![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খেলাধুলো করতে ও বই পড়তে প্রচন্ড ভালবাসি। আর মাঝেমধ্যে শখের বসে লেখার ক্ষুদ্র চেষ্টা করি।
স্বাধীন সার্বভৌম, সুন্দর সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন সর্বপ্রথম দেখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলামই:
স্বাধীনতার মাস বা বিজয়ের মাস এলে প্রতিটি টিভি চ্যানেলেই দেশাত্মবোধকক গানের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের গানের আধিক্যই বেশি।
না, কথাটি কিন্তু মিথ্যা। বরং কাজী নজরুলের গান খুবি কম দেখা যায়। অথচ তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তার গানের আধিক্য থাকাটাই প্রত্যাশিত হবার কথা। কেননা, তিনিই প্রথম বলেছিলেন বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম, সুন্দর সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন কাজী নজরুল ইসলামই প্রথম দেখেছিলেন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা।
প্রশ্ন করতে পারেন কিভাবে তিনি প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন....?
নীচে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছি। জানার আগ্রহ থাকলে পুরোটা পড়বেন অনুগ্রহ করে। তো শুরু করা যাক এবার।
আমাদের অনেক দেশাত্মবোধক গান আছে যেগুলো হৃদয় ছুয়ে দেয়। বাঙ্গালি জাতি পরাধীন থাকাকালে কত নির্যাতিত, নিপীড়িত ছিল, অধিকার বঞ্চিত ছিল তা আমরা চোখে দেখিনি। কিন্তু তখনকার সেই করুণ অবস্থা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায় এই গান থেকে। পরাধীনতার জাল থেকে মুক্ত হতে কতটা হাহাকার ছিল বাঙ্গালি জাতির তা কিছুটা হলেও আঁচ করা যায় এই গান দিয়ে।
এই গান থেকে আমরা বুঝতে পারি পরাধীনতার কত কষ্ট, কত যন্ত্রণা। স্বাধীনতার মর্ম কতটুকু আমরা এই গান থেকে বুঝতে সক্ষম হই। শুধু তাই নয়, কখনো কখনো স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশও ঘটে থাকে এই গান থেকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাগুলো শুরু হওয়ার আগে প্রত্যেক দল তাদের নিজ নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে থাকে। এই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দেশের প্রতি আলাদা একটি আবেগ জন্মায়, ভালবাসা জন্মায়। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় প্রায়ই দেখা যায়, প্লেয়াররা আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তারা কেঁদে ফেলে। নিষ্পাপ শিশুর মতো তাদের চোখ দুটি অগ্নিশিখার ন্যায় লাল হয়ে যায়। অতঃপর চোখ জোড়া থেকে নোনা পানি গড়িয়ে পড়ে। এই পানি পবিত্র পানি। এই পানি দেশকে ভালবাসার পানি। তারা তাদের দেশ মাতাকে যে প্রাণভরে ভালবাসে সেটারই চিহ্ন তাঁদের এই চোখের পানি। দেশপ্রেমের এই চিহ্ন তৈরি করে দেশাত্মবোধক গান।
যতটুকু জানি, আমরা যাদের কাছে থেকে কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানগুলো পেয়েছি তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী, মাকিক মিয়া, মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার, অতুল প্রাসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্র লাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এর প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা কেন সেটি ব্যাখ্যা করব তার রচিত কিছু কালজয়ী গান ও কবিতা দিয়ে যেগুলো বাঙ্গালীর স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে সাহস সঞ্চার করে, উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে এক বিরাট ভূমিকা পালন করে।
