নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিনেমা পাগল। সিনেমায় খাই, সিনেমায় ঘুমাই, সিনেমায় পড়ি, সিনেমায় স্বপ্ন দেখি। জীবন সিনেমাময়।

লেখাজোকা শামীম

গল্প লেখার নেশা আমার আশৈশব। মাধ্যমগুলো বদলে গেছে সময়ে সময়ে - কখনও গল্প, কখনও উপন্যাস, কখনও নাটক, কখনও চলচ্চিত্র কিংবা কখনও টিভি নাটক। যে মাধ্যমেই কাজ করি না কেন, একই কাজ করেছি - গল্প বলেছি। আমি আজন্ম গল্পকার - এক সাদামাটা গল্পকার। মুঠোফোন : ০১৯১২৫৭৭১৮৭. বৈদ্যুতিক চিঠি : [email protected]ফেসবুক : http://www.facebook.com/shajahanshamim.scriptwriterদৃষ্টি আকর্ষণ : আমার নিজের লেখা সাহিত্যকর্ম যেমন উপন্যাস ও নাটক - যা এই ব্লগে পোস্ট করেছি, তার সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত। আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া এসবের কিছুই কোনো মাধ্যমে পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।

লেখাজোকা শামীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস - নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না - পর্ব -০৪

২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩০

চার



প্রতিভা এক মনে অংক করছে। অন্য দিন পড়তে বসে ঝিমোয়। এক দিন পড়াতে এসে টয়লেটে গেছি। ফিরে দেখি, আমার ছাত্রী বইয়ের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। মুখের লালায় বইয়ের পাতা ভিজে গেছে। দৃশ্যটি দেখে রাগের বদলে আমার হাসি পেয়ে গিয়েছিল। কে বলবে ও এইচ.এস.সি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে ? এখনও স্কুলের বাচ্চাদের মতো স্বভাব রয়ে গেছে।

আজ প্রথম থেকেই কেমন উসখুস করছে। নিশ্চয়ই আগে ছুটি চাইবে। ছুটি চাওয়ার জন্য অজুহাতের শেষ নেই ওর। আধ কপাল ব্যথা, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, হাত ব্যথা, পা ব্যথা - ব্যথাময় তার পৃথিবী। যখন যেই ব্যথাটা ছুটির জন্য দরকার, সেটা জানিয়ে পড়ায় ইতি টানে। যা ফাকিবাজ ছাত্রী আমার।

‘স্যার, আর অংক করব না।’

শুরু হয়ে গেল। হাসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে কী করবে ?’

‘কিছুই করব না, আজ আর পড়ব না।’

‘মাত্র তিনটি অংক করেই ছুটি ? কী আশ্চর্য !’

‘আশ্চর্যের কিছু নেই, স্যার। আজ আমার এক খালাতো বোনের গায়ে হলুদ।’

‘তাহলে আজকে না পড়লেই হত।’

‘অতো ফাকিবাজ ছাত্রী আমি নই।’

‘তুমি ফাকিবাজ না, নিদ্রাবাজ।’

‘জ্বি, স্যার’, প্রতিভা হে হে করে বোকার মতো হাসছে, ‘কিন্তু ইদানিং ঘুমাতে পারি না। আপনার মোটা বেতটা আজকাল বড় জ্বালাতন করে।’

জোর করে হাসি চাপতে হল। প্রতিভা ইদানিং আমাকে কেয়ার করছে না। বেতও ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। এত বড় মেয়ের উপর বেত ব্যবহার করতেও কেমন অস্বস্তি লাগে। কিন্তু প্রতিভা যেভাবে পড়ার কথা শুনলেই ঝিমায়, কমপক্ষে বেত নিয়ে না বসলে পড়াশোনাটা ঘুমসর্বস্ব হয়ে যাবে।

প্রতিভা বইপত্তর ঠিক না করে হঠাৎ করে ভেতরে চলে গেল। আমি বোকার মতো বসে রইলাম। এই রকম করে মেয়েটা। পড়তে পড়তে হঠাৎ করে ভেতরে চলে যায়। আমার খুব বিরক্ত লাগে।

