![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই লেখাটা লিখবার খুব প্রয়োজন অনুভব করছিলাম “বিশ্বাসের ভাইরাস” বইটি পড়ে | বইটির লেখক অভিজিত রায় | তিনি বইটিতে দেখিয়েছেন কিভাবে বিশ্বাস ভাইরাস হয়ে যেতে পারে | বইটি পড়ে মনে হলো যে একদিক দেখে কি সত্যকে খুঁজে পাওয়া যায় ?
অভিজিত রায় বইটিতে ধর্মের ভালো আর মন্দ দিককে ভাইরাসের সাথে তুলনা করেছেন | ভালো দিকটা হলো ট্রোজান হর্সের মত কম্পুটার ভাইরাস | আর খারাপ দিকটা হলো ল্যাংসেট ফ্লুকের মত জৈব ভাইরাস বা পরজীবী | দুইটি ভাইরাস শিকারের দেহে বাসা বাঁধে আর শিকারকে আত্মঘাতী করে তোলে | ধর্ম ভাইরাস মানুষের মনে বাসা বাঁধে আর মানুষকে আত্মঘাতী করে তোলে |এইভাবে গোটা ধর্মটাই হলো একটা ভাইরাস বা পরজীবী | উনি অনেক উদাহরণ দিয়েছেন এই ধর্ম ভাইরাসের | উদাহরণের লিস্ট নিচে দেয়া হলো :
১] নাফিসের গ্রেপ্তারি
২] ৯/১১
৩] বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা
৪] নবীর আমলে ইহুদি কবিদের হত্যা
৫] বিভিন্ন দেশে ধর্মের নাম নরহত্যা
৬] ভারতে কালীমন্দিরে নরবলি
৭] ইসলামে নারী নির্যাতন (এর উপর গোটা একটা চ্যাপ্টার আছে )
৮] বাংলাদেশে ব্লগারদের গ্রেপ্তারি
৯] ধর্মকে আক্ষরিক অর্থে মেনে এক দম্পতির নিজ কন্যার হত্যা
১০] ইউরোপের ক্রুসেড
১১] ইউরোপের ডাইনি হত্যা
১২] আরো অন্যান্য ধার্মিক নৃশংসতা
ধর্মের সাথে ভাইরাসের সাদৃশ্যও উল্লেখ করেছেন :
১] ধর্ম মানুষকে সংক্রমিত করে |
২] অন্য ধারণার প্রতি প্রতিরোধ বা এন্টি বডি তৈরী করে|
৩] কিছু বিশেষ শারীরিক আর মানসিক ফাংশন অধিকার করে ও মানবদেহে লুকিয়ে থাকে |
৪] বিশেষ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাইরাস-এর বিস্তারে |
৫] বাহককে অনেকটা প্রোগ্রাম করে ফেলে ভাইরাস-এর বিস্তারে সহায়ক হতে |
কিন্তু যেখানে মজা হলো সেটা হলো উনার থিসিসের অনেক বিপরীত কেস পাওয়া যায় যা হয়ত উনি কনসিডার করতে ভুলে গেছেন | ধর্ম ভাইরাস অনেক শ্রেষ্ঠ মানুষেরও জন্ম দিয়েছে যারা মানবজাতিকে অনেক সমৃদ্ধ করেছেন | নিচে বিশ্বের তিনটি ধর্ম ভাইরাসের শিকার মহাপুরুষের নামের তালিকা দেয়া হলো :
ক] হিন্দু ধর্ম
১] রামকৃষ্ণদেব
২] রানী রাসমনি
৩] সাধক রামপ্রসাদ
৪] চৈতন্য মহাপ্রভু
৫] শ্যামাপ্রসাদ লাহিড়ি মহাশয়
৬] লালন ফকির
৭] শ্রী রমন মহর্ষি
খ] ইসলাম ধর্ম
১] সুফি সাধকেরা
২] মুসলিম দার্শনিকেরা যেমন আল কিন্দি, আর রাজী, ইবন রুশদ, ইবন হজম, ইবন বতুতা, আল আরবী ইত্যাদি | এরাও সেই একই কোরান পড়েছেন যা আজকের জিহাদিরা পড়ে |
গ] খ্রিষ্ট ধর্ম
১] মেস্তার একহার্ট (ইনি জার্মান দার্শনিক ও ধর্ম্মতাত্ত্বিক ছিলেন )
২] জোয়ান অফ আর্ক (সেন্ট মাইকেল এনাকে যুদ্ধের প্রেরণা দিয়েছিলেন )
৩] দেসিদেরাস ইরাসমাস (ইনি ক্যাথলিক সাধু ছিলেন আর ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কথা বলতেন )
