![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রক্তমাখা স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন করা একটি কু'রুচিপূর্ণ কাজ বলেই মনে হয় আমার কাছে । হতে পারে অন্যের কাছে ভীষণ আধুনিক এবং উৎকৃষ্ট রুচির পরিচায়ক । কিন্তু আমি নানান ভাবে চিন্তা করে দেখলাম এটা কোন কাজের কাজ নয় । এ দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি তো নয়ই বরং ব্যপারটি হাস্য তামাশায় পরিণত হয়েছে।অথচ বিষয়টি হাস্য তামাশার নয়, সচেতনতার বিষয়। মেয়েদের পিরিয়ড হওয়ার ব্যপারটি খুব স্বাভাবিক নিয়ম। এ বিষয়টি লুকিয়ে রেখে অসচেতন থেকে নিজের ক্ষতি যেমন করা উচিৎ নয় তেমনি নিজের শরীরের body waste পাবলিকের মুখের সম্মুখে ধরে সচেতন করাও যায় না। এর সহজ সুন্দর উপায় এবং স্বাভাবিক পদ্ধতি রয়েছে এবং সে পথ ধরলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। আর আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ এখন যথেষ্ট না হলেও আশানুরূপ পরিমাণে সচেতন এ বিষয়ে। সহজ সুন্দর উপায় থাকতে আউটরেজ সৃষ্টি করার তো কোন প্রয়োজনই নেই এবং উগ্রতারও কোন প্রয়োজন নেই । জানি, উগ্রতা ভীষণ সেক্সি এবং বেশ চমকপ্রদ কিন্তু এসব কোন কাজের নয় ।
বাংলাদেশ খুব ছোট একটি দেশ, এ দেশটিকে যে কোন বিষয় দিয়েই প্রভাবিত করা খুব অল্প সময়ের কাজ , যেটা আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়াতে সম্ভব নয়, একেক রাজ্যের একেক সামাজিক রীতিনীতি থাকার ফলে। সেখানে একই ধর্মের অনুসারী হয়েও প্রত্যেকটা রাজ্যেরই সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং ধর্মীয় নিয়ম কানুন গুলোও আলাদা হয় । ধর্মের উপর ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক কাস্টমস অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করে বলেই এমনটা হয় ।তাই ইন্ডিয়ার সব জায়গায় অনেক বছরের এই টাবুকে (taboo) সম্পূর্ণ ভাবে উপড়ে ফেলাটা অনেক কঠিন কাজ ।কিন্তু আমাদের দেশে এটা অনেক সহজ।তাই , রক্তমাখা প্যাড নিয়ে আমাদের মেয়েদের রাস্তায় অথবা ফেইস বুক গরম করাটা একেবারেই দরকার নেই।
হ্যাঁ নাদিয়া ইসলামের পোস্টের কথাই বলছি। তিনি রিসেন্টলি তার একটি রক্তমাখা প্যাড নিয়ে ছবি দিয়ে সামাজের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন ফেইস বুকে । তার উদ্দেশ্য হয়তো ভালোই ছিল , কিন্তু এটা আমার মনে হয়েছে একেবারেই অদরকারি কাজ । নাদিয়া ইসলাম বলেছেন " ছবি দেওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ট্যাবু ভাঙ্গা। এর সাথে প্রান্তিক মেয়েরা প্যাড পাচ্ছেন না, প্যাডের দাম বেশি- এইসব বিষয় জড়িত না। হ্যাঁ, ট্যাবু ভাঙ্গা হলে স্বাভাবিকভাবে এই নিয়ে আন্দোলন তৈরি হওয়ার রাস্তা তৈরি হবে, সরকার প্যাডের উপর থেকে ভ্যাট কমাতে বাধ্য হবে, প্যাডের দাম কমবে, স্কুলে সেক্স এজুকেশান শুরু হবে- ইত্যাদি ইত্যাদি।"
তার পোস্টটি পড়ে যতটুকু বুঝলাম, সে প্যাডের ব্যবহারটিকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে, মনে হচ্ছে প্যাড ব্যবসায়ীদের পকেট ভারি করাটাই মুল উদ্দেশ্য । হ্যাঁ এটা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত , কিন্তু নিম্নমানের প্যাড ব্যবহার করার চেয়ে হাইজিনিক কাপড় ব্যবহার করাটা বেশী উত্তম ,এটি জানার জন্য ফিজিশিয়ান হবার প্রয়োজন নেই , হাইজিন জ্ঞানসম্পন্ন একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী হলেই তার বোঝার কথা কোনটি উত্তম এবং কোনটি নয় । মেয়েদের হাইজিন অথবা পরিষ্কার পরিচ্ছতা শিক্ষা দেয়াটা বেশী জরুরী।সুতরাং প্যাড ব্যবহারে জ্ঞানদীপ্ত করার চেয়েও বেশী প্রয়োজন মেয়েদের সচেতন করা কিভাবে তারা পিরিয়ড চলাকালিন সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে।সেটা এমনকি পুরাতন নরম কাপড় পরিষ্কার করে ব্যবহার করলেও হাইজিনিক থাকা যাবে।
প্যাডের উপর ভ্যাট কমালেই প্যাডের দাম কমবে না, বরং প্যাডের মান আরও খারপ হতে থাকবে । কারণ তো সবারই জানা - ' ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়' , যে দেশে অনেক ক্ষুধা রয়েছে সেখানে অন্যায় ভাবে মুনাফা লাভের ইচ্ছা বেশিভাগ মানুষেরই রয়েছে , ক্ষুধার কাছে কোন প্রকার নীতি কাজ করে না ।যেখানে ক্ষুধা নিবারণই সম্ভব হচ্ছে না সেখানে সুশিক্ষা আশা করাটাও বোকামি। কারন মৌলিক চাহিদার চার নম্বরে রয়েছে শিক্ষা - অন্ন, বস্র , বাসস্থান , তারপরে শিক্ষা । দেশে মৌলিক চাহিদা শিক্ষা হয়তো নিশ্চিত হয়েছে কিন্তু সুশিক্ষা এখনো নিশ্চিত হয়নি। কাজেই প্যাড ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধ না করে যার যার সামর্থ্য অনুসারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন উপায়ে পিরিয়ড মোকাবিলা শেখানোটাই বেশী জরুরী।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আজকাল কি কি সব হচ্ছে দেখলে মাথা গরম হয়ে যায়। সকাল বেলা এডওয়ার্ড মায়ার একটি স্ট্যাটাস দেখে নাদিয়া ইসলামের এই পোস্ট সম্পর্কে জানলাম।
তার অনেক যুক্তিই আমার ভালো লাগে। আবার কিছু কিছু ভীষণ বিরক্ত লাগে।
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেয়া জরুরি। পিরিয়ডের সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরি। পিরিয়ড চলাকালে শরীর থেকে শুধু দূষিত রক্তই নয়, শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ রক্তের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। ফলে এই সময়ে পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। অপরিচ্ছন্নতার কারণে হতে পারে প্রস্রাবে সংক্রমণ। আর বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
দুখের বিষয় আমাদের দেশের সুবিধা বঞ্চিত অনেক মেয়ে নাকি ওই সময়টাতে খড় বিচালী আর শুকনো পাতা ব্যবহার করে, সর্বাগ্রে এদের স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় আনা জরুরী।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: সেটাই , সুবিধা বঞ্চিতদের অনেক সমস্যা আমি জানি। তাদের পক্ষে প্যাড ব্যবহার করা সম্ভব না। তবে সম্ভাব্য অনেক পন্থায় তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে । সেগুলোই খুঁজে বের করা উচিৎ । এ ধরনের কু রুচি পূর্ণ বিজ্ঞাপন না করে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: বেশ বলেছেন। ব্লগার বিদ্রোহী ভৃগু'র মন্তব্য পড়ে নতুন করে কিছু বলতে চাইছি না।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: এই পুষ্টের জন্য পাবনা এডোয়ার্ড কলেজের ছাত্রী মায়া'পু দায়ী
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: আসলেই মায়াই এর জন্য দায়ী।
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: তুমি খালি কও যত
কথা ভারি ভারি;
প্রাঞ্জল লেখনীতে
সব সুজা তারি।
করেছিনু রিকোয়েস্ট
ভুলে গেছো পুরো;
রাগে জ্বলে পিত্তিটা
কমুইনা ধুরু।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: আরে প্র্যাকটিস করতেছি। একটু তো সময় লাগবেই।
থাক রাগ করতে হবে না । হবে হবে , নয় বহুদূর...
৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: একজন মেয়ে যখন আরেকজন মেয়ের কর্মকে কুরুচিপূর্ণ আখ্যা দেন, তখন তা গুরুত্বপূর্ণ বৈকি!
কিন্তু ট্যাবু ভাঙতে গিয়ে যে আরেকদল কুরুচির মানুষকে তৃপ্তি দিচ্ছেন, সেটা কি তিনি একবারও ভাবলেন না? সচেতনতা সৃষ্টি করতে হলে অনেক রকম উপায় আছে। এমন সরল-সিধা উপায়কে তো সহজভাবে নেবে না কেউ।
ভারতে সাম্প্রতিক কালের একটি চলচ্চিত্র প্যাডম্যান যদি দেখে থাকেন তাহলে সচেতনতার ব্যাপারটি হয়তো বোধগম্য হবে। কিন্তু এভাবে প্রতিবাদ ঠিক সমর্থন করতে পারলাম না।
আপনার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমত আমি ছেলে মেয়ে বিভক্তিতে বিশ্বাসী না । আমার চোখে যেটাই অসুন্দর তারি প্রতিবাদ করি। উলঙ্গ অসুন্দর আমার ব্যক্তিগত অপছন্দ। প্রয়োজনে করা যেতে পারে, তবে এই পিরিয়ড সমস্যায় এতখানি উলঙ্গ না হলেও হতো।
নাদিয়ার অনেক যুক্তিই আমার ভালো লাগে , কিন্তু এই ব্যাপারটির সাথে একমত হতে পারলাম না । কারন আমি কোন কিছুই অন্ধের মত বিশ্বাস করি না।
না , প্যাডম্যান দেখা হয়নি । না দেখলেও কিছুটা আচ করতে পারছি । মুভিটা সম্পর্কে শুনেছি, এজন্যই ইন্ডিয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছি। ইন্ডিয়ায় যতখানি কঠিন আমাদের দেশে ততখানি কঠিন নয় ।
৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৭
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন:
জীবন যাত্রার মান পাল্টিয়েছে। মানুষ এখন আগে থেকে বেশি সচেতন। প্রত্যেক পরিবার তার আ র্র থিক সাধ্য অনুযায়ী জীবন যাপন করে। গ্রামের মেয়েরাও এখন সব কিছুতে মানিয়ে নিচ্ছে। তারা পিরিয়ড নিয়ে আগে থেকে বেশি সচেতন।
এখন নাদিয়ার দুটি উদ্দেশ্যে এই কাজ করে থাকতে পারে:
১। আলোচনায় আসার জন্য
২। ব্যবসায়ীক ধান্ধার জন্য।
প্রথা/ট্যাবু ভাঙ্গা এগুলো হলো খালি নাম। আসল উদ্দেশ্যে হলো মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির মুনাফা ভাগিয়ে নেওয়া। পন্যের কাটতি বাড়ানো।
মানুষ কে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে এবং আর্থিক মুক্তি না ঘটলে যতই প্রথা ভাঙ্গার নাম করে হাউকাউ করুক কোন লাভ হবেনা।
আরামে আছে তো টের পায়না। যে মেয়েটি পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে আত্মহনন করেছে তার মতো হলে বুঝতো দুনিয়াটা কি।
টোটালি রাবিশ।।
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১৭
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: মেয়েটির সমস্যা হলো তার জীবনের প্রতিটি পর্যায় সম্পর্কে সঠিক ধারনা নেই ।
৮| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:০৪
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমি অন্য একটা পোস্টে লিখেছিলাম, আমাদের শহরে ও গ্রামের মেয়েরা এখন অনেক সচেতন। ছোট দেশ ও আধুনিক স্যাটেলাইটের কারণে গ্রাম আর এখন গ্রাম নেই। ভারত বড় দেশ। ওখানে আমাদের চেয়ে উন্নত জায়গা যেমন আছে আমাদের চেয়ে অনুন্নত জায়গাও আছে। ওখানে এখনো মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে বাথরুমে গিয়ে হাগার উপদেশ দেয়া হয়, এগুলো আমরা ২০ বছর আগে করে ফেলেছি। ওখানের কোন একটা ছবিতে প্যাড নিয়ে প্রচারণা করল, ওখানের তারকারা প্যাড-এর ছবি দিল। ব্যাস। আমাদের কপি পেস্টার রা কেন বসে থাকবেন? তেনাদেরকেও কিছু একটা করে দেখাতে হবে তো!
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১৫
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: সেটাই , হিন্দি ছবি দেখে প্রভাবিত হওয়া উচিৎ নয় । সেই মেসেস টা কতখানি যুক্তিযুক্ত আমাদের আস্পেক্টে সেটাও ভেবে দেখা উচিৎ। আর ছবিটি খুব নাম করেছে বলেই যে সেটা সঠিক মেসেস দিচ্ছে সেটাও কিন্তু নয় । আমাদের সমস্যাই হল আমারা খুব সহজে বিগলিত হই ভালো ভাবে বিষয়টি না বুঝে।
৯| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫১
হাঙ্গামা বলেছেন: কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: এই পুষ্টের জন্য পাবনা এডোয়ার্ড কলেজের ছাত্রী মায়া'পু দায়ী
বিদ্রোহী ভৃগু'র কমেন্টে ++++++++++++++++++++++++++++++++++
১০| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৭
নতুন বলেছেন: ব্যবসায়ীরা অবশ্যই প্যাডের ব্যবহার বাড়াতে প্রচারনায় এগিয়ে আসবেন এটাই স্বাভাবিক... তার জন্য তারা অনেক কাজই করবেন।
সমাজে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা দরকার আছে। অনেকেই নতুন কিছু করে আলোচনায় আসতে চায়.... হয়তো তিনিও সেই ভাবনার মানুষ।
১১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৪
আহমেদ জী এস বলেছেন: গুলশান কিবরীয়া ,
নিঃসন্দেহে কার্যকরী এবং বিবেক ও রূচিবোধ জাগানো একটি পোস্ট ।
আমার মনে হয় সকলেরই এই বিষয়টি জানা উচিৎ যে , যে মাসিক নিয়ে আমরা হাস্যরসে মেতে উঠি বা অশ্লীল বলে নাক সিঁটকাই তা আসলে আমাদে অজ্ঞতা, আমাদের জানার সীমাবদ্ধতা মাত্র ।
যেহেতু এরকম একটি লেখা লিখেই ফেলেছেন তাই আমার মনে হয় মাসিক সম্পর্কে জ্ঞাত - অজ্ঞাত সবারই নীচের এই তথ্যগুলো কাজে লাগবে ---------------------------
নারী যখন একটি বয়সে পৌঁছায় ( মিনিষ্ট্রুয়াল এজ ) তখন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই তার ডিম্বাধার ( ওভারী ) থেকে নির্দিষ্ট সময়ে একটি ডিম ( ওভাম ) প্রষ্ফুটিত ( ওভ্যুলিউশান ) হয় । এই ওভ্যুলিউশান প্রক্রিয়া যেমন চলে একদিকে তেমনি সেই নারীর জরায়ু আর শরীরবৃত্তে চলে নানা যাদুকরী খেলা স্ত্রী হরমোনগুলোর কারনে । এই হরমোনগুলো জরায়ুতে সন্তান ধারনের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন করে রাখে । জরায়ুকে একটি ফুলবাগানে পরিনত করে ফেলে । বিশেষ স্ত্রী হরমোনগুলো হয়ে ওঠে সে বাগানের মালি । সেই মালিদের পরিচর্যায় জরায়ুতে নতুন কোষের জন্ম হয়, কোষগুলি রসে ( নিউট্রিশান ) টৈটুম্বুর হয়ে ওঠে , তার মাংশপেশীতে নতুন নতুন রক্তনালী বিন্যস্ত হয় । সেজে ওঠে একটি ফুল বাগান । উদ্দেশ্য একটাই , আগত সন্তানকে নরম মখমলের বিছানায় দোল পাড়িয়ে -খাইয়ে দাইয়ে প্রসব উপযোগী ( ভায়াবল ) করে তোলা । অনেকটা আমাদের দাদী - নানীদের মতো যারা সংসারে নতুন মেহমান ( নবজাতক) আসবে বলে আগে থেকেই নরম তুলোর বালিশ , তুলতুলে তোষক , নরম কাপড় দিয়ে কাঁথা বানাতে বসে যান যেন ছোট্ট মেহমানের কোনও রকম অস্বস্তি না হয় বা কষ্টে না থাকে । আসা মাত্রই নবজাতকটি যেন উষ্ণ আর তুলতুলে সমাদর পায় ।
ডিম্বানুটি যখন পুরুষ শুক্রকীট দ্বারা নিষিক্ত হয় তখনই তা জরায়ুতে ধীরে ধীরে ভ্রুনতে পরিনত হয়ে সেই বাগানে হেসে খেলে মানব সন্তান হয়ে ওঠে । নিষিক্ত হবার পরে নারীর শরীরে চলে আরেক শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া যা ভ্রুনকে আরো আরো -খাইয়ে দাইয়ে শক্ত সামর্থ করে তোলে । পৃথিবীর সব মানুষই তাদের মায়ের শরীরবৃত্তিয় এইরকম জটিল বিবর্তনের মধ্য দিয়েই পৃথিবীর আলো দেখেছেন ।
আমাদের মায়েরা যখন কুমারী ছিলেন তখন তাদের জরায়ু যতোই সন্তান ধারনের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন করে রাখুক না কেন সঙ্গত কারনেই তাদের ডিম্বানু নিষিক্ত হবেনা অর্থাৎ সন্তান আসার কোনই সম্ভাবনা একেবারেই নেই । সন্তান যখন আসবেনা তখন তার জন্যে সকল আয়োজনের প্রয়োজনও আর থাকেনা । বাগান রচনার কাজে নিযুক্ত মালিরা তখন নতুন মেহমান না আসার কারনে হতাশ হয়ে পড়ে এবং দুঃখে নিজেদের কাজে ইস্তফা দিয়ে উধাও হয়ে যায় । মালি না থাকলে একটি বাগান যেমন শুকিয়ে বিবর্ণ, চৌচির হয়ে যায় তেমনি যে সব কোষস্তর ( এন্ড্রমেট্রিয়াম ) এতোদিন ফুলে ফেঁপে রসে টৈটুম্বুর হয়েছিলো সেই কোষগুলি দুমরে মুচড়ে যায়, যে সব নতুন রক্তনালী বেশী বেশি করে রক্ত বয়ে নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত ছিলো সেই রক্তনালীও ছিঁড়ে খুঁড়ে উঠে আসে । তখন কোষীয় রস ( মিউকাস ) আর রক্ত মিলে মিশে বেড়িয়ে আসে বাইরে । এটাকে আপনি “জরায়ুর কান্না” বলতে পারেন । সন্তানের জন্যে কান্না । আ ক্রাই ফর দ্য বেবী । শালীনতার খাতিরে ধরে নেয়াই ভালো এটা সকল কুমারী/ অবিবাহিত মেয়েদের বেলাতেই প্রযোজ্য ।
এই কান্নার দমকে জরায়ু কেঁপে কেঁপে ওঠে আর তাতে সৃষ্টি হয় গভীর এক ব্যথা । সেই সাথে কোষ আর রক্তনালী ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসার ব্যথা তো আছেই সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি । সবার ই যে এমনটা তীব্র ব্যথা হবে তা কিন্তু নয় ।
আশা করি পাঠকেরা তাদের মায়ের এই কষ্টটা বুঝবেন । বুঝবেন যে এই রক্তপাত কোনও মতেই অপবিত্র নয় বরং সম্পূর্ণভাবেই “ ষ্টেরাইল” ।
আমি যখন এ বিষয়ে ছেলেদের পড়াই তখন বারবার সতর্ক করে দেই এই বলে যে , আপনাদের মা কিম্বা স্ত্রী কিম্বা বোনদের জীবনে প্রতি মাসেই এমন তীব্র ব্যথার কারন ঘটে থাকে । আপনাদের উচিৎ ঐ সময়টায় তাদের প্রতি সব রকমের সহানুভূতি দেখানো । প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটা তাদের এই অসুস্থতার কারনে তাদের কে ঐ সময়গুলোতে যতোখানি সম্ভব বিশ্রামে থাকতে দেবেন । বাড়ীর রান্নাবান্না সহ সব কাজ কেন হলোনা এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করবেন না । কারন , মেয়েদের এই ব্যথা একমাত্র ভুক্তভোগী ছাড়া কারও পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয় ।
আমার মতে এই শারীরিক ক্রিয়াকর্মের এই সব বিবর্তন স্কুল থেকেই শেখানো ও বোঝানো উচিৎ । এটা কোনও লজ্জা বা অশালীন কোনও কিছু নয় । এটাই প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম ।
এখন প্রশ্ন হলো এটা কতোক্ষন “ ষ্টেরাইল” থাকবে । এই মাসিক চলে ৩/৪ বা কারো কারো ক্ষেত্রে আরও বেশী দিন । স্বাস্থ্য সম্মতভাবে এই অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারলে এই রক্তপাত ষ্টেরাইলই থাকবে সেখানে কোনও রকম সংক্রমন হবার কথা নয়। আর্থিক ভাবে অসচ্ছল দেশের বৃহদাংশ নারীদের পক্ষে প্যাডের জন্যে সামান্য ২/৩ টাকা জোগাড় করাও কষ্টকর যেখানে সংসারের জন্যে দু’মুঠো অন্ন জোগাতেই যাদের নাভীশ্বাস উঠে যায় ।স্বাস্থ্য সম্মতভাবে এর মোকাবেলা যে স্যানিটারী ন্যাপকিন ( প্যাড) দিয়েই করতে হবে তা নয়, বরং আপনি যা বলেছেন সেটাই সঠিক পথ । এবং আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিবেচনায় আপনার পথটিই সবচেয়ে যৌক্তিক ।
ভালো লেখা । ব্যক্তি-সমাজ আর পারিবারিক সচেতনতার প্রশ্নে বিষয়টি আরও আলোচনার দাবী রাখে ।
১২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৩০
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: আমি একবার পরিচিতজনকে মতামত প্রকাশ করতে দেখেছিলাম যে, উন্নত দেশে এমন অনেক ধরণের প্যাড পাওয়া যায় যা বাংলাদেশে নেই। সেখানে অনেক প্যাডে রশি লাগানোও লাগে না, এক ধরণের আঠা লাগানো থাকে যা শরীরের সাথে লেগে থাকে।
আমাদের দেশ এই ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। কোম্পানীগুলোর আরো আরামদায়ক প্যাডা বানানো উচিৎ।
তাই, সরকারকে এইক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।
আর, কাপড়ের ব্যবহারের কথা বললে বলবো, এটা হয়তো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির জন্যে একটি নতুন দিক খুলে যাবে।
১৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১
খায়রুল আহসান বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ জানিয়ে নিচ্ছি আপনাকে, একটা ফালতু স্টান্টবাজীর বিরুদ্ধে এত সুন্দর করে লেখাটা উপস্থাপন করার জন্য। আপনার মূল বক্তব্যের সাথে আমি একমত - সমস্যা সমাধানের সহজ, স্বাভাবিক উপায় থাকতে "আউটরেজ" সৃষ্টি করে বণিকদের স্বার্থরক্ষার কোন প্রয়োজন নেই।
আপনার এ পোস্টের সুবাদে বেশ কিছু আলোকসঞ্চারী মন্তব্য উঠে এসেছে, যার মধ্যে শিরমনি হয়ে আছে আহমেদ জী এস এর অত্যন্ত নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত ১১ নং মন্তব্যটি। মহিলাদের রজঃস্রাবের সময় তাদের শরীরে যে প্রক্রিয়া চক্র শুরু হয়ে যায়, তার এমন সহজবোধ্য এবং কাব্যিক ব্যাখ্যা আমি এ জীবনে আর কোথাও পাইনি, কোথাও শুনিনি। এজন্য জীএস ভাইকে আমার টুপি খোলা অভিনন্দন! এমন সুন্দর করে এত দীর্ঘ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়ার পরও অবশ্য তিনি বলেছেন, " ব্যক্তি-সমাজ আর পারিবারিক সচেতনতার প্রশ্নে বিষয়টি আরও আলোচনার দাবী রাখে" - এতে বোঝা যায়, একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি বিষয়টিকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন!
ট্যাবু ভাঙ্গার নামে অশ্লীলতা গ্রহনযোগ্য নয় - বিদ্রোহী ভৃগু'র এ কথার সাথে পুরোপুরি একমত। আপনার ২ নং প্রতিমন্তব্যটার সাথেও।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চমৎকার করে গুছিয়ে বলেছেন।
তাদের ভাবস দেখে মনে হয়- হাজার বছর ধরে আগে কখনো পিরিয়ড হয়নি। আর তারাই এর প্রথম দারুন কিছু উদ্ভাবন করল!!!
কেবলই ষ্টান্টবাজি! মনে হল। আমার দাদী, চাচী, মায়েরা্ও স্বাস্থ্য সম্মত উপায়েই জীবন পার করেছেন।
যিনি পোষ্ট করেছেন উনার মা নিশ্চয়ই পিরিয়ড কি তা না জানার কথা নয়? বা তখন যথাযথ ব্যবস্থা নেননি এমন্ও নয়।
পবিত্র কোরআনেও এটা শেখানো হয়েছে এ সময় নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পবিত্র জীবন যাপন করতে। সাধারন সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন যে কেউ তা পালন করেছে সম-সমায়িক উপযোগী পদ্ধতিতে।
এখন ফ্যা ব্যবসায়ীরা তাদের বানিজ্যের জন্য যদি অসুস্থ পথে হাটতে চায় হয়তো লাভবান হবে কিন্তু
ট্যাবু ভাঙ্গার নামে অশ্লীলতা গ্রহনযোগ্য নয়। প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। বানিজ্যের বাইরে সুস্থ সুন্দর সামাজিক পারিবারিক একটা জীবন আছে। তাতে ভব্যতার একটা সীমা রক্ষা করাতেই সৌন্দর্য। সবাই জানে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী কি করে! কিন্তু ট্যাবু ভাঙ্গার নামে বিয়ের অণুষ্ঠানে ভালগারিজম যেমন গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টা তেমনি।
ধন্যবাদ দারুন পোষ্টে।
++++