নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ: সংকটে জীবন ও জীবিকা

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৩

চরম রাজনৈতিক অস্থিরতায় তৈরি বৈরী পারিপার্শ্বিকতায় অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে দেশের মানুষ। ঈদে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।অনেককে দেখেছি দেশের বতমান সংকটময় পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে।আমার পিতা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।আলাপ করে যেটা বুঝলাম সময়টা খুব ভাল যাচ্ছেনা।আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভাল না থাকলে উদ্যোক্তাদের অতিরিক্ত ঝুঁকি বাড়ে।যদি আইন শৃঙ্থলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার সংকট তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তবে সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য শ্লথ কিংবা অচল হয়ে পড়বে।শুধু ব্যবসায়ীরা কেন বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন সব শ্রেণী পেশার মানুষই।চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলের আপোসহীন মনোভাব ও বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে বাড়ছে উৎকণ্ঠা; যা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ করে ফেলেছে শান্তিপ্রিয় দেশবাসীকে।



দেশের সচেতন মানুষ ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কখনই সমথন করেনা। শান্তিপূর্ণভাবে জীবন পরিচালনা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করতে হলে শান্তিপূর্ণ উপায়েই চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন হওয়া দরকার। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে গণতান্ত্রিক সরকারের ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। সহিংস কর্মসূচির ফলে বাড়ে চরম হতাশা, স্থবির হয়ে পড়ে উৎপাদন, বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান যাতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।সংঘাত ও সংঘর্ষের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে দেশ যে ক্রমান্বয়ে বিপর্যয়ের দিকেই যাচ্ছে-ভাবতেই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠি।এটা ঠিক যে, জনসাধারণকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি করে নেতারাও স্বস্তিতে থাকতে পারবে না।



সংঘাতময় রাজনীতির আশংকায় অর্থনীতি হয়ে পড়েছে স্থবির,বিনিয়োগ হচ্ছে বাধাগ্রস্ত, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব,শিল্পোৎপাদন হচ্ছে ব্যাহত,রফতানি খাতে ঘটছে বিপর্যয়,ব্যাংকিং ব্যবসাতে হচ্ছে নৈরাজ্যের সৃষ্টি, বীমা ব্যবসাতে ধস নামছে,শেয়ার বাজারেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি হবে নিম্নমুখী,নেতিবাচক প্রভাবে দেশের কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের মাটি ও মানুষের স্বাথে একসঙ্গে বসে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে বের করতে হবে।



আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ।অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, গোটা অর্থনীতিকে গভীর সংকটে ফেলে কোনোদিনই জনগণের ভোগান্তি ও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির লাগামকে টেনে ধরা যাবে না। হরতাল-অবরোধ-ভাঙ্চুর কখনই প্রতিবাদের একমাত্র যৌক্তিক ভাষা হতে পারে না। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাব মতে, একদিনের হরতালে তাদের ক্ষতি হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বিজিএমইএর মতে, তাদের একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ১৮০ কোটি টাকা। অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জিডিপিতে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার অবদান দৈনিক ৩০৮ কোটি টাকা, আর স্থলপথে পরিবহনের অবদান ১৩৪ কোটি টাকা। হরতালে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষাখাতের সব কর্মকাণ্ড যার আর্থিক মূল্য প্রতিদিন ৬০ কোটি টাকা। যদিও প্রশ্ন থেকে যায় বাংলাদেশের রাজনীতিবীদদের যে মন মানসিকতা, রাজনৈতিক দলগুলোর যে দৃষ্টিভঙ্গী তাতে দাবি আদায়ের জন্য হরতালের বিকল্প কোন কমসূচি আছে কি? ২০০৬ সালে ১৪৫ দিন হরতাল দেয়া হয়েছিল। তারপর জিডিপি ছিল ৬ দশমিক ৭ ভাগ। এটাও ঠিক শুধু হরতালের কারণে নয়- অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণেও।



আমি এটাও বলছিনা যে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাই অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়ার একমাত্র কারণ। তবে এটা জোর দিয়েই বলতে পারি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশকে গতিহীন করে দিলে এর দায়ভার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বাসরোধ করে কেউ দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব রাজনৈতিক দল আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা খুঁজে বের করে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখাবে এটাই দেশের মানুষ আশা করে।



একদিকে রাজনৈতিক সংঘাত, আরেকদিকে বাজারে সবকিছুর অগ্নিমূল্য-স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোকে চরম হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জীবন নিবাহের ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)এর এক জরিপ থেকে জানা গেছে, রাজধানীর এক কোটি ২৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৮৩শতাংশ বাড়া বাড়িতে থাকে।১৯৯১ সাল থেকে গত ২০ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৩২৫ শতাংশ। সাধারণ মানুষের আয়ের ৬০শতাংশ অথ ব্যয় হয় বাড়িভাড়ার পেছনে। বাড়িভাড়া আইন থাকলেও বাস্তবে প্রয়োগ না থাকায় বাড়ির মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির একতরফা সিদ্ধান্তে ভাড়াটিয়াদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অথচ অনেক দেশে ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার সুযোগ করে দেয় সরকার। মালয়েশিয়া এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ বাংলাদেশে এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ কোনও চাকরিজীবী সারা জীবনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করতে পারেন না।



একদিকে বিরোধী দলীয় নেতাদের জেলে রাখা, অন্যদিকে আলোচনার কথা বলা অথহীন। দেশে যদি সাংবিধানিক অধিকার ফিরে না আসে, রাজনীতিবিদরাই যদি ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে ফেলে তবেতো তা ভয়াবহ সমস্যারই কারণ হবে। সঙ্কট সমাধানে সাংবিধানিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি রাজনীতিবিদদের মানসিকতার পরিবর্তন খুব বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। হিংসা বিদ্বেষ ও মিথ্যাচারের যে চচা রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে এমন অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। দেশে আজ তিন কোটি লোক বেকার।দেশের বিদ্যমান অবস্থায় অর্থনীতির বিকাশ সম্ভব নয়। একটি বিশেষ চেতনার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে দেশে বিভাজন বাড়ানো হচ্ছে।এটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য চলমান সংঘাত গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। দেশের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।



কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিনিয়োগ না থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। আর এ অলস টাকা বৃদ্ধির ফলে একদিকে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের পরিচালনার ব্যয়, অন্যদিকে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যাংকগুলোর মুনাফায়। এছাড়া দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে যে রফতানি খাত, সেখানেও দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রভাব। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ ধীরে ধীরে কমে আসছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জিএসপি সুবিধাও বাতিল হয়েছে। এমনকি শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্যও কোনো সুখবর মিলছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, যা কাটিয়ে উঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ জন্য পিছিয়ে যাওয়া আর পেছনে টানার এই সংস্কৃতি থেকে রাজনীতিবীদদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা দেশকে রক্ষা করবে, জাতিকে রক্ষা করবে, ব্যবসায়ীদের শান্তিতে ব্যবসা করতে দেবে। দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা দেশপ্রেমিক জনগণ কখনই বরদাশত করবেনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.