৪] সন্ত তেরেসা অফ অভিলা (ইনি লেখক ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন )
৫] ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ( ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ইনি সেবা করেছেন আহত সৈনিকদের )
৬] জে আর আর তলকিয়েনস ( ইনি লর্ড অফ দা রিংস-এর স্রষ্টা, গোঁড়া ক্যাথলিক )
৭] সন্ত তেরেসা ( ইনি ক্যাথলিক নান , যিনি কলকাতায় দরিদ্রদের সেবা করেছিলেন )
উপরের সমস্ত ধার্মিক ব্যক্তিত্বকে অভিজিত রায় কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন ? ধর্ম ভাইরাস যেখানে মানুষকে আত্মঘাতী ও হত্যাকারী বানায় সেখানে এই লোকগুলোকে কিভাবে ভালো বানালো ? এত সেই একই ভাইরাস | তাহলে কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা ? ধর্ম ভাইরাস ভালো না খারাপ ?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদের লজিকের একটা সুত্র বুঝতে হবে | তা হলো ল অফ নন কনট্রাডিকসন বা অস্ববিরোধের নিয়ম | এই নিয়ম বলে কোনো কিছু একই সময় দুটি বিপরীত গুন ধারণ করতে পারে না | সেইরকম একই ধর্ম একই সঙ্গে ভালো ও খারাপ দুটি ফল দিতে পারে না | যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে যে ধর্মের সাথে এই ভালো ও খারাপ ফলের কোনো সম্পর্ক নেই | আছে অন্য কোনো কিছুর সাথে | কি সেটা ? তা জানার জন্য ওপরের কেসগুলো ভালো করে স্টাডি করতে হবে |
যত জিহাদের কেস আছে সেগুলোতে জিহাদিদের মোটিভেট কে বা করা করেছিল ? ভালো করে দেখলে বুঝা যাবে যে মৌলবী/পির/মুর্শেদেরা জিহাদিদের মগজধোলাই করেছিল | ধোলাই হয়েছিল মাদ্রাসায়, কলেজে আর ইউনিভার্সিটিতে | বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কথা লেখক নিজেই লিখেছেন | সেখানে কিভাবে ছাত্র ছাত্রীদের মগজধোলাই হত তার পুরো বিবরণ পাওয়া যায় | ছাত্ররা মাজারে যেত এবং নিজের মগজ ধুলত | ছাত্রীদের মগজ ধুলতে বাইরে থেকে স্পেশাল ধোলায়কারিনি আসত | নামাজের ঘরে ছাত্রীরাও নিজেদের মগজ ধুলে আসত |৯/১১ র মুহাম্মদ আটা এন্ড কোং-ও কলেজেই মগজধোলাই খেয়েছিল | অভিজিতবাবু এটাও দেখিয়েছেন যে ভারতবর্ষে আর এস এসের মগজ ধোলাইয়ের স্কুল বিদ্যা ভারতীর ছাত্র ছাত্রীদের মগজ ধোলাই কেমন হয় | ভারতে এবং বাংলাদেশে মাদ্রাসাগুলোতে কচিকাচাদের মগজধোলাই হয় | খ্রিস্টান জিহাদিদের বেলাতেও একই কথা | জেরি ফলওয়েল একজন খ্রিস্টান মগজধোলাই করি পাদ্রী যিনি অনেক খ্রিস্টানের মগজ ধুলেছেন জীবদ্দশায় | টিভির এভানজেলিস্ট পাদ্রীরা ভালমত মগজধোলাই করে | জন হেগি, বিল ওরাইলি, এন কলটার ইত্যাদি মগজ ধলায়কারীর নাম অভিজিত বাবু নিজেই লিখেছেন | এরা সবাই ঝাঁ চকচকে মঠ মন্দির প্রতিষ্ঠান বাসী, কোটি কোটি টাকায় খেলা করা, হাই ফাই গুরুদেব |
