নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেউ কি পারবে আমাকে ফিরিয়ে দিতে ছেলেবেলার দিনগুলো
শৈশবের উচ্ছাস, কৈশরের উদ্যাম- আনন্দমুখর ছিল
সবুজ শ্যামল প্রকৃতির মাঝে মুক্ত বিহঙ্গের মত ছুটেছি
উদার আকাশের নিচে নিমল বাতাসে স্বাধীনতার স্বাদ পেযেছি
সে যে কী ভীষণ দুরন্তপনা আর ক্ষেপ্যামি
দাও ফিরিয়ে সেই প্রাণচাঞ্চল্য চাইনা আজকের জ্যাঠামি
সুখানুভূতি আর প্রশান্তির শিহরণ কোথায় হারিয়ে গেল
পাখির কিচির মিচির, কবুতরের বাকবাকুম শুনা নাহি আর হল
জোৎস্না রাতে ওঠানে মাদুর পেতে প্রাণখোলা আসর বসেনা
বড় চাচ্চুর দরাজ গলায় পুথিঁ পড়ার স্বর ভেসে আসেনা
ভূত পেত্নীর গল্পশুনার রাতের অনুভুতি আর পাবনা
আমগাছের ছাযায় মাদুর পেতে লেখাপড়াটাও হবেনা
উচ্চস্বরে আবৃত্তি আর অভিনয়; সেই অঙ্গভঙ্গি আর হবেনা
ঝড়ের দিনে সবাই মিলে আম কুড়ানোর সুখও পাবনা
গাছে উঠে পাকাঁ কাঠাল পাড়া, ইচ্ছেমতো খেয়ে যাওয়া
জঙ্গলে গাছে লুকানো, খুঁজে না পেয়ে আম্মুর পেরেশান হওয়া
বাইসাইকেল নিয়ে বেড়ানো, এখান থেকে সেখানে
কলাগাছের ভেলায় ভাসা,মন যেথা চায় ওখানে
বৃষ্টির পানিতে ভেজা,পা পিছলে কাদাঁয় পড়া
দলবেধে বষার পানিতে গোসল, হৈচৈ করা
বাদামী টানা, দুধের টানা, তিলের টানা, নইট্যা টানা
তারা বিস্কিট, বেবি লজেন্স;লাঠি লজেন্স-বলতে মানা
সহপাঠীদের সাথে পিটি আর জোরসে নামতা বলা
ঝড় বৃষ্টি বাদলা দিনেও ছাতা মাথায় মেঠোপথে চলা
কত দীঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ এখানে এসে দাড়িয়েছি
বড়ফুফুর জোরসে ধরে গোসল করানো কি ভুলেছি
আমার শরীরে সরিষার তৈল মাখাতে আম্মুর কিযে কষ্ট
শত্রু ছিলনা, সবাই বন্ধু, মিলেমিশে একসাথে থাকায় সচেষ্ট
নতুন জামা কাপড় পড়ে ঈদগাহে যেতাম ঈদের দিনে
বাতাসে আতরের সুঘ্রাণ, মনে আনন্দ, পা ফেলতাম তকবির ধ্বনি শুনে
আবৃত্তি, তেলাওয়াত, গান-মাইকে চড়িয়ে পড়ত আকাশে বাতাসে
পেতাম অফুরন্ত প্রাণশক্তি, দারুণভাবে তৃপ্ত হতাম পরস্পরকে ভালবেসে
মেঘলা আকাশ দেখে ঝড় বৃষ্টির ভয়ে দৌড়ে ফিরতাম ঘরে
সওদা কিনতাম কামালিযাচালা হাটে; কত সুখ স্মৃতি ধরে ঘীরে
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ডাংগুলি আর মাবেল খেলার মজা
বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা: কদমাক্ত শরীরেও ফুরফুরে মনটা তাজা
পিচ্ছিল মাঠেও লবনদারি, গোল্লাছুট, হাডুডু খেলেছি
খেলতে যেয়ে ব্যথা পেয়ে, সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়া করে-কেদেছি
লুকুচুরি খেলতে যেয়ে বড়দের বাধাঁ নিশেধ পেয়ে-থামিনি
জোৎস্না আপু বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি চলে গেলেও ফিরিনি
বিশাল তেতুল গাছটা আছে, তেতুল খাবার মানুষও আছে
জাম গাছটাও কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে
আজও কেউ ঢিল ছুড়ে,কোন্টা দিয়ে কিংবা গাছে ওঠে-পাড়ে
আমিও আছি অন্য কোথাও, অন্যরুপে-স্মৃতি আছে সাথে তাই মনে পড়ে
