![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম পর্বের পর
পঊষী থেকে বের হয়েই দেখি কয়েকটি টমটম। হিমছড়ি ইনানী যাবো কিনা জিজ্ঞেস করলো। মুলোমুলি করে উঠে পড়লাম একটিতে। ৫০০ টাকা যাওয়া আসা। কক্সবাজার সমুদ্রের শহর, তাই সর্বক্ষণ ওখানে বাতাস আর বাতাস। এই জন্যে এখানে রোদ পড়লেও গরম লাগে না। এটা বলার কারণ হলো ইনানী/ হিমছড়ি যে রাস্তাটা দিয়ে যাবেন সেটা এতই মনোমুগ্ধকর যে বলার মত নয়, সাথে দখিনা বাতাস। অসাধারণ ফিলিংস। ডানে সাগর আর বামে পাহাড়। আমি হয়তো ঠিকমত এই অসাধারনত্ব বোঝাতে পারছি না, কিন্তু আপনাদের বলে দিচ্ছি এটা একটা পয়সা উসুল ভ্রমণ। যেহেতু ইনানী একটু দূরে তাই প্রথমে ইনানী যাবেন, আর ফিরতি পথে হিমছড়ি। যাই হউক, মাথা নষ্ট করা টমটম রাইড শেষে পৌঁছুলাম ইনানীতে। এখানেও রাখলাম আরেকটি বোকামির স্বাক্ষর। বোকামিটা কী একটু পরেই বলবো। ঢাকা থেকেই আমার স্ত্রী মাথার হ্যাট কিনবার জন্যে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলো। কোনমতে ওকে বুঝিয়ে রাজি করালাম যে বীচে এগুলা পাওয়া যাবে, ঢাকায় এত খুঁজাখুঁজি করবে কে? যা-ই হউক, নেমেই সে কিনে ফেললো একটি হ্যাট। দাম চাইলো ৫০০-৬০০। আমার আবার দামাদামি করার স্বভাব। দোকানদার যা-ই চায় না কেনো আমি দামাদামি শুরু করি তার তিন ভাগের এক ভাগ থেকে। এখানেও স্বভাবসুলভভাবে শুরু করলাম ১৫০ দিয়ে অবশেষে ১৮০ টাকায় রফা হলো। এরপর আর কি গেলাম বীচে। মানুষের প্রথম বীচে নেমে সমুদ্রের পানি স্পর্শ করার অভিব্যাক্তি যে কত আনন্দময় হতে পারে সেটা আমার বউকে দেখে বুঝলাম। বীচে কিন্তু অনেক স্থানীয় ছেলেপেলে ঘুরে, টাকা দিবেন বললে ওরা কিন্তু আপনার সাথে সাথে ঘুরবে, ছবি তুলে দিবে। যেহেতু আমরা ২ জনই ছিলাম আর ছবি তোলার জন্যে কেউ ছিলো না, তাই নিয়ে নিলাম একজনকে সাথে। আমি খুবই দুঃখিত আমাদের ছবিগুলো শেয়ার করতে পারছি না বলে (বউয়ের অনুমতি নাই)। ইনানীতে সবসময় ভাটার সময় যাবেন, না হলে প্রবাল পাথরগুলো দেখতে পাবেন না। এক্ষেত্রে টমটমের ড্রাইভাররাই এটা ভালো বলতে পারবে। ইনানীতে লোকজন অনেক কমই দেখলাম। ওখানে কিছু মোটরচালিত স্কুটার আছে, এক রাউন্ড ১০০-১৫০টাকা চাইবে। এখানেও ৫০ টাকা দিয়ে ভাড়া করলাম। পিছনে বউকে নিয়ে এক গিয়ারের স্কুটারে এক রাউন্ড চরম গতিতে চালালাম, সে এক অদ্ভুত ভালোলাগা। তো এবার ফেরার পালা। ফিরে এসে দেখি আমাদের টমটম যেখানে রেখে গিয়েছি সেখানে ওইরকম অনেক টমটম, কিন্তু আমাদের ড্রাইভারের দেখা নাই। নামার সময় ড্রাইভারের মোবাইল নাম্বার, বা টমটমের লাইসেন্স নাম্বার দেখে নামি নাই, সেই সাথে ড্রাইভারের চেহারাও মনে নাই। ভুলে একটা টমটমে উঠে বসতেই দেখি সেই ড্রাইভারও স্টার্ট দিয়ে দিল। পরে সেই ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতে দেখি, সেইটাও বড় গাধা। সে নিজেও তার যাত্রীদের চেহারা ভালো মতো খেয়াল করে নাই, তো আমরা উঠে পড়াতে ভেবেছে আমরাই তার যাত্রী। হাহা! পরে ওখানকার বাকী ড্রাইভারগুলা হাসতে হাসতে আমাদের ড্রাইভারকে দেখিয়ে দিলো, যে কিনা মেইন রাস্তার উপরে গিয়ে তার টমটমের ব্যাটারী চার্জ দিচ্ছিলো। অবশেষে ফিরতি পথ ধরলাম। কিছুক্ষণ পরে এসে নামলাম হিমছড়ি বীচে। এখানে বলার মত কিছু নাই। একই জিনিস। আমাদের কাছে ইনানী-ই বেশী ভালো লেগেছিলো। হিমছড়িতে তাই বেশিক্ষণ থাকলাম না, দু-চারটে ছবি তুলে শহরের পথ ধরলাম। হিমছড়িতে নাকি ঝরণা আছে, আমাদের অবশ্য চোখে পড়লো না, পরে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে শুনলাম আসলে পানি শুকিয়ে গেছে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হলো। গিয়েই হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হলাম।
এবার রাতের খাবারের পালা। আমার বউ বললো সে মারমেইড ক্যাফের কথা অনেক শুনেছে, তাই ডিনার হলে আজ ওখানেই হউক। আমিও ভাবলাম, মন্দ কী। মারমেইড ক্যাফেটা (যারা গিয়েছেন তারা জানেন) আসলে একটি ইকো ফ্রেন্ডলি রেস্তোরাঁ। মানে পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতি না করে পরিবেশেরই উপাদান ব্যবহার করা। ওখানে ঢুকেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। চমত্কার পরিবেশ। বসে পড়লাম এক কোণায়। ক্যাফেটা ডেটিং করা, ছবি তোলা বা কাপল হ্যাং আউটের উপযুক্ত জায়গা। তবে ছবি তোলার জন্যে দিনের আলো থাকতে যাওয়াই ভালো, মানে সন্ধ্যার একটু আগে আগে। যা-ই হউক, বসার পরে ওখানকার ওয়েল ট্রেইন্ড বয় এসে মেনু দিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর কয়েল দিয়ে গেলো (অনেক মশা ওখানে- ইকো ফ্রেন্ডলি কিনা)। ওদের কিছু বলা লাগলো না, ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের মতো এরেঞ্জমেন্ট করে দিলো। অবশেষে ডিনারের অর্ডার দেয়ার ২০-৩০ মিনিট পর খাবার সার্ভ করা হলো। খাবার অত্যন্ত ভালো লাগলো। ওদের লেমোনেডের স্বাদ তো অসাধারণ (পরে আরো এক গ্লাস অর্ডার দিয়েছিলাম)। অবশেষে এক স্বপ্নময় ডিনার শেষে ওইদিনের মত ঘুরোঘুরি শেষ করলাম।
পরের পর্ব আরেকদিন।
©somewhere in net ltd.