![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম পর্ব
দুই
পুলিশের কাছে না গিয়ে আপনি বার বার আমাদের কাছে কেন আসছেন? এর আগেও আপনি কয়েকবার রিপোর্টারদের সাথে কথা বলেছেন।
এতো রিপোর্টের পরেওতো কোনো কাজ হলো না।
রিপোর্টে যে সবসময় কাজ হয়, বিষয়টা এমন নয়। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, বিশেষত অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকার রিপোর্ট খুব বড় ভূমিকা রাখে না। পুলিশ অপরাধীদের ধরে তাদের নিজস্ব নিয়মের মধ্যে থেকে। তার পরও পত্রিকার পলিসি অনুযায়ী এ ঘটনাটির বেশ কয়েকটি ফলোআপ রিপোর্ট করেছি আমরা। নতুন কোনো ডেভেলপমেন্ট থাকলে আবারও রিপোর্ট হবে, সেজন্য আপনাকে কষ্ট করে বার বার আসতে হবে না।
রিপোর্টে কী হবে? আমি চাই আমার মেয়ের খুনীরা ধরা পড়ুক। আমি জানতে চাই, কী দোষ করেছিলো আমার মেয়ে, কেন তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হলো?
চোর ডাকাত খুনীদের ধরাতো আমাদের কাজ না। সেজন্য থানাপুলিশ আছে।
কেউ কিছু করতে পারলে আপনারাই পারবেন। পুলিশ আমার কথা শুনছে না। এতোদিন পার হয়ে গেল, কাউকেই ধরতে পারেনি। এখন তারা আর গা করছে না। থানায় গেলেই শুধু বলে, আপনার আর কষ্ট করে আসার দরকার নেই। কোনো খবর থাকলে আমরাই জানাবো। তারা আর এই মামলাটি নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না।
সাংবাদিকদের ক্ষমতা আসলে খুবই সামান্য। কোনো একটা ঘটনা ঘটলে, তার পর সেটা নিয়ে রিপোর্ট করাই আমাদের কাজ। খুনি অপরাধীদের ধরার ক্ষমতা বা সাধ্য কোনোটাই আমাদের নেই। সেটা আমাদের কাজও নয়। আর পুলিশইবা আমাদের কথা শুনবে কেন? আপনি শিক্ষিত মানুষ, আশা করি ব্যপারটা বুঝতে পেরেছেন।
তাহলে কি আমার মেয়ের খুনিরা ধরা পড়বে না?
আপনার সাথে যা ঘটেছে, তা খুবই দু:খজনক। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করেন, আমার পক্ষে পত্রিকায় রিপোর্ট করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তার পরেও আপনি যখন বলছেন, আমি থানায় একবার খোঁজ নেবো। এই মামলাটির দায়িত্ব যার উপর, তার নাম আর ফোন নম্বরটা আমাকে দিতে পারেন?
আমার মোবাইলেই সেভ করা আছে। এই যে, মিজানুর রহমান, এসআই। আর এইটা তার ফোন নম্বর।
লালবাগ থানার এসআই মিজানকে আমি চিনি, আমার কাছে তার ফোন নম্বর আছে। আচ্ছা, ঘটনাটিতো প্রায় এক বছর আগের, তাই না?
দশ মাস। গত বছর এপ্রিলের ৮ তারিখ।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলা আপনার জন্য কষ্টের, তার পরও একটু ডিটেইলে বলতে পারেন? ঘটনাটি যখন ঘটে, আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। পত্রিকায় দেখেছি। যতটুকু ছাপা হয়েছে তার বাইরে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই।
না না, খারাপ লাগবে কেন? পুলিশের কাছে এ পর্যন্ত একশবার সবকিছু বর্ননা করতে হয়েছে। বারবার বলতে বলতে আমার পুরোটা মুখস্ত হয়ে গেছে। এখন আর মন খারাপ হয় না। অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি...
