![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একবার ভেবে দেখো, বিশাল আকাশ মেঘে ঢাকা, এরই মাঝে খানিকটা গোলাকার অংশে নীলচে আকাশ আর সূর্যের উঁকি !! বুঝতে পারলে আমি কি বোঝাতে চাইছি ? ঠিক ভাষায় বোঝানো যাবে না, যদি একবার তোমায় দেখাতে পারতাম !! আচ্ছা, অন্যভাবে ভেবে বলি। ধরে নাও, তোমায় বিশাল সাদা একটা ক্যানভাস দেয়া হলো। কাগজের ঠিক মাঝে তুমি বিশাল একটা শূণ্য আঁকলে। এবার, শূণ্য ছাড়া বাকি অংশটা কালো রং ছড়িয়ে দাও। এবার, শূণ্যের পুরোটা জুড়ে নীলচে আর সাদা রং। !! হ্যা, এবার কল্পনা করে নাও, সেই নীলচে-সাদা আয়নায় কালো এক খন্ড দলছুট মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। ...কেমন অদ্ভূত একটা দৃশ্য, বুঝলে !! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। ....এরপর আস্তে আস্তে সেই ছোট্ট কালো মেঘ নীলচে সাদা আয়না ছেড়ে তার সঙ্গীদের মাঝে মিশে গেলো। ..কিছুদিন আগে, তোমায় প্রথম দেখার পর আমি কি ভেবেছিলাম সেটা জিগ্গেস করেছিলে। আমি সেদিন প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম। আজ হয়তো সেটার উত্তর দেয়া যাবে।
নিজকে কখনো আলাদা ভাবিনি, অন্য অনেকের মতো আমিও মেঘের মতো অজানা পথে ভাসতাম। নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য ছিলো না, কান্তিহীন, একঘেয়ে, স্বপ্নহীন পথে হেঁটে চলেছিলাম কিছুটা নিজের অজান্তেই বলা যায়। আসলে নিজকে কখনোই বোঝার চেষ্টা করিনি। এরপর তুমি এলে !! বলা যায়, তোমাকেই আমি নিয়ে আসলাম আমার এই অজানা পথে। কি অদ্ভূত কিছু স্বপ্ন দেখালে আমায় তুমি !! কি প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী ছিলে, চোখে নক্ষত্রের ন্যায় স্বপ্নরা কেমন সারাক্ষণ ভেসে বেড়াতো, সবকিছুর মাঝে তুমি কেমন করে একটা স্বপ্ন খুঁজে বের করতে। ধরা যাক, একাকী সঙ্গীহীন পাখি বসে আছে ল্যাম্প পোস্টের উপর, সেই বিষণ্ণ ছবির মাঝেও তোমার স্বপ্নকাতুর চোখ খুঁজে নিতো আনন্দের কোনো মুহূর্ত। আমি কখনোই এভাবে ভাবতে পারতাম না, প্রতিদিনের ছকবাঁধা নিয়মগুলো কেবল বিষন্ন থেকে বিষন্নতর হতে থাকলো। কেবল হাঁটার মাঝেও যে গভীর আনন্দ আছে সেটা কখনোই বুঝতে পারিনি। তুমি একবার বলেছিলে, হাঁটার সময় ভাবনার মাঝেই বৃষ্টি নিয়ে এসো, বৃষ্টির মাঝে হাঁটতে নিশ্চই তোমার খারাপ লাগবে না ? অথবা ভেবে নিও, সমদ্রের ডেউয়ের উপর তুমি পা রেখে ভেসে যাচ্ছ স্রোতের বিপরীতে। ঢেউ তোমায় তীরে টানার তীব্র আকুতি জানালেও তোমার গভীর সমুদ্র দেখার ইচ্ছে। সেই থেকে আমার ক্লান্ত পা কতোবার যে মাঝ সমুদ্রে দেখতে গিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে হেঁটে গিয়েছি। ফাঁকা পকেটে কেমন ঢলতে ঢলতে হাঁটতাম। আচ্ছা শূন্য পকেটর সাথে গ্রাভিটির কি কোনো গভীর সম্পর্ক আছে ? নাহলে মাসের শেষের দিকে কেনোই বা পৃথিবী আমার ওজন দ্বিগুন করে দিবে ? খানিকটা পথ হাঁটতেই হাঁপিয়ে উঠি। মনের ভাবনায় অদৃশ্য বৃষ্টির শীতল ফোঁটা গায়ে মেখে হাঁটতে চাইতাম; কিন্তু, দুপুরের প্রখর রোদ কিছুতেই আমার সেই ভাবনার জল ছুঁতে দিতো না।
