নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিস্কুটের টিন খুলে দিলে পৃথিবীতে জ্যোৎস্না নেমে আসে

দিশেহারা রাজপুত্র

শুভ্রর ব্লগ

দিশেহারা রাজপুত্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

গদ্য: অভয় দাস লেনে একটা দুই টাকার নোট

০২ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ১:১২



অভয় দাস লেনে একটা দুই টাকার নোট
শুভ্র সরকার

দুপুর রোদে টিকাটুলির অভয় দাস লেনে একটা দুই টাকার নোট তার চারপাশ অগ্রাহ্য করে একা একা ওড়াউড়ি করে। হাওয়া তখন টায়ার নিয়ে দৌঁড়ে বেড়ানো শিশু। রাবারঅলা একটা ধূসর প্যান্ট পরে খালি গায়ে খালি পায়ে দৌঁড়ে বেড়ায়। তার দৌঁড়ানিতে দুই টাকার নোটটা ঢুকে পড়ে গণভবনে, পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশনে, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাকের মধ্যে। জাতপাত ভুল রাস্তার কিনারে জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো দাঁড়ানো আতাগাছটা হঠাৎ হঠাৎ ধমক ওঠে। ওরা আরও বেশি উড়তে থাকে। চর এলাকায়, যেখানে পানির জন্য গাঁয়ের মেয়েদের প্রতিদিন ভোরে কয়েক মাইল দূরে হেঁটে যেতে হয় এবং ফিরে আসে দুপুর রোদে পর্যাপ্ত পানি ছাড়াই, সেখানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মেয়েদের মৃত্যুর আনন্দে ওরা উড়ে বেড়ায়।

একটা পলিথিন হাদিসের ভুল ব্যাখ্যার মতো ওদের পায়ে জড়িয়ে যায় বারবার। ওরা হোঁচট খায়। দুই টাকার নোটটার ডান চোখটা লাল হয়ে ফুলে ওঠে। কপাল ফেটে যায়। ফাঁটা কপালে একটা দোয়েল পাখি খড়কুটো মুখে করে নিয়ে আসে। বাসা বাঁধে। আর ভেঙে যায় নিচের পাটির সামনের দু’টো দাঁত। যার কারণে বলা হয়নি এমন অনেক কথাই ঠোঁটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকে। এতে পরিস্থিতি আরও দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। পলিথিন আরও বেশি পা জড়িয়ে ধরে। ধরাধরির এক পর্যায়ে দু’টাকার নোটটা গোল গোল ঘুরে, কিছুটা উপরে উঠে আবার নিচে নেমে আসে। তারপর রাস্তা ছোঁয়ার আগ মুহুর্তে উপরে উঠে যায়। তার এই ঠাট্টায় মুখ শক্ত করে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে বসে থাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ওই মুহূর্তে আকাশের পেট চিরে একটা পাখি নিজের ডানায় দুপুরের লালা মাখানোর আনন্দে রাস্তার পাশে দে’য়ালে এসে বসে। অযথা ডাকাডাকি করে। কাকে ডাকে, তা জানা যায় না। উড়তে থাকা দুই টাকার নোটটাকে একা রেখে, সমস্ত দুপুর পাখিটার চারপাশে গোল হয়ে বসে। যদিও এই দুপুরে তার আসার কথা না। তবু আসে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মতো, তাকে এড়ানো যায় না।

খোসপাঁচড়া ভরা প্রায় হলুদ বিল্ডিংয়ের পুরনো ব্যথার মতো জানালার পাশে উড়ে এসে বসে পাখিটা। সেইখানে রান্না করতে দেখা যায় নাজুফানকে। যদিও কেউ দেখে নাই, তবে কল্পনা করে নেয়া যাক নাজুফান রান্না করছে। কারণ মানুষ গোলাপ ভালো না বাসলে সে দুঃখ করে। নাজুফানের কোমরে কাপড় গোঁজা। হাফ বয়েল ডিমের সাদা অংশের মতো কোমরের কিছু অংশ শাড়ির মারপ্যাঁচ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে আছে। যেইখানে বারবার স্লিপ করে রোদ নিচে বেসিনের তলায় দোকানির বাসায় খাটের তলে সয়াবিন তেলের মতো লুকিয়ে থাকা অন্ধকারে মিশে যায়। পাখিটা নাজুফানকে কুমড়ো দিয়ে বেগুনি রান্নার পরামর্শ দেয়। বিনিময়ে নাজুফান বলে—ধন্যবাদ, প্রধানমন্ত্রী। যদিও তার এমনটা বলার কোনও কারণ ছিল না, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী তখন হাজার হাজার মাইল দূরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে ভাষণ দিচ্ছিলেন জলবায়ু নিয়ে অথবা খুব কাছেই গণভবনে প্রিজাইডিং অফিসারদের নির্ধারণ করে দিচ্ছিলেন ভোট গণনার ফল।