সেদিন ছিলো শুক্রবার। সায়েরা বললো, মা একটু বাইরে যাচ্ছি। কি একটা ছুটির কারণে তখন ইউনিভার্সিটি বন্ধ। আমি তাই বললাম, ইউনিভার্সিটিতো বন্ধ, কোথায় যাচ্ছিস? গাউসিয়া মার্কেটে যাবে বলে জানায় সায়েরা। আমি আর গা করিনি। আসলে কয়েকদিন ধরে মেয়ের সাথে মন কষাকষি চলছিলো, দুজনের মধ্যে কথা বন্ধ। তাই আমি আগ বাড়িয়ে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করিনি। কী কাজ, কখন শেষ হবে, ফিরবে কখন- এসব কিছুই জানতে চাইনি। সন্ধ্যার পর থেকেই মেয়েটার জন্য চিন্তা হচ্ছিলো। মাঝে মাঝে কোনো দাওয়াত বা অনুষ্ঠান থাকলে রাত হতো, কিন্তু এমনিতে অন্য কোনো কাজে বাইরে গেলে বা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরতে খুব বেশি দেরি হতো না। যাই হোক, রাত ৮টার পর থেকে তার মোবাইলে ফোন করার চেষ্টা করতে থাকি। বন্ধ পাই। এভাবেই রাত প্রায় এগারোটা বেজে যায়। ততোক্ষণে আমার কাছে যেসব বন্ধুর নম্বর আছে সবাইকে ফোন করি, কেউ কিছু বলতে পারে না। মেয়েটা গেল কোথায়, এতো দেরি হচ্ছে কেন? অমঙ্গল শঙ্কায় বুক কেঁপে উঠে, চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠি। সাড়ে এগারোটার দিকে কেউ একজন আমাকে ফোন করে। আমি ছুটে যাই ঢাকা মেডিকেলে। ততোক্ষণে সায়েরাকে মর্গে নেয়া হয়েছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছে পুলিশ আর তার বন্ধুরা। সেই সময়ের ঘটনা খুটিনাটি বর্ননা করতে পারবো না, আমার আর কিছু মনে নেই।
বাকিটুকু আমার জানা আছে। সায়েরার মৃতদেহ উদ্ধার হয় পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গার পার থেকে। শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়….আপনার মেয়ে সম্পর্কে বলুন।
স্বামী মারা যাওয়ার পর অনের কষ্টে ছেলে-মেয়ে দুটোকে মানুষ করেছি। ছেলেটা বড়, খুব ভালো ছাত্র ছিলো। জানেন, আমার ছেলেটা এতো লক্ষী, সে বুঝতো, বাবা নেই তাই তাকে কষ্ট করে মানুষ হতে হবে। কখনো কোনো কিছুর জন্য আব্দার করেনি, পাছে মায়ের কষ্ট হয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিক্সে মাস্টার্স করে রুপু আমেরিকা গেল পিএইচডি করতে। এখন সেখানেই শিক্ষকতা করছে। আমার ছেলে এখন ড. রুপঙ্কর হক। তার পাঁচ বছরের ছোট মেয়েটা। স্বাভাবে ভাইয়ের ঠিক উল্টো। সারাদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হই-হুল্লোড়। লেখাপড়ায় মাথা থাকলেও মন ছিলো অন্যদিকে। সাজগোজ, আর বন্ধুবান্ধব। আমি বলেছিলাম, পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারলে লেখাপড়া বন্ধ। প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নাই। মেয়ে আমার এই কথাটি ঠিকঠাক শুনেছে। এইচএসসির পর দরজা বন্ধ করে লেখাপড়া করেছে। আর সেজন্যই এখানে ভর্তি করাতে পেরেছিলাম…... মেয়েটা ছিলো আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। সবকিছু শেয়ার করতো আমার সাথে। আমিও যে কোনো কাজেই তার পরামর্শ নিতাম। আসলে আমাদের পৃথিবীটা ছিলো খুবই ছোট। ঢাকায় আমার তেমন আত্মীয়-স্বজন নেই। ছেলেটাও দেশের বাইরে। আমরা দুজন দুজনকে আশ্রয় করেই বেঁচেছিলাম।
আপনিতো ব্যাংকে চাকরি করেন? একটু কফি দিতে বলি?
হ্যাঁ, এই চাকরিটাই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আর মেয়ের বাবা মারা যাওয়ার আগে বাড্ডায় তিনতলা বাড়িটা করে গিয়েছিলো। নয়তো ছোট দুটি সন্তান নিয়ে এই শহরে টিকে থাকা..
কিছু মনে করবেন না, একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসছি। স্বামীর সঙ্গে আপনার বনিবনা কেমন ছিলো?
এই প্রসঙ্গ উঠছে কেন?
বলছি। যতোদূর জানতে পেরেছি, আপনি ছোট ছেলে-মেয়ে দুটিকে নিয়ে দোতলায় থাকতেন। আর আপনার স্বামী বাস করতেন তিনতলার দেড়খানা ফ্ল্যাটে। পরে অবশ্য তিনতলাটা আপনি সম্পূর্ণ করেছেন, আর এখনতো সেটা ভাড়া দেয়া আছে, তাই না?
