![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই অধ্যায়ে ডকিন্স ধর্মের ধ্বজাধারীদের দ্বারা হওয়া শিশুদের ওপর নির্যাতন এবং ধার্মিকরা কিভাবে শেষে নাস্তিক হয়ে যায় তাই দেখিয়েছেন | এই দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র আছে | কার্যকারণ সম্পর্ক আছে | সমস্ত ধার্মিক থেকে নাস্তিক হয়ে যাওয়া লোকগুলি শিশুকালে ধর্মের ধ্বজাধারীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে | তাই বড় হয়ে তারা নাস্তিক হয়ে গেছে |
1] ডকিন্স শুরু করেছেন এদগার্দ মর্টারা বলে ৬ বছর বয়সী এক ইহুদি শিশুর গল্প দিয়ে | এই শিশুটির দেখাশোনা করত আনা মরিসি নামে এক ক্যাথলিক খ্রিস্টান নার্স | শিশুটি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং প্রায় মরনাপন্ন হয়ে যায় | বিনা বাপ্তাইজিত শিশু মরলে নরকে যায় বলে আনার শোনা ছিল | তাই সে শিশুটিকে বাপ্তায়জিত করে | সঙ্গে সঙ্গে ক্যাথলিক চার্চের পুলিস এসে শিশুটিকে তার বাবা মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় | এখন থেকে শিশুটি আর ইহুদি নয় সে খ্রিস্টান | ছয় বছরের শিশুটির ওপর এর ভীষণ ট্রমাটিক প্রভাব পড়ে | এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে খ্রিস্টান দেশে ইহুদিরা ইহুদি চাকরবাকর কেন রাখে না ? খ্রিস্টান চাকরবাকর কেন রাখে ? কারণ ইহুদি চাকর সাবাথের দিনে কাজ করবেনা | খ্রিস্টান চাকর করবে | সেই জন্য ইহুদি চাকর রাখা হয় না | ধর্ম ঘর গৃহস্থালীর কাজেও নাক গলায় এইভাবে |
কিন্তু কেন চার্চ এরকমটা করলো ? কারণ চার্চ ভাবছে যে তারা এক মহা উপকার করলো মর্টারার, তাকে ইহুদি মা বাবার কাছ থেকে উদ্ধার করে | এইটাই চার্চের মনস্তত্ব | চার্চ বুঝতে পারে না যে অন্যেরা কেন এটা বুঝলো না | চার্চ জানে যে তার বিশ্বাসটাই জগতে একমাত্র সত্যি আর অন্যগুলি মিথ্যে | চার্চ বুঝলো না যে ওই সময় এদগার্দর ধর্ম নয় বাবা মায়ের ভালবাসা দরকার ছিল |
2] উপরের প্যারাটা কেন হাইলাইট করলাম সেটা পরে বলব | এরপর ডকিন্স বলেছেন যে কিভাবে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয় ধর্মের নামে | চার্চের নির্যাতনের দুটি পদ্ধতি হলো : যৌন নির্যাতন আর পাপের ধারণা | বাচ্চাদের মনের ওপর দুটোরই ভয়ংকর প্রভাব পড়ে | যৌন নির্যাতন করে ক্যাথলিক চার্চ মোটা রকম ক্ষতিপূরণ দেয় | কিন্তু তাতে শিশুমনের ক্ষতি ঠিক পূরণ হয় না |
3] আর আছে পাপের ভাবনা | পাপ করলে খ্রিস্ট ধর্মে নাকি অনন্তকাল নরকবাস লিখা আছে | এই নরকের ভয়াল ভয়ঙ্কর চিত্র শিশুদের সামনে তুলে ধরা হয় | তাতে তাদের মানসিক ক্ষতি হয় | প্যাস্টর কিনান রবার্টস শিশুদের নরকদর্শনের জন্য হেল হাউস বলে এক থিয়েটার করত | তাতে বারো বছরের শিশুদের নরকের নানা ভয়াবহ দৃশ্য দেখানো হত | বহু শিশুমনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল | প্যাস্টর রবার্টস অবশ্য এতে ভালই দেখেছেন | কিছু খারাপ দেখেননি |