‘স্যার, একটু বসেন’, প্রতিভার গলায় চমকে গেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম। দেখি, পেছনের দরজার পর্দা নড়ছে। প্রতিভাকে দেখার আগেই ও আবার ভেতরে চলে গেছে। আমি বুঝতে পারলাম না, পড়া যদি শেষ হয়েই যায়, তবে বসে থাকার এই অনুরোধটুকু কেন।

প্রতিভার মধ্যে বেশ খানিকটা পাগলামি আছে। প্রথম দিনই গোলমাল বাঁধিয়ে দিয়েছিল। আমি রীতিমতো নিজের চেহারার জায়গায় একটা আতেলের চেহারা লটকে দিয়ে পড়াতে গিয়েছি। প্রতিভা এল আধ ঘণ্টা পর। ঠোঁটে মোটা করে লাল লিপস্টিক। চোখে গাঢ় কাজল। গায়ে মেখেছে কড়া ধাচের পারফিউম। যাত্রার আর্টিস্টদের মতো ঝলমলে পোশাক। এ সাজগোজের অর্থ কী ? আমি কি ছাত্রী পড়াতে এসেছি নাকি পাত্রী দেখতে এসেছি ? পুরোপুরি হতভম্ভ হয়ে গেলাম। দম বন্ধ করে পড়িয়ে গেলাম। আমার অস্বস্তি আর কমেই না।

পরের দিন মাথাই নষ্ট হয়ে গেল আমার। আজ পুরো উল্টো ঘটনা। প্রতিভা ময়লা ছেড়া ন্যাকড়ার মতো একটা কামিজ পরে এল। সম্ভবত সকালে মুখ ধোয় নি। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। আমি কোন হিসাব মেলাতে পারলাম না। কাল যে ছিল রাজ রানী, আজ কিভাবে চাকরানী হল ? আমার মাথা আউলে গেল।

কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে তার এই সব পাগলামির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। কোন দিন সে পড়ছে তো পড়ছেই, কোন দিন সে গল্প করছে তো করছেই, আমি না থামালে তার কোন কাজই থামে না। কোন দিন তার মন খারাপ, মুখ ভার করে বসে থাকে ; কোন দিন তার মন ভালো, হাসছে তো হাসছেই। তার এই বহুরূপী চেহারা দেখে দেখে কেবল অবাক হতেই থাকলাম।

সব রহস্য ভেদ করে দিল ওর মা। এক দিন ওর আড়ালে ওর মা ফিস ফিস করে বলল, ‘বাবা, তোমাকে একটা কথা বলি। প্রতিভাকে কিন্তু বলো না।’

‘ঠিক আছে, প্রতিভাকে বলব না।’

‘বুঝলে বাবা, আমার মেয়েটা খুব আহ্লাদী। ও যখন খুব ছোট, তখন একবার টাইফয়েড হয়েছিল। টাইফয়েড হলে মানুষের যে কোন একটা অঙ্গের ক্ষতি হয়। ওর কিন্তু হল না। খোদার কাছে শুকরিয়া জানালাম। কিন্তু ও যখন বড় হল, তখনই বুঝতে পারলাম, টাইফয়েড কী ক্ষতিটাই না করেছে ওর’, ভদ্রমহিলার কণ্ঠস্বর আবেগে বুজে এল।

আমি বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ক্ষতি ?’

‘ওর আসল জিনিসটাই নাই। মাথা। বুঝলে বাবা, তাই ওকে পড়াশোনায় বেশি চাপ দিও না। ডাক্তারের নিষেধ। ও যখন একা একা কথা বলে কিংবা খুব রাগ করে, তখন আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। হায় খোদা, এত সুন্দর মেয়েটা এত বড় সর্বনাশ তুমি করলে কিভাবে ?’

ভদ্র মহিলা নিজেই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলেন। আমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে প্রতিভাকে পড়াশোনার বেশি চাপ দেই না। যতটুকু পড়ে, যতটুকু পড়তে চায়, ততটুকু পড়িয়ে থেমে যাই। সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয় না।

‘স্যার, কী ভাবছেন এত ?’, প্রতিভা ফিরে এসেছে। তার হাতে একটা ট্রে। ট্রেতে সাজানো এক গ্লাস পানি এবং পাশে একটা হাফ প্লেট। এতক্ষণে বসতে বলার রহস্য পরিষ্কার হল।

‘এগুলো আবার কী ?’

‘আপনি অন্ধ নাকি ? দেখছেন না এগুলো খাবার ?’

