![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহামান্য ডারউইন সাহেব বোধহয় বিবর্তনবাদ নিয়ে গবেষণার সময় বিবর্তনের সবচেয়ে কার্যকরী কারণটাই ভুলে গেছেন। তবে তিনি যদি ইদানিংকালে এই তত্ত্ব নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন তাহলে তার বিবর্তনবাদ তত্ত্বেও নির্ঘাত বড়সড় রকমের পরিবর্তন আসতো।
আজকালকার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বিবর্তনের একটাই কারণ উঠে আসে তা হল “প্রয়োজন”। যত বিবর্তন আর যত রকম পরিবর্তন পরিবর্ধন সব এই প্রয়োজনের তাগিদেই। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রয়োজনের চিপায় পড়ে মানুষ পালটেছে, আর সাথে পালটেছে তাদের পারিপার্শ্বিক সবটাই। মানুষ কাঁচা মাংস খাওয়া ছেড়ে ওয়েস্টার্ন ডিশের প্রিপারেশন শিখেছে, আকার ইঙ্গিতের ভাষা ছেড়ে বাংলিশ, হিংলিশ প্রভৃতি রিমিক্স ভাষা শিখেছে, পাতা ছেড়ে কাপড় ধরেছে, আবার কাপড় ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে সম্ভবত টিস্যু কিংবা নিদেনপক্ষে র্যাপিং পেপারের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। পশুপাখিও পালটেছে। ব্যাঙ যতটা চতুর হয়েছে, সাপ পালটে হয়েছে ততটাই ক্ষিপ্র। ইঁদুর যতটা ছটফটে হয়েছে, বাজ পালটে হয়েছে ততটাই নৃশংস। হরিণ যতটা সতর্ক হয়েছে, বাঘ ততটাই বাড়িয়েছে নিজের গতি। সে যাই হোক, পশুপাখি আর প্রাগৈতিহাসিক কালের ভাবনা ছেড়ে না হয় বর্তমানেই পা রাখি।
মানুষ প্রয়োজনের ব্যাপক স্রোতে পালটাচ্ছে এখনও। পালটাচ্ছে সবই তারি- বাড়ি, গাড়ি, জমিদারী এমনকি নারীও!!
প্রয়োজনের তাগিদে বাড়িগুলো আকৃতি পালটায় প্রতিনিয়ত। যার বাড়ি বড়, তারটা খালি আরও বড় হতেই থাকে। আর যার বাড়ি এমনিতেই ছোট তারটা ক্রমাগত আরো ছোট হতে হতে ঝুপড়িতে গিয়ে ঠেকে। প্রেয়সীর আবদারের ঠেলায় পালটায় গাড়িও। বাইসাইকেল থেকে মোটর সাইকেল, মোটর সাইকেল থেকে চারচাকা করলা, তারপর প্রয়োজনের তাগিদে বিএমডব্লিউ, তবু প্রয়োজনের শেষ নেই। তারপরও যে নারী প্রয়োজনের স্রোতে বাঁধ দিয়ে অপরিবর্তিত থাকবে, তারও যো নেই। কারণ, কখন প্রয়োজনের নদীটা বাঁধ ভেঙ্গে সাগর হয়ে মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে তা নারী নিজেও জানেনা। তাই অবধারিতভাবে ভারি মানিব্যাগওয়ালার হাত ধরে নিজে বিবর্তিত হয়ে পুরুষকেও সেই সাথে বিবর্তিত করে পরিণত করে দেবদাসে।
রাজনৈতিক অঙ্গন এই বিবর্তনের খেলায় আরও এককাঠি সরেস। এগুলো শুধু বছরে বছরে নয়, মাসে মাসে, দিনে দিনে এমনকি প্রতি ঘন্টায়ও বিবর্তিত হয় কখনো কখনো। বিবর্তনের ধারায় পালটায় আন্দোলনের সিস্টেম। পালটায় মিছিল মিটিং মানববন্ধনের যাবতীয় ধারা। আগে মিছিলে থাকত ব্যানার, মানুষ আর স্লোগান। আর এখন সাথে থাকে লাঠি, ইট, গান পাউডার, ককটেল আর হাতবোমা। পালটেছে নেতাদের হাবভাব, চালচলন, ধরণ ধারণ, সত্য মিথ্যার খিচুড়ি বচন। বিবর্তনের ঠেকায় পড়ে যে আজ লীগার সে কাল জাতীয়তাবাদী দলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুরে গালি দিবে নিঃসংকোচে, আর যে আজ বিরোধী দলে সেও কাল লীগারদের সাথে গলা মিলিয়ে মেজর জিয়ার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে ছাড়বে না।
বিবর্তনের স্রোতধারায় সবই সম্ভব- সাদা কালোকে ফিক্স করা সম্ভব, সত্য মিথ্যার রিমিক্স করা সম্ভব; নারীর প্রেমে সাঁতরানো সম্ভব, বিরহব্যথায় কাতরানো সম্ভব; মানবতাকে বেচা সম্ভব, আপন ভাইকেও খেঁচা সম্ভব; ধর্মের আড়ালে ভন্ডামি সম্ভব, কর্মের আদলে গুন্ডামি সম্ভব; টাকার নেশায় মাতাল হওয়া সম্ভব, ক্ষমতার আশায় বেতাল হওয়া সম্ভব; ঘুষের টাকায় ওড়া সম্ভব, ক্ষুধার জ্বালায় পোড়া সম্ভব; মদের গ্লাসে চিয়ার্স সম্ভব, লোয়ার ক্লাসে টিয়ার্স সম্ভব; চোরের মুখেও দর্শন সম্ভব, নবজাতিকার ধর্ষণ সম্ভব ।।
এমনই আরও কত সম্ভব অসম্ভবের তালিকা প্রয়োজনের বিলাসে এই বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় যুক্ত হবে তা ভাবতে গেলে হয়তো ডারউইনও আজ বিবর্তনকে অস্বীকার করে কেঁদে কেঁটে বলতেন-
“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর” ।।
।।সা।ত।কা।হ।ন।।
ফেসবুক প্রোফাইল
©somewhere in net ltd.