4] এর পরের সমস্যা হলো যারা আস্তিক থেকে নাস্তিক হয় (বেশিরভাগই যৌন নির্যাতন আর নরকের ভয়ে হয় ) তাদের অবস্থা | তাদের সমস্ত সামাজিক নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে যায় | তাদের বন্ধুরা তাদের ছেড়ে যায় | প্রিয়জনেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় | সমস্ত জীবনটাই যেন অর্থহীন হয়ে যায় |
5] এছাড়া ডকিন্স শিশুদের উপর সেন্সরশিপের বিরোধিতা করেছেন | তিনি দেখিয়েছেন যে শিশুরা যদি সম্পূর্ণ তথ্য না জানতে পারে তাহলে ভুল পথটাকে ঠিক ভেবে ভুল পথে যাবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে | সুতরাং শিশুদের সেন্সরশিপ করাটা উচিত নয় |
6] এছাড়া ডকিন্স শিক্ষা জগতের কলঙ্ক বলেছেন সৃস্তিতত্ববাদ পড়ানোকে | কোনো স্কুল সৃস্টিতত্ববাদ পড়ালে সেটা ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করবে সেটাই তার অভিমত |
7] ডকিন্স আরো বলেছেন যে শিশুদের কোনো ধর্ম হয় না , তাদের বাবা মায়ের ধর্ম তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় |
8] এছাড়াও ডকিন্স দেখিয়েছেন যে শিক্ষিত মানুষেরা ধর্মগ্রন্থের ব্যাপারে খুব কমই জানেন | যেমন আমেরিকায় ৭৫% ক্যাথলিক আর প্রটেস্টান্ট একজন ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রফেটের নামও জানে না | ৬৬% এর বেশি লোক জানে না কে সারমন অন দা মাউন্ট বলেছিল | বেশিরভাগ লোক মনে করে মোজেস যিশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন | এইধরনের অজ্ঞতা আমেরিকার মত ধার্মিক দেশে দেখা যায় |
আসুন দেখা যাক ডকিন্সের কথা কতদুর সত্যি |
1] ধর্মের নামে শিশু নির্যাতনের বিষয়টির সাথে আমি একমত | আমি বরং হিন্দু আর মুসলমানের এবিষয়ে অবদানটি উল্লেখ করতে চাই | বহু হিন্দু ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে | লেটেস্ট অভিযোগটি হলো আসারাম বাপুজীর বিরুদ্ধে | ইনি গুজরাটের ধর্মগুরু | এনার বিরুদ্ধে নিজের নাতনির বয়সী শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে | বাপুজি এখন সপুত্র জেলে | তার অনুগামীরা একের পর এক সাক্ষীদের হত্যা করে চলেছে গুরুকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে |
মুসলিম পীর সাহেবদের বিরুদ্ধেও মেয়েদের যৌন হেনস্থার কাহিনী শুনতে পাওয়া যায় | তসলিমা নাসরিন তার লেখায় পীর সাহেবদের এহেন নোংরামীর উল্লেখ করেছেন | তিনি নিজেই এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন |
2] আর পাপের ধারণা? সেবিষয়েও আমি একমত | বহু হিন্দু ও মুসলিম ধর্মগুরু হস্তমৈথুনকে নানারকম বিটকেল রোগের কারণ বলেন | সমকামিতার পাপের ফল নিয়ে লম্বা লম্বা বক্তৃতা দেন | এর ফলে বহু যুবক মানসিক রোগে ভোগেন | আমিও এককালে ভুগেছি | মুসলিম ধর্মগুরুরা বলেন দুনিয়ার সবই খারাপ | এর ফলে মুসলিম সমাজ আধুনিক দুনিয়ায় কোনো জায়গা করে নিতে পারে না | হিন্দুরা বলে গোমাংস খাওয়া পাপ | তাই হিন্দুরা গোমাংস খেলে বমি করে | আরো কত বলব ....|