৯ মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পরে বাংলার মানুষ বিজয় অর্জন করে। সেই বিজয় এসেছিল অগণিত মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। অগণিত মায়ের বুক খালি হয়ে, কোলের শিশু হারিয়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালির চিরদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। ত্রিশ লাখ শহীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে সেদিন আমরা পেয়েছিলাম আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। এদেশের মানুষ ফিরে পায় তাঁদের স্বাধিকার। যাদের কান্না দেখে গাছ গাছালি কাঁদত, প্রকৃতি কাঁদত স্বাধীনতা ফিরে পাবার পরে সেই সর্বহারা মানুষের মানুষের মুখে ফুটে উঠেছিল স্বর্গীয় হাসি। সেই স্বর্গীয় হাসি এসেছিল স্বাধীনতা পাওয়ার মাধ্যমে। আবার সেই স্বাধীনতা কেনা হয়েছিল নগদ রক্তের বিনিময়ে। আর সেই নগদ রক্ত দিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল উদ্দীপনা দিয়েছিল, যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীরের মতো বিজয় চিনিয়ে আনার সাহস যুগিয়েছিল চির বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান।
আমাদের আজকের যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন সর্বপ্রথম দেখেছিলেন প্রাণপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার অসাধারণ দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকেও তিনি স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তাই তো তিনি তার গানে বলেন-
‘স্বাগত বঙ্গে মুক্তিকাম।
সুপ্ত বঙ্গে জাগুক আবার লুপ্ত স্বাধীন
সপ্তগ্রাম।’
তার গানেরই অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সেই লুপ্ত স্বাধীন সপ্তগ্রাম সুপ্ত বঙ্গে ঠিকই জেগে উঠেছিল ১৯৭১ সালে। দেশ পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্ত হয়েছে। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় 'সপ্তগ্রাম' স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭১ সালে।
দেশ তো পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন এই দেশ মানে সপ্তগ্রামের নাম কি হবে?
বঙ্গ মায়ের কোলে জন্ম নেয়া অনেক কবি সাহিত্যিকই বঙ্গমাতাকে ভালবেসে বঙ্গভূমির অনেক সুন্দর সুন্দর নাম দিয়েছিল। রবি ঠাকুর বলেছিলেন 'সোনার বাংলা', জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন 'রূপসী বাংলা'। কিন্ত যিনি আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিকে 'বাংলাদেশ' বলে প্রথম ডেকেছিলেন তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সুখী সেই স্বপ্নের সপ্তগ্রাম বাস্তবায়িত হয় ১৯৭১ সালে। আর তারও ঠিক ৪০ বছর পূর্বে ১৯৩১ সালে আমাদের এই মাতৃভূমি 'সপ্তগ্রাম' এর একটি সুন্দর নাম দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সেই নাম অন্য কিছু নয়। নজরুলের গানের সুখী, সমৃদ্ধ, স্বপ্নের সপ্তগ্রামকে আজকে সারা বিশ্ব আমাদের যে নামে উচ্চারণ করে সেই সুন্দর 'বাংলাদেশ' নামটিই দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
নজরুলের সপ্তগ্রামের নাম 'বাংলাদেশ' বলেছিলেন ১৯৩১ সালে তার এই গানে-
‘নমঃ নমঃ নমো বাংলাদেশ মম
চির মনোরম চির মধুর
বুকে নিরবধি বহে শত নদী
চরণ জলাধর বাজের নূপুর।’
একটা সময় বাংলাদেশ সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বাঙ্গালির অতি বিলাসিতা ও ইংরেজদের শোষণের ফলে তারা দারিদ্র হয়ে পড়ে। এই দারিদ্রতা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম 'বাংলাদেশ' শব্দটি তার আরেকটি গানে ব্যবহার করেন এইভাবে-
‘সেই আমাদের বাংলাদেশ
রাজরানী আর ভিখারিনী
কাঁদছে বলে লুটিয়ে কেশ
মুক্ত ধারা সেই নদী আজ মন্দগতি বন্ধনে,
সুনীল আকাশ অশ্রুমলিন নিপীড়িতের ক্রন্দনে।'
আমেরিকার জাতীয় কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান একবার বলেছিলেন-
"আহত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করি না আমি কেমন লাগছে তার, বরং নিজেই আহত হয়ে পড়ি আমি।"
কাজী নজরুল ইসলাম তো তিনি যিনি অন্যের আহত হওয়াতে নিজেও আহত হয়ে পড়তেন। তিনি বাঙ্গালীর ব্যথায় ব্যথিত হতেন, বাঙ্গালির সুখে সুখী হতেন। তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের সর্বস্তরের কবি। এরকম সাম্যের কবি, মাটি ও মানুষের কবি ও সর্বস্তরের জনগণের কবি পৃথিবীর বুকে আর দ্বিতীয় কেউ আছে বলে মনে হয় না। তিনিই ইতিহাসের একমাত্র কবি যার কলম দিয়ে রক্তলেখা ঝরেছিল, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যাকে কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল।
ইংরেজদের শোষণে যখন দেশের বেহাল দশা তখন তিনি তার 'আমার কৈফিয়ত' কবিতায় লিখেছেন-
'প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!'
