নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

"বাটারফ্লাই ইফেক্ট ও একটি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটা কবিতা"

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪৭


"বাটারফ্লাই ইফেক্ট ও একটি বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটা কবিতা"

আমাজনের গহীন বনে একটি প্রজাপতির ডানার ফ্ল্যাপ অনেক দূরে টেক্সাসে ভয়াবহ টর্নেডোর কারণ হতে পারে। কিন্তু যেহেতু আমরা সমস্ত প্রজাপতি পর্যবেক্ষণ করতে পারি না, তাই আমরা টর্নেডোর নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণীও করতে পারি না।

সাধারণভাবে বলা যায়- শুরুর দিকে কোনো অখ্যাত , তুচ্ছ জিনিসকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ঘটাতে পারে। অথবা, এমন কোনো সামান্য কাজ যা ভবিষ্যতে পুরো একটা ইতিহাস বদলে দিতে পারে।

পৃথিবী বিখ্যাত দুটো ঐতিহাসিক বাটারফ্লাই ইফেক্ট হলো- নাগাসাকি বম্বিং ঘটনা। আর অটোমানদের কাছে বায়জান্টাইনদের পরাজয়।

জাপানের হিরোসিমা আর নাগাসাকি শহর দুটো এটমিক বম্বিং এর কারণে পৃথিবী বিখ্যাত। জাপানের আরেকটি শহরের নাম হলো- কোরোকি শহর। যে শহরটিকে বলা হয়- পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান শহর- "The Luckiest City"

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা জাপান বম্বিংএর টার্গেট হিসাবে কোরোকি শহরকে সিলেক্ট করে। সমস্ত পরিকল্পনা চূড়ান্ত। এখন বাকি শুধু কোরোকি শহরের উপর উড়ে গিয়ে - বোমা নিক্ষেপ করা। শহরের লক্ষ মানুষ জানেনা- তাদের ভাগ্যে কি ঘনিয়ে আসছে।
কিন্তু বাঁধ সাধলো কোরোকির আকাশে মেঘের আচ্ছাদন। যার ফলে,- আমেরিকার USAAF B-29 বিমান দশ হাজার পাউণ্ডের ফেটম্যান নামক মারণাস্ত্র বোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় - কোরোকি শহর থেকে নাগাাসাকি শহরে।

মুহুর্তেই মৃত্যু বরণ করে নাগাসাকির প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ। আর, একখন্ড মেঘ বাছিয়ে দেয় কোরোকির মানুষকে ।
পৃথিবীর ভাগ্যবান শহরে হিসাবে নাম হলো কোরোকির । "The Lucky City That Escaped Nagasaki's A-Bomb "- এই লেখায় এ বিষয়ে বিস্তারীত জানতে পারবেন।


বাটারফ্লাই ইফেক্টের আরেকটা উদাহরণ হলো- অটোমানদের কাছে কনসটান্টিনোপলের পতন।

কনসটান্টিনোপল ইউরোপ আর এশিয়ার ক্রসরোডে অবস্থিত। আজকে যেমন ম্যানহাটান বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী। ঠিক তেমনি- তৎকালীন বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত পায় কনসটান্টিনোপল বা বর্তমানের ইস্তাম্বুল। বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী এই শহর বসফোরাসের উপকন্ঠে অবস্থিত। বিশ্ববিখ্যাত সিল্করোড চলে গেছে এই শহর ভিতর দিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপে। চীন-ভারতের সমস্ত বাণিজ্যিক পণ্য এই পথ ধরে ইউরোপে প্রবেশ করে। তাই, এই শহরকে "গেট অব ইউরোপিয়ান ট্রেড" হিসাবেও বিবেচনা করা হতো।

শত বছরের সংঘাতের পর অটোমানদের কাছে বায়জান্টাইনদের পতন ঘটে ১৪৫৩ সালে মে মাসের ২৯ তারিখে। ইস্তাম্বুল অটোমানদের অধিকারে আসে। কিন্তু এই পরাজয় মেনে নিতে না পেরে চলতে থাকে শহরের চারপাশ দিয়ে বায়জান্টাইনদের চোরাগুপ্তা হামলা। বাণিজ্য পথে পণ্য সরবরাহের সমস্ত ট্যারিফ দিতে তারা অস্বীকার করে। ফলে-একান্ত বাধ্য হয়ে সুলতান ২য় মাহমুদ ইউরোপের সাথে ভারত-চায়নার সমস্ত বাণিজ্যিক রাস্তা বন্ধ করে দেন।

ইউরোপে পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো ইউরোপ জুড়ে নেমে আসে অর্থনৈতিক মন্দা। তারা খুঁজতে থাকে নতুন বাণিজ্যিক রুট। ১৪৯২ সালে ইতালীয় এক্সপ্লোরার কলম্বাস ভারতে আসতে গিয়ে চলে আসেন আমেরিকায়। প্রথমে তিনি বুঝতেই পারেন নি- ভাগ্য বদলের কি এক বিশাল জ্যাকপট তিনি আবিষ্কার করে বসে আছেন। অফুরন্ত সম্পদের এ যেন এক গুপ্ত ভাণ্ডার। আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের মেরে , লুট করে তিনি প্রচুর সোনাদানা, রপা নিয়ে স্পেনের মোনার্কের দরবারে উপস্থিত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপে।


এক্সোটিক ভূমির খোঁজে ভাগ্যান্বেষী ইউরোপয়ানদের শুরু হয় অভিযান। যা আর অভিযানেই থেমে থাকেনি। একের পর এক দেশ দখল করে অর্ধ পৃথিবীকেই তারা নিজেদের কলোনি বানিয়ে ফেলে। বিশ্বভূমিকে অতি সুস্বাদু পাইয়ের টুকরোর মতো ভাগ করে নেয় -বৃটেশ, ইতালী, ফ্রান্স, পর্তুগাল, ডাচরা। গড়ে ওঠে দুনিয়াব্যাপী ইউরোপিয়ান ইমপারিয়েলিজম।

একটা বাণিজ্যিক রুট বন্ধের এই ইফেক্ট পুরো বিশ্ব ইতিহাসকেই বদলে দেয়। বাটারফ্লাই ইফেক্টের এটি একটি ক্লাসিক উদাহরণ।


বাটারফ্লাই ইফেক্টের খুব সুন্দর এক রুপ ফুটে ওঠেছে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের এই কবিতায়। কবিতাটি আমি অনুবাদ করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সাপ্তাহিক পূর্ণিমায়।


একটি লোহার জন্যই একটি অশ্বখুর রইলো পড়ে,
অশ্বখুর না থাকায় ঘোড়াটিও রইলো দূরে;
ঘোড়া না থাকায় সৈনিক আর কাজে গেলোনা
সৈনিক না আসায় সব বার্তা রইলো অজানা;
বার্তা না জানায় যুদ্ধে হলো রাজার ভীষণ হার,
যুদ্ধে হার মেনে রাজা হলো রাজ্য থেকে বহিষ্কার।
অত্যাচারী রাজার কবল থেকে বেঁচে প্রজারা ধন্য,
আহা! এর সবকিছুই হয়েছে শুধু একটা পেরেকের জন্য"।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.