নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে চেনার চেষ্টা করি সবসময়, কিন্তু একদমই চিনতে পারি না।

আমি মুক্তা

নিজেকে খুঁজে ফিরি অহর্নিশ, কে আমি, কোথায় ছিলাম, কোথায় এলাম আর কিছুদিন পর কোথায় যাবো?

আমি মুক্তা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিজুস প্রেম। পর্ব-৯

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮

আগের পর্ব

তার এ কথাটা শুনে আমি কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম, আচ্ছা ঠিক আছে বলে লাইনটা কেটে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাস টার্মিনালের কাছাকাছি একটি হোটেলে চেকইন করলাম। রাত তখন প্রায় ভোর হতে চলেছে। তবুও হোটেলে চেকইন করে গোশল করে একটু ঘুমিয়ে নিলাম। ৯টার দিকে মোবাইলের রিংটোনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখি পাগলীর কল। রিসিভ করব কি না ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। কেমন যেন একটু ভয় ভয় করতে থাকে। একে তো বাড়ি হতে অনেক দূরের একটি জেলা শহর, তারপর সম্পূর্ণ অচেনা যায়গায়, অচেনা পরিবেশে একটা মেয়ের সঙ্গে এভাবে দেখা করাটা ঠিক হবে না বলে মনটা বারবার সাবধান করছিল আমাকে। তারপর আমি হঠাৎ সম্পূর্ণ আবেগের বশেই বেশ কিছু টাকা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। যা হয় হবে, এতদূর যখন এসেই পড়েছি তখন এর শেষ না দেখে ছাড়ছি না! আমি যদি একটু সতর্ক থাকি তাহলে নিশ্চয় কোন বিপদের লক্ষণ দেখলেই সটকে পড়ার সুযোগ বের করে নেব। ফোনটা রিসিভ করি-

- হুম, বলো।
- কি করো?
- ঘুমাচ্ছি।
- কোথায়? হোটেলে?
- উম!
- কোন হোটেলে?

তার প্রশ্নটা আমার মনে একটা ধাক্কা দিল। সাবধান!

- উম, নাম তো জানি না রাত্রে অন্ধকারের মধ্যে যেটা খুঁজে পেয়েছি প্রথমে সেটাতেই উঠেছি।
- ও, আচ্ছা। আব্বু কলেজে চলে গেছে আমি একটু পরে বেরোবো, তুমিও বের হয়ে শহীদ মিনারে আসো।
- শহীদ মিনার! সেটা আবার কোথায়?
- এই তো কাছেই, হোটেল থেকে বের হয়ে যেকোন রিক্সাওলাকে বললেই নিয়ে যাবে। তুমি সেখানে গিয়ে একটু বস আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।

লাইন কেটে দিল। আমি এবার প্রাত:কর্ম শেষ করে হালকা নাস্তা করে রেডি হয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নেই। রিক্সাওলাকে গন্তব্য বলে দিয়ে বসে একটা সিগ্রেট ধরালাম। সিগ্রেটটা পুরো শেষ না হতেই চলে এলাম কাঙ্খিত গন্তব্যে।

রিক্সা থেকে নেমে চারপাশটা একটু ঘুরে ফিরে দেখে নিলাম। বেশ বড় একটা দীঘি তার দুদিক দিয়ে রাস্তা আর রাস্তার পাাশে বেশ কিছুটা যায়গা পার্কের মতো এবং তার মধ্যে একটা উঁচু বেদি দেখতে পেলাম। কিন্তু কোন শহীদ মিনার চোখে পড়লো না। দীঘির পাড়ের সঙ্গে একেবারে মিশে আছে যায়গাটা। দীঘির চারপাড়ে গাছ লাগানো। বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। আর মাঝে মাঝে সুপারি ও নারকেল গাছও নজরে পড়লো। বেশ সুন্দর একটি ছিমছাম নীরব স্থান বলে মনে হল যায়গাটিকে।