এই লেখাটি লিখার কারণে কাজী নজরুল ইসলামকে জেলও খাটতে হয়েছে। অবশ্য এর আগেও একবার তিনি জেল খেটেছিলেন অত্যাচারী, শোষক ব্রিটিশদেরই বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কবিতা লিখে। কিন্তু এসব জেল জুলুম এমনকি মৃত্যুকেও তিনি পরোয়া করতেন না। তার রক্ত লেখা চলতেই থাকল। দেশের প্রতি তার এতই মমতা ছিল যে তিনি জেলে বসেও দেশকে অত্যাচারীরর শেকল থেকে মুক্ত করতে স্বপ্ন দেখতেন এবং জেলে বসেই শেকল ভাঙার গান লিখতেন। জেল জিবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেন-
'কারার ঐ লৌহ–কপাট
ভেঙ্গে ফেল্ কর্ রে লোপাট রক্ত –জমাট
শিকল –পূজার পাষাণ –বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় –বিষাণ ! ধ্বংস –নিশান
উঠুক প্রাচী –র প্রাচীর ভেদি।।'
......
লাথি মার, ভাঙরে তালা! যত সব বন্দীশালায়-
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা ফেল উপাড়ি '
নজরুল তো তিনি যিনি ধর্মে বর্ণে ভেদাভেদ করতে না।তাইতো তিনি বলেন-
"হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন
জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর
মার।"
কাজী নজরুল ইসলাম জানতেন যে, হিন্দু আর মুসলমানকে যদি ঐক্যবদ্ধ করা না যায় তাহলে ব্রিটিশদের কখনোই তাড়ানো যাবেনা। এজন্য তিনি তার গান দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখেন-
'মোরা এক বৃন্তে দু'টি কুসুম হিন্দু- মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।। '
আমার কৈফিয়ত কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম মানুষের কাছে প্রার্থনা চেয়েছিলেন যাতে তার রক্তলেখায় অত্যাচারী ব্রিটিশদের সর্বনাশ হয়। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। তার রক্তলেখায় একদিন ঠিকই ব্রিটিশদের পতন হয়েছিল।
কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক গান সব ক্ষেত্রেই শোনার উপযোগী ছিল। কাজী নজরুল ইসলামের গান ছিল শিহরণ জাগানিয়া গান। যে কারো শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়, লোম দাঁড়িয়ে যায় যখন শোনা হয় তার 'কাণ্ডারি হুশিয়ার' বা দুর্গম গিরি কান্তার মরু' গানের এই লাইনটি-
'ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের
জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে
কোন্ বলিদান।'
কাজী নজরুল ইসলাম তো তিনি যিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন বীরের মতো শির উঁচু করে চলতে।
তাইতো তিনি তার বিদ্রোহী কবিতায় বলেন-
"বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর
হিমাদ্রির!"ও
তার এমন প্রান মাতানো গানের জন্যই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু রীতিমতো তার ভক্ত বনে গিয়েছিল। তার অসাধারণ সব দেশাত্মবোধক গানের জন্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু সর্বদাই কাজী নজরুল ইসলামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। এই যেমন, তিনি কাজী নজরুল ইসলামের 'কাণ্ডারি হুশিয়ার' গানটিতে মুগ্ধ হয়ে বলেন-
