নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । সুন্দর একটি দিনের স্বপ্ন । মায়াময় সকালের স্বপ্ন । বৈষম্যহীন পৃথিবীর স্বপ্ন । দ্বিধাহীন ভালোবাসার স্বপ্ন । স্বপ্নগুলো সত্য হতে দেখার স্বপ্ন ।

আমি মাধবীলতা

আমার লতার একটি মুকুল ভুলিয়া তুলিয়া রেখো – তোমার অলকবন্ধনে..

আমি মাধবীলতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন~খুঁজি তারে আমি আপনায়

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৬


এক.

- তোমার অফিসে জব করবো ।
- আমার অফিসে ?!
- হ্যা ।তোমার অফিসে আমাকে জব দাও ।
- আমার অফিস কি আর আমার কথা মতো চলে ! কিন্তু হঠাৎ জব করতে চাইছো, তাও আবার আমার অফিসে ?
- হুম তোমার অফিসে ।
- আমার টীমে ?
- হুম তোমার টীমে ।
- আচ্ছা তাই ?!
- হ্যা তাই । তুমি প্রতিদিন আট-দশ ঘন্টা অফিস করো । আর আমার সাথে তোমার দেখা হয় সপ্তাহে একবার । তাও কখনো দুই-তিনঘন্টার বেশি না । এসব একদম ভাল্লাগেনা আমার । তোমার অফিসে জব নিয়ে আমি তোমাকে প্রতিদিন প্রতিদিন দেখতে পাবো । যা বিজি মানুষ আপনি ! এছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না ।
- ওরে দুষ্টু এই প্ল্যান তোমার ?! তুমি আমার অফিসে জব নিলে আমার কি আর অফিসের কাজ করা হবে শুনি !

ভীষণ শীতের একটা ছুটির সন্ধ্যায় কনকনে হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে হুডখোলা রিকশায় ক্রমাগত বাড়তে থাকে ওদের খুনসুটি,মান অভিমান । আর একই চাদরে মুড়িয়ে উষ্ণতা ভাগাভাগি করতে করতে কখন যেন একসাথে বোনা হয়ে যায় স্বপ্নটাও ।
ওরা দুজন । একজন পুরুষ । একজন নারী । একজন আদম । আরেকজন ঈভ ।

দুই.

-আবারো জানালার পাশে বসেছো ? কদিন ধরে কিন্তু শীতটা বেড়েছে । এতো করে বলি খোলা জানালার কাছে বোসো না তোমার ঠান্ডার ধাঁচ, কথাই শোনো না । কাশিটা বুকে বসে গেলে খুব ভালো লাগবে তাইনা ? ওঠো । এদিকটায় এসে বসো ।
একটা হাত ধরে থামালাম মিরাকে । কাছে টেনে এনে বললাম ,"তোমার হাতদুটো তো ভীষণ ঠান্ডা হয়ে আছে । কই, এখন তো আর আমার কাছে উষ্ণতা চাও না তুমি ? বলো তো মিরা, আমি কি আগের তুলনায় শীতল হয়ে পড়েছি ?"
চোখভরা অভিমান নিয়ে চাইলাম আমার মিরার দিকে । ঠিক অভিমান না । আমি জানি আমার এই ধরণের প্রশ্নে মিরা কষ্ট পায় । অসহায় বোধ করে । কখনো বোধহয় আমাকে লুকিয়ে চোখের কোল মুছে নিতেও দেরি হয়না । এবং তারপরই ওর দুকূল ছাপিয়ে আসা ভালোবাসা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় যেন তীব্র কোন আক্ষেপের প্রায়শ্চিত্তে । আমি আছড়ে পড়ি তীরে, পরমুহূর্তেই ভেসে যাই আবারো । মিরা আমাকে বলে, স্যাডিস্ট । কিন্তু তার বুকের ছোট্ট কুঠুরিতে যে অতলান্তিক সমুদ্রটি সে ধারণ করে আছে, সেই অথৈ সমুদ্রে ডুবে যেতে যেতে ভেসে বেড়াবার মতো পরম নির্ভরতা আমি যে আর কোথাও পাইনি ! আমি যে আমার সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে সেই গভীরতায় ডুবে গেছি প্রতিদিন, একটু একটু করে ! এ আমি কেমন করে তাকে বুঝাবো ! এ ক্ষমতা স্রষ্টা যে আমাকে দেননি । তবে বুঝে নেয়ার ক্ষমতাটুকু কি স্রষ্টা দেননি তাকে !