কিন্তু নাজুফানের এমনটা বলার একটা কারণ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য দাঁড় করানো উচিত। যেখান থেকে যে কাউকে পুলিশ বা র‍্যাব তাদের ইচ্ছামতো তুলে নিয়ে পুটকির মধ্যে সেদ্ধ ডিম ভরে দিতে পারবে। তাই আমরা ভাবি এবং বলি—এর কারণ হতে পারে, নাজুফানের ঘরে কুমড়ো নাই। এমনকি বেগুনিও নাই। তবে তেল আছে। আবার এমন হতে পারে নাজুফান মূলত একটা দুই লিটার সয়াবিন তেলের বোতল। আবার হতে পারে নাজুফান একটা দুই টাকার নোট। যে রাস্তায় পড়ে থাকে। পাড়া খায়। ড্রেনে গুয়ের মধ্যে শুয়ে বসে থাকে। যে থাকলেও পকেট টের পায় না, না থাকলেও পায় না—এমন একটা দুই টাকার নোট নাজুফান।

আবার এমনটাও ঘটতে পারে—নাজুফান মূলত সামিয়া আফনান প্রীতি। শাহজাহানপুরে বৃহস্পতিবার রাতে যে রিক্সায় বসে থাকে। অভয় দাস লেন থেকে অনেক দূরে শাহজাহানপুর আমতলায় তার রিক্সা সিগন্যালে আটকে যায় প্রতি বৃহস্পতিবার। যেইখানে তারে না করা একটা গুলিতে সে মারা যায়। মালিবাগে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। বাড়িতে অপেক্ষা করছিল তার মা কিন্তু সে বাড়ি না ফিরে মরাটারে বেছে নেয়। যার মৃত্যু নিয়ে ঠাট্টা করে তার বাবা। বিচার করার মালিক যেহেতু আল্লাহ এবং এই নব্বই পার্সেন্ট মুসলিমের দেশে টুপি আর পাঞ্জাবি পরা কৌটায় করে উনারে যেহেতু বিক্রি করা হয়, তাই সামিয়া আফনান প্রীতি অথবা নাজুফানের বাবা তার মেয়ে হত্যার বিচার চায় না।

যদিও বহুদিন পরে অভয় দাস লেনে মানুষের পায়ের নিচে বারবার একটা দুইটার নোট পড়তে দেখা যায়। হয়তো কেউ হাতে তুলে নেয়। এরপর ফেলে দেয়। ছেঁড়াভুড়া। টেপ লাগানো। দোয়েলের ছবি আঁকা। কোনওমতে নিজের পরিচয় দিতে পারে, এমন একটা দুইটার নোট। অভয় দাস লেনে বা আমতলা সিগন্যালে একটা দুই টাকার নোট ওড়াউড়ি করে। পাশ দিয়ে নাজুফান দুই লিটার সয়াবিন তেলের বোতল নিয়ে হেঁটে যায়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ২:৪১

সোনাগাজী বলেছেন:



মংগল গ্রহ থেকে লেখার কি দরকার? মাটিতে নেমে আসেন।

০২ রা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: একটা ব্যাপার কি জানেন সোনাগাজী, ঘাড় উঁচু করে অন্যেরে দেখার অভ্যাস থাকা দরকার আমাদের। এই অনভ্যাসেই আমরা অন্যেরে মাটিতে নামতে বলি। অথচ নিজেদের যে মঙ্গলে একটু আধটু ঢুঁ মারা দরকার এইটা ভুলে যাই। আপনার কমেন্ট যে সব প্লুটো থেইকা আসে, এইটা আপনি যেমন ভুলে গেছেন।

২| ০২ রা মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:০৬

রানার ব্লগ বলেছেন: বেশ লেগেছে ! অনেকদিন পর মনে হয় পোস্ট দিলেন !!

০২ রা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: থ্যাংকস। বহুদিন আসলে।

৩| ০২ রা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তাই লেখাটা দুবার পড়লাম।

০২ রা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:১৭

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: থ্যাংকস নুর।

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ভাললাগলো। ++++

৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:১৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ও বাজান তুমি বাইচ্চা আছো? আমি তো মনে করছি সত্যি সত্যি দিশা হারাইয়া এক্কেবারে হারায় গেলো আমার প্রিয় ব্লগার ভাইডি। আজকে মরুভূমির জলদস্যুর মাসিক একটা সংকলন পোষ্টের ছোটগল্প তালিকায় দেখি গদ্যঃ অভয় দাস লেনে একটা দুই টাকার নোট : লিখেছেন: দিশেহারা রাজপুত্র!!!

আই এম শকড। কোথায় ছিলেন ভাই এতদিন? আশা করি নিয়মিত দেখা যাবে। খুব মিস করি সুমন কর, ডি মুন, স্বপ্নবাজ অভি, দিশেহারা রাজপুত্র, বিদ্রোহী ভৃগু সহ কত্ত কত্ত ব্লগারদের।

ও বাজান তুমি বাইচ্চা আছো? আমি তো মনে করছি সত্যি সত্যি দিশা হারাইয়া এক্কেবারে হারায় গেলো আমার প্রিয় ব্লগার ভাইডি। আজকে মরুভূমির জলদস্যুর মাসিক একটা সংকলন পোষ্টের ছোটগল্প তালিকায় দেখি গদ্যঃ অভয় দাস লেনে একটা দুই টাকার নোট : লিখেছেন: দিশেহারা রাজপুত্র!!!

আই এম শকড। কোথায় ছিলেন ভাই এতদিন? আশা করি নিয়মিত দেখা যাবে। খুব মিস করি সুমন কর, ডি মুন, স্বপ্নবাজ অভি, দিশেহারা রাজপুত্র, বিদ্রোহী ভৃগু সহ কত্ত কত্ত ব্লগারদের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.