“তার লেখার প্রভাব অসাধারণ। তার গান পড়ে আমার মত বে-রসিক লোকেরও জেলে বসে গান গাইবার ইচ্ছা হত। আমাদের প্রাণ নেই, তাই আমরা এমন প্রাণময় কবিতা লিখতে পারি না। নজরুলকে বিদ্রোহী বলা হয়, এটা সত্যি কথা। তার অন্তরটা যে বিদ্রোহী তা স্পষ্ট বোঝা যায়। আমরা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যাব, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাব তখনও তার গান গাইব। আমি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরে বেড়াই, বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় জাতীয় সংগীত শোনবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, কিন্তু নজরুলের ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’র মত প্রাণ মাতানো গান কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না। কবি নজরুল যে স্বপ্ন দেখেছেন সেটা শুধু তার নিজের স্বপ্ন নয়, সমগ্র বাঙালী জাতির।“
হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই তার গান প্রান মাতিয়ে দেয়, শরীর-মনকে শিহরিত করে তোলে। তার স্বপ্ন কেবল তার স্বপ্নই ছিলনা, ছিল সমগ্র বাঙ্গালি জাতির স্বপ্ন। আজকের এই সুখী-সুন্দর বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। তিনি তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন ১৯৪৩ সালে। কাজেই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার কোনরুপ অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। আর তার স্বপ্নটি পূরণ হয় ১৯৭১ সালে।
তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বলে কি তার দেখা স্বপ্ন পূরণে তার কি কোন অবদানই থাকবেনা? স্বাধীন-সার্বভোম বাংলাদেশের যিনি সর্বপ্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়াতে তার কোন অবদান থাকবেনা এটা কি করে হয়?
তার অবদান ছিল, খুব ভালভাবেই ছিল। তিনি কিছু কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান রচনা করেছিলেন যা মুক্তিযোদ্ধাদের মন-প্রান দিয়ে যুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার গান ২৫-ই মার্চের কালো রাত থেকেই প্রচার করা হয়। কেননা, তার গান ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দেয়। দেশকে ভালবাসে না যে তার মনেও দেশের প্রতি ভালবাসা জন্মায় কাজী নজরুল ইসলামের গান শুনে। ভীরুদের মনেও সাহসের সঞ্চার হয় এই চির বিদ্রোহী কবির গান শুনে। এভাবেই কাজী নজরুল ইসলামের গান ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধতে অস্ত্র হাতে বাংলার দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পড়ে। বাংলার কোনদিকে কোন অবস্থা এসবসহ যুদ্ধের নানান ধরণের খবরাখবর প্রচার করা হত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। শুধু তাই নয়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিভিন্ন দেশাত্মবোধক জাগরণী গান প্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস বাড়িয়ে দিত। ২৫ মার্চের কালো রাত থেকে ৯ টি মাসই নজরুলের গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচার করে জাতিকে জাগরিত করে তোলার জন্য, উজ্জীবিত করার জন্য।
নজরুলের সেই গানগুলোতে বঙ্গমাতার অপরূপ সৌন্দর্যও ফুটে উঠেছিল। তার গানে তিনি বলেন-
'একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিণু পল্লীজননী।
ফলে ও ফসলে কাদা-মাটি-জলে ঝলমল করে লাবণী'
নজরুলের দেশপ্রেমিক মন সব সময় মুগ্ধ থাকত বাংলাদেশের রুপ-সোন্দর্যে। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের স্নিগ্ধ শ্যামল রুপের কোন শেষ নেই। এই রুপ দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যায়।তাই তিনি আরকটি গানে লিখেন-
'এই আমাদের বাংলাদেশ, এই আমাদের বাংলাদেশ।
যেদিকে চাই সি্নগ্ধ শ্যামল চোখ জুড়ানো রূপ অশেষ।'
বাংলার মাটি পবিত্র মাটি, খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি। বাংলা মায়ের প্রতি কবির মনে গভীর আবেগ জন্মেছিল। কবি কাজী সাহেব তার গানে লিখেন-
'ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি
আমার দেশের মাটি
এই দেশেরই কাদা জলে,
এই দেশেরই ফুলে-ফলে ।।
তৃষ্ণা মিটাই, মিটাই ক্ষুধা ।।
পিয়ে এরই দুধের বাটি।।'
কাজী নজরুলের ইসলামের গান থেকে আগুন ঝরে। সেই আগুনে পুরে মরে দেশের শত্রুরা। তার গানে হিন্দু মুসলিমের রেষারেষি ভুলে গিয়ে পুরো ভারতবর্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে, অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটিশদের তাড়িয়েছিল এই দেশ থেকে। একাত্তরেও তার গানে জেগে উঠেছিল তরুণ প্রান। এই দেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে, একাত্তরে যুদ্ধ জয় করতে কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক গানের যে ভূমিকা ছিল তা এক কথায় অনস্বীকার্য। তার জাগরণী গান মুক্তিযোদ্ধাদের মনে সাহস যুগিয়েছিল। তার দেশাত্মবোধক গান দেশকে প্রাণভরে ভালবাসতে শেখায়। স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিক্রম হলেও নজরুলের গান এখনো শিল্পির কন্ঠে অনুরণন হয়। তার গান সব কালেই সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে।
তবে তরুণদের মনে তার গান একটু বিশেষভাবেই জায়গা করে থাকবে । তার লেখা বাংলাদেশের রণসঙ্গীত তো চিরকালই এই দেশের তরুণরা গেয়ে যাবে।
'চল চল চল!
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণি তল,
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল।।
......
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশ্মশান,
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল!
চল রে নও-জোয়ান,
শোন রে পাতিয়া কান
মৃত্যু-তরণ-দুয়ারে দুয়ারে
জীবনের আহবান।
ভাঙ রে ভাঙ আগল,
চল রে চল রে চল
চল চল চল।।'
শেষ কথাঃ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও কাজী নজরুল ইসলাম একসুত্রে গাঁথা। একটি দেশ হবে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। নাম হবে বাংলাদেশ। এই স্বপ্ন সর্বপ্রথম কাজী নজরুল ইসলাম নিজে দেখেছিলেন এবং জাতিকেও দেখিয়েছিলেন তার কালজয়ী গান দ্বারা। তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তার কলম নামক অস্ত্র দ্বারা। সেই সংগ্রাম ছিল একটি স্বাধীন দেশের জন্য। আজকের এই সুখী সুন্দর বাংলাদেশের জন্য। এ কে আজাদ যথার্তই বলেছিলেন। "কাজী নজরুল ইসলামই বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা"- এই শিরোনামে তিনি ৩০ আগস্ট ২০১১ তে তিনি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় একটি কলাম লিখেন। তিনি সেই লেখাটির শেষের দিকে যা বলেছিনে তা দিয়েই প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আজকের লেখার ইতি টানছি।
"অথচ স্বাধীনতার প্রায় চল্লিশ বছর আগেই কাজী নজরুল ইসলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যার নামও তিনি দিয়েছিলেন- বাংলাদেশ। অর্থাৎ যেই স্বাধীন দেশটির জন্য আমরা গর্ব বোধ করি, যেই স্বাধীন দেশ আমাদের অহংকার, আমাদের মাথা উঁচু করে চলার চারণ ক্ষেত্র, সেই বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন আমাদের জাতীয় বীর বাঙালী জাতিস্বতার প্রাণের স্পন্দন, বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য দিক পাল কবি কাজী নজরুল ইসলাম।"
.........
প্রথম প্রকাশঃ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭। তবে আগের লেখার বেশ কিছু অংশ এখানে পরিবর্তিত হয়েছে।
..............