কিন্তু কেন এমনটা ধর্মগুরুরা করে ? আগে এদগার্দ মর্টারার গল্পটার পরের প্যারাটা হাই লাইট করেছিলাম | কারণ ওই প্প্যারায় বলা আছে যে ধর্মগুরুরা মনে করেন যে তারা মহা উপকার করছেন | এই হলো শুধু খ্রিস্টান ধর্মগুরুর মনস্তত্ব নয় , প্রায় সব ধর্মগুরুর মনস্তত্ব | তারা মনে করে তারা মহা উপকার করছে | হিন্দু যুবক অনার কিলিং করে ভাবে আমি বংশের মুখ উজ্জ্বল করলাম | মুসলিম যুবক জিহাদে নিরীহ লোকদের মেরে ভাবে আমি ইসলামের সেবা করলাম | খ্রিস্টান যুবক অন্য ধর্মকে গালি দিয়ে ভাবে আমি খ্রিস্টের সেবা করলাম | সবাই ভাবে আমি খুব ভালো কাজ করলাম | কেউ খারাপ কাজ করতে চায় না | এটাই এদের মনস্তত্ব |
3] আস্তিক থেকে যারা নাস্তিক হয় তাদের বিষয়ে ডকিন্স যা বলেছেন আমি তার সাথে একমত |আমি শুধু যোগ করতে চাই যে শুধু সমাজ তাদের পরিত্যাগ করে তাই নয়, তাদের মেরেও ফেলে | লেটেস্ট উদাহরণ সমগ্র পৃথিবী জুড়ে নাস্তিকদের উপর আক্রমন | রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর রহমান ,অনন্তবিজয় দাস-এর মত নাস্তিক বাংলাদেশী ব্লগাররা, ভারতের নরেন্দ্র দাভলকর, মালেশাপ্পা কালবুর্গি, গোবিন্দ পানসারেদের মত নাস্তিকেরা, হলান্ডে থিও ভ্যান গগ... আরো কত কি | এই পৃথিবী অত্যন্ত অসহিষ্ণু হয়ে গেছে |
4] শিশুদের উপর সেন্সরশিপ নিয়ে ডকিন্স যা বলেছেন আমি তার সাথে একমত | শিশুদের সবকিছু জানতে দেয়া উচিত | তা না জানলে শিশুরা ভুল পথে যেতে পারে |এর সাথে আমি যোগ করতে চাই যে স্কুলে যৌনশিক্ষা দিলে শিশুরা পরিনত বয়সে এইডস-এর মত যৌনব্যাধির শিকার হবে না | সুস্থ যৌনজীবন লাভ করতে পারবে | ভারতে সেটি সম্ভব নয় কিছু ধর্মীয় বদমাইশের জন্য | অনেকে হয়ত এখুনি বলবেন কি নার্সারী বা প্রাইমারির শিশুরা সেক্স নিয়ে পড়বে? আজ্ঞে না | ওই বয়সে তারা ওগুলো কিছু বুঝবে না | তাদের পড়াতে হবে ১৩-১৪ বছর বয়স থেকে, যখন তারা বুঝতে পারে |
5] এছাড়া শিশুদের ধর্মগ্রন্থ ও নাস্তিকদের রচনা দুটোই পড়ানো উচিত | তাদের নিজেদের বেছে নিতে দেয়া উচিত যে তারা কোথায় যাবে | সব সময় তাদের গাইড করার কুফল হলো তাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তির বিকাশ হয় না |
৬] ডকিন্স সৃষ্টিতত্ব স্কুলে পড়াবার বিরোধী | কিন্তু আমি একমত নই | আমি মনে করি বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ব দুটি পড়ানো হবে | ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা বেছে নেবে যে তারা কোনটা নেবে | এতে তাদের জ্ঞান সম্পূর্ণ হবে আর চিন্তার উন্নতি হবে | ডকিন্স কখনো বাকস্বাধীনতাকে মহামূল্যবান বলেন | কখনো আবার সেই বাকস্বাধীনতা খন্ডন করে বসেন | এই পয়েন্টে তিনি স্ববিরোধী |