ছোট্ট একটা সংসার, দুই-তিনটে ছেলেমেয়ে !! অাহ্, প্রতিবার তোমার কন্ঠে এই শব্দগুলো কেমন অদ্ভূত সুন্দর শোনাত। পিচ্চি বাবুটাকে পেটের উপর ঘুম পাড়িয়ে, গুনগুন গান শোনানোর কি গভীর ইচ্ছে তোমার। ছোট ছোট হাতের মাঝে চুমু মেখে তার ঘুম ভাঙানো। এইতো সেদিন ঝাপটা বৃষ্টি আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিলো, কেমন ঘোর লাগা কন্ঠে তুমি বলতে লাগলে, ভেবে দেখো, 'ছোট্ট একটা হাতের মাঝে বৃষ্টির বিশাল ফোঁটা পড়ছে।' সেই অদৃশ্য বাবুটার হাত কেমন করে তুমি বুকের মাঝে আগলে নিলে। 'বুঝলে, আমার একটা উড়ন্ত ঘর চাই, যখন ইচ্ছে হবে ঘরটাকে মেঘের ন্যায় উড়িয়ে নিবো যেখানে খুশি।' প্রত্যুত্তরে আমার মৃদু হাসি দেখে তুমি কেমন চুপসে গেলে, একমনে বলতে লাগলে 'নির্দিষ্ট এক জায়গায় ঘর আমার ভালো লাগে না।' আচ্ছা, আসলেই উড়ন্ত একটা ঘর পেলে মন্দ হয়না !! শহর ছেড়ে তেমন কোথাও কখনও যাওয়া হয়নি; বিছানা, বালিশ নিয়ে এক একটি রাত এক একটি জায়গায় বেপারটা মন্দ না। হুট করে আমিও তোমার ন্যায় মেঘের মাঝে ভাসতে চাইলাম।
সেদিন সারাদিন না খেয়ে তোমার সাথে দেখা করতে এলাম। তিরিক্ষে মেজাজে কিছুই ভালো লাগছিলো না, তোমার স্বপ্নদৃশ্য গুলো সাদা ভাতের ন্যায় গপগপ করে খেতে পারলে হতো। কি যেন বলছিলে তুমি, আর আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম পায়ের পাশে পড়ে থাকা ভাঙ্গা লাল ইটের টুকরোর দিকে। ছোটকালে বাসার কাজের মেয়ে সুপারির ন্যায় ইটের কণা খেতো। প্রথম প্রথম বাসার সবাই অবাকই হয়েছিলাম, এমন নয় তার ভাগ্যে খাবার ছিলো না ! পেটভরে খেয়েও ডিজার্ট এর ন্যায় তার ইটের কণা খাওয়া চাই। আজ আমার নিজেরও খেতে ইচ্ছে করছে, জিনিষটাতো পোঁড়া মাটি, খেতে নিশ্চয় তেমন একটা খারাপ হবে না। আমার কথা শুনলে? তোমার প্রশ্ন শুনে ফিরে তাকালাম। কি দেখছ মাথা নিচু করে, চলো ঐদিকটায় গিয়ে বসি। অনিচ্ছায় আমি জায়গা বদলালাম। সমস্ত মন জুড়ে সেই লাল ইটের টুকরো। পাশ দিয়ে মাঝে মাঝে অনেকেই হেঁটে যায়, আমি একে একে সবার দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে শুরু করলাম। স্যুট পরা এক বয়স্ক লোকের দামী জুতার সাথে ধাক্কা খেয়ে ইটের টুকরো পড়লো গর্তে জমে থাকা কালো পানির মাঝে। আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো, নাহ এবার আর কেউ ভাগ বসাবে না। আমি ঘুরে তোমার দিকে তাকালাম, তোমার হাতেও যে গণা'কয়েক লাল