নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বলতে পারবনা আমার গ্রামে আসলে দূর পাহাড়ের সৌন্দয উপভোগ করতে পারবেন,পাহাড়ের ঝণার জল দেখে চক্ষু শীতল করতে পারবেন।এতটুকু বলা যাবে, এখানে যেদিকে দৃষ্টি যাবে সবুজ আর সবুজ দেখবেন,ছবির মতো সাজানো গোছানো এক প্রান্তর দেখবেন।দূরে পাহাড়ের চূড়ার সঙ্গে মেঘের মিতালী দেখার সুযোগ পাবেন না তবে শহুরে-একঘেয়ে-যান্ত্রিক জীবন থেকে ক্ষণিকের জন্যে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারবেন।নৈসগিক পরিবেশ মুহুতে ভুলিয়ে দেবে যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি।
আমার গ্রামটা সবুজ শ্যামল,ছায়া ঢাকা,পাখি ঢাকা,শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ।এখানে পথিকের হাঁটার ক্লান্তি দূর হতে পারে ঘাসের সবুজ গালিচার পরশে।যেন কল্পনার চিত্রগুলো রংতুলিতে ফুঁটিয়ে তোলা।এখানকার খোলামেলা জায়গায় বসে আকাশ কিংবা চাঁদ দেখা যায়,নিমল বাতাসে প্রাণ জুড়ানো যায়। কমক্লান্ত নগর জীবন এবং কোলাহল ছেড়ে বাড়ি যেয়ে রাতের বেলা চাঁদনী দেখা আর বাড়ির উঠানে বসে গল্প করার আনন্দদায়ক অনুভূতিটা অন্যরকম।
কমব্যাস্ত জীবনে বিনোদন জরুরী। আর তার জন্যে যে আকষণীয় কোন পযটনস্পটে যেতে হবে এমনটা জরুরী নয়।মনের খোরাক জোগাড় করতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের নিকট সবুজের সমারোহ মনোমুগ্ধকর হবে নি:সন্দেহে।সেক্ষেত্রে সবুজ প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে গ্রামের সবুজে ঘেরা জায়গা নানাদিক থেকে আকষনীয়।
আমার শৈশব কেটেছে টাংগাইলের সখিপুর থানার হাতীবান্দা গ্রামে।রাতে জমজমাট পুথি পড়ার আসর বসত।যা ছিল অনেক বেশি আনন্দময় ও উত্তেজনাপূণ। তখনকার দিনে মুখে ক্লান্তির কোন ছাপ ছিলনা,কোন পিছুটান ছিল না। বষাকালে পানির ধারে বসে ক্ষণিকের জন্যে মুগ্ধ হওয়া কি ভুলা যায়? মনের ক্ষুদ্রতা দূর করে নিজেকে প্রকৃতির বিশালতার মাঝে কত হারায়ে ফেলেছি কামালিয়া চালায়।তখন মনের যেমনটি ইচ্ছে করা যেত,একটি সাজানো গুছানো জীবন ছিল।
আমার কাছে গজারি গাছের ছাউনিতে ঢাকা কালো পিচ ঢালা পথ খুব ভাল লাগে।গাড়িতে বসে বাহিরে দেখি। চারদিকে সবুজ ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনা।নীরবতায় আচ্ছাদিত স্থানটির পরিবেশ দেয় অনাবিল আনন্দ। শুধু আমি কেন-সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে কে না চায়? সবসময় মানুষের সমাগম,কোলাহল ভাল লাগে না। প্রকৃতির কাছে নিরবে নিজনে সময় কাটাতে পারার মজাটা আলাদা।
ছোটবেলায় বালিয়াটায় নানুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম।মৃদু ঢেউয়ে ভেসে চলতো নৌকা।নগর জীবনে আমরা বিভিন্ন দশনীয় ও মনোরম স্থানে শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য পোজ দেয়।অথচ আমাদের শৈশবটা ছিল যেন কল্পনার বাস্তব রুপায়ন।গ্রামীণ নয়ন জুড়ানো আর মন ভুলানো দৃশ্য ও মানুষের হৃদ্যতা-সরলতা-আন্তরিকতা প্রমাণ করে এটি বেড়ানোর উপযুক্ত জায়গা।দেশের মাটি ও মানুষকে জানতে-বুঝতে হলে গ্রামের কাছে যেতে হবে।
গ্রামের হাটগুলো ছিল জমজমাট।আজও মন যতটা না হারিয়ে যেতে চায় দূর পাহাড় বা সাগরের কাছে তার চেয়েও বেশি হারিয়ে যেতে চায় আমার স্মৃতিমাখা গ্রামের কাছে। ভ্রমণ পিপাসুদের মন জয় করে নিতে পারে চারদিকে ঘন সবুজে বেষ্টিত আমার গ্রাম। যেন সুন্দরের এক উজ্জল উপমা। শখের বশে তৈরি সে বাহারি ফুলের বাগান আজ আর নেই। শহরে প্রাকৃতিক সৌন্দযের সাথে শৈল্পিক ছোঁয়ার যে রুপ দেখা যায় গ্রামে তা ভিন্ন প্রকৃতির। ছায়াঘেরা অপরুপ পরিবেশ আর সমতল ধান ক্ষেত সুন্দর সুউচ্চ পাহাড়ের সৌন্দযের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় স্থান আমার গ্রাম।ভ্রমণপিপাসুদের মন জয় কতটুকু করতে পারবে জানিনা,তবে এখানকার নৈসগিক পরিবেশ ভুলিয়ে দেয় আমার যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি।আব্বু আম্মুর সাথে কাটানো ছুটির দিনগুলো এবয়সেও হয় আনন্দময় ও উত্তেজনাপূণ।এটা ঠিক যে, অবসর পেলে অনেকে তার ছোট্ট গাঁয়ে ছুটে যাবে না কিন্তু আমি প্রকৃতি ভালবাসি আমার জন্যে এটা স্বগরাজ্য।
নদীর তীর ঘেষে হাটতে থাকা,পুকুরে মাছ ধরা,দুরন্ত কচিকাচাদের সাঁতার কাটা,অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দযমন্ডিত গ্রামীণ পরিবেশের সুনিবিড় ছোঁয়ার অনুভূতি সত্যি খুব চমৎকার।শহরে পাকগুলোতে শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্যে রাখা বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী আছে,যেখানে ভুলে যায় সবাই বয়সের ব্যবধান,বৃদ্ধ কিশোর এক হয়ে যায়।
নিরিবিলি পরিবেশে অবকাশ যাপনের অনেক উপযুক্ত জায়গা আছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ের গা বেয়ে আকাঁবাকাঁ একটি সিঁড়ি উঠে গেছে একেবারে চূড়ায়,বান্দরবনে আকাশ ছোঁয়া সব পাহাড় যেন ছবির মতো, কক্সবাজারে বিনোদনের জন্যে যা দরকার সবই পায় বিনোদন প্রেমীরা। আমি সেসবের কথা না বলে বলছি আমার গ্রামের কথা যেখানে পশুপাখি দেখা যাবে কাছ থেকে,গাছের সারি যেন ছায়া ঢাকা এক স্বপ্নপূরী তৈরি করেছে। লেখা পড়ে বিশ্বাস না হলে বেড়াতে আসুন আমার গ্রামে দেখবেন আমি কতটা সত্য বলেছি।
©somewhere in net ltd.