউকে বিশ্বাস করে না। এমন কি নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারে না। শান্ত এখন আগের মতো একাকি শান্ত হয়ে থমকে দাঁড়ালো।
One person like
©somewhere in net ltd.