আল্লামা সমাচার...

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬

০১।
পীর সাহেব চরমোনাইর মাহফিল পরলো চাষাড়া ঈদ্গাহ ময়দানে। অনেক দিন হুজুরের মাহফিলে যাইনা,তাই সেদিন নানা ব্যাস্ততা থাকার পরেও সন্ধ্যা নাগাত মাহফিলে চলে গেলাম। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক এর দায়িত্বে ছিলাম ,মাহফিলের শেষ অবধি। মাহফিল শেষে হুজুর জনসাধারণের মোসাফাহ
নিচ্ছিলেন ।তো আমাদের মাহফিল গুলোর সাধারণ নিয়ম হলো ,মাহফিল শেষ হলে আমরা মাইকে সামনের প্রোগ্রামগুলোর কথা জানিয়ে দেই ।কোনদিন
কি প্রোগ্রাম ,প্রধান অতিথি কে ,ইত্যাদি ইত্যাদি।সে হিসেবে আমি স্টেজের উপরে উঠে পীর সাহেব হুজুরের একেবারে কাছেই অবস্থান নিচ্ছিলাম ।
আর আমাদের শাখা ছাত্র আন্দোলনের সহ- সভাপতি আব্দুল হান্নান ভাই ,ইশা ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও তাফসীর মাহফিলের দাওয়াত দিতে লাগলেন স্টেজ থেকে।
তো উনি বলছিলেন ,উক্ত তাফসীর মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ,"আল্লামা মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম ,পীর সাহেব চরমোনাই ।
আমি যেহেতু আগেই পীর সাহেব হুজুরের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলাম ,সে সুবাদে যখন হান্নান ভাই আল্লাম মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম বললেন ,ঠিক
তখন হুজুর একটা কড়া ধাবার দিলেন ,বললেন কি! এত আল্লামা আল্লামা ,কেডা কয় এডি !! এত রাগের স্বরে আল্লামা বলতে নিষেধ করলেন
আশেপাশে সবাই শুনতে পেল ও হান্নান ভাইকে নিষেধ করে দিল ।হান্নান ভাই বেচারাও অপ্রস্তুত ছিলেন পুরাই ।উনিও আল্লামা বলতে চায় নি।
কিন্তু এত বড় মানুষের নাম মুখে আনলেন ,তাই অনিচ্ছাকৃত আল্লামা নামটি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ।কিন্তু এতে তিনি পীর সাহেব হুজুরের রিএকশন দেখে
আরও হতভম্ব হলেন ।বাংলাদেশের মত ছোট একটা দেশে যার কম করে হলেও লাখ চল্লিশ মুরীদ/অনুসারী/ফলোয়ার রয়েছে ।দেশের বড় বড় ৫/৭ টি সংগঠনের
আমির/উপদেষ্টা ,২০/৩০ টার মত ছোট বড় শাখা সংগঠন যার অনুগত ,তার নামের বেলায় আল্লামা বলে ফেললে এতটা রিএকশন হবে সেটা বোধয় হান্নান ভাই
ভাবতেও পারেন নাই ।