অন্যদিকে যত মহাপুরুষের কেস আছে তাতে দেখা যায় ঐসব মহাপুরুষের শিক্ষকরা ছিলেন রমতা যোগী | রামকৃষ্ণের শিক্ষিকা ছিলেন ভৈরবী ব্রাহ্মণী ও তোতা পুরি | সাধক রামপ্রসাদের শিক্ষকও ছিলেন ঐরকমই একজন যোগী , নামটা মনে নেই | লালন ফকিরের শিক্ষক ছিলেন একজন বাউল সাধক | চৈতন্য মহাপ্রভু দীক্ষা পেয়েছিলেন যে গুরুর কাছে তিনিও অতি সাধারণ গুরু ছিলেন | মুসলিম সুফিদের ব্যাপারেও একই কথা বলা যায় | এঁরা অত্যন্ত কঠোর তাপসের জীবন যাপন করতেন | ইশরাকি দর্শনের রচয়িতা সুরাবর্দি নিজে চল্লিশ দিন উপবাসে থেকে কঠোর তপস্যা করেছিলেন | খ্রিস্টান সন্তেরাও কোনো হাই ফাই ছিলেন না | মাদার তেরেসা তো আজীবন দারিদ্রের মধ্যেই কাটালেন | সন্ত তেরেসা অফ অভিলা দারিদ্রের গুণপনা সম্পর্কে লিখেছিলেন, আমি পড়েছি | জোয়ান অফ আর্ক ছিলেন অতি সাধারণ চাষার মেয়ে | এককথায় এনাদের গুরুরা সবই অতি সাধারণ, দরিদ্র রমতা যোগী ছিলেন |
উপরের বিশ্লেষণ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার হয় যে কোটি কোটি টাকার গুরুরা শিষ্যদেরকে জিহাদী ও হিংসার পথে চালনা করছে আর দরিদ্র রমতা যোগী গুরুরা শিষ্যদেরকে মহাপুরুষ বানাচ্ছে | অর্থাৎ গুরুর কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করবে শিষ্য কেমন তৈরী হবে | কিন্তু কেন হাই ফাই গুরুরা শিষ্যদের ভুল পথে চালনা করছে ? কি জন্য ? এর জন্য প্রয়োজন আরো ডিটেল স্টাডি |
দেখতে হবে এইসব হাই ফাই গুরুদের টাকার উত্সটি কি ? কোথা থেকে এত টাকা এনাদের কাছে আসছে ? একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, যে এই টাকার উত্স হলো মুসলিমদের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের ওয়াহাবিরা আর খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে ইসরাইলের ইহুদিরা আর হিন্দুদের ক্ষেত্রে প্রবাসী ভারতিয়েরা | অর্থাৎ এককথায় রাজনৈতিক শক্তিরা | সৌদি আরবের ওয়াহাবিরা ইসলামিক সাম্রাজ্য খেলাফত গড়তে চায় বিশ্বজুড়ে | সেই সাম্রাজ্যের মাথা হবে তারাই | তারই জন্য জিহাদ ও আরো অনেক কিছু | ইহুদিরা চায় কিংডম অফ গড আনতে | জায়ন বানাতে | সেইজন্য তারা খ্রিস্টানদের খেপিয়ে আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে ||অতীতে ক্রুসেডের দিনে রাজার চাপে পোপ ইনোসেন্ট ক্রুসেডারদের তৈরী করেছিলেন | কবি মিল্টনও ইংল্যান্ডের চার্চে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দেখেছিলেন | হিন্দুরা চায় রামরাজ্য আনতে | অখন্ড হিন্দু সাম্রাজ্য গড়তে চায় ভারত জুড়ে | সেই লক্ষে আর এস এস ধর্মযুদ্ধ করছে | হাই ফাই গুরুদের এরাই টাকা দেয় | দিয়ে জিহাদী বানায় | অর্থাৎ নাটের গুরু হলো রাজনৈতিক শক্তিরাই | এরাই বিশ্বাসকে ভাইরাস বানাচ্ছে |