এতোটা যখন জানতে পেরেছেন, এ কথাও নিশ্চই জানেন, আমার স্বামী ছিলেন পেশাদার চিত্রনাট্যকার। মূলত ঢাকাই বাণিজ্যিক ছবির চিত্রনাট্য এবং সংলাপ লিখতেন তিনি। তার লেখা ঢাকাই ছবির কিছু বাজার চলতি চটুল গানও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ফিল্মের ভাষায় যাকে হিট বলে। রাত নেই দিন নেই তার কাছে ফিল্ম পাড়ার লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকতো। তার উপর তিনি ছিলেন মদে আষক্ত। এসব কারণেই আমি চাইতাম ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে একটু দূরে থাকুন তিনি। আর তিনি নিজেও প্রাইেভসি চাইতেন। এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য খোঁজার কারণ নেই। তবে এ কথাও সত্যি, আর দশজন স্বামী-স্ত্রীর মতো সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক আমাদের ছিলো না। আমি আমার চাকরি, বাচ্চাদের স্কুল, লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত আর তিনি ডুবেছিলেন তার নিজের জগতে।
আমার স্বভাব হচ্ছে, কোনো একটা বিষয়ে খোঁজ নিলে আমি একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। সবসময় সব তথ্য যে দরকারি হয় তা নয়, আবার অনেক সময় অনেক অদরকারি তথ্যও পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। আপনার স্বামী মোজাম্মেল হক প্রধানের পেশা এবং কর্মকাণ্ড আমাকে যথেষ্ট কৌতুহলী করেছে। তার উপর যখন জানতে পারলাম আপনারা একই বাড়িতে থাকলেও আলাদা বাস করতেন, তখন ঘটনাটি আরো ইন্টারেস্টিং মনে হলো। শুধু আলাদা বাস করাই নয়, তার রান্নাবান্না সবকিছুই ছিলো আলাদা, ঠিকতো? আপনার স্বামী সম্পর্কে আরো একটু বিস্তারিত জানতে চাই। কবে থেকে আপনারা আলাদা বাস করতে শুরু করলেন?
ওই যে বললাম, দিন নেই, রাত নেই তার কাছে নানা কিসিমের লোকজন আসতো। বসতো নানা রকম আড্ডা। ছেলে মেয়েকে আমি এসব থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম। সেজন্যই এই ব্যবস্থা। সায়েরার জন্মের আগে থেকেই এই বন্দোবস্ত চালু হয়। তিনি ততোটা সংসারীও ছিলেন না। ছেলে মেয়েকে মানুষ করার জন্য কয়েকটা টাকা আমার হাতে তুলে দিয়েই মনে করতেন যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। ততোটা নাম-ডাক তার ছিলো না, কিন্তু পসার ছিলো। তার লেখা অনেক চিত্রনাট্য প্রযোজক বা পরিচালক নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য টাকাটা তিনি ঠিকই পেতেন। তা ছাড়া তার বেশিরভাগ চিত্রনাট্যই হিন্দী বা হলিউডের ছবি থেকে ধার করা। সেজন্য অনেক ক্ষেত্রে তিনি নিজের নামও ব্যবহার করতেন না।
তিনি মারা যান কিভাবে?
আগেই বলেছি, তিনি মদ্যপান করতেন। কোথাথেকে এসব জোগারযন্ত্র আসতো আমি জানিনা। তার অনেক লোক ছিলো নেশার জোগান দেয়ার। যাই হোক, এই মদই তাকে খেয়েছে। বিষাক্ত মদ পানে তার মৃত্যু হয়। একদিন সকালে ঠিকা ঝি এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অনেক ধাক্কাধাক্কিতেও দরজা না খোলায় পরে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে হয়। ততোক্ষণে সব শেষ । পরে পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে জানা যায় রাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
স্যরি...ঘটনাটি কতোদিন আগের?
সায়েরার বয়স তখন দুই মাস, প্রায় বাইশ বছর।
অনেকটা সময় নিলাম আপনার। তবে আবারও বলছি, কতোদূর কী করা যাবে সে ব্যপারে এখনই কিছু বলতে পারছি না। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ ঘটনার দেশ। প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে, আর আমরা আগের ঘটনাটি ভুলে যাই। ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ মনে রাখে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সাংবাদিকতার অবস্থা। ঠিক আছে, আপনার ফোন নম্বরতো থাকলোই। আমি যোগাযোগ করবো। আর কখনো আমাকে দরকার হলে মোবাইলে ফোন করবেন। অনেক সময় ফোন বন্ধ থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে অফিসে ফোন করে আমার নামে ম্যাসেজ রাখবেন। বলবেন তন্ময় চৌধুরী, ক্রাইম চিফ।
১৯ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:০৬
েগালাম িকবিরয়া বলেছেন: না ভাই, এটি একটি উপন্যাস। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব গল্প?