এবার বেদিটার দিকে হাঁটতে থাকি আমি রাস্তা আর দীঘি এ দুটোর মাঝখানে বেশ খানিকটা যায়গা সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে, তার মাঝে বেদী এবং তার উপর মিনার। মিনারটার চারপাশে ভালোভাবে ঘুরে ফিরে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করি পুকুরের পাড়ের দিকে একটা ছোট দরওয়াজার মত ফাঁকা স্থান, যেখান দিয়ে বেদীটার মধ্যে প্রবেশ করা যায়।

চারদিকে ভালোভাবে পরিদর্শন শেষ করে আমি আবার রাস্তায় ফিরে আসি। পাশের একটা চা-য়ের দোকানে গিয়ে এককাপ চা অর্ডার দিয়ে সিগ্রেট নিয়ে বসলাম। এরমধ্যে একটা রিকশা এসে থামল শহীদ মিনারের গেটের কাছে। ৪ফুট ২-৩ ইঞ্চি উচ্চতার একটু মোটামত শ্যামলা রংয়ের একটি মেয়ে নামল রিক্সা থেকে। রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে চারপাশে তাকালো, এবার পায়ে পায়ে শহীদ পার্কের ভেতরে প্রবেশ করল। আমি দ্রুত চা-সিগ্রেট শেষ করে বিল দিয়ে পার্কের দিকে এগিয়ে যাই। মেয়েটা ভেতরে গিয়ে শহীদ মিনারের কাছাকাছি একটা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মোবাইল বের করল, এবার কাউকে রিং দিল।

আমার মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠতেই আমি নিশ্চিত হলাম, এই সেই মেয়ে, যার সঙ্গে আজ প্রায় ৩-৪ মাস রাতের পর রাত আমি মোবাইলে কথা বলে পার করেছি। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য কলটা রিসিভ করতেই:

- এ্যাই তুমি কোথায়, আসোনি এখনও।
- হুম আসছি তো, কিন্তু তুমি কোথায়?
- আমি তো শহীদ মিনারের পিছনে পুকুরে পাড়ের দিকে একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, তুমি কই?
- আমি ও তো শহীদ মিনারের কাছাকাছি আছি, আচ্ছা পুকুরের পাড়ের দিকে আসছি।

কলটা কেটে দিয়ে এবার একটু সামনে এগোতেই কোকড়া চুলে আচ্ছন্ন উজ্জ্বল শ্যামলা মেয়েটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ি। ও গাছের কাছ থেকে হেঁটে আমার দিকে আসছিল, তাই হঠান শহীদ বেদীর কোনায় দুজনের মুখোমুখি দেখা। কিছুক্ষণ কারও মুখেই কোন ভাষা নেই। প্রথম নিরবতা ভাঙল মেয়েটাই। কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে

-কে আপনি?
- আমি মুক্তা, আপনি?
- আমি মুক্তা।

মুচকি একটা হাঁসি দেখা দিল তার মুখে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিশ্ময় এবং পুরোটা মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইল।
আমি ওকে দেখে ততটা পছন্দ না করলেও বেশ মুগ্ধ হলাম তার কথাবার্তা এবং স্মার্টনেসে। এবার তাকে বলি:

- চল কোথাও বসি।
- হুম, আসো।

বলে সে পুকুরের পাড়ের দিকে এবং বেদির আরেকপাশে একটা ছায়াযুক্ত গাছের নিচে নিয়ে গেলো আমাকে। দুজনে সামনা সামনি বসে পড়লাম। ও তার ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে একটা কলেজের আইডি কার্ড বের করে আমার হাতে দিল।

- কি, এটা।
- দেখো, তুমি তো আমার নামটা নিয়া কনফিউশনে ছিলা, তাই এটা আনছি।
- হুম, দেখলাম, আর বুঝলাম, তুমি মুক্তা। কিন্তু আমার সঙ্গে তো কোন আইডি কার্ড নেই যেখানে আমার নাম লেখা আছে। তাহলে কিভাবে তুমি বিশ্বাস করছো যে আমার নাম মুক্তা?
- তোমাকে দেখার পরে আমার মনে যতটুকু সন্দেহ ছিল সব এক মুহূর্তে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো, আর মনে হলো আমার কানে কেউ বলছে ইনিই তিনি, তোমার প্রাণের স্বামী!
- ও, বাবা! তাই নাকি? কই আশে পাশে তো কাউকে দেখছি না।
- ফাজলামো রাখো, আমাকে তোমার পছন্দ হয় নাই তাই না।

পছন্দ যে হয়নি তা তো আর সরাসরি বলতে পারছি না, মেয়েটার চোখে-মুখে যে প্রাণের স্পন্দন, প্রেমের আবির মেখে রয়েছে তা হঠাৎ এক ধাক্কায় নষ্ট করতে আমার খুব কষ্ট হলো। তাই কথাটা ঘুরিয়ে বলি-

- পছন্দ না হলেই কি? তুমি তো আমাকে স্বামী বলে স্বীকার করে ফেলেছো, তো এখন আর আমার করার কিছুই নেই।
- তার মানে সত্যি সত্যি আমাকে পছন্দ হয়নি, তাই না?

তার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো, মুখে এতক্ষণ যে খুশীর জোয়ার বইছিল তা ঢেকে গেলো বিষাদের আবরণে!

আমি তার মুডটা পরিবর্তন করার জন্য বলি, আরে পাগলি আমি কখন বললাম একথা যে তোমাকে আমার পছন্দ, তার হাতটি ধরে মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলি-

- শোন মেয়ে, তুমি যেমন আমাকে না দেখেই ভালোবাসার ফাঁদে জড়িয়ে গেছো, তেমনি আমাকেও তো তোমার মায়াজালে আটকে ফেলেছো।

এবার তার মুখের রঙটা একটু পরিবর্তন হলো, হঠাৎ সে এক অদ্ভুত কাজ করল, সামনে ঝুঁকে আমার ঠোঁটে একটা হালকা চুমু দিয়ে আমার একদম গাঁ ঘেঁষে আমার হাতটি তার দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: খুব পিপাসা পাচ্ছে।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:২৭

আমি মুক্তা বলেছেন: আবহাওয়া যে পরিমাণ উষ্ণ, তৃষ্ণা পাওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কি দিয়ে যে আপনার তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারবো তা খুঁজে পাচ্ছি না। আপাতত ভাবিরে বলেন ফ্রিজ থেকে আইস বের করে লেবু+চিনি দিয়ে একগ্লাস ঠাণ্ডা শরবৎ খাওয়াতে। ;)

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:১৭

মুক্তা নীল বলেছেন: মুক্তা ভাই
অদৃশ্য টান ও অদেখা প্রেমে আকর্ষণ মারাত্মক। হয় পুরোপুরি সাকসেস আর না হয় ফেইলর। ধৈর্য আর বিশ্বাস না থাকলে সেই প্রেমের খবর আছে। আমিতো চাইব আমার ভাই-টা পুরোপুরি সাকসেসফুলি হোক, ডিজুস প্রেমে এবং গল্পে।
শুভকামনা রইল।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৩১

আমি মুক্তা বলেছেন: মুক্তা আপু,
অদৃশ্য টান ও অদেখা প্রেমে আকর্ষণ সত্যিই মারাত্মক।

আরও মারাত্মক আমার গল্পের চেয়ে আপনার এই ছোট্ট ক'টি লাইনের মন্তব্য। এত অল্প কথায় যে এত বেশি কিছু বলা যেতে পারে তা সত্যি আমার জানা ছিল না।

আপ্লুত, অভিভূত এবং বিস্মিত!

শুভকামনার জন্য এবং প্লাস এর জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:২৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: “ যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনো কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না ”

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৩২

আমি মুক্তা বলেছেন: একদম ঠিক মাহমুদ ভাই। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৩৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৩৩

আমি মুক্তা বলেছেন: গিয়াস ভাই বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

আমার সন্দেহ ছিল নিজের লেখার ওপর, কিন্তু যেহেতু গিয়াস ভাই বলেছেন, তাই মনে হচ্ছে সত্যি ভালো লিখে ফেলেছি।

আন্তরিক মুবারকবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.