নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাঙালী পরে আগে আমি ভারতীয়

অরিন্দম চক্রবত্রী

কলকাতায় থাকি

অরিন্দম চক্রবত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্পষ্টতর হয় শব্দাতুর ঝর্না

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০৫



গভীর খাদকে একপাশে রেখে পাহাড়ের গায়ে পাক খেতে খেতে উঠে যাচ্ছি। কখনও দু’ধারে কফি খেত, আঙুর বাগান আর ইউক্যালিপটাসের রমনীয় বন। যেতে যেতে একসময় দূরের অস্পষ্ট ঝর্না স্পষ্টতর হয়ে শব্দাতুর হয়।
বরফচূড়া নেই, বরফ পড়া নেই, টয় ট্রেন নেই। এখানে আছে শুধুই প্রকৃতি। আছে, তবে ভিন্ন ভাবে। কখনও সে উদাসী, কখনও বা কল্পতরু। তাই বারো বছর বাদে বাদে আপন খেয়ালে এখানে রঙের হোলি খেলতে ভুবনখ্যাত ‘কুরুঞ্জি ফুল’ ফোটে। সেই কবে ‘রম্যাণি বীক্ষ্য’–তে পড়েছিলাম ‘... কোদাইকানালকে অনেকে নন্দনকানন বলে, সারা বছর এমন ফুলের বাহার নাকি নন্দনকাননেও নেই।’ মেজর ডগলাস হ্যামিল্টনের দেওয়া খবর অনুসারে এখানে ১১৪ রকম পাখির দেখা মেলে। তাদের ডাকে ডানা মেলে নেচে বেড়ায় অসংখ্য প্রজাপতি। পাহাড়ি বাঁকের চরকিপাক খেতে খেতে শৈলশহরে ঢোকার ৮ কিমি আগে সিলভার কাসকেড-এর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ১৮০ ফুট উচ্চতা থেকে অঝোরে ঝরছে সাদা জলরাশি। গায়ে এসে লাগে জলের হালকা ছিটে। যেন পুষ্পবৃষ্টি। পাশে পুরসভার স্বাগত অভ্যর্থনা। অভ্যর্থনা-পর্বেই এক অসাধারণ রম্য উপহার। ১৮২১ সালে সার্ভে সম্পন্ন হলেও পালানি পাহাড়ের ৭,৩৭৫ ফুট উচ্চতার কোদাই শৈলাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয় ১৮৪৫ সাল থেকে। ওই বছরেই আমেরিকান মিশনারিরা ‘সানি সাইড’ এবং ‘শেলটন’ নামে দুটো বাংলো তৈরি করেন। কোদাই মানেই লেক। ২৪ হেক্টর ব্যাপী তারকাকার লেকের জলে বোটিংয়ের অঢেল ব্যবস্থা। মনেই হল না লেকটির বয়স প্রায় দেড়শো হতে চলল। ১৮৬৩ সালে অবসরের পরে মাদুরাই-এর তৎকালীন কালেক্টর স্যর হেনরি লেভিঞ্জে জলাশয়টি নির্মাণ করান। তুতিকোরিন থেকে আসা নৌকো প্রথম ভাসে এই লেকের জলে। ১৮৯০ সালে বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠা, আর বোটিং করা শুরু হয়েছে তাও প্রায় ১০০ বছর হতে চলল। জলে নামতে ভয় পেলে ঘোড়ায় চাপুন। ঘোড়া ভাড়াতে মিলবে। দিন বা ঘণ্টার হিসেবে সাইকেলও ভাড়া পাওয়া যায় এখানে। অভ্যেস থাকলে ভাড়া করা সাইকেলে চক্কর মারুন লেকের চারদিকে। লেকের কাছাকাছি এবং বাস স্ট্যান্ডে প্রচুর ট্র্যাভেল এজেন্সি আছে। তাদের সঙ্গে মোড়ক-সফরে বেড়িয়ে দেখে নিতে পারেন শহরের অন্যান্য দ্রষ্টব্য। ইচ্ছে করলে অবশ্য হেঁটেই শহর দর্শন সম্ভব।
লেকের গা-ঘেঁষা পূর্বদিকে ব্রায়ান্ট পার্ক ফুলের জন্য বিখ্যাত। কাচের ঘরে আছে কিছু বিরল প্রজাতির গাছ। প্রতি বছর মে মাসে ফ্লাওয়ার–শো হয় এখানে। এমনিতে রোজ দিন খোলা থাকে। লেকের ধার থেকে কোয়ার্কাস ওয়াক ধরে ১ কিমি মতো পথ হেঁটে খাড়াই ঢাল বেয়ে শহরের দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়া যায়। ১৮৭২ সালে কোয়াকার সাহেব এই পথে হাঁটতেন, তাই এই নাম। নিচে খাড়াই ঢালে উপত্যকা ও শহর সংলগ্ন অঞ্চলের আদিগন্ত সবুজ অসামান্য হয়ে প্রকাশিত হয়। টেলিস্কোপিক হাউসে চোখ লাগিয়ে খানিক সবুজের গন্ধ নিয়ে নিলাম। অনেক দূরের দুই বাঁধ ও আরও অনেক কিছু হাতের নাগালে চলে আসে এখানে। ৫ কিমি দূরে পাহাড় যেন হঠাৎ করে বিপজ্জনক অতলে ঝাঁপ দিয়েছে গ্রিন ভ্যালি ভিউ-তে। মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের চোর-পুলিস খেলা চলে ৫ কিমি দূরের পিলার রকস-এ। আকাশমুখী ১২২ মিটার উঁচু পাথর আকাশ ছোঁবে বলে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে এখানে। ১৮৯৫ সালে শেনবাগানুর মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠা। ৩০০ প্রজাতিরও বেশি অর্কিড, পালিয়ান উপজাতির নানা প্রত্ননিদর্শন নিয়ে দারুণ এই সংগ্রহশালা। লেক থেকে ৩ কিমি দূরের কুরুঞ্জি আন্দাভার মন্দিরে পুজো পান মুরুগান। এখান থেকে অদ্ভুত সুন্দর ভাবে পালানি ও ভাইগাই বাঁধের আপাদমস্তক ধরা দেয়।

