| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের নাম স্বাক্ষর করার সময় এর আগে আর একবারই এমন ভাবে ভিতরটা ডুকরে উঠেছিল নিতুর। সেদিন চারপাশে কত লোকের আনাগোনা, বান্ধবী আর ভাবীদের খুনসুটি, বাচ্চাদের চেচামেচির মাঝেও নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিল। মাত্রইতো কয়েকদিনের পরিচয়। এর মাঝেই এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা সে কখনই ভাবেনি। দুই দিনের কথায় নেওয়া এই সিদ্ধান্তটা কি পারবে তার জীবনটাকে পরিবর্তন করতে? বা তার অতীতকে ভুলিয়ে দিতে? ভাবতেই দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল! কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না, নিহান এত অবলীলায় তাকে অস্বীকার করবে! কত সহজেই বলে দিল ভুলে যেতে! অথচ তার ভালবাসায় কতনা পাগলামী ছিল। এক নজর তাকে দেখার জন্য অস্থির থাকতো সব সময়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আসা যাওয়া করতো বাড়ির সামনে দিয়ে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জানান দিতো তার অস্তিত্বের। একটু বেয়াড়া স্বভাবের বলে হয়তো ভালবাসার প্রকাশের ধরণটাও ছিল বেয়ারা। বড্ড ছেলেমানুষীও করতো। প্রথম যেদিন একগুচ্ছ গোলাপ হাতে ভালোবাসার কথা বলেছিল সেদিন তার চোখের জল বা শরীরি ভাষায় মিথ্যে কিছু ছিলনা। স্বচ্ছ জলের রেখা ফুটে উঠেছিল নিহানের লাল চোখে। সেই চোখে কতবার যে মুগ্ধ হয়েছে নিতু তার কোন ইয়ত্তা নাই। ওর উদ্দাম ভালেবাসার কাছে প্রথম দিকে ধরা না দিলেও নিজেকে আটকাতে পারেনি। তাই সপে দিয়েছিল নিজেকে নিহানের ভালোবাসার কাছে। তারপরের দিনগুলো কতা মধুর ছিল। ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পাওয়ার কি প্রাণান্ত চেষ্টা দুই জনের। নিজেকে তার মতো করে সাজিয়ে নেওয়া। পরিবারের কাছে পছন্দের মানুষটিকে ফুটিয়ে তোলা।এর কোন কিছুর জন্য নিহানকে ততটা কষ্ট পেতে হয়নি নিতুর মতো। বেয়াড়া স্বভাবের কারণে পরিবারের লোকের কাছে এক আতঙ্কের নাম ছিল সে। তাই ঝামেলা যেটুকু হয়েছে তা নিতু্রই। তবে এর মাঝে যে অন্য কোন লোকের আনাগোনা হয়নি তা নয়। তবে সুনিপুনভাবে দুরে সরিয়ে দিয়েছিল এই সব না চাওয়াকে। তারপর একে একে ফিরিয়ে দিয়েছে সব বিয়ের প্রস্তাব। পরিবারের চাপ থাকলেও নিহানের জন্য তার অপেক্ষার কাছে হার মেনেছে সব। প্রতিবারই যখন বিয়ের কথা হতো তখনই স্মরণাপন্ন হতো নিহানের কাছে। কিছুটা আশ্বস্ত হয়েই দুরে ঠেলে দিতো সব প্রস্তাব। তা ভালই হোক আর মন্দই হোক। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই নিহানের ব্যবহার বড় অচেনা মনে হচ্ছিল। কোন কিছুতেই সেই আগের মতো নাই। তারপরও সব কিছু সহ্যে মধ্যে রেখেছিল সে। কিন্তু তূর্যের সাথে বিয়ের প্রস্তাবের পর নিহানের ব্যবহারটা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যা সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। এই দুইদিনে তূর্য তাকে কম সুখের স্বপ্ন দেখায়নি। তাই হয়তো নিজের অতীতকে ভুলে নিজেকে সপে দিয়েছিল নতুন এক স্বপ্নে। কিন্তু সেই স্বপ্নটাও দিবা স্বপ্নের ভেঙে গেল ডিভোর্স পেপারে শেষ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। শুরুটা যেখান থেকে হয়েছিল সেখানেই এসে থেমে গেল একটি অধ্যায়। মাঝখানে তার জীবনে রেখে গেল এক অসহনী কষ্টের ছাপ। যার ফলে তাকে পরিহাস করবে ঘরের অতি পরিচিত দেয়াল গুলোও|
©somewhere in net ltd.