ডাক্তার কি আর মানুষ নাকি!!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

জনগনের সেবা করা ,মানবতার সেবা করা,দুঃসময়ে দায়িত্ব পালন করা,সঙ্কট কালীন দায়িত্ব পালন করা শুধুই কি ডাক্তারের দায়িত্ব? শুধুই কি চিকিতসা পেশায় এই শব্দ গুলো থাকবে?ঃঃ ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে হাস্পাতালের জরুরী বিভাগে ডিঊটি করতে গেলাম।কিছুক্ষণ বাদে প্রচন্ড বুকে ব্যথা নিয়ে মধ্যবয়সী এক রোগী আসল।খাওয়ার পর তার ব্যথা শুরু।সাথে প্রচন্ড ঘাম আর শ্বাস্কষ্ট।লক্ষ্ণ দেখে হার্ট এটাক মনে হল।ইমার্জেন্সী এক টা ই সি জি করা দরকার ।ইসিজি না করে যতটুকু চিকিতসা দেয়া যায় ততটুকু দিয়ে ইমার্জেন্সী একটা ই সি জি করতে বল লাম।১ ঘন্টা পর রোগীর লোক হাজির,'ডাক্তার সাহেব,পুরা শহর ঘুরে কোথা ও এক টা ডায়াগ্নস্টিক সেন্টার খোলা পেলাম না।'এক টা ডায়াবেতিস এর এর রোগী অজ্ঞান হয়ে আসলে তার লোকেরা ও কোথাও একটা রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে পারলনা,।তেমনি ভাবে মারাত্মক এক্সিডেন্ট এর রোগী এক্ টা এক্স রে করতে পারলনা।পেটের নাড়ী ছিদ্র হওয়া রোগী ও এক টা এক্স রে করতে পারলনা।কিছু কিছু জরুরী ওষুধ ও রোগীরা পেলনা।কারন বেশীর ভাগ দোকান ই বন্ধ।মনে হল আমি তো সেই গল্পের উপন্যাসের চরিত্র- "ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার " ।আমাকে শুধু আন্দাজ করেই ওশুধ লিখতে হবে।দায়িত্ব যেন শুধুই আমার মানুশের রোগ ভাল করা শুধু আমার দায়িত্ব।এই পেশার সাথে জড়িত আর কারো কোন দায়িত্ব নেই।তারা ব্যবসা করবে,লাভ করবে আর জরুরী সময়ে তারা থাকবেনা।একই ভাবে ঈদের দিন ও তার পরের দিন সব বন্ধ।সরকারি হাস্পাতালের প্যাথলজী শুধুমাত্র সকালে খোলা থাকে।সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। ঈদের দিন সকালে নাস্তা আনতে পাঠালাম একটা ছেলেকে।পুরা শহর তন্ন তন্ন করে খুজে ও কোথাও সে একটা হোটেল খোলা পেলনা।বেকারি বন্ধ তাই কেক ও নাই।কলা ও নাই।বাধ্য হয়ে এক প্যাকেট বিস্কুট খেয়ে সকাল পার করলাম।ভাব লাম এখন সবাই নামাজ পড়ছে তাই দুপুরে খুল্বে। এর মাঝে লোডশেডিং ।১ ঘন্টা পর ও বিদ্যুত আসছেনা দেখে পি ডি বি তে ফোন করলাম।১৫ বার ফোন করে ও কেঊ ফোন ধরলনা।তারাও মনে হয় ঘুরতে গেছে। দুপুরে পাঠালাম খাবার আন্তে।ছেলেটা তার সাইকেল নিয়ে পুরা শহর তন্ন তন্ন করে খুজেও কোথাও একটা হোটেল খোলা পেলনা।আবার ও বিস্কুট ই ভরসা ,এবার কলা টা পেলাম।বিকেল ৫ টার দিকে পেলাম এক্ টা মোগ্ লাই। রাত ৯ টায় ম্যারাথন ২৭ ঘন্টা ডিঊটি সেরে বেরিয়েই আরেক ধাক্কা।৩০ মিনিট দাঁড়িয়েও একটা অটো পেলাম না।সব রিজার্ভ যাবে।রিক্সা ওয়ালারা ৩০ টাকার ভাড়া ৭০ টাকা চায়।অনেক্ টা পথ হেটে অবশেষে একটা অটো তে ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকআয় উঠলাম।৪ দিন পুজোর ছুটিতে বাড়ি থাকায় বাসায় কাচা মরিচ ,তরকারি নেই।ভাব লাম কাচা বাজার থেকে কিনে বাসায় গিয়ে রান্না করে তৃপ্তি করে খাব।অটো থেকে নেমে বাজারে গিয়ে দেখি সব বন্ধ। এমন কি গলির মোড়ের মুদি দোকান(শুকনা ঝাল এর জন্য) টা ও বন্ধ।মোবাইলে ব্যলান্স নেই,ফ্লেক্সি লোড দেব -সেটাও কোথাও পেলামনা । এই ৬ দিনে আপ নি আপ নার খুব জরুরী জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজন হলেও কোন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারবেন না।যেমন আমি পারিনি আমার বৌদির ওপেন হার্ট সার্জারীর সময়।এমন কি কিছু কিছু এটি এম বুথেও আপ নি টাকা পাবেন না। আমার প্রশ্ন হল -জনগনের সেবা করা ,মানবতার সেবা করা,দুঃসময়ে দায়িত্ব পালন করা,সঙ্কট কালীন দায়িত্ব পালন করা শুধুই কি ডাক্তারের দায়িত্ব? শুধুই কি চিকিতসা পেশায় এই শব্দ গুলো থাকবে। মনে হয় দেশের আর কোন মানুষের তার কাজ না করলে ও চলবে!আর কোন পেশার লোকের তার কাজ করা লাগবে না।সবাই ছূটি তে মহা আনন্দে থাকবে ,আর যারা জরুরী দাইয়িত্বে নিয়োজিত থাকবে তাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা টুকু ও কেউ করবেনা। েই হল আমাদের দেশ ,এই হল আমাদের দেশের মানুষের মানসিকতা।

----------------------------------

ডাঃ চম্পক রায় এর লেখা হতে সংগৃহীত।।

৪ টি +০/-০