‘তা দেখছি। কিন্তু হঠাৎ এগুলোর কারণ কী ?’

‘আপনি কি বলতে চান, আমরা আপনার প্রতি সামান্যতম ভদ্রতাও করি না ?’, প্রতিভার কণ্ঠে ঝাঁঝ।

আমি চুপসে গেলাম, ‘না, তা নয়। তুমি রাগ করছ কেন ?’

‘রাগ করার মতো কথা বললে রাগ করব না ?’

‘এটা একটা মামুলি কথা। রাগ করার মতো কথা না।’

‘কিন্তু আপনি মামুলি কথা বলবেন কেন ? আপনার মুখে মামুলি কথা মানায় না। ’

ও টেবিলের উপর ট্রেটা নামিয়ে রাখল। হাফ প্লেটটা ঢেকে রাখা।

আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। রসিকতা করছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলাম। না, ও রসিকতা করছে না।

তবু আমি একটু খোঁচা দেয়ার চেষ্টা করলাম, ‘তা, আমার মুখে কী রকম কথা মানায় ?’

ও পাশের চেয়ারটা টেনে নিতে নিতে বলল,‘আপনি একজন বুদ্ধিমান লোক। বুদ্ধিমানের মতো কথা বলবেন।’

বাপ রে ! ভালোই তো তেল দিচ্ছে। কী জানি মতলব কী ?

আমি বললাম, ‘তোমাকে ধন্যবাদ। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণের মতো কোন কথা খুঁজে পাচ্ছি না।’

ও মাথা দুলিয়ে বলল,‘ না না, প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। এটা কোন সায়েন্টিফিক ব্যাপার না। কিন্তু এখন কোন কথা নয়। চুপচাপ খেয়ে যাবেন।’

ও ট্রে থেকে হাফ প্লেটটি নিয়ে আমার সামনে টেবিলে রাখল। আস্তে করে উপরের ঢাকনাটি সরিয়ে ফেলল। দেখি, প্লেট ভর্তি হালুয়া। হলুদ রংয়ের। সম্ভবত পুড়ে গিয়ে এমন হয়েছে। আমি রসিকতা করে বললাম,‘এই বদ খাবারগুলো খেলে আমার নির্ঘাৎ বমি হয়ে যাবে। শুধু বমি না, পেট খারাপও হবে।’

প্রতিভার হঠাৎ পরিবর্তনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ও ঘাড় গুজে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। চোখ বড় বড় করে ঘোরাতে লাগল। মনে হল, এক্ষুণি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। হঠাৎ হাফ প্লেটটা ট্রেতে সরিয়ে রেখে ফ্যাসফেসে গলায় বলল,‘আপনি এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান।’

এ যে অপমান ! আমার খুব গায়ে লাগল। বোবা হয়ে গেলাম। কোন কথা না বলে সোজা উঠে বেরিয়ে এলাম। প্রতিভা তেমনি চেয়ারে ঘাড় গুজে বসে আছে ।

ওদের বাড়িটা এক তলা। সামনে একটা ছোট বাগান আছে। বাগানের মাঝখান দিয়ে সরু ইটের রাস্তা। আমি সরু ইটের রাস্তা ধরে প্রায় বাইরের গেটের কাছে চলে এলাম। গেট পেরিয়ে বেরুতে যাব হঠাৎ পেছন থেকে ‘স্যার, একটু দাঁড়ান’ শুনে থমকে দাঁড়ালাম।

তাকিয়ে দেখি, প্রতিভা তাদের বারান্দায় বেরিয়ে এসেছে। সরু ইটের রাস্তা ধরে অনেকটা দৌড়ে আমার কাছে এল। নির্দি¦ধায় আমার হাত চেপে ধরল। বলল, ‘স্যার, আপনি চলে গেলে আমি খুব দুঃখ পাব। প্লিজ, যাবেন না। আপনার পায়ে পড়ি।’

আমি বিব্রত ভঙ্গিতে ওর হাত থেকে আমার হাত সরিয়ে নিলাম। আশেপাশে তাকালাম কেউ দেখল কি না। কেউ দেখার কথা না। ওদের বাড়িতে কেউ নেই এখন। বললাম, ‘না না, আমি কিছু মনে করি নি।’