(দুই)
দেশে এখন নিত্য নতুন আল্লামার কোন অভাব নাই ।কয়েকদিন কিছু ওয়য়াজ মাহিফিল বা দু একটা সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে পারলেই তার নামের আগে আল্লামা উঠে যায় ।
আমার জানামতে আল্লামা শব্দের অর্থ মহাজ্ঞানী ।অথচ যারা আল্লামা শব্দটি নামের আগে ব্যাবহার করে ,তারা ইসলামের ক্ষুদ্র কয়েকটি শাখায় হয়ত বুৎপত্তি অর্জন করেছেন।
অনেকে বুৎপত্তি অর্জন তো দূরের কথা ,ইসলামের মৌলিক জ্ঞানেও ঘাটতি ।সম্প্রতি কোন এক কবি নামের আগে ঘটা করে আল্লামা লাগাচ্ছেন ।মিউজিক দিয়া গজল গাওয়া,
ডিজিট্যাল ছবি ফেসবুকে দেয়া সহ প্রভৃতি ক্লাস ওয়ান টু লেভেলের মাসলা মাসায়িল নিয়াও যার প্রশ্নের শেষ নেই ।কিছুদিন গান গেয়ে ,কয়েকজন মুরুব্বিদের স্মেহ পেয়ে
তিনিও আল্লামা বনে গেলেন ।কিন্তু আপত্তি এখানে ছিলনা ,তিনি যে মস্ত বড় আল্লামা ,
আল্লামা কাশ্মিরী ,আল্লামা ইকবাল পর্যায়ের সেটা বোঝানোর জন্য ,ফেসবুকে আল্লামা ইকবাল (রহ) এর একটা দাড়ি কামানো ছবি দিয়ে বোঝাতে চাইছেন
আল্লামা ইকবাল দাড়ি চুল কামানোর পড়েও আকাবিরগণ সবাই তাকে আল্লামা বলে ,
এদেশের মানুষ আল্লামা বলে ,তাহলে তার লম্বা চুল ,আর খোচাখোচা দাড়ির পড়েও কেন তাকে আল্লামা বলা হচ্ছেনা ।কেন তার নামের সাথে আল্লামা লাগালে সবাই প্রশ্ন তুলে।
তিনি হয়তবা প্রসংশা বাস্পে এতই টইটুম্বুর যে তিনি ভুলেই গিয়েছেন ,আল্লামা লকব টি লাগালেই আল্লামা হওয়া যায়না ,বরং এটা অর্জনের বিষয় ।
(তিন)

বেপর্দা নারীদের সাথে মিটিং ,ফিটিং ,চ্যাটিং সব আমাদের সমাজে অতি সস্তা ।আলেম ,জামেল ,ভাল খারাপ কারো মুখেই পর্দার কথা নাই ।
এলাকার বুজুর্গ ভাই থেকে শুরু করে ছ্যাছড়া চোর সবারই হলিউড ,বলিউডে ব্যাপক বুৎপত্তি আছে ।খোদ কওমীয়ানরাও আজকাল অস্কার মুভি বিশ্লেষণ করছে
কেন এটা পেল ,কেন ওটা পেলনা ।সমাজ ,সংস্কৃতি ও চলমান প্রেক্ষাপটে এসব কোন অপরাধ তো নয়ই ,বরং আধুনিকতার মানদন্ড ।কিন্তু শেয়ারে ইসলাম বলতে আলাদা
পরিভাষা আছে ।ইসলামের মৌলিক বিধান বলতে আলাদা পরিভাষা আছে ।আপনি বেপর্দা হলে আপনি গুণাহ করছেন ,কিন্তু সেটার জন্য এক্সকিউজ দাড় করায়েন না
যে আপনি এজন্য কাজটা করছেন ,এজন্য কাজটা যায়েজ ।তাহলে চোরও বলবে ,খাইতে না পেয়ে চুরি করছি ,
ধ্বর্ষক বলবে ২৫ বছরের আগে যেহেতু দেশে বিয়া করা যায়না ,তাই যৌবনের উন্মাদনা মিটিয়েছি মাত্র .........
সামিয়া আপু বলবে ,পিএইচ ডি করতে গিয়া সবাই যেহেতু থিসিস চুরি করে আমিও একটু করেছি .........
এক্সকিউ দাড় করালে এক্সকিউজের অভাব নাই ,তবে অপরাধ স্বীকার করতে সবাই পারেনা ।আল্লাহর ক্ষমা তাদের জন্যই ,যারা অপরাধ স্বীকার করে ও অনুশোচনা গ্রস্থ হয় ।
তাই ,ইসলাম কি বলে সে অনুয়ায়ী আমি কাজ করছি কিনা সেটা মুখ্য ......।আমি যে কাজ করলাম সেটার জন্য ইসলামের সমর্থন খুজলে আমার ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে গেল ।
,
কপি পোস্ট - মুহাম্মদ জুবায়ের আহসান ভাই।

০ টি +০/-০