ছিপ দিয়ে মাছ ধরেছি, বালিয়াটায় নানুর বাড়ি যেয়ে
বষার দিনে নৌকায় চড়ে শাপলা তোলেছি-নৌকা বেয়ে
ধাধাঁ কৌতুকে মাতিয়ে রাখত বাকি ভাই; আজ আর নেই
মেঝো মামার কাঁধে চড়ে নানুর বাড়ি: বেড়ানোর দিন নেই
আমাকে মৌলভী কাকার বেত্রাঘাত, ছোটফুফুর কান্না
পিটুনি আর ধমকের ভয়, প্রাণে নাহি সয়-আর না
আমলকি,বড়ই,খেজুর,বংকই.করমচা,কামরাঙ্গা খেয়েছি
কাচা পাকা আম ভতা আর আচার খেয়ে তৃপ্তির ডেকুর গিলেছি
পশ্চিম পাশ্বের পুকুরটা আছে,পূব পাশ্বের লেবুর বাগান নেই
লালটুকটুকে গাভিটা নেই;মায়ের হাতের তৈরি দুধ-ঘি-দই নেই
সাদা কালো ডোরাকাটা সেই বিড়ালটা নেই,হাঁস মুরগির ছুটাছুটি নেই
বাড়ির চারপাশে থাকা গাছের আম , কাঠাল, কলা,বড়ই-সেই স্বাদ আর নেই
রমজানে মসজিদে খতম তারাবিহ পড়া;মাদানী হুজুরের হৃদয়স্পশী বয়ান
সেই খলিফা ভাই আজ এজগতে নেই,ফজরে ডাকতেন যিনি-এক মৃত্যুহীন প্রাণ
ইতিকাফে বসা খাদ্যপ্রেমিক ফয়েজ ভাইকে ঘীরে আনন্দ আজ স্মৃতি হয়ে আছে
তিনিও পারি জমিয়েছেন পরজগতে;হাস্যরস-কৌতুক-ঠাট্টা-সুদূর অতীত হয়ে গেছে
কাক ডাকা ভোরে মতি ভাইয়ের হাত ধরে মসজিদ পানে ছুটেছি
খাজা বাবার হৃদয়স্পশী তেলাওয়াত,রুহানী সাহেবের সুমধুর কণ্ঠ-স্মরণ রেখেছি
পীরজী সাহেবের সাথে জড়ানো কত শত কথা-আজ আর নাইবা বললাম-ভুলিনি।
‘এরশাদ জেলের ডালভাত কেমন লাগে’ বলে সফি হুজুর আর ক্ষেপাবেনা
চিরদিনের জন্যে চলে গেছেন তিনি,এজগতে আর ফিরে আসবেনা
কায়দা থেকে ছিবরা, হানারচালা থেকে জুম্মাপাড়া-প্রাণখোলা হাফেজুদ্দীন মুন্সি
দড়ানীপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন মক্তব আজো কালের সাক্ষী হয়ে আছে-শুনছি
আজও আছে অনেক কিছুই আগের মত;অনেক কিছু পাল্টেও গেছে পুরোটা
আগে বৈদ্যুতিক লাইট নয় হারিকেন ছিল,বৈদ্যুতিক ফ্যান নয় হাতপাখা ছিল
ট্যাঙ্ক,হরলিক্স,ওভালটিন ছিলনা,আখের গুড় আর লেবুর শরবত ছিল
খেজুরের রস, তালের রস, মধু ছিল; দুধ,মাছ,শাকসবজি,হাস মুরগি ছিল
ছিলনা ইটের দালান,ফ্রিজ,কম্পিউটার,টিভি;তবে আন্তরিকতা,ভালবাসা সুখশান্তি ছিল
বাতাসা-কদমা বিলানো,জুম্মা শেষে ঝাল খিচুরি ও মিস্টি ক্ষীরের মিশ্রণ-অতুলনীয়
আমার চাচ্চুর লেখা কবিতা পড়া, ছোটফুফুর কণ্ঠে তা শুনার অনুভূতি-স্মরণীয়
আমাকে সাতার শিখাতে ছোটকাকা ও ছোটফুফার পরিশ্রম,তাদের স্নেহ প্রীতি-বরণীয়
বড় ফুফার সাইকেলে পাথরঘাটা হয়ে বাসাইল;টাঙ্গাইলে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কষ্ট অবণনীয়
যাদের সীমাহীন কষ্ট আর ত্যাগ আজকের আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে
পেরেছি কি তাদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফোটাতে;দায়িত্ব কতব্যতো কিছু আছে
অকৃত্রিম স্নেহ মমতা দিয়ে যারা লালন পালন করেছে, তাদের ঋণ শুধ হবার নয়
প্রতিজ্ঞা করেছি-আমার জীবন দিয়ে হলেও যেন সেসব মানুষের কল্যাণ হয়
©somewhere in net ltd.