ব্যাকপ্যাক
যাওয়া- কোদাইকানাল যেতে নামতে হবে কোদাইকানাল রোড স্টেশনে। হাওড়া থেকে সরাসরি কোদাইকানাল রোড যেতে ধরুন ১২৬৬৫ কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি প্রতি সোমবার বিকেল ৪.১০ মিনিটে ছেড়ে গন্তব্যে পৌঁছয় ৩য় দিন ভোর ৫.০৩ মিনিটে। ভাড়া: ২এ-২,৯৬০ টাকা, ৩এ-২,০২০ টাকা, স্লিপার-৭৭০ টাক। তবে ট্রেনের সুবিধে পেতে চেন্নাই হয়ে যাওয়াই ভাল। চেন্নাই থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন মিলবে।
থাকা- এখানে অজস্র হোটেল। তবে চলতি ভাড়া মরশুমে দ্বিগুণ হয়ে যায়। দামেও দরাদরি চলে। রাজ্য পর্যটনের হোটেল: হোটেল তামিলনাড়ু, ৪৭, ফার্ন হিল রোড, ফোন: (০৪৫৪২) ২৪১৩৩৬/৯১৭৬৯-৯৫৮২৪/৮৯৩৯৮-৯৬৩৯৩। ভাড়া: ১,৭৫০-৮,০০০ টাকা।
খাওয়া দাওয়া– নানা খাবারের প্রচুর রেস্তোরাঁও আছে। এখানকার বাড়িতে তৈরি চকোলেট ও চিজ বিখ্যাত। খুব কম দামে মিলবে ফিল্টার কফি ও শুকনো ফল। এখানকার জ্যাম, ব্রেড, বাটার, চীনেবাদাম সুস্বাদু।
বিশদে– তামিলনাড়ু ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন, দক্ষিণাপণ কমপ্লেক্স, জি ২৬, গড়িয়াহাট রোড, কলকাতা ৭০০ ০৬৮ ফোন: (০৩৩) ২৪৭২-৯৬১১।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:১৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: অরিন্দম চক্রবত্রী,





বেশ শব্দ করেই কোদাইকানালের ঝর্না বইয়ে দিলেন লেখাটিতে ।
ভালো লাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.