নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদিয়া তাবাসুম

অপ্সরা তাবাসুম

নিতান্তই সল্প জানি আর শখের বশে লিখি। আমার আশে পাশে শব্দের কল্লোল, তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আছে শুধু কিছু মানুষের মুখ। মুখগুলো কথা বলে, হাসে, কাঁদে, চিৎকার করে। তবুও ভিতরটা বোঝা অনেক কঠিন। সেই মুখের আড়ালের গল্পই লিখতে চাই।

অপ্সরা তাবাসুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনুষ্যত্ব কি হারিয়ে যাচ্ছে ??

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৩

গত সপ্তাহ ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলতে যাচ্ছি। যে ঘটনাটি আমাকে বাধ্য করলো পূর্বের কিছু ঘটনা মনে করতে। ঘটনাটি আমাকে যতটা নাড়া দিয়েছে হয়ত সবাইকে দিবে না। কেউ কেউ হয়ত নিত্য দিনের কাহিনী মনে করবেন, কেউ হয়ত বুঝেও এড়িয়ে যাবেন , আর কিছু মানুষের হয়ত আমার মতই মনুষ্যত্বে আঘাত লাগবে।



বুধবার রাত ২টা ১৫ মিনিটে এর দিকে বাইরে ধুমধাম শব্দ শুনে আমি খুব বিরক্ত হলাম। আমি তখনও জেগে ছিলাম, ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। আমাদের বাড়ির পাশে নির্মাণ কাজ চলছে তাই মাঝে মাঝে রাতের বেলা ট্রাকে করে মালামাল আসে। আমি তেমনটি ভেবে ঘুমানোর চেষ্টা আবার করলাম। তারও ১৫ মিনিট পরে চিৎকার এর শব্দ শুনে ভয় পেয়ে উঠে গেলাম। উঠে জানালা খুললাম । শুনলাম অনেক মানুষ এর চেঁচামেচি আর একজন মানুষের আত্মচিৎকার।( আমার ঘরটা বাড়ির পেছনের দিকে)

দৌড়ে সামনের বারান্দায় গেলাম । গিয়ে দেখি আব্বু আম্মু ও উঠে বারান্দায়। নির্মাণাধীন বাড়ির নিচে একজন ছেলেকে অনেক মানুষ মিলে পেটাচ্ছে। আব্বু বললো মনে হয় চোর। রাত ২টা ৩০ মিনিটেও অনেক লোক ভিড় করে ছেলেটাকে পিটাতে দেখছে। কেউ কেউ চিৎকার করে বলছে আরও পিটাও। নিওন বাতির আলোয় আমি যে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখলাম তা যেন আর কোনদিন না দেখি।

যে ছেলেটাকে পেটাচ্ছে তার বয়স বেশি হলে ১৬/১৭ হবে। তাকে একটা ৩০/৩৫ বয়সের লোক রড দিয়ে পেটাচ্ছে। লোকটা নিজের শরীরের সকল শক্তি দিয়ে পেটাচ্ছে। ছেলেটা বার বার চিৎকার করে বলছে মাফ করে দেন। শরীরটা লাফাচ্ছে, কাঁদছে, মাফ চাচ্ছে। কেউ প্রশ্ন করছে না কেন চুরি করলি বা কি চুরি করেছে। লোকটা মারতে মারতে মনে হয় ক্লান্ত হল তখন আর একটা ছেলে এলো পেটাতে । এর বয়স ২৪/২৫ হবে। বাঁশ দিয়ে পেটাতে শুরু করলো। আমি বারান্দা থেকে চিৎকার করে উঠলাম। ছেলেটার আত্মচিৎকার সহ্য হচ্ছিলো না আর। আব্বু ও চিৎকার করে বলো আরে মেরে ফেলবে নাকি। নিচে থেকে এক মুরুব্বি আব্বুকে বললো, মারতে দেন , না মারলে শিক্ষা হবে না।

আম্মু বললো তুমি ঘরে যাও, এগুলো দেখলে খারাপ লাগবে। আমি তাও দাড়িয়ে ছিলাম।

এবার ছেলেটাকে মারতে মাড়তে শুয়িয়ে ফেললো। ছেলেটার মাথা থেকে রক্ত পরা শুরু করলো , ছেলেটা কাঁদছে চিৎকার করে। তবুও ছেলেটার পেটে বাঁশ দিয়ে পেটাচ্ছে। আমি আবার চিৎকার করে উঠলাম আব্বু ছেলেটাকে মেরে ফেললো, আব্বু ছেলেটাকে বাঁচাও।

আশে পাশের বাড়ির সবাই ততক্ষণে উঠে গাছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।

রক্তাক্ত অবস্থায়ও ছেলেটা মাফ চাইছে।

আব্বু আবার চিৎকার করে উঠলো আরে মেরে ফেলো না, পুলিশ এ দিও।

এবার পাশের বাসা থেকেও কিছু মানুষ বলো আব্বুর সাথে।

ছেলেটাকে পিটানো বন্ধ হল।

ততক্ষণে ছেলেটার হাড্ডি ভেঙ্গেছে কয়টা তা জানি না তবে ছেলেটাকে যে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যায়নি তা জানি।



ভয়ংকর সত্য জানা গেলো যে ছেলেটা চোর ছিলো না। কিছু চুরি ও যায়নি সে রাতে।

ছেলেটি শিল্পকারখানায় চাকরি করে। রাতে কারখানা থেকে ফিরছিল , হঠাৎ পেছন থেকে হইহই শব্দে ভয় পেয়ে দৌড় দিয়েছিলো তাতেই ছেলেটিকে চোর ভেবে ধরেছিল।



এখন প্রশ্ন হল, যারা ছেলেটাকে পেটাল এরা কারা? তাদের কি চোরকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রয়েছে? আইন কোথায়? পুলিশ কোথায়? সমাজ এর বিচার কোথায়?



হয়ত পুলিশ এর উপর আস্থা নেই। কিন্তু সমাজ কোথায়?

চুরির শাস্তি কতটুকু?



খুব ছোটবেলায় আমি পুরান ঢাকায় দেখতাম চোর এর শাস্তি নাড়ু করে দেওয়া মায়েদের। আর ছেলেদের নাড়ু করে, বেধে রাস্তা দিয়ে ঘোড়ানো। আর তার আগে কিছু মার অনিবার্য উভয়ের ক্ষেতে।



খুব বেশি মনে পরে এক মেয়ের কথা। আমার বয়স তখন ৭/৮ । বাড়ির নীচতলায় এক মেয়েকে বেধে নিয়ে এসেছে। দুপুর বেলা। মেয়েটা শাড়ি পরা , সাথে একটা ২/৩ বছরের বাচ্চা। মেয়েটাও অল্প বয়সী। বার বার বলছে আমি চুরি করিনি। ওখানে অনেক মহিলা থাকতেও মেয়েটাকে কতগুলো লোক চর মারছিল মিথ্যা বলছে বলে। মেয়েটার বাচ্চাটা দূরে এক মহিলার কোলে ছিলো। মেয়েটা চুল অনেক বড় ছিলো। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে নাড়ু করে দেওয়া হল। সেই ঘন চুল এখনও চোখে ভাসে।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

রমিত বলেছেন: মর্মান্তিক।
তবে এগুলোর সমাধান হবে বলে মনে হয়না।
আমাদের সমাজে আমরা ভালো মানুষ একদম দেখতে পারিনা।
ভালো মানুষদের যদি কদর না থাকে, তাহলে সমাজে খারাপ ঘটনাতো ঘটতেই থাকবে।

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯

অপ্সরা তাবাসুম বলেছেন: ঠিক বলেছেন। তবে সমাধান করার জোড়ালো ইচ্ছেটা ও থাকা চাই।
শিক্ষার হার বাড়ছে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত মনে হয় খুব কম ই আছে। যে পর্যন্ত এই শিক্ষায় বাংঙ্গালী শিক্ষিত না হবে সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের গোড়াই নড়বড়ে।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২৬

সত্যান্বেসী বলেছেন: কে বলেছে শিক্ষা দিয়ে এই অমানুষিক কাজ দূর করা যাবে ? আগে দেখতে হবে যে মানুষের মধ্যে এই অমানবিকতা কোথা থেকে এলো ? সেই কারণটিকে দূর করতে পারলেই সব দূর হয়ে যাবে | আগেকার দিনের মানুষের স্বাক্ষরতা বেশি ছিল না , কিন্তু মনুষ্যত্ব ছিল | এখন শিক্ষা আছে কিন্তু মনুষ্যত্ব নাই | শিক্ষার সাথে এর কোনো সম্বন্ধ নাই | তাহলে কিসের সাথে আছে ?

এই বস্তুবাদী ভোগবাদী সমাজ মানুষের মনে লোভের জন্ম দিয়েছে | লোভ জন্ম দিয়েছে সব রকমের দুষ্কর্মের | না পাওয়ার রাগটা মানুষ এইভাবেই ঝাড়ে , কখনো নিজের পরিবারের ওপর , কখনও বা রাস্তার ছেলেদের উপরে |

এই লোভী মানুষদের ঠিক করতে গেলে ভোগবাদী সমাজকেই বদলাতে হবে |

আইন আদালত নির্দোষ | মানুষের অবাস্তব কামনা বাসনা আইন আদালত পূরণ করতে পারে না বলেই আইনের ওপর মানুষের ভরসা নেই | মানুষই দোষী |

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.