নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হয়তোবা .. এটাই ভালবাসা

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:২৬

'আমি যামুনা তোর লগে'

'যাইতে কইছে কে'

'আমি কিন্তু হাচা হাচাই যামুগা'

'যাওগা'

'বাস থাইকা নাইম্মা গেলাম কইলাম'

'নামার আগে আবুলের নাম্বারটা দিয়া যাও'

'তোর আবুলের নাম্বার দরকার; তাই না

এই বলে চাচা রাগে গড়গড় করতে করতে পকেটে হাত দেয়। উপর থেকে পকেটের মুখ দিয়ে পকেটের ভিতরে দৃষ্টি ক্ষেপন করে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটির পর দুইটা কাগজ বের করে

'দুইটা কাগজ ই দিয়া যাও'

'ও তোর এহন দুইডাই লাগবো'

'হ লাগবো'

'নে তোর কাগজ; আমি গেলামগা কিন্তু'

'যাওগা'

এই বলে চাচী কোমড় ঘুড়িয়ে নিজের সিটের দিকে রওনা দিল আর চাচা দরজায় সামনে দাড়িয়ে চাচীর যাওয়া দেখছিলেন আর কেমন হাঁসফাঁস করছিলেন। চাচী সিটে বসার পরেও কিছুক্ষণ চাচা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছু একটা বলবে বলবে ভাব নিয়ে

মিনিট তিনেক পর চাচা ঘাড়ের গামছা একহাতে ঝাড়া মেরে আরেক হাতে লুংগী গুটিয়ে কপাল কুঁচকিয়ে বাস থেকে নেমে গেলেন
...

সামনের সিটে বসা আমি আর আমার ফ্রেন্ড ঘটনা দেখলাম। এমনকি তখন বাসে থাকা সবাই ই। বাস তখন ফেরীতে থাকার কারনে বেশী মানুষ ছিলো না বাসে। প্রায় মানুষ চলে গেছে ফেরীর একদম উপরের ফাঁকা যায়গাটায় নদীর একটু নাদুশ নুদুশ হাওয়া বাতাস জামায় লাগাতে

পাশে থাকা ফ্রেন্ডের কুবুদ্ধিতে চাচাকে একটু নাড়িয়ে দেখার চিন্তা মাথায় আসলো। আর নাড়াতে চাওয়ার বড় কারণ ছিলো তাদের মধ্যেকার ঝগড়ার কারণ

ফুরফুরে মেজাজটা মুখে নিয়ে বাস থেকে নেমে চাচার কাছে গেলাম। পাশে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে প্রলাপ বকার মত করে বললাম

'চাচী মনে হয় ডাকবো না'

তখনও চাচার মুখ খুলেনি। আমি আবার জোড়ালো ঠেশা মারলাম

'চাচী একা বাসে'

তখন চাচার মুখ খুললো। নরম স্বরে বললেন

'থাউজ্ঞা'

তখন আমিও একটু আদর নিয়ে বললাম

'ঝগড়া লাগছেন কেন চাচা'
'সিট নিয়া'
'সিট নিয়া মানে?'
'আমি চাইছিলাম জানলার দারে বইতে'
'চাচী দেয় না?'
'না'
'চাচী বসতে চায়?'
'হু .. বউজ্ঞা'
'এই নিয়া ঝগড়া?'
'হু'
'তাইলে চাচা আপনি আমার জানালার পাশের সিটে বসেন'

'তুমি?'
'আমি চাচীর পাশে বসে গেলেই হয়'

এই কথা শুনে চাচা একটু রাগান্বিত চেহারা নিয়ে আমার দিকে দুই তিন বার তাকালেন। আমিও ও কিছুই বললাম না। আমার যা করার দরকার ছিলো আমি করে ফেলেছি। এবার পিঠ বাঁচিয়ে গাড়িতে উঠে গেলাম আর ফ্রেন্ডের কাছে শেয়ার করে একটু মিটিমিটি হাসলাম
...

ফেরী চলাকালীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পর পরই চাচাকে দেখলাম চাচী জানালার পাশে যে সিটে বসে আছেন সেই জানালার দিকে একটু উঁকিঝুঁকি মারতে। এত্তো কিছুর পরেও চাচা চাচীর কাছ থেকে একবিন্দু গ্রীন সিগন্যাল পেলেন না

কি আর করার। ফেরী ঘাটে পৌছানোর আগ মূহুর্তে চাচা আস্তেধীরে বাসে উঠলেন। উঠে দরজায় দাঁড়িয়ে চাচীর দিকে মুখ ফিরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলেন। চাচীর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে দেখলাম চাচা নিজেই মিনিট দুয়েক পর হাসি মাখা মুখ নিয়ে চাচীর সিটের দিকে হেঁটে যেতে

ঘটনার অপরপ্রান্তে থাকা মানুষটির রেসপন্স দেখার জন্য সিট থেকে মাথা জাগিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। চাচীও মিটিমিটি হাসছেন। হাসিতে স্পষ্ট চাচী অভিমান নিয়ে চাচার ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন

'হয়তোবা .. এটাই ভালবাসা'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.