নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনজনদের উচিৎ কথা শোনার অভ্যাস কম, কিন্তু বেয়াদব বলার অভ্যাস বেশি। ফলাফল- আমি বেয়াদব।

আমি আলী বলছি

একজন সন্তান। একজন ভাই। একজন বন্ধু। একজন স্বামী। একজন বাবা। একজন মানুষ।

আমি আলী বলছি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিতু

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:০৪

ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে ভয়ংকর সুরে গত আধঘণ্টা ধরে ডেকে চলছে বিড়ালটা।আপছা আলোতে বিড়ালের চোখ দুটো দেখতে তার ভয়ংকর ডাকের চেয়েও ভয়ংকর লাগছে।বারান্দায় বসে সেই ভয়ংকর সুরের ডাক আর ভয়ংকর বিড়ালটাকেই উপভোগ করছে রাতুল।এই ভয়ংকর দৃশ্যটাই আজ চমৎকার কিছু মনে হচ্ছে তার।হাতে মোবাইল ফোন,একটা কল এসেছিলো রাত ১১ টা ১৯ মিনিটে,তখন থেকেই মোবাইলটা হাতে,কোথায় রাখছেনা তবে বার বার কল লিস্টটে গিয়ে নাম্বারটা দেখছে।অপরিচিত নাম্বার হলেও কল দাতার কন্ঠটা খুবই পরিচিত ছিলো।যদিও কল দাতা দুটো বাক্য বলেই লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল টা বন্ধ করে দিয়েছে,যার ফলে ৩৭ সেকেন্ডের আলাপে রাতুল কিছু বলার সুযোগ পায়নি,সুযোগ পায়নি কল ব্যাক করে এটুকু বলার-"ঠিক আছে আমি আগামিকাল কলেজের পুর্ব গেইটেই থাকবো,ঠিক চারটায়"।

রাত ৩ টা ১১,মোবাইলে আলাপের পর রাতুল বহুবার চেষ্টা করেছে বারান্দা ছেড়ে বিছানায় যাবার,পারেনি,বাকি রাতটাও সম্ভবত বারান্দাতেই কাটাবে,বিছানায় যাওয়া হবেনা।রাতুল বিশ্বাসই করতে পারছেনা মিতু ফোন করেছে,তাও চিঠি পাবার তিন বছর পর।

বেলা ১২ টা,সাড়া রাত সত্যি রাতুল ঘুমোয়নি।১২ টা বাজতে এত দেড়ি হলে ৪ টা বাজতে কত সময় লাগবে সে ভাবতে পারছেনা,যদিও ঘড়ির কাটা বরাবরই চলছে।ঘড়ির উপর বিরক্ত হয়ে লাভ নেই জেনেও ঘড়িটা ছুড়ে মেরেছে বিছানার উপর।
কোন মতে ১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘড়ি ছাড়াই ঘর ত্যাগ করলো রাতুল।কলেজ গেইটে উপস্থিত দেড়টায়।দেড়টা থেকে ২ টা বাজতেই মনে হচ্ছে কয়েক বছর লেগে গেছে,এর মধ্যে ২ জন ফকির কে ২০ টা করে ৪০ টাকা দান করাও হয়ে গেছে।পাশের চাচার দোকানে দুই কাপ চা খাওয়া শেষ,বাজে মাত্র ২:৩০।ঘড়িটা ঘরে রেখে এলোও সময় বরাবর ই একটু পরপর দেখা হচ্ছে মুঠো ফোনে।রাতুলের ছটফটানি দেখে চায়ের দোকানের চাচা টুল টা এগিয়ে দিয়ে বললো-"এইভাবে পায়চারি করলে পইরা যাইবেন,এইহানে বহেন"
রাতুল বসে অপেক্ষা করছে।

৪টা বেজে গেছে আরো ৩ মিনিট আগে।মিতুর কোন দেখা নেই।এবার অনেকটাই বিরক্ত রাতুল,যদিও খুব একটা লেইট হয়ে যায়নি।৪ টা ১০ মিনিটে মিতু গেট দিয়ে বেড় হলো।এদিক ওদিক না তাকিয়ে গেইটে অপেক্ষা করা একটা রিক্সায় উঠে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।রাতুলে এবার বিশ্বাস ই করতে পারছেনা, যার জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করছে সে তার দিকে না তাকিয়ে রিক্সা নিয়ে চলে যাচ্ছে।

রাতুলের মোবাইল বাজচ্ছে,মোবাইলের দিকে চোখ যাচ্ছেনা,তাকিয়ে আছে চলে যাওয়া রিক্সাটার দিকে।রিক্সাটা আড়াল হতেই মোবাইলের দিকে নজর দিলো।অবাক হয়েছে ,রাতের সেই নাম্বারটাই।
-হ্যালো,মিতু.........!
-তোমাকে বলেছিলাম কলেজের পুর্ব গেইটে দাঁড়াতে,পশ্চিম গেইটে না।৩:৩০ থেকে আমি পুর্ব গেইটেই অপেক্ষা করছি।সৌভাগ্যবসতই মনে হয় পশ্চিম গেইট দিয়ে বের হয়েছি।।
-সরি,আসলে.......
-আর কিছু বলার না থাকলে পুর্ব গেইটে এসো,রিক্সায় অপেক্ষা করছি।
রাতুল হাটবে না দৌড়োবে বুঝতে সময় লাগছিলো।

রিক্সায় উঠার পারমিশন নেয়ার দরকার আছে বলে মনে হয়না,উঠে গিয়েছে।রিক্সা কলেজ গেইট পার হয়ে নিউমার্কেট পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে চলছে।কিন্তু কারো মুখ দিয়ে একটি বাক্যও বের হচ্ছেনা।যদিও দুজনেই সাড়া রাত প্রেকটিস করেছে কিভাবে কি বলবে।
বড় কষ্ট করে রাতুল একটা বাক্য বের করেছে,তাও জগতের সেড়া বোকাময় প্রশ্নটাই করে-"তুমি কি আমায় কিছু বলবে,মিতু?"
মিতু বুঝতে পারছে রাতুলের অবস্থা,মুচকি হেসে উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো-"তুমি কি মাঝেমাঝে কলেজ গেইট থেমে কলনি পর্যন্ত আমার রিক্সা ভাড়ার দায়িত্বটা নিতে পারবে?"
রাতুল হাসি মুখে উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করলো-"প্রতি দিনের দায়িত্বটাই নেই?"।
মিতু আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে হ্যা বোধক ইসারা করে চুপ করে রইলো।

আপাতত কারো মুখে আর কোন কথা নেই।রিক্সা চলছে সামনের দিকে।রাতুলের হাতের উপর মিতুর হাত,মনে হচ্ছে জগতের সব সুখ এখন তাদের বসা ছোট্ট এই রিক্সাটায়.....................।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.