![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীলা আজ এমন একটা কাজ করবে অর্ক ভাবেনি। প্রস্তুতও ছিল না এজন্য।
অবশ্য থাকার কথাও না। অর্ক জানে নীলা একটা পাগলি। মাথায় হুটহাট যা আসবে তাই করবে। কিছুতেই তাকে রোখা যায় না।
সেই যে সেবার মধ্যরাতে দু’টো কি তিনটা হবে; হঠাৎ নীলার ফোন।
: কি করিস অর্ক?
: কাবাডি খেলি! রাতে মানুষ কি করে?
: স্বপ্ন দেখে।
: তো দেখ না। আমার স্বপ্নের তেরটা বাজাস কেন?
: কারণ, একটু আগে স্বপ্নে দেখলাম তোকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরছি।
: আর কোন স্বপ্ন পেলি না!
: অর্ক…
: কি?
: চলে আয়।
: চলে আয় মানে!
: মানে, চলে আয় বাসার সামনে। তোকে নিয়ে রিক্সায় ঘুরব।
: মাথা খারাপ নাকি? এত রাতে!
: তুই আসবি? নাকি আমাকেই আসতে হবে?
অর্কর জানা আছে পাগলিটাকে কিছুতেই বোঝানো সম্ভব না। একবার যেটা মাথায় ঢুকবে সেটা করেই ছাড়বে। তবু প্রায় আধঘন্টাখানেক বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর অর্ককে যেতেই হয়েছিল নীলার বাড়ির সামনে। তবে অত রাতে রিক্সা না পাওয়ায় শেষ রাত অব্দি অনেক হেঁটেছিল ওরা। পাশাপাশি…
আজকের পাগলামিটা অবশ্য সেটাকেও হার মানায়।
পাগলিটা হঠাৎ করেই বলে কিনা, অর্ক চলে আয়। কই আসতে হবে? কাজী অফিস! আজ এক্ষুণি বিয়ে!
অর্ক সম্পূর্ণ হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর ওই ঘোর লাগা অবস্হাতেই চকবাজারস্হ কাজী অফিস।
নীলা আগেই দাঁড়িয়ে আছে। পরনে একটা নীলশাড়ি আর কপালে একটা মাঝারি সাইজের নীলটিপ। এই সাজে ওকে পরী পরী লাগছে। ওর সাথে একটা লাগেজ। অর্ক এখনও বুঝতে পারছে না কি করা উচিত।
: এই গাধা, এত দেরী! চল।
: যাব মানে?
: ভেতরে চল।
: ভেতরে কি হবে?
: তুই কি বাচ্চা নাকি! ফিডার খাস? জানিস না কি হবে?
: কিন্তু কেন?
: বাবা ছেলে দেখছে। আমার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব না।
: ছেলে দেখছে তো সমস্যা কি? বিয়ে করবি না?
: করার জন্যেই তো এসেছি।
: মানে!
: মানে, আজ তোর বিয়ে। আয় আর কথা বাড়াস না।
: নীলা!...
: কি বলার পরে বলিস। এখন চল।
: না, এখন শোন। তোর সমস্যা কি? সবকিছুই কি স্বপ্ন মনে করিস? যে ঘুমের ঘোরে দেখলাম আর যা ইচ্ছা হল, তাই করলাম?
নীলা যেন হঠাৎই হোঁচট খেয়ে থমকে গেল।
: মানে! তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
: কি বলিস এসব নীলা! পাগল হয়েছিস?
: এভাবে বলিস না অর্ক। এটা মজার সময় নয়।
অর্ক চোখ তুলে চায় নীলার চোখে। ওর চোখের কালো তারা ঘিরে জল টলমল করছে। অর্ক আগে খেয়াল করেনি নীলা আজ চোখে নীল কাজলের আঁক টেনেছে। ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছে নীল আকাশের বুক চুইয়ে এই বুঝি ঝরে পড়ল জমাট বাঁধা শ্রাবণঢল। তবু আজ অর্কের শক্ত না হলে চলবে না।
: শোন নীলা, তুই সবসময়ই আমার সব’চে ভাল বন্ধু।
তুই আমার রঙিন জীবনের হাজারটা মধুর স্মৃতি। তোর সাথে কাটানো প্রতিটা সময় আমার কাছে এক একটা কবিতার মত। এই পৃথিবীতে যতটা আমি তোকে জানি-বুঝি, আর কাউকেই ততটা নয়। তোর সাথে আমার প্রথম বৃষ্টিভেজা দুপুর হুডখোলা রিক্সায়। তোর সাথে আমার সারা বিকেলের পাগলামি।
এ সবই ঠিক। কিন্তু, এর মানেই তো বিয়ে নয়, ভালোবাসা নয়। আমি তোকে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু বলে জানি।
প্লীজ আমার বন্ধুটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিস না।
: অর্ক, আমি তোকে ভালবাসি…
: নীলা, প্লীইইইজ…
আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করে অর্ক্। একবার আলতো ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, নীলা সেখানটাতেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ক চলে আসে দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে।
জানতেও পারেনা তার ফেলে আসা পথে একটা বিশাল ভিড় জমে উঠছে।
কাজী অফিস থেকে বেরিয়েই তিন্নি সজলের দিকে তাকিয়ে হাসে। তারপর দুজনেই সামনে এগোয়।
রাস্তার ডানপাশে উষ্কখুস্ক চুল দাঁড়িওয়ালা একজন লোক দাঁড়িয়ে সামনের রাজপথের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিন্নি সজলকে ডেকে বলে, ফকিরটাকে কিছু টাকা দাও, আজ একটা শুভদিন।
সজল ফকিরের দিকে পা বাড়াতেই পাশের একজন দোকানদার বাঁধা দেয়; ভাইজান উনি ফকির না। পাঁচ বছর আগে একটা মেয়ে ওই বড় রাস্তায় গাড়ির নিচে ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছিল। ঘন্টাখানিক পর ছেলেটা দৌড়ে এল।
সেই যে এল তো এলই। তখন থেকেই খালি রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মাঝেমধ্যে আনমনে কাঁদে।
আর রাত গভীর হলে একাকি বহুদূর হাঁটে। আর মাঝেমধ্যে চিৎকার করে ডাকে, নীলা…. নীলা……
।।সা।ত।কা।হ।ন।।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৭
অংকনের সাতকাহন বলেছেন: ধন্যবাদ :-)
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫
শূন্য পথিক বলেছেন: ভালো লাগা।।