![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন সন্তান। একজন ভাই। একজন বন্ধু। একজন স্বামী। একজন বাবা। একজন মানুষ।
দাঁড়িয়ে আছি রেললাইনের খানিকটা দূরে।কিছুক্ষন আগে স্টেশনমাস্টার শুদ্ধ ভাষায় জানান দিয়েছেন ট্রেন আসতে কম করে হলেও এক ঘন্টা লেইট হবে।
অনুভব করছি কেউ আমার পাঞ্জাবির এক কোনা ধরে টানছে,একেবারে টেনে ছিড়ে ফেলা টাইপ্স টানাই টানছে।
-কি চাই?
-টেহা দেন,খামু।
হাতে সময় আছে,সময় পার করার কাজ নেই,কাজের মানুষ পেয়েছি,দেখি কতটা সময় পার করা যায়।
-কি নাম তোর?
-পলিথিন
-পলিথিন কারো নাম হয় নাকি?
-আমার হয়।
একটু দূরেই বেঞ্চি,গিয়ে বসলাম,পলিথিন আমার পিছে পিছে এসে আবার পাঞ্জাবি ধরে হেচকা টান দিয়ে বললো-
-টেহা দেন,খামু।
-টাকা দিবো,আগে বল তোর নাম পলিথিন কি করে হলো?
-আমি পলিথিনে হইছি।হেললাই আমার নাম পলিথিন।
-কেউ পলিথিনে হয় নাকি?
-আমি হইছি।
-তুই কি করে জানিস তুই পলিথিনে হয়েছিস?
-সবাই কইছে।
-কে কে বলেছে?
-রাবেয়া খালাও কইছে।
-রাবেয়া খালা কে?
-এতিম খানার জল্লাদ।
-তুই এতিম খানায় ছিলি?
-হ
-চলে এলি কেনো?
-পালাইয়া আইছি।
-কেনো পালালি?
-কিছু করার আগেই জল্লাদ বেডি মারে।
-হুম,রাবেয়া খালা আর কি বলেছে বল।
-কইছে এক বেডা আমারে ডাস্টবিনে সাত আষ্ট বছর আগে পলিথিনে পাইছে,পাইয়া রাবেয়া খালার এতিমখানায় দিয়া আইছে।হেয়ানে জাউড়া পোলাইন আছিলো,পলিথিনে কইরা নিতে দেখছে,হের পর থেইক্কা আমারে সবাই পলিথিন ডাহে।
-রাবেয়া খালা তোর কোন নাম দেয় নি?
-দিছে,রহিমুদ্দিন।
-রহিমুদ্দিন কেউ ডাকেনা?
-এতিমখানায় কেউ ডাকতো না,ইস্টিশনে পইল্লা পইল্লা ডাকতো,এহন ডাহেনা।
-কেনো ডাকেনা?
-ঐ লাল ছিড়া জামা পড়া মাইয়াডা দেখছেন?
-হু দেখেছি।
-এই জাউড়াডা সবাইরে কইছে আমার নাম পলিথিন।
-ও কি রাবেয়া খালার ওখানেই থাকতো?
-হ
-এখন থাকেনা?
-থাকে,চুরি কইরা মাঝেমইদ্ধে আইয়া পরে,বালা টেহা কামায়।আবার যায়গা।
-হুম,
-হুম কি,টেহা দেন।
-টাকা দিবো,রাতে কোথায় থাকিস?
-আমার দোস্ত যেখানে থাকে সেখানে।
-তোর দোস্ত আছে?
-হ,জইল্লা।
-জইল্লা এখন কোথায়?
-ভিক্ষাত বাইর হইছে,টাইম মত আইয়া পরবো।
-টাইম কখন হয়?
-দুপরের খাওনের আগেই আইবো,আমরা এক লগে খাই,এক লগে ঘুমাই।টেহা দেন।
-টাকা দিয়ে কি খাবি?
-১০ টেহা হইলে বত্তা ভাত,১৫ টেহা হইলে তরকারি ভাত,২০ টেহা হইলে ডিম ভাত,২৫ টেহা হইলে বিরানি।
-২৫ টাকায় বিরানি?
-হ,মোল্লা কাকার দোহানে ২৫ টাকায় বিরানি পাওয়া যায়,আমি গেলে এক চামিচ বেশি দেয়।
-মোল্লা কাকার দোকানে আর কি পাওয়া যায়?
-২৫ টেহার বিরানি,৫০ টেহার বিরানি,১০০ টেহার বিরানি।
-১০০ টাকার বিরানি কখনো খেয়েছিস?
-চোখে দেহিনাই,হুনছি,খামু কেমনে?
পকেটে যখন হাত দিচ্ছি তার চেহারা উজ্জল হয়ে উঠছিলো,সম্ভবত ভাবছে এতক্ষন বকবকানি কাজে আসছে।
-এই নে ২০০ টাকা।যা চোখে দেখিস নি,আজ চোখে দেখে জইল্লাকে নিয়ে খেয়ে আয়।
-আফনে কই যাইবেন?
-ঢাকা
-এক্কেবারে যাইবেন না আবার আইবেন?
-আবার আসবো।
-আইলে এই টুলডাতে ১০-১৫ মিনিট বইয়েন,জিরাইয়েন।আমি প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট পরপর এহানে আইয়া চাইয়া যামু।
-কেনো?
-আফনের লগে দেহা করুম,যা জিগাইবেন কমু,যাইবার সময় ২০০ টেহা দিয়া যাইবেন,জইল্লার লগে বিরানি খামু।
-হুম................
-আমি যাইগা..।
-যা.....।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬
আমি আলী বলছি বলেছেন: ধন্যবাদ