আমি অনর্থক হাসতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু রোবোটের মতো করে ঠোঁট বিস্তৃত হল মাত্র।

‘স্যার, আমার মাথায় খানিকটা গন্ডগোল আছে। কখন যে কাকে কী বলে ফেলি।’

হাসলাম। সত্যিকারের হাসি। প্রতিভা হাত ধরে নিয়ে এল ওর রুমে। চেয়ারে বসিয়ে বলল, ‘জানেন, হালুয়া কে রেঁধেছে ? আমি নিজে। জীবনের প্রথম। তাই আপনাকে একটু দিলাম। অবশ্য আপনি যদি খেতে না চান, না খাবেন, কিন্তু না খেয়েই খারাপ বলবেন কেন ?’

‘ঠিক আছে, আর বলব না’, আমি ওর মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করলাম।

‘যাক, আপনি বসুন। আমি অন্য কিছু দেই।’

‘কিছু দেয়ার দরকার নেই। আমি এখন চলে যাব।’

‘আপনার প্রয়োজন থাক বা না থাক, বসে থাকবেন।’

আমি কিছু বলার আগেই প্রতিভা ভেতরে চলে গেল। বোকার মতো বসে রইলাম। মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কে জানত রসিকতার ছলে এ রকম একটা খারাপ কাজ হয়ে যাবে ? একটা মানুষের পরম শ্রদ্ধাকে রসিকতা করা উচিত হয় নি। পরম শ্রদ্ধাই যদি না থাকবে, তবে জীবনের প্রথম হালুয়া রেঁধে আমার জন্য আনবে কেন ? হালুয়াগুলো কি খাব ? খেয়ে ফেলি।

টেবিলে এখনও ট্রের উপর হাফ প্লেটটা আছে। ঢাকনা সরালাম। হলুদ রংয়ের কুৎসিত পদার্থ। পুড়ে গিয়ে উৎকট গন্ধ বেরুচ্ছে। এটা খাদ্য নাকি খাদ্যের ত্যাগ, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। যাগগে, চোখ বন্ধ করে গপাগপ মেরে দিলাম। দুধ বা চিনির বালাই নেই, কেবল সুজি সিদ্ধ করে রেখেছে। গিলে খেতে গিয়ে দেখি গলায় আটকে যাচ্ছে। গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে খেয়ে গলা বেয়ে নামালাম আঁঠালো পদার্থগুলো। গিয়ে খাওয়া গেল বলে রক্ষা। নইলে সত্যি বমি করে দিতাম।

খেয়ে দেয়ে একটা পাঠ্য বই নিয়ে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়ার ভান করতে লাগলাম। কেন যেন মনে হচ্ছে, প্রতিভার কাছে আমার এই কাজটা খুব মজার মনে হবে। মনে মনে হাসছি খুব। কিন্তু প্রতিভার দেখা নেই।

পাঠ্য বই আর কতক্ষণ পড়া যায় ? বসে বসে আমার ঝিমুনি এসে গেল। প্রতিভার ঘুম নাকি আবার সংক্রামণ ব্যধির মতো আমাকেও পেয়ে বসল ? আমিও কি ওর মতো পাঠ্য বইয়ে মাথা রেখে ঘুমাব ?

যখন ইতস্তত করছি ডাকব কিনা, তখন প্রতিভা পর্দা সরিয়ে উঁকি দিল। পোশাক বদলেছে। একটা ঘাঘড়া জাতীয় পোশাক পরেছে। মেয়েদের অনেক পোশাকের নামই আমি জানি না। এই নামহীন পোশাকটাকে ওকে কী সুন্দরই না লাগছে। আচ্ছা, ওকে কি এই কথাটা বলব ? না, থাক। ছিটগ্রস্ত বালিকাটি কোন কথার কোন অর্থ বের করবে কে জানে। শেষে হয়তো বেইজ্জতী হয়ে টিউশনী ফেলে ভেগে যেতে হবে।

প্রতিভা আমার সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,‘আচ্ছা স্যার, আমি কি আপনাকে খুব বিরক্ত করি ?’