কবি বলেছিলেন-
'আমি চিরতরে দূরে চলে যাব
তবু আমারে দেব না ভুলিতে'
হ্যাঁ, সত্যিই তিনি আজ বহুদূরে চলে গেছেন। এপার থেকে ওপারে। কিন্তু তিনি তাকে ভুলতে দেন নাই আমাদের কাছ থেকে।
কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন ১৯৭৬ সালে ১৯৭৬ সালে। কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন এখনো, বেঁচে থাকবেন চিরকাল। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, বাঙ্গালী জাতি থাকবে ততোদিন আমাদের মনের মণিকোঠায় বেঁচে থাকবেন কাজী নজরুল ইসলাম।
বহুত হয়ছে। বহুত বকবক করছি। এই বকবকের কোন দাম নাই যদি তার জন্য একটু দোয়া না করি। আজ কবির ১১৯ তম জন্মবার্ষিকী। সেই উপলক্ষে আসুন না কবির জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটু দোয়া করি...
হে আমার প্রতিপালক, ওগো পরম দয়াময় আল্লাহ,
আপনি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মাফ করে দিয়ে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করে। আমিন!! ছুম্মা আমিন"!!
সবার কাছে অনুরোধ করব, জুম্মার নামাজ পড়েও সবাই দোয়া করবেন কবির জন্য।
২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫১
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: তাহলে তো ভালোই। অনেক সুভাগ্যবান আপনি...
শুভ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন...
২| ২৫ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা।
২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ..
৩| ২৫ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কবি অনেক ভাল আছেন
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই!!!! উনার শেষ প্রার্থনাইতো বলে দেয় আল্লাহ উনাকে কবুল করেছেন।
আর আল্লাহ যাকে কবুল করেন, তিনিতো ভাল থাকবেনই
+++
২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:০৩
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: হ্যাঁ আল্লাহ কবির দোয়া কবুল করেছেন।
আর এই গজলটি আমার এত এত প্রিয় যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না...
৪| ২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
অনুতপ্ত হৃদয় বলেছেন: প্রিয় কবির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
২৫ মে জাতীয় প্রিয় কবির জন্মদিনে যেন জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধা বিশ্ব ছাড়ায়ে যাক।
২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: সেটাই হোক মোদের প্রত্যাশা।
ধন্যবাদ....
৫| ২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: কবি ভক্ত??
লেখাটা মারাত্মক হয়েছে।।
আমার পছন্দের.....
একি অপরূপ রূপে মা তোমায়
হেরিণু পল্লীজননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা-মাটি-জলে
ঝলমল করে লাবণী....
এছাড়া বিদ্রোহী, কান্ডারী হুশিয়ার, কারার ঐ লৌহ কপাট সব পছন্দের কবিতা।।
মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
(রক্ত তো এখনই টগবগ করছে)
২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা....
রক্ত কইরা দেয় কবির কবিতা...
ধন্যবাদ ও ভালবাসা নিবেন..
৬| ২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
কবির শেষদিনগুলো ভালো কেটেছে, এরটা ভেবে বাংগালীরা খুশী থাকতে পারেন।
২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৯
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: হুম... আরেকটি খুশির খোরাক হলো কবির ইচ্ছা অনুযায়ী কবিকে মসজিদের পাশে কবর দেয়া হয়েছে।... আল্লাহ ওনার দোয়া কবুল করেছেন
৭| ২৬ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩০
সনেট কবি বলেছেন: অবশেষে আপনাকে নিয়ে একটা সনেট কবিতা লিখে পোষ্ট দিলাম, এখন আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায়।
২৯ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:২৮
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: করেছি মন্তব্য। দেরিতে প্রতিউত্তর দেয়ায় দুঃখিত।
৮| ২৬ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৪
ওমেরা বলেছেন: অনেক সুন্দর করে কবি নজরুল ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানালেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
২৯ শে মে, ২০১৮ রাত ৩:৩০
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সাথে ভালোবাসাও। দেরিতে প্রতিউত্তর দেয়ায় দুঃখিত।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমাদের নজরুল সরাসরি প্রিয়তে। আজ আমারো জন্মদিন। এটা নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।