চুড়ি ছিলো খেয়ালই করিনি। তুমি চোখে স্বপ্ন এঁকে কি যেনো বলছিলে, তোমার চোখের রং ছেড়ে ডুব দিলাম আমার ভাবনায়। আচ্ছা, ধরো আমরা দুজন মিলে দামী একটা রেস্টুরেন্ট গেলাম। বয়কে ডেকে ইটের টুকরোটা আর তোমার হাতের কিছু লাল চুড়ি দিয়ে বললাম, 'ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে, একটা প্লেটে করে সাজিয়ে আন। লাল ইটের টুকরোটা মাঝে থাকবে আর চুড়িগুলো চারপাশে সাজানো, আজ আমাদের ভালোবাসার দুই বছরের অ্যানিভার্সেরি।'
২।
একটা ছোটখাট কাজের জন্য হন্যে হয়ে ছুটছিলাম আমি, কিছুটা বন্য পশুর ন্যায় যেখানেই খাদ্যের গন্ধ পেতাম ছুটে যেতাম। নিয়তির বিরূপ উপহাস প্রতিবারই আমায় হতাশ করতো। মধ্যবিত্ব পরিবারের একমাত্র ছেলে হন্যে হয়ে চাকরির উদ্দেশে ঘুরছে এই যেন সমাজের প্রাত্যহিক নিয়মাবলী। মা এমনিতেই ঝরে পড়লো, বাবা বেঁচে ছিলো আরো কয়েক বছর। জমানো টাকা আর সহায় সম্বল বিক্রি করে আরেকটু বেঁচে থাকার কি আকুতি! ডাক্তার কথা দিয়েছিলো, এই মরণ ব্যাধির কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। তবুও বাবা হতাশ না হয়ে এগোলো সামনের পথে। হতাশা বাবাকে কোনভাবেই ছুঁতো না, মায়ের মৃত্যুও বাবাকে তেমন একটা ছোঁয়নি। কোনো এক অদ্ভূত খেয়ালে, মৃত্যুর কয়েকদিন আগে আমায় ডেকে পাশে বসালো। এরপর নানা কথার মাঝে হঠাৎ ভরাট গলায় বললেন, জীবনে কোনোদিন যেন অসৎ পথে পা না বাড়াই। বলে চললেন, 'যে চাকরি করতাম চাইলে লাখ লাখ টাকা ব্যাঙ্ক এ জমা রাখতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি, তাই এই শেষদিনে এসেও আমি পুরো মন নিয়ে বেঁচে আছি !! বুঝলি, একবার যখন ওই পথে পা রাখবি তুই নিজের মনের খানিকটা বেচে দিবি। এরপর সময় যত গড়াবে আস্তে আস্তে তুই নিজেও বিক্রি হয়ে যাবি।' সেই ছোটকালের মতো বাবা মাথায় হাত রেখে চট করে আবার সরিয়ে নিলো। 'মানুষ বলে ভালো কাজের হিসেব পরকালে পাওয়া যায়, সেটার সত্যি মিথ্যে জানা নেই। তবে শোন, এই জীবনেই সুন্দর কিছু মুহূর্ত পাবি, সেটার জন্য অপেক্ষা করিস।' আমি ভালো মানুষ সেজে সেই সুন্দর কিছু মুহুর্তের অপেক্ষায় আছি।
নামকরা এক সেলফোন কোম্পানির সেলসম্যান পদে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে জানলাম, বায়োডাটা রেফারেন্স নামক জিনিস ছাড়া অচল। আমার জানা শোনা তেমন কেউ নেই। তোমার নামটা দিবো কিনা ভাবছি। তুমি,পাড়ার হোটেলের জমির, বাড়িওয়ালা চাচা আর আমার রুমমেট মাসুদ ছাড়া আমার পৃথিবী বলা যায় জনমানবশূন্য। সামনের দিনে ক্যান্ডিডেটসহ রেফারেন্সে নাম থাকা সবারই হয়তো ইন্টারভিউ হবে। ইন্টারভিউ বোর্ডে তুমি আমায় নিয়ে কি বলবে জানি না, তবে জমির কি বলবে সেটা নিয়ে ভেবে দেখলাম। ১২-১৩ বছরের ছোট একটা ছেলে ম্যানেজারের নিয়মিত মার খেয়েও কাজে লেগে আছে। আমার সাথে তার পরিচয়ও তেমন আহামরি কিছু ছিলো না। আমি প্রতিদিনের মতো সেদিনও পিছনের কোনার সিটটায় গিয়ে বসলাম। পাশের টেবিলে দেখি এই ছেলে ফুঁসফুঁস শব্দ করছে। সিঙ্গাড়া নিয়ে তার বেঞ্চে এসে বসলাম। অর্ধেকটা ভেঙ্গে প্লেটটা তার সামনে ঠেলে দিলাম। আমায় দেখে তার ফুঁসফুঁস শব্দ কিছুটা কমেছে। 