আমার দেখা চরমোনাই। ১ম পর্ব।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:১২

সময়টা ২০১৫ এর বসন্তের প্রারম্ভে। অফিস থেকে ছুটি নিলাম কয়েকদিনের। নিজের দাওয়াত দেওয়া ও এলাকার নতুন পুরনো আরো অনেকের সাথে ১ম বারের মত চরমোনাই যাচ্ছি। নিজের ভিতরে আবিষ্কার করছি অন্যরকম এক অনুভুতি বা শিহরন। (বলে রাখা ভালো আমার দ্বিনের পথে আসা একটু ব্যাতিক্রম। অনেকে চরমোনাইওয়ালার ক্ষেত্রে হয় কি তারা আগে দ্বিন থেকে বেখায়াল ছিল; চরমোনাই হযরতদের কোন ওয়াজ শুনে বা চরমোনাই বার্ষিক মাহফিলে গিয়ে দ্বিনের বুজ পায়। অতঃপর আস্তে আস্তে আদ্ধাত্মীক, সাংগঠনিক, রাজনৈতিক সহ সমস্থ কাজে সম্প্রিক্ত হয়। কিন্তু আমার এ পথে আসা হয় ভিন্নভাবে 'পীর সাহেব চরমোনাইর খুলসিয়াতের সহীত রাজনৈতিক(আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠার) জিহাদ দেখে। শায়েখে র: এর "মানুষ হওয়ার উপায়" ছোট্ট বইটা পড়ে প্রথম আঘাত! তারপর কোন আত্মশুদ্ধির মাহফিল নয়, আমার প্রথম শায়েখে চরমোনাইর মুখোমুখি হয় চট্টগ্রাম ৪ আসনের কর্মী সম্মেলনে। শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতী ফয়জুল করিম ছাহেবের ডায়মন্ড টাচ কমিউনিটি সেন্টারের সেই ২১ মিনিটের বিচক্ষণ "ভোট" এর বক্তব্য এই ক্ষমতাসিন বস্তুবাদী সংগঠনের তথাকথিত যুব নেতাকে আল্লাহর ইচ্ছায় পৌছে দেন ধিরে ধিরে আজকের ইবাদতীয় সংগঠন ইসলামী যুব আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি পর্যায়ে।)

পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত হয় আমাদের মিরসরাই কাফেলা এবার যাবে চট্টগ্রাম মহানগর সাথিদের সাথে উনাদের রিজার্ভকৃত বিশাল লঞ্চ "সোনার তরি" তে সদরঘাট হয়ে সোজা চরমোনাই। ২৫ শ এর মত যাত্রী বসা যায় অনায়েসে ৪ তলা বিশিষ্ট এ লঞ্চে। কিন্তু বিধিবাম শেষ মেস গাদাগাদি করে বসতে হয় প্রায় ৪ হাজার মানুষ! আসলে কতৃপক্ষের কিছু অনুমানের ভূল, শেষ সময়ের অতিরিক্ত লোক যোগদান, নতুন পথে যাত্রা সব মিলিয়ে ৭/৮ ঘন্টার জার্নি ২৭/২৮ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর বিরক্তিকর যাত্রায় রুপ নেয়। বার বার জাহাজ মাটিতে লেগে যাচ্ছিল, ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়া, বসার যায়গা সংকুলান সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল এ মানুষগুলো যাদের নিয়ে যাচ্ছি সবাই গিয়েই চম্পক দিবে আর আমাদেরো খবর আছে।


ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুম ঘুম চোখে যখন কাছাকাছি পোঁছাই তখন সকাল। আলহামদুলিল্লাহ্‌! নামার সাথে সাথে অসাধারণ এক অনুভুতি। বরকতময় ময়দানের ভিন্ন অনুভুতির ঝলক নিয়ে একটু পরেই আসছি।
বাদ যোহর থেকে আমিরুল মুজাহীদিন হযরত পীর সাহেব চরমোনাই'র উদ্ভোধ্বনি বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে তিন দিনের ইজতেমা। ৪ নং মাঠে ছামিয়ানার নিছে স্থান পাইনাই। পাশে এক পুকুরপাড়ের সাথে ঘেসে খোলা আকাশের নিচে রোদের ভিতর সাথে আনা তেড়পাল বিছিয়ে সবাই বসলাম। এবার মানুষগুলোর জন্য সত্যি কান্না পাচ্ছে। ২৮ ঘন্টা খেয়ে না খেয়ে, পানির কষ্টে, বাথরুমের কষ্টে, জাহাজে ঘুমানো দূরে থাক একটু পা ছড়িয়ে বসতে না পারার কষ্ট সয়ে এখন আবার..!
বলে রাখা ভালো এ মানুষগুলো কিন্তু সবাই একদম সাধারণ শ্রেনীর মানুষ নয়। ভিবিন্ন শ্রেনী পেশার, আছে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,প্রশাসন, আলেমেদ্বিন, এক ব্যাংক ম্যানাজার, বস্তুবাদী সাংগঠনিক নেতা, ব্যাবসায়ী, জন প্রতিনিধি, কৃষক,মাজুর,ছাত্র, বৃদ্ধ সব। কয়েকজন মুরুব্বির একজন তো স্ট্রেচার ছাড়া হাটতেই পারেনা নামাজ পড়ে বসে বসে। এরা অসহায়ের মত বসে থাকলেও যে যার যায়গায় অধিপতি। এ প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি "এরা উচিত ছিল আমাদের(যারা দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেছি) তাদের একটা একটা সাগরে ফেলে দিয়ে অথবা এখানে এসে গালে দুটু থাপ্পড় দিয়ে "পাইজলামির আর জায়গা পাছনা?" বলে একে একে চলে যাওয়া তাদের আরাম আয়েসের নিড়ে। কিন্তু তা হয়নি কেন? হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তা না হয়ে সবাই মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে আত্মার আত্মীয়তার সুগভীর বন্ধুত্বে মিশে ছিলাম একান্তে। মাওলার রহমত, এ যায়গার বরকত ও হয়তো মাওলা রাখছেন। না হয় আজ তিন বছরের যাওয়া আসায় শুধু মাহফিল চলাকালীন সময়ে কোথায়ো একট মশা, মাছি, কাক, কুকুর, বেড়াল ও ডিস্ট্রাব করবেনা কেন? এত অত্যাচার করি ৬৫/৭০ লাখ লোকে এ ময়দানের উপর রান্নাবান্না ময়লা পেলে, একটুও দুর্ঘন্ধ ও তা থেকে পাইনি কেন? এগুলা কেরামত ধরিওনা প্রচার ও কেউ করেনা হয়তো ব্যাপারটা প্রাকৃতিক। যেগুলো কেরামত বলি সেগুলো হল এ জমানায় সুন্নাতের এত পাবন্দি এত গুরুত্ব এ ময়দানে তাই অবাক হই। মুখে দাড়ি নাই, গায়ে সুন্নাতি জামা নেই সেই লোকটির হাতেও মেসওয়াক, বাথরুমে যায় আগে বাম পা দিয়ে। তাহাজ্জুতের সময় তাকে জোর করে জাগানো লাগেনা আবার বয়ানের সময় অজোরে কঁাধে! জামাতে নামাজ আদায় করে, কবু নামাজ ছাড়বেনা বলে নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করে। দাড়ি রাখার পাক্কা নিয়ত করে, এক মদখোর, যার প্রতিদিন মদ না হলেই নয় এসে বলে ভাই পাগড়ীটা নতুন কিনেছি একটু বেধে দেন! উনার মুখের নিস্পাপ চাহনীটা.. এগুলুই কেরামত। হা আমি বলি এগুলুই কেরামত না হলে আর কোনটা

০ টি +০/-০