-কেন এতো ভাবো আমাকে নিয়ে মিরা ? এখনো এতোকিছু কী করে খেয়াল রাখো ? শোনো ডাক্তার বলেছে এইটুকু কাশিতে কিছু হবেনা আমার । জানালার পাশে থাকতে ভালো লাগছে । থাকি কিছুক্ষণ ?
-ডাক্তার বলেছে না ? এমন কথা কোন ছাইপাশ ডাক্তার বলেছে শুনি ?
-শোনো তুমি আমার ডাক্তারকে একদম ছাইপাশ বলবে না কিন্তু !
- একশোবার বলবো । ছাইপাশ ডাক্তার তোমাকে ছাইপাশ বলেছে হু ।
-মোটেই না । আমার বউ পৃথিবীর সেরা ডাক্তার ।
-বউ কেন? তুমি তো তোমার ডাক্তারের কথা বলছো । যাও ডাক্তারের কাছেই যাও ।
-হু ডাক্তারের কাছেই তো আছি পুরোটা জীবন । দেখি তো ডাক্তার, এদিকে আসুন তো ! আপনার শীতল হাতদুটোর স্পর্শে উষ্ণ হই !

আমার মনে পড়ে, এমনই হিমহিম এক রাতে আমি মিরাকে বলেছিলাম - "কোন এক কনকনে শীতের সন্ধ্যায় তোমার সাথে এক চাদরের নীচে বসে ধোঁয়া ওঠা গুড়ের চা খেতে খেতে গল্প করতে চাওয়াটা ইদানিং এক বুক হাহাকারে রূপ নিয়েছে !" আমার সেই কথাটা ইথার তরঙ্গে কতটুকু অনুভূতি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, কিংবা কতখানি আক্ষেপ মিরাকে ছুঁয়ে গিয়েছিলো আমি সে হিসেব রাখিনি ।
ঠিক যেমন আমি হিসেব রাখিনি এর ঠিক কতোদিন পর থেকে আমি আর মিরা একই চাদরের নীচে বসে প্রতিটি হিমরাত্রি থেকে কুয়াশামাখা ভোরের রূপান্তর দেখতে শুরু করেছি ।

মিরা এখন প্রতিটি সন্ধ্যায় আমার বুকে মাথা রেখে কুয়াশা দেখে । শীতবুড়ির সাথে গল্প করে পৌষের প্রহরগুলোয় । উত্তুরে কনকনে হাওয়া যখন আলতো করে ছুঁয়ে যায় চোখ,নাক,ঠোঁট, মিরা তখন আরেকটু সেঁধিয়ে যায় আমার বুকে । তখন আমার বুকের খাঁচার ভেতরে একজন মিরা, খাঁচার বাইরে একজন মিরা ।

আমি ঠিক জানি, আত্মার জগত থেকেই মিরা ঠিক এভাবেই মিশে আছে আমার সমগ্র সত্তায়, সমগ্র অস্তিত্বের প্রতিটি পলে ।

আমরা দুজন । আমি আদম । মিরা, আমার ঈভ ।

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২১

মা.হাসান বলেছেন: ভালো লাগলো।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪০

আমি মাধবীলতা বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ !

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২৬

কালীদাস বলেছেন: সুন্দর গল্প। বিশেষত শেষের লাইন কয়টা গল্পটাকে অন্যরকম মাত্রায় পৌছে দিয়েছে।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪২

আমি মাধবীলতা বলেছেন: আমার লেখায় আপনাকে দেখতে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে ! অসংখ্য ধন্যবাদ কালীদাস !
ভালো থাকুন খুব !

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৭

জাহিদ অনিক বলেছেন:
আহা ! মিষ্টি গল্প।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৩

আমি মাধবীলতা বলেছেন: থ্যাংকিউ সো মাচ !!

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: দারুণ লেখা।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৫

আমি মাধবীলতা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ মনিরাপু !! খুব ভালো লাগছে আপনাকে আমার লেখায় পেয়ে !!
অনেক ভালো থাকবেন আপু !

৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল গল্প।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১১

আমি মাধবীলতা বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর !

ভালো থাকুন !

