নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় শিক্ষককে। শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের মতো। বাবা-মা যেমন সন্তানদের তাদের ভালোবাসা-স্নেহ-মমতা দিয়ে বড় করেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকেরা শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। এর সাথে থাকে স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা। তাঁদের শিক্ষার আলো যেমনি শিক্ষার্থীদের সামনের পথ চলাকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। শিক্ষকদের অতি উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, মানব জাতির সবচেয়ে বড় শিক্ষক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)ও শিক্ষক হিসেবে গর্ব অনুভব করতেন। তিনি তাঁর অন্যতম দোয়ায় বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি শিক্ষকদেরকে ক্ষমা করুন, তাদেরকে দান করুন দীর্ঘ জীবন।’
শিক্ষকের গুরুত্ব
মানুষকে আলোকিত করেনঃ শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষা প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে এগিয়ে নেয়ায় অনুপ্রেরণাদানকারী ব্যক্তি। জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের প্রক্রিয়ায় শিক্ষকের অংশগ্রহণ মানুষকে আলোকিত হতে সাহায্য করে। কোনো বিষয় চর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষক ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করে এবং ঐ জ্ঞানের জ্যোতির দ্বারা নিজে আলোকিত হতে ও সমাজকে জ্যোর্তিময় করতে সহায়তা করে। শিক্ষকের ইতিবাচক ভূমিকার কারণেই শিক্ষার্থীর মন-মনন, মানসিক উৎকর্ষ সাধন হয়, আচার আচরণ, মন ও আত্মার ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন ঘটে, মেজাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রভাব ফেলে।
সুশীল সমাজ তৈরি করেনঃ শিক্ষক সভ্যতার অভিভাবক, সমাজের অভিভাবক। কার্যত শিক্ষক বলতে একজন আলোকিত, জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিদীপ্ত পন্ডিত ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি সভ্যতার বিবর্তনের অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষা দিতে-নিতে নিবেদিতপ্রাণ সেবক, ব্যবসায়ী নন। তিনি তাঁর আচার-আচরণ, মন ও মননে নিজেই বটবৃক্ষের ছায়া। তাঁর সাফল্যের ভিত্তি হল পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, নির্মল চারিত্রিক গুণাবলি, জ্ঞান সঞ্চারণে আন্তরিক সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা। তাই শিক্ষক বলতে এমন এক অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ববান জ্ঞানী, গুণী ও পন্ডিত ব্যক্তিকে বোঝায়; যিনি শিক্ষার্থীকে শিখন প্রক্রিয়ায়, জ্ঞান অন্বেষণ ও আহরণে, মেধা বিকাশ ও উন্নয়নে, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনে, নৈতিক ও মানসিক গুণাবলি অর্জনে এবং সমাজ বিবর্তনে অনুঘটক ও সুশীল সমাজ তৈরির সহায়তা দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চূড়ান্ত কল্যাণের পথে পরিচালিত করেনঃ আদর্শ শিক্ষক মানুষকে চূড়ান্ত কল্যাণের পথে পরিচালিত করেন। সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে এসব শিক্ষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। শিক্ষককে কাছ থেকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে আলোকিত অঙ্গনে প্রবেশ করে। শিক্ষকই একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞানবৃক্ষকে তৈরি ও সমৃদ্ধ করে। এ কারণে একজন শিক্ষকের উচিত ছাত্রদেরকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সে অনুপাতে কাজ করা।
সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠন করেনঃ মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষকই পারেন একটি সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠন করতে। শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব, আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একজন শিক্ষার্থীর উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দিলেও শিক্ষকই তাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। একজন শিক্ষকই পারেন শিশুর সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে জাতির উন্নয়নে নিযুক্ত করতে। তার চিন্তা-চেতনা ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন একজন শিক্ষক। সন্তানের কাছে তার পিতা-মাতা যেমন আদর্শ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তেমনি একজন শিক্ষকও তার ব্যক্তিত্ব, আদর্শ ও কর্মের গুণে শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ ও অনুকরণীয় হয়ে ওঠেন।
মানুষের প্রতিভার বিকাশ ঘটানঃ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষের প্রতিভার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন শিক্ষক। আর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেন বলেই শিক্ষকেরা সবার কাছে সম্মানীত।
মহৎ পেশা, বৃহৎ সেবাঃ নিঃসন্দেহে শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে অন্য সকল পেশার জননী বলা হয়। সেটি শিক্ষার যেকোনো স্তরেই হোক না কেন। হতে পারে সেটি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিখন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে শিক্ষকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
চলবে
©somewhere in net ltd.