৭] ] ডকিন্স আরো বলেছেন যে শিশুদের কোনো ধর্ম হয় না , তাদের বাবা মায়ের ধর্ম তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় | আমি ১০০ % একমত | এই ধর্ম চাপিয়ে দিয়ে বাবা মা শিশুদের অশেষ ক্ষতি করেন | বাবা মা শিশুটিকে ধর্মীয় কুসংস্কারের পথে ঠেলে দেন | বাবা মার গ্রিন সিগনাল পেয়ে পুরোহিত-মৌলবী-পাদ্রীরা শিশুদের যৌন নির্যাতন করে | বাবা মার উচিত শিশুটিকে নিজের পথ নিজেই বেছে নিতে সাহায্য করা | তার যে ধর্ম ভালো লাগে, সেই ধর্মের পথে তাকে এগিয়ে দেয়া |
৮] এছাড়াও ডকিন্স দেখিয়েছেন যে শিক্ষিত মানুষেরা ধর্মগ্রন্থের ব্যাপারে খুব কমই জানেন | এটাই একমাত্র কারণ | এটাই দেখায় যে কিভাবে ধূর্ত-চতুর ধর্মগুরুরা মানুষকে ধর্মের নামে ঠকায় | বেশিরভাগ লোক ধর্মগ্রন্থে কি লেখা আছে তা জানে না | তাদেরকে পুরুত-মোল্লা-পাদ্রীরা যা বোঝায় তাই সে বুঝতে বাধ্য হয় | ধর্মগুরুরা এখানেই মানুষদের ঠকায় | তারা বলে যে এই কাজ ধর্মসম্মত বা এই কাজ ধর্মবিরুদ্ধ | অজ্ঞ মানুষ তাইই মেনে নেয় | মোল্লারা বলে যে এই লোকটা কাফের , এ ইসলামকে অপমান করেছে , একে মার | অজ্ঞ মানুষ এটা জানতে চায় না যে ওই লোকটার কাজ যে ইসলাম বিরুদ্ধ তার প্রমান কি ? ইসলামে কেমন কাজকে কুফুরী বলেছে ? যদিও কেউ জিজ্ঞাসা করে বাকচতুর মোল্লারা কোরান হাদিস শরিয়ার খিচুরী খাইয়ে তাকে উল্টা পাল্টা বোঝায় | সে বুঝতে বাধ্য হয় কারণ সে নিজে কখনো পড়েনি | একে তো ইসলামী শাস্ত্র আরবিতে লেখা আর আরবি সবার ভাষা নয় | ব্যাপারটা হলো একজন নিরক্ষর গ্রামের চাষাকে সুদখোর মহাজন যেভাবে সুদের অঙ্কে ঠকায় বা জমিদার জমির দলিলপত্রে ঠকায়, ঠিক তেমনি ভাবে অজ্ঞ মানুষকে ধর্মগুরুরা ঠকায় | এবিষয়ে সুদখোর মহাজন-জমিদারদের সাথে ধর্মগুরুদের কোনো পার্থক্য নেই |
একদিকে ডকিন্স ধর্মের নামে এইসব ধর্মগুরুদের অত্যাচার দেখিয়েছেন | অন্যদিকে সেইসব ধর্মগুরুদের আমি উড়িয়ে দিতে পারছি না যারা ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করেছেন | যেমন মাদার তেরেসা , যিনি অনাথ শিশুদের ধর্মের নামে বুকে টেনে নিয়েছেন | আমি ফ্লোরেন্সে নাইটিঙ্গেল-কে ভুলতে পারি না যিনি ধর্মের নামে আহত সৈনিকদের সেবা করেছেন | আমি সিস্টার নিবেদিতাকে ভুলতে পারি না যিনি ধর্মের নামে এদেশে স্ত্রী শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন | আমি পোপ ফ্রান্সিসকে ভুলতে পারি না যিনি ইরাকে ইসলামিক স্টেট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হানাহানির তীব্র নিন্দা করেছিলেন |
সব মিলিয়ে এই অধ্যায়ে দেখা যায় যে মানুষই ধর্মকে ধারণ করে আবার তাকে দলনও করে | মানুষই ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করে আবার মানুষই তাতে কালী মাখায় | সবই মানুষের হাতে | তাকেই ঠিক করতে হবে যে সে কি করবে | ধর্মকে সে মহান করবে না পাষন্ড বানাবে, এটা তাকেই ঠিক করতে হবে | ধর্ম নিরীহ, নির্দোষ আমার বিচারে |
©somewhere in net ltd.