৬| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৬

আখেনাটেন বলেছেন: লেখা পড়ে শীত মনে হচ্ছে বেড়ে গেল। হা হা।

চমৎকার হয়েছে এডাম ও ইভের কাহানি।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১৪

আমি মাধবীলতা বলেছেন: হাহা তা কিছুটা শীত বেড়ে গেছে কদিন ধরে । এটা কি আমার লেখার কারণে কিনা ভাবছি এখন !

অসংখ্য ধন্যবাদ আখেনাটেন !

( ছবিটা দেখে কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে

৭| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সুন্দর গল্প :)
মাধবীলতা নামটা পড়ে সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, মৌষলকালের কথা মনে পড়ে গেল...

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২০

আমি মাধবীলতা বলেছেন: ধন্যবাদ আর্কিওপটেরিক্স !
খুশি হয়ে গেলাম তো !

বুঝতে পারছি আপনি বইপড়ুয়া । দারুণ ব্যাপার কিন্তু এই ব্যস্ততার মধ্যেও যদি বইয়ে কিছুটা সময় দেয়া যায় তাইনা ?
কালবেলা আমার সবসময়ের জন্য পছন্দের !

৮| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৪৬

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



শীত লাগতাছে ।

কম্বলডা কই । ইশশ অফিস থেকে এখন বাসায় যেয়ে কম্বল জড়িয়ে ঘুমাইতে পারতাম ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০৪

আমি মাধবীলতা বলেছেন: ধন্যবাদ অপু । ভালো আছেন আশা করি !

এদিক থেকে আমি ভাগ্যবান ! এখনো কম্বলের নিচেই আছি ! :D

কিন্তু কী ব্যাপার বলুন তো, সত্যিই কি গল্পটা শীত বিকিরণ করছে নাকি !!

৯| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: আমিও বইয়ের পোকা......
কালবেলা প্রিয় শুনে খুশি হলাম.....
এখন ন হন্যতে পড়ছি :)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:১৯

আমি মাধবীলতা বলেছেন: সমরেশ প্রিয় আমার । আর শীর্ষেন্দু ।
ন হন্যতে লিস্টে আছে । পড়া হয়নি এখনো ।
কেমন বলুন তো ?

১০| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪

শিখা রহমান বলেছেন: মাধবীলতা আপনার এই লেখাটা আসলেই লতার মতো পাঠককে ভালোবাসায় ও মায়ায় জড়িয়ে ফেলে।

খুব ভালো লেগেছে। শেষের কয়েকটা লাইন এমন আশ্চর্য সুন্দর!! এমন মন কেমন করা!!

একরাশ মুগ্ধতা আর ভাললাগা রইলো। শুভকামনা নিরন্তর!!

১১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৫

শায়মা বলেছেন: এই গল্পটা সন্ধ্যার মেঘমালা হয়ে গেছে ..... :)

১২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২১

আহমেদ জী এস বলেছেন: আমি মাধবীলতা,



আদম এবং ইভ । এ তো দুটো আলাদা প্রানের শাশ্বত রূপ!
মাধবীলতার মতোই সেই এক আদম যেন জড়িয়ে জড়িয়ে প্রনয়ে বেঁধে রেখে গেছে তার ইভকে এই গল্পে।

ভালো লিখেছেন।

১৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: চমৎকার লেগেছে বইটা....
নিঃসন্দেহে পড়তে পারেন...
লেখিকার জীবনের সুন্দর বর্ননা....

১৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর !
ভালো থাকুন !

আপনিও ভালো থাকুন।

১৫| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৩

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার কাহিনী। ধন্যবাদ

১৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২৩

মুক্তা নীল বলেছেন: আত্মার জগতের মানুষ কেবল আত্মার মাঝেই বাস করে। দারুন গল্প লিখেন। গেল কবিতাটা অসম্ভব মনে দাগ কেটেছিলো কারণ ঐ যে দীপাবলী ছিলো।
ন হন্যতে পড়লে আপনাকে লা নুই বেংগলীও পড়তে হবে। কারণ এটা দুই সিরিজ। ন হন্যতে -মেএীয় দেবী, লা নুই বেংগুলী - মিজা এলিয়াচ। এই বই আমি পড়েছি ২/৩ বার। ভালো থাকবেন আপু।
শুভ রাত্রি।

১৭| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২৭

আমি তুমি আমরা বলেছেন: শেষব প্যারায় এসে গল্পটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। ভালই লাগল।

১৮| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার গল্প, সমাপ্তিটা অতি চমৎকার!
গল্পের শিরোনামটাও যথার্থ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.