![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।
জসীম অসীম : শ্রাবণের দিন শ্রাবণের রাত বাংলার মানুষকে মুগ্ধ করে যেমন , তেমন বিরক্তও করে। শ্রাবণের সবুজ প্রকৃতি অপরুপা বাংলাকে আরও মুগ্ধকর রূপে উপস্থাপন করে। দিনের সূর্য-রাতের তারা একবার মেঘে ঢাকে , আবার মেঘের ঘোমটা থেকে বের হয়ে আসে। শ্রাবণের বাংলা মন ভুলানো এক বাংলা হয়ে উঠে।
যাদের সবুজের প্রতি ভালোবাসা আছে , তাদের কাছে শ্রাবণ , শ্রাবণের আকাশ-বাতাস-নদী প্রেমিক - প্রেমিকার মতো।
যেমন-
”দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া শ্রাবণের এই দেশ”।
আমাদের কবি-সাহিত্যিকেরা তাদের রচনায় শ্রাবণকে শব্দচিত্রে বিভিন্নভাবে এঁকেছেন। রবীন্দ্রনাথের লেখায় শ্রাবণ এসেছে বিভিন্নভাবে।
যেমন-
শ্রাবণের ধারার মতো পড়–ক ঝরে
পড়ুক ঝরে তোমারি সুরটি আমার মুখের পরে ,বুকের পরে।
(কেতকী)
অথবা
শ্রাবণের পবনে আকুল বিষন্ন সন্ধ্যায়
সাথীহারা ঘরে মন আমার
প্রবাসী পাখি ফিরে যেতে চায়
দূরকালের ছায়াতলে ।। (স্বরবিতান-৫৯ পৃ
অথবা
শ্রাবণ বরিষন পার হয়ে / কী বাণী আসে ওই রয়ে রয়ে ।
(গীতমালিকা-১)
অথবা
শ্রাবণ মেঘের আধেক দুয়ার ওই খোলা
আড়াল থেকে দেয় দেখা কোন পথ-ভোলা
(নবগীতিকা-২)
অথবা
আষাঢ় শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে ,
মেঘ আঁচলে নিলে ঘিরে ’’
সুর্য হারায় , হারায় তারা আঁধারে পথ হয় যে হারা ,
ঢেউ দিয়েছে নদীর ধারে।।
(কেতকী)
অথবা
শ্রাবণের গগনের গায় বিদ্যুৎ চমকায় যায়,
ক্ষনে ক্ষনে শর্বরী শিহরিয়া উঠে, হায়’’
(স্বরবিতান-৫৩)
অথবা
শ্রাবণের বারিধারা ঝরিছে বিরামহারা
বিজন শুন্য-পানে চেয়ে থাকি একাকী।
দূর দিবসের তটে লিপিখানি লেখা কি।
কাজী নজরুল ইসলামের রচনায় শ্রাবণ এসেছে বিভিন্নভাবে ।
যেমন-
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে , নয়নে বারি ঝরে’’
অথবা
রিমঝিম রিমঝিম ঝরে শাওনধারা
গৃহকোনে একা আমি ঘুমহারা ’’
অথবা
শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলনা
বরষা ফুরায়ে গেল , আশা তবু গেল না।
জীবনানন্দের লেখায়ও রয়েছে শ্রাবণ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রঙে।
যেমন-
শ্রাবণের গভীর অন্ধকার রাতে
ধীরে ধীরে ঘুম ভেঙ্গে যায়
কোথায় দূরে বঙ্গোপসাগরের শব্দ শুনে’’
(শ্রাবণরাত- মহাপৃথিবী)
স্বপ্নের বাংলার এ শ্রাবণের বৃষ্টি ধারায় কেবল শিল্পীরাই নয় , বাংলাপাগল রাশি রাশি মানুষও মুগ্ধ থেকেছে। তবে যুগ যুগ ধরে এ আষাঢ়ে-শ্রাবণে বন্যায় ফসল প্লাবিত হয় , শুষ্ক মৌসুমের শীর্ণ যমুনা হিংস্ররূপ ধারণ করে। গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ জায়গায় যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ে । যমুনার ভাঙ্গন বাড়ে । আষাঢ়-শ্রাবণে বাড়ে লঞ্চডুবিসহ অন্যান্য নৌ-দুর্ঘটনাও । দেশের অধিকাংশ শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা । বিশেষ করে শ্রাবণের বৃষ্টিঘন দিনের জলাবদ্ধ ঢাকা ...। দেশের যে কোন স্থান থেকে কেউ এসে যদি রাজপথের মরণফাঁদ ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে একবার পড়ে যান , তবে তার দ্বারা আর ‘‘ঢাকা শহর আইস্যা আমার পরান জুরাইছে”গান গাওয়া সম্ভব নয় ।
©somewhