![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবাসীদের ব্যাপারে আমার একটা ধারনা মোটামুটি পোক্ত হয়েছে। সেটা হল, তারা কোন এক কারনে দেশের নেতিবাচক(রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ,আবহাওয়া যে কোন বিষয়ে) খবরগুলো নিয়ে আলোচনা করতে ভালবাসেন। দেশের অগ্রগতির খবরগুলো তাঁদের কানে আসেনা অথবা সে খবরগুলোতে তারা ক্র্যকার্স খাওয়ার মত মজা পান না। তাঁদের অনেকের সন্তানদের কাছে বাংলাদেশ; পাকিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়ার মতই বেশ ভয়ঙ্কর একটা দেশ। দেশের বাইরে থেকে নিরাপদ থাকার এক অদ্ভুত নেশায় তারা দেশকে নিজেদের কল্পনাতেই জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন। ''দেশে আর থাকার অবস্থা নেই, জান-মালের নিরাপত্তা নেই'', আলোচনার টেবিলে এটা প্রমাণ করতে ব্যস্ত কম লোক দেখলাম না ক্ষুদ্র এ প্রবাস জীবনে। যদিও আমি এমন লোকজনের পথ মাড়ানো বন্ধ করেছি অনেক আগেই, তাই তাঁদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর সৌভাগ্য আমার হয়তো হবেনা। তারপরও লিখছি।
আমি অর্থনীতিবিদ নই। তবে কঞ্জুমারিজম নিয়ে আমার একটু আধটু পড়াশোনা আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি চাঙ্গা না থাকতো তাহলে ঢাকা শহরে মাত্র ১২ কিলোমিটারের ব্যাবধানে ২টি বিশ্বমানের শপিং সেন্টার দাঁড়াতে পারতো না, যা ইউরোপের অনেক আধুনিক দেশেও বিরল। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি মুষ্টিমেয় লোকজন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও সেই মুষ্টিমেয় লোকের দল দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
আজ ২০১৪ সালে হলিউডের ব্লকবাস্টার মুভি বাংলাদেশে মাত্র এক-দেড় মাসের মাথায় রিলিজ পাচ্ছে। লেটেস্ট মডেলের জাপানিজ গাড়ি, সাইকেল, টিভি, মোবাইল, গেমিং কনসোল, ক্যামেরা, ম্যাকবুক কোনটা পাওয়া যায়না? কয়মাসের অপেক্ষা মাত্র। এইটুক সময় অপেক্ষা ভারত, হংকং এমনকি প্রোডাক্টভেদে অস্ট্রেলিয়াকেও করতে হয়। পরিধেয় বস্ত্রের কথা আর কি বলবো, একজন বাংলাদেশি কখনোই দেশের বাইরের কোন বস্ত্রালয়ে গিয়ে অবাক হবেননা, তা যত বড় ব্র্যান্ডশপই হোক না কেন। বরং কাপড়ের গায়ে ''মেড ইন বাংলাদেশ'' লেখা ট্যাগ দেখে খুশিই হবেন হয়তো। বাংলাদেশে যেসব টিভিসি দেখতাম, সেগুলোর মত আবেদনময়ী বিজ্ঞাপন আমি আজ পর্যন্ত কোন ব্রিটিশ চ্যানেলে দেখতে পাইনি।
আমরা বলি, আমরা সুখী জাতি। এর যেই কারনটা আমার কাছে সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত মনে হয় সেটা হলো সাধারন মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এদেশে আজো আট আনায় ১ সেকেন্ড কথা বলা যায়, ১ টাকায় মেন্টস পাওয়া যায়, ২ টাকায় বাসে চড়া যায়, ৩ টাকায় সিঙ্গারা পাওয়া যায়, ৪ টাকায় সিগারেট পাওয়া যায়, ৫ টাকায় চা আর ৬ টাকায় এক প্লেট ভাত খাওয়া যায় (আপনার আশে পাশের এলাকায় না পেলে ভার্সিটি এলাকায় যোগাযোগ করুন)। টিভিতে ইপিএল দেখার জন্য ইংলিশ জনগণকে যেই ফী দিতে হয় সে তুলনায় বাংলাদেশে প্রায় ফ্রীই দেখা যায়। আজো বাংলাদেশে ফ্রী ওপেন এয়ার কন্সার্ট হয়; তাতে লোকাল না, দেশের সব জনপ্রিয় ব্যান্ডই পারফর্ম করে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারনে যেকোন ইউরোপীয়ান বা নর্থ-আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রপ-আউটের হার যেকোন বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশী। সে কারনেই বোধহয় আজো অনেক সুদ-ঘুষ না খাওয়া বাবাও সন্তানকে অন্ততঃ ২৪-২৫ বছর পর্যন্ত আর্থিক সহযোগীতা দিয়ে যেতে পারেন। ছেলেটা ইউরোপীয়ান-আমেরিকানদের তুলনায় অন্ততঃ সাত আট বছর নিশ্চিন্তে কাঁটাতে পারে। দেশে আসলে কি আছে, কি নেই ১০-১৫ বছর দেশের বাইরে থেকে ধারনা করাই প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় বোকামি। আধুনিক দেশে রেস্টুরেন্ট আর গ্রোসারি শপ চালানোর থেকে গরিব দেশে কুটির শিল্প চালানো ও অনেক ভালো।
কদিন বাদেই আমার এক বন্ধু দেশে ফিরে যাচ্ছে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে। বন্ধু তোমাকে অভিনন্দন! দেশে ফেরার সুমতি ও সৌভাগ্য সবার হয়না।
©somewhere in net ltd.