![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন সন্তান। একজন ভাই। একজন বন্ধু। একজন স্বামী। একজন বাবা। একজন মানুষ।
আজ রহিমুদ্দিন রিক্সা চালাবেনা।
সকাল সকাল তাই মোল্লা স্টোরে গেলো সাত্তার কম্পানিকে কল দিতে,রিক্সাটা যেন তার বদলে অন্য কাওকে ভারায় দিয়ে দেন।
সাত্তার কম্পানি ভয়ঙ্গকর জিনিস,রহিমুদ্দিন আজ রিক্সা নিবেনা এটা জানান না দিলে দিন শেষে রহিমুদ্দিন থেকে বরাবর ই ৮০ টাকা নিয়ে নিবে।
কথা শেষে বিল চুকিয়ে বাজারের দিকে পা বাড়ায় রহিমুদ্দিন।
শেষ ক'দিন অতিরিক্ত সময়ে রিক্সা চালিয়ে যে কটা টাকা জমিয়েছে তা পকেটে নিয়েছে কিনা হাত দিয়ে পরীক্ষা করে নিলো এক বার।
আজ গার্মেন্ট'স কর্মি সালেহাও ডিউটিতে যাবেনা।
গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে মিথ্যে অযুহাতে ছুটিটা নিয়েই ফিরেছে।
অফিসের তারা নেই বলে বেশ বেলা করেই বিছানা ছেড়েছে সালেহা।
আজ বিশেষ দিন।
আজ রহিমুদ্দিন আর সালেহার দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকি।
বস্তির শেষের দিকে খালের পাশের ঘরটা রহিমুদ্দিন-সালেহার।
গত দুই বছর এই ঘরেই আছে ।বর্ষার দিনে খালের পানি দরজায় চলে এলোও বিয়ের পর প্রথম রাতটা এই ঘরেই কাটিয়েছিলো বলে ঘর আর ছেড়ে যায় নি।স্বপ্ন তাদের প্রথম সন্তানটা এই ঘরেই জন্ম নিবে।
বেলা ১০ টা,বিশাল আকৃতির একটা ব্যাগ হাতে রহিমুদ্দিন ঘরে ফিরলো।
দরজায় পা রেখে ভিতরে যাওয়ার আগে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছোট্ট ঘরটার দিকে।
সালেহা কত সুন্দর করেইনা গুছিয়েছে ঘরটা।কাপড় রাখার আলনায় পুরনো ছেড়া কাপড় গুলো আজ দেখা যাচ্ছেনা,খাটের যে পায়াটা ভাঙ্গা ছিলো সেটার নিচে নতুন ইট দেয়া হয়েছে তাই এক পাশে বাকা হয়ে থাকা খাট-টাও আজ সোজাই দেখাচ্ছে।গ্লাস ভাঙ্গা শোক্যাচ-টার ভিতরের জিনিস গুলোও গুছানো। ময়লা মেঝেটা চকচক করছে।
-দরজায় খারাই আছো ক্যান?হাতে কিসের ব্যাগ?
-বাজার করে ফিরলাম।
-এত বড় ব্যাগে আমাদের দুইজনের বাজার? দেহি কি আনছ?
-লও
-করছ কি!? এত বড় মাছ আনছো ক্যান? ওমা মুরগিও দেহি আনছো,করছ কি?মাছ মুরগির লগে কেউ গরুর মাংস আনে নাকি?
যদিও বাজার দেখে সালেহা রহিমুদ্দিনকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে ,মনেমনে বেশ খুশি সে,এমন দিনে এই রকম একটা বাজার ই চেয়েছিলো ।রহিমুদ্দিনও জানে সালেহা কতটা খুশি হয়েছে বাজার দেখে।
- আচ্ছা যাও,হাত মুখ ধুইয়া আসো,রুটি বানাইছি।
-আসার সময় বিসমিল্লাহ হোটেলে গেছিলাম।
-ইস্টিশনের পাশে দুই তলায় ঐ বড় হোটেলটায়?
-হ
-ক্যান গেছিলা ঐখানে?
-এই প্যাকেট টা খুইল্লাই দেখ।
-ওমা,এত দামের বিরানি আনতে গেছো ক্যান।টাকা নষ্ট করতে গেছো,খুব টাকা হইছে নাহ?
-বিরানি না,মুরগির কইলজ্জা গুদ্দার খিচুরি।
-ঐ হইছে,এক জিনিস ই।
সকালের নাস্তা শেষে ফুরফুরা মনে দুজনেই গেলো রান্না ঘরে,স্পেশাল দিনের দুপুরের স্পেশাল আইটেম রান্না করতে।
-তুমি পুরুষ মানুষ রান্না ঘরে করবা কি?যাও খাটে গিয়া বস।
-না,তুমি রান্ধ,আমি দেহি।
-পাগল
দুপুরের খাবারের পর আজ রহিমুদ্দিন সালেহাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে।
প্লেনটা রহিমুদ্দিন বহুদিন ধরেই করছে,তবে এখনো সালেহাকে কিছু বলা হয় নি।
-খাবার খুব স্বাদ হইছে।তোমার রান্ধার হাত খুবই পাকা।
-হইছে,আমারে খুশি করা লাগবোনা।
খাবার শেষে সালেহা প্লেইট বাটি ধুতে গেলো।
ফিরে এসে দেখে রহিমুদ্দিন একটা প্যাকেট হাতে খাটের কোনায় বসে আছে।
-হাতে কি?
প্যাকেট-টা সালেহার দিকে বাড়িয়ে দিলো রহিমুদ্দিন
-ও খোদা এত্ত সুন্দর শাড়ি...! বাজারের সাথেতো এইটা দেহিনাই।
-ঘরে ঢুকার আগে বাইরে টিনের চালের উপর রাইখা ঢুকছিলাম।
-পাজিল হইছ নাহ?
-খুশি হওনাই?
-খুশিতো তুমি হইবা।
-কেমনে? শাড়িতো আমি তোমারে দিলাম।
সালেহা শোক্যাচের ভাঙ্গা গ্লাসটা একটু টেনে খুলে একটা প্যাকেট এনে রহিমুদ্দিনকে দিলো।
-কি এইটা ?
-নিজেই দেখ।
-মোবাইল...! তুমি মোবাইল কিনার টাকা পাইলা কই?
-গত তিনমাসের ওভার টাইমের টাকা এক লগে নিছি।মোল্লা স্টোরে গিয়া সব সময় ফোন করো,আমার খুবই কষ্ট লাগে।আজ থেকে নিজের মোবাইল দিয়াই কথা কইবা।
রহিমুদ্দিন-সালেহা দুজনেই আজ বিষণ খুশি।
বিকাল ৫ টা,সালেহা নতুন শাড়ি পড়েছে।রহিমুদ্দিন যত্নে তুলে রাখা বিয়ের পাঞ্জাবিটাই পড়েছে।
রহিমুদ্দিনের অনেক দিনের শখ আজ পুর্ন হবে।
আজ রিক্সায় চড়ে সালেহার হাতে হাত রেখে শহরটা প্রেমিক প্রেমিকার মত করে দেখবে।
-চলো সালেহা।
-আচ্ছা এখনতো বলো আমরা যাইতাছি কই?
-কমু,আগে চলো...।
রহিমুদ্দিন রাত ৯ টা পর্যন্ত একটা রিক্সা ভাড়া করেছে।
আজ সে ঘুড়বে,প্রান পাখিটার সাথে উড়বে।
দেখবে শহরটা নতুন করে।
হাসবে,ভালোবাসবে-নতুন করে.........।।
©somewhere in net ltd.