সুধী পাঠক , দেখলেন তো, কোথাকার জল কোথায় গড়ালো | সমস্যার মূল কত গভীরে | ধর্ম তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র | হিমশৈলের তলদেশ হলো রাজনৈতিক আধিপত্যকামী শক্তিরা | অভিজিত বাবু এটা বুঝতে পারলেন না এই জন্য যে উনি এই মহাপুরুষদের কেস গুলোকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেন নি | এগুলিকে আনলেই উনি বুঝতে পারতেন যে ধর্ম ভাইরাস নয় | রাজনৈতিক শক্তিরাই ভাইরাস |
এছাড়া অভিজিতবাবু একটা খুব অদ্ভুত কথা বলেছেন যে দারিদ্রের সাথে ধর্মবিশ্বাসের সম্পর্ক আছে | যে যত গরিব সে তত ধার্মিক | কিন্তু ধনীরা কি ধার্মিক নয় ? যত মারোয়ারী ব্যবসায়ী আছে , তারা কি ধর্মকর্ম করে না ? ধনী মুসলমানেরা কি নামাজ পড়ে না ? হজ করে না ? বাস্তবে তারাও সমান ধার্মিক | যেসব বিদেশী জিহাদী দেখা যাচ্ছে তারা সব কেমব্রিজ অক্সফোর্ড হার্ভার্ড থেকে পড়ে আসা শিক্ষিত ও ধনী লোক | অভিজিত বাবুর এই সিদ্ধান্তও ভুল |
তবে এই বই থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কিভাবে ধর্মের মগজধোলাই ঢুকে পড়েছে সেটা প্রনিধানযোগ্য ব্যাপার |
মুক্তমনাদের আক্রমনের লক্ষ্য কারা হওয়া উচিত ? ধর্ম নয় | আক্রমনের লক্ষ্য হওয়া উচিত এইসব রাজনৈতিক শক্তিরা | সৌদি ওয়াহাবিরা, ইহুদিরা, হিন্দু রাম্রাজ্যওয়ালারা | মুক্তমনারা সৌদি ওয়াহাবীদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা জিহাদী কাজে লাগছে এবং জিহাদে মদত দিচ্ছে সেটা দেখাক | এই টাকা লেনদেনের নাটের গুরুদের নিশানা করুক | একই সাথে এইসব হাই ফাই গুরুদের ধর্মের অপব্যাখ্যার ভুলগুলি তুলে ধরে সঠিক ব্যাখ্যা করুক | দেশের লোকের চোখ তাতে খুলে যাবে | খ্রিস্টানদের ব্যাপারে ইহুদিরা কিভাবে ধর্মগুরুদের পুষছে সেটা প্রকাশ্যে আনা | হিন্দুদের ব্যাপারে আর এস এসের অর্থনৈতিক উত্সটি ও রাজনৈতিক কানেকশন সামনে আনা | অবশ্য মুক্তমনাদের জীবন বিপন্ন হবে | তো সেটা তাদের ব্যাপার | খালি খালি ধর্মকে নিশানা করাটা ঠিক নয় |
২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫০
গেম চেঞ্জার বলেছেন: সুত্র হিসেবে অভিজিৎ দা'র বইটি বলতে পারতেন।
৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩২
shiponblog বলেছেন: অসাধারন।
৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
সত্যান্বেসী বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৬
রাবেয়া রাহীম বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা । বিশেষ করে "ধর্ম ভাইরাস যেখানে মানুষকে আত্মঘাতী ও হত্যাকারী বানায় সেখানে এই লোকগুলোকে কিভাবে ভালো বানালো ? এত সেই একই ভাইরাস | তাহলে কি দাঁড়ালো ব্যাপারটা ? ধর্ম ভাইরাস ভালো না খারাপ ? " এই দুই লাইন অসম্ভব ভাল লেগেছে ।
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৯
সত্যান্বেসী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৮
কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার পোস্ট