'কি রে সাপের মতো শব্দ করছিস কেন?' উত্তর না দিয়ে ছেলেটা পাশে ঘুরে বসলো। আমি খুব ধিরে ধীরে সিঙ্গাড়ার বাকি অর্ধেক খুটিয়ে খুটিয়ে খেতে লাগলাম। আমার পাখির মতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাওয়া দেখে ছেলেটা আবার ঘুরে বসলো। 'শোন, এই দুইটা সিঙ্গাড়াই আমার দুপরের সম্বল। গপগপ করে খেলে দুই মিনিট পর আবার ক্ষিদা লাগবে। ব্রেনকে ধোঁকা দিতে হবে, বুঝলি ? বোঝাতে হবে আমি বিশাল খানা-খাদ্য সামনে নিয়ে বসে আছি। অল্প কিছু পেটে গেলেও চোখ ব্রেনকে জানাবে তুই বিশাল কিছু খেয়েছিস। মাঝে মাঝে কাজ করে, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ব্রেনটাকেই ফ্রাই করে খেয়ে ফেলি।' সেদিনের কথার পর থেকে আমার জন্য জমিরের বিশাল আবেগ দেখা গেলো। রাতে সাদা ভাত, ভর্তা আর ডিমের ঝোলের সাথে মাঝে মাঝে মুরগির রান, রুই মাছের পেটির আনাগোনা শুরু হলো। জমির আমায় নিয়ে কি বলবে সেটাই ভাবছি।
তুমি স্কুল মাস্টারের চাকরি নিলে, কিভাবে পেলে জানা নেই। লোকমুখে শুনতে পেলাম, হেডমাস্টারের ছেলের জন্য তোমাকে পাত্রী হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এই সমাজে যেখানে ঘুষ ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না সেখানে তুমি চাকরি পেলে !! নাহ, তুমি কিচ্ছু বলোনি, উল্টো তোমার কেনা মিষ্টির বাক্স থেকে গুনে গুনে চারটা মিষ্টি খেলাম। পকেট থেকে ১০ টাকার লটারীর টিকিট তোমার হাতে দিয়ে বললাম, বিসমিল্লাহ বলে একটা 'ফুঁ' দাও। তোমার লাক খুবই ভালো, দেখি তোমার ছোঁয়ায় এই কাগজের টুকরোর কোনো মুল্য পাই কিনা। তোমার স্বপ্নমাখা চোখে, না দেখা সমুদ্রের ঢেউ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকলো। আমি সেই নোনা জলের ঢেউ দেখতে চাইনি, অথচ তুমিই আমায় সমুদ্রের স্বপ্ন শেখালে।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:১১
টুতৃদগ বলেছেন: ধন্যবাদ, কষ্ট করে পুরোটা পড়ার জন্য
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১২
বাংলার ফেসবুক বলেছেন: অনেক সুন্দর পোষ্ট। পড়ে ভাল লাগলে । ভাল লাগা রেখে গেলাম সেই সঙ্গে আমার আইডিতে চায়ের নিমন্ত্রণ রইল।আপনার আসার অপেক্ষায় রইলাম কিন্ত। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৪
হাসিবুল ইসলাম বাপ্পী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে.।
চালিয়ে যান।