‘না, মোটেও না।’

‘মিথ্যে বলছেন কেন ? সত্যি কথা বলুন।’

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘সত্যি কথা হচ্ছে, তুমি মাঝে মাঝে আমাকে বিরক্ত কর।’

ভেবেছিলাম, প্রতিভা রাগ করবে। কিন্তু না, প্রতিভা হাসল। বোকার মতো হাসি। বলল,‘আপনি খুব ভালো। এত সুন্দর করে কথা বলেন ! স্যার, আপনি কখনও আমার সঙ্গে মিথ্যে বলবেন না। বলেন, প্রমিজ।’

‘প্রমিজ।’

প্রতিভা এসে চেয়ারে বসল। আমি একটা মিষ্টি গন্ধ পেলাম। ও বোধ হয় কোন পারফিউম ব্যবহার করেছে। বলল, ‘আসার সময় মহল্লার মোড়ে একটা বিয়ে বাড়ি দেখেছেন নাকি ?’

আমি হ্যা-সূচক মাথা নাড়লাম।

‘ওটাই আমার খালার বাসা। অনেক লোকজন দাওয়াত দিয়েছে। বিরাট হাউকাউ। আমার এত ভীড় ভালো লাগে না। আমার এখন ইচ্ছে করছে, আপনার সঙ্গে বসে গল্প করতে।’

আমি প্রতিভার দিকে তাকালাম। সরল চোখ। তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, ‘কিন্তু আমার যে কিছু কাজ আছে। কলেজে যেতে হবে।’

‘আচ্ছা, আপনি যান। আমি না হয় বিয়ে বাড়িতে চলে যাব কিছুক্ষণ পর। ’

‘আমি তাহলে উঠি।’

‘ঠিক আছে, ওহ হো স্যার, আপনাকে তো কিছু দেয়া হল না।’

প্রতিভাবে খালি প্লেট দেখিয়ে বললাম, ‘হালুয়া তো খেয়েছি।’

প্রতিভা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘আপনি তো আজব লোক।’

আমি হাসলাম। সোজা বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। আমার পেছন পেছন প্রতিভা আসছে।

বাগান পেরিয়ে বাইরের গেট দিয়ে বেরুতে গিয়ে অকারণেই পেছন দিকে তাকালাম। দেখি, বারান্দায় প্রতিভা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে। তার এই দাঁড়ানোর ভঙ্গির মধ্যে পৃথিবীর তাবৎ বেদনা। কোন পৃথিবীর মানুষ কি সৌরলোক ছাওয়া এ বেদনার নাগাল পাবে ?

বাইরে বেরিয়ে এসেই আসল জিনিসটা মনে পড়ল। আমার বেতনটাই নেয়া হয় নি। অবশ্য চাইলেও পেতাম না । ওর বাবা মা গায়ে হলুদে গিয়েছে। প্রতিভা গেল না কেন ? শুধুমাত্র পড়ার জন্য ? একটা দিন না পড়লে কী হত ?



চলবে ...



পর্ব -০১পর্ব - ০২পর্ব - ০৩পর্ব - ০৫



আমার অন্যান্য ধারাবাহিক উপন্যাস :



কুষ্ঠ নিবাস



নাটকের মেয়ে



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪২

বোকামন বলেছেন:
আমি গল্প - উপন্যাসের নীরব পাঠক !
পড়া হয় কিন্তু মন্তব্য জানানো হয় না ...
ভালোলাগার বাটন প্রেস করে নীরবে প্রস্থান ......
(আজকে জানিয়ে গেলাম)

আপনার জন্য শুভকামনা রইলো
ভালো থাকবেন সম্মানিত লেখাজোকা শামীম

২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: আপনার মতো নীরব মানুষের মন্তব্য পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক ধন্যবাদ।

২| ২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮

অপরাজেয় বিদ্রোহি বলেছেন: +++++

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৩০

লেখাজোকা শামীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৫৪

রাজিব-শাহ্‌ বলেছেন: +....

৪| ২০ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

অলসমস্তিষ্ক৭৭৭ বলেছেন: নাটকের মেয়ে ২0 এর পর আর হয় নাই?আমার ফ্রেন্ড রিকু y u no accept? http://www.facebook.com/sourav.ctg

৫| ২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২১

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কেমন আছেন?

উপন্যাস পড়ছি।

৬| ২১ শে মে, ২০১৩ ভোর ৫:৩১

তৌহিদ আলম বলেছেন: /:)জবর লিখেছেন শামীম ভাই /:) ++++++++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.