নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

আমি সত্যে অবিচল।

আনোয়ার আলী

যত অপ্রিয়ই হোক, সত্য বলতে আমি দ্বিধা করি না। আমি সদাই সত্যে অবিচল। অন্যের কাছে থেকে কিছু জানা আমার শখ।

আনোয়ার আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে গুপ্ত হত্যার অভিযোগ-

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬

গুপ্ত হত্যাকে আরবী ভাষায় বলা হয় ‘আল ইগতিয়াল’ যার ইংরেজী‘Assassination’। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, জিহাদ ও সামরিক কৌশল হিসাবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তাগিদে সাময়িকভাবে গুপ্ত হত্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। ইসলাম ও মুসলমানদেরকে কারো চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও দুষ্কৃতি থেকে রক্ষা করার নিমিত্তে এবং অন্য কেউ যেন ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করার দুঃসাহস না পায়তার জন্য দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিস্বরূপ অতর্কিতে আক্রমন কিংবা গুপ্ত হত্যা করার অনুমোদন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। ঐ সময় গুপ্ত হত্যা শুধুই কোন সামরিক কর্মকাণ্ড ছিল না; বরং গুপ্ত হত্যা ছিল যুগপৎ খুবই কার্যকরী একটি সামরিক কৌশল যা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবশ্য কোরআনে গুপ্ত হত্যার কোন নির্দেশ নেই। কেবল সীরাত এবং কতিপয় হাদিসে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
কাফেররা নব্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে জঘন্য সব ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। সংখ্যায় নগন্য এইসব মুসলমানেরা চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। সে কারনে জিহাদের কৌশল স্বরুপ শত্রুদের ঘাটিতে হামলা করা, গুপ্তচর বৃত্তি করা, অতর্কিতে গুপ্ত হামলা করে হত্যা করা এসবের বৈধতা ইসলামের প্রাথমিক যুগে খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। তখন তো আর আজকালকার মতো গুপ্তচর ড্রোনও ছিল না, ড্রোন হামলাও ছিল না। ছিল না ‘র বা মোসাদ-এর মত কোন গুপ্তচর বাহিনীও। ইসলামের চরমতম শত্রুরা সম্মূখ যোদ্ধা ছিলেন না। শত্রুরা সবাই ছিলেন কবি। আর এই কবিরাই সমাজের মানুষকে যুদ্ধে প্ররোচিত করতে সক্ষম ছিলেন। সে যুগে জাতি বিদ্বেষ কবিতার মাধ্যমেই ছড়ানো হতো। যা ছিল সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এই সব কবিরা কাউকে হত্যা করেননি। কিন্তু তার চাইতেও ভয়ঙ্কর কাজে লিপ্ত ছিলেন। হিটলারের একজন সাংবাদিকের নাম ছিল জুলিয়াস ষ্ট্রেচার। তিনি কাউকে হত্যায় জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তিনি তার লেখনির মাধ্যমে জাতি-বিদ্বেষ ছড়াতেন। আর সেকারনে আধুনিক কালের নুরেনবার্গ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। রুয়ান্ডা গণহত্যার বিচারে হাসান হিজে নামীয় আরেক সাংবাদিককে ৩৫ বছরের জেল দেয়া হয়েছিল, যিনি বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যতীত আর কোন অপরাধে লিপ্ত ছিলেন না। প্রাচীন আরবের যেসব কবিকে হত্যা করা হয়েছিল তারা বৈরী কাব্যিক প্রচারনার মাধ্যমে বিপর্যয় সৃষ্টির মাধ্যমে ইসলামকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন।
কোরআনে আল্লাহ বলেন-যে তোমাদের উপর বাড়াবাড়ি করেছে তোমরাও তার উপর ঠিক ততোখানি বাড়াবাড়ি করবে যতোখানি তারা তোমাদের উপর করেছে।(সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৯৪)
আর তোমরা যদি তোমাদের শত্রুদেরকে শাস্তি দাও তাহলে ঠিক সেইভাবে তাদেরকে শাস্তি দিবে যেভাবে তারা তোমাদের উপর আক্রমন করেছে।(সূরা আন নাহল, আয়াত ১২৬)
ইসলাম মানুষের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ (বুখারি ও মুসলিম)। ইসলামে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখাকে গুরুত্ব দেয়ায় ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অপরিহার্য কর্তব্য এবং ইমানি দায়িত্ব।

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬৪)

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নরহত্যা বা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩২)

দেখা যাচ্ছে, মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে গুপ্ত হত্যা কেন কোন হত্যাকেই সমর্থন করা হয়নি।

গুপ্ত হত্যাকে যারা ইসলামে জায়েজ বলতে চান তাদেরকে এ হাদিসটি পড়ে দেখার অনুরোধ জানাই। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ধারণা করা পরিহার কর, কেননা, ধারণা করা হচ্ছে সর্বাধিক মিথ্যা। কারও দোঁষ তালাশ করো না, দোষ-বের করার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করো না, একে অপরের প্রতি হিংসা পোষণ করো না, পরিবারে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। আল্লাহর বান্দা পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে যাও।
মানব হত্যা মহাপাপ। আর সেটা যদি গুপ্ত হত্যা হয় তাহলে সেটা নিশ্চয়ই সে পাপের পরিমাণ আরো বেশী। উপরোক্ত হাদিসের আলোচনায় ইসলামে গুপ্ত হত্যার অনুমতি রহিত করা হয়েছে। তবে ইসলামের প্রাথমিক স্তরে গুপ্ত হত্যার অনুমতি ছিল। ঠিক যেমন মদ জায়েজ ছিল, মুতাহ বিয়ে জায়েজ ছিল, দাস দাসী কেনা বেচা জায়েজ ছিল। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এইসব প্রথার বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে।

ইসলাম পরিপূর্ণতার পর কিছু মুসলিম নামধারী গুপ্ত হত্যার আশ্রয় গ্রহন করেছেন। যেমন হযরত আলীকে গুপ্ত হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা মুসলিম নামধারী হলেও তারা ছিলেন খারিজী। অর্থাৎ মুসলিম থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছিলেন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে যাদের গুপ্ত হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে সকলেই ছিলেন প্রভাবশালী কবি। সে যুগে কেবলমাত্র কবিতাই ছিল মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করার একমাত্র মাধ্যম। আরবরা প্যারডক্সিক্যাল চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, একদিকে ছিলেন নৃশংস, লুটতরাজ, নির্যাতনকারী, তেমনি অন্যদিকে ছিলেন চরম আবেগপ্রবন। কবিতা শুনে তারা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যেতো। সেযুগের সকল সীরাতগ্রন্থ ও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয় যে, প্রাচীন আরবদের মধ্যে পরস্পর-বিরোধী চারিত্রিক বৈশিষ্ট ভালোভাবেই বিদ্যমান ছিল। ইসলামের প্রারম্ভে মহানবি যাদের হত্যার নির্দেশ নিয়েছিলেন, তারা সকলেই কবিতার মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করে কবিতা লিখেছিলেন। আর সে সময় তাদেরকে দমাতে না পারলে কোন মুসলমানই অবশিষ্ট থাকতো না। কেননা সে সময় মুসলমানেরা দলে ভারি ছিলেন না। গুপ্ত হত্যার শিকার যারা হয়েছিলেন তাদের মধ্যে প্রভাবশালী করি কাব বিন আশরাফ তো ছিলেনই, ১২০ বৎসর বয়সী আবু আফাক এবং মহিলা কবি আসমা বিনতে মারওয়ানও ছিলেন। পাঠক একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, এরা শারীরিকভাবে যুদ্ধ না করলেও, যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়েছেন তথা প্রকারান্তরে ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এরা প্রভাবশালী হোক, বৃদ্ধ হোক বা নারী হোক তারা কেউই শাস্তির আওতা থেকে বাদ পড়েননি। ইসলামের প্রাথমিক যুগটা এভাবেই পার করতে হয়েছে। পুরো জাতি বা গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে, দোষীদের গুপ্ত হত্যা করা হয়েছে। আর সে সময় প্রচুর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ যেমন এড়ানো গেছে, তেমনি শত্রুদের মনে ভীতির সঞ্চার করা গেছে।
কোরআনে বলা হয়েছে, (ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল) তারা যখন অন্যায় বাড়াবাড়ির শিকার হয় তখন তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করে; আর দুষ্কৃতির বদলা হল তার সমপরিমাণ দুষ্কৃতি; তবে (কল্যাণকর মনে করে) যে মাফ করে দেবে এবং সংশোধন করে দেবে তার বিনিময় আল্লাহ্*র কাছে রক্ষিত; নিশ্চয়ই তিনি যালিমদেরকে মোটেই ভালোবাসেন না। আর যুলমের শিকার হয়ে যদি কেউ প্রতিশোধ গ্রহণ করে তবে তাদের উপর কোন অভিযোগ দায়ের করা চলবে না; অভিযোগ তো কেবল তাদের উপর যারা মানুষের উপর যুলুম করবে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করে বেড়াবে; তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সূরা আশ শূরা, আয়াত ৩৯-৪২)
আর তোমরা যদি তোমাদের শত্রুদেরকে শাস্তি দাও তাহলে ঠিক সেইভাবে তাদেরকে শাস্তি দিবে যেভাবে তারা তোমাদের উপর আক্রমন করেছে। (সূরা আন নাহল, আয়াত ১২৬)
এ সকল আয়াত সমুহ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে নাযিল হলেও এর সামগ্রিক হুকুম সাধারণ ভাবে প্রযোজ্য।


কাব ইবনে আল-আশরাফকে গুপ্ত হত্যার নির্দেশ যে কারনে-
বদর যুদ্ধে পরাজয়ের পর রাসুল (স) আল্লাহর বিজয় ও বহু-ঈশ্বরবাদীদের নিহত হওয়ার বার্তা নিয়ে জায়েদ ইবনে হারিসকে প্রেরণ করলেন দক্ষিণ মদিনায়। উত্তর মদিনায় পাঠালেন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাকে। কাব ইবনে আশরাফ ছিলেন বনু নাবহানের একজন তাইয়ি। তার মা ছিলেন বনু নাদিরের। এই কাব ইবনে আশরাফ অন্যান্য প্রভাবশালী ইহুদিদের মত যে চরম মুহাম্মদ বিদ্বেষী ছিলেন, তা-ই নয়, তিনি ছিলেন ইসলামের চরমতম দুষমন। তার কবিতার মাধ্যমে তিনি মুশরিকদের আল্লাহ ও তার নবির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতেন এবং যুদ্ধের প্ররোচনা দিতেন এবং মুসলিম নারীদের সম্ভ্রমহানিকর উক্তি করতেন। সেযুগে কবিতা ছিল প্রচারণার এক কার্যকর মাধ্যম। কবিতা শুনে মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে যেতো। প্রাচীন আরবদের পরস্পরবিরোধী দুটো চরিত্র আমরা দেখতে পাই। একদিকে তারা ছিল নৃশংস, লুটেরা, নির্যাতনকারী, আবার অন্য দিকে ছিলেন সত্যবাদী, ওয়াদা রক্ষাকারী এবং আবেগপ্রবণ। এই কাব ইবনে আশরাফ বদর যুদ্ধের পরাজয়ে প্রতিশোধ নেয়ার নিমিত্তে নবি(স)-এর বিরুদ্ধে কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের যুদ্ধে উদ্ভূদ্ধ করতে শুরু করেন। তিনি যখন খবর পান তার দলের নামীদামী লোকেরা পরাজয়ের পর হত্যার শিকার হয়েছেন, তখন তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মুহাম্মদ যদি এদের হত্যা করে থাকে, তাহলে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। এর পর কাব ইবনে আশরাফ নবি মুহাম্মদ (স)-এর বিরুদ্ধে চরম কটুক্তি শুরু করলেন। এমনিতেই তিনি অনেক আগে থেকেই নব্য ইসলামের চরম ক্ষতি সাধন ও কুৎসা রটনা করে আসছিলেন। তার কবিতায় নিছক ব্যঙ্গ বিত্রুপ ছিল না। ছিল ফিতনা ছড়ানোর মাধ্যমে ইসলামের ধ্বংস সাধন।

এবার তিনি মুসলমান নারীদের নিয়ে অপমানজনক কবিতা রচনায় ব্রতি হলেন। কাব ইবনে আশরাফ যা করেছিল তার সবকিছুই ছিল আকর্ষণীয় শব্দাবলী ও মাধুর্যপূর্ণ বাক্য বিন্যাসের দ্বারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমুলক যুদ্ধের প্ররোচনা।
আবদুল্লাহ ইবনে আল-মুগিতের বর্ণণা অনুযায়ী রাসুল(স) বললেন, এই ইবনুল আশরাফের যন্ত্রণা থেকে কে আমাকে মুক্তি দেবে?’ রাসুলের এ কথায় বোঝা যায়, কাব ইবনে আশরাফ রাসুলকে কি ভীষন কষ্ট দিয়ে চলছিলেন। রাসুলের এই আকুতি শুনে মুহাম্মদ ইবনে মাসালামা বললেন, আপনার জন্য আমি ওকে দেখে নেব। হে রাসুলুল্লাহ, আমি ওকে হত্যা করবো।’
রাসুল বললেন, ‘যদি পারো তাই করো।’ মুহাম্মদ ইবনে মাসালামা কাব ইবনে আশরাফের মত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে কিভাবে হত্যা করবেন সেটা্ ভেবে দানাপানি ত্যাগ করে তিন দিন বসে রইলেন। যেটুকু নেহায়েত না করলেই নয়, তাই করলেন। রাসুল(স) একথা শুনে তাকে ডাকলেন এবং তার পেরেশানীর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। মুহাম্মদ ইবনে মাসালামা বললেন, আমি আপনাকে কথা দিয়েছি, এখন বুঝতে পারছি না ওয়াদা রাখতে পারবো কিনা। রাসুল তাকে অভয় দিয়ে বললেন, তোমার দায়িত্ব তো কেবল চেষ্টা করা।’ মুহাম্মদ ইবনে মাসালামা বললেন, আমাদের কিছু মিথ্যা কথা বলতে হবে, রাসুলুল্লাহ।’ রাসুল বললেন, ‘সে তোমাদের ব্যাপার, তোমাদের ইচ্ছামত তোমরা যা করার করবে।’

অতঃপর মুহাম্মদ ইবনে মাসালামা কা’ব বিন আশরাফের কাছে এসে কিছু কৌশলের আশ্রয় গ্রহন করলেন। তিনি রাসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন ঐ ব্যক্তি মেলা ঝামেলা করছে। আরবদের মধ্যে শক্রুতা সৃষ্টি করছে। সবাই আমাদের বিরুদ্ধে লেগেছে।’ কাব বললেন, আমি তোমাদের সেটা আগেই বলেছিলাম।
এর পর মুহাম্মদ আবনে মাসালামা কৌশলে তার নিকট লেনদেনের কথা বলতে বলতে তাকে হত্যা করেছিলেন। (বিস্তারিত বর্ণনা আপনাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে পারে ভেবে বর্ণনা করলাম না। বিস্তারিত পাবেন, সিরাতে রাসুলুল্লাহর পৃষ্ঠা-৪০৩-৪০৭]
ইবনে ইসহাকে লেখা হয়েছে, এই হামলার পর সমস্ত ইহুদীদের মধ্যে বিভীষিকা সৃষ্টি হলো। মদিনায় এমন একজন ইহুদীও রইলো না যারা প্রাণের ভয় করেনি। [কাবের প্রাসাদের একটা আলোকচিত্র দি ইসলামিক রিভিউ, সেপ্টেম্বর ১৯৫৩ সংখ্যায় মুদ্রিত হয়েছিল। মদিনার দক্ষিণে ওয়াদি মুজানিবে ছোট পাহাড়ের ওপর সেই প্রাসাদের দেওয়াল এখনো আছে।]
কা’ব বিন আশরাফ নিহত হওয়ার পর তার জাতির ইহুদীরা রাসুল(স)-এর কাছে এসে বললো, আমাদের একজন অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে আপনার অনুসারীদের দ্বারা গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন। রসুলুল্লাহ তাদেরকে বলেন,তার মতো একই রকম চিন্তার যেসব লোকেরা পালিয়ে গেছে তাদের মতো সেও যদি পালিয়ে যেত তাহলে তার এই দশা হতো না, কিন্তু সে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আমাদেরকে অপমান করেছে; আর ভবিষ্যতেও কেউ যদি এমন দুঃসাহস দেখায় তাহলে সেও তার ঘাড়ের উপর তলোয়ার ছাড়া কিছু দেখতে পাবে না। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও সীরাতে ইবনে হিশাম)
ফতহুল বারী গ্রন্থে ইবনে হাজার রহঃ ইকরামা রাঃ এর সুত্রে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর গোটা ইহুদী সম্প্রদায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের কাছে এসে তাদের নেতার গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার ঘটনা তাকে জানায়।
অনেক মুসলমানই ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ের গুপ্ত হত্যা পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। তাদেরকে বুঝতে হবে ইসলাম কোন অলৌকিক ধর্ম নয়। নয় কোন নতুন ধর্মও। এটা আদম এবং ইব্রাহিমের ধর্মেরই সংস্করন মাত্র। হজ্ব, রোজা এগুলো আগে থেকেই ছিল। ইসলামে সংস্কার হয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোথাও কোন অলৌকিকত্ব নেই। সবকিছুই নিয়ম মেনে চলছে। কোরআনে তা বারংবার বলা হয়েছে। মানুষের জন্য জীবন বিধান আল্লাহপাক মানুষের মাধ্যমেই প্রেরণ করেছেন। মহানবি একজন মানুষই ছিলেন। তার মধ্যে মানবীয় সবকিছুই বিদ্যমান ছিল। পার্থক্য কেবল এটুকুই যে, তার কাছে ওহি আসতো। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী ছিলেন। তিনি কেবল একজন নবিই নন, ছিলেন যোদ্ধা এবং সামরিক প্রধানও।
তথ্য সুত্র: সিরাতে ইবনে ইসহাক এবং তা হতে সম্পাদিত সিরাতে ইবনে হিশাম, আল তাবারি রচিত “সিরাতে রাসুলাল্লাহ” ও অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ নিবন্ধ থেকে সংকলিত।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭

ইসলাম সানু বলেছেন: তথ্যবুহুল-পড়ে ভাল লাগলো-ধন্যবাদ। এ ধরনের পোষ্ট আরও চাই ।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: তথ্যসুত্র আর একটু বিস্তারিত ভাবে বলেন।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৫

জাহাঙ্গীর কবীর নয়ন বলেছেন: যে আজ্ঞে। প্রাথমিক যুগে যেমন ইসলামে গুপ্ত হত্যার প্রয়োজন ছিলো, এখন তেমনি আত্মঘাতী হবার প্রয়োজন আছে। সেজন্যেই তালেবান জিহাদী মুমিন ভাইয়েরা বোমা লইয়া ঝাঁপায়ে পড়ে ইসলাম রক্ষা করিতেছেন। তাঁদের এই আত্মহুতির জন্য তাঁদের চৌদ্দ পুরুষের সব পাপ ক্ষমা হইয়া যাইতেছে। সবাই বলুন সুবহানাল্লাহ!
আবার স্বদেশী হুজুরেরা দলবল লইয়া বিধর্মী কাফেরদের ঘড়বাড়ী পুড়াইয়া, প্রতিমা ভাঙ্গিয়া দ্বীন রক্ষা করিতেছেন। তাঁহারাও জান্নাত পাইবেন। আর আমাদের সবার প্রিয় জামায়াত-শিবিরের দ্বীনদার ভাইয়েরা যেভাবে রগ কাটিয়া ইসলামের শত্রুদের সাইজ করেন তার তো তুলনাই চলেনা।
একাত্তরে কাফের পুরুষদের হত্যা করিয়া ও কাফের নারীদের গণধর্ষণ করিয়া সাচ্চা ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের রক্ষাটাও যে অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের ষড়যন্ত্রে আল্লাহর প্রিয় রাষ্ট্র পাকিস্তান ভাঙ্গিয়া গেল। আহারে! দ্বীনদার মোমেন ভাইদের কত কষ্ট আজও ইহা লইয়া! এই লইয়াও একটি জ্ঞানগর্ভ পোস্ট আশা করিতেছি।



আসেন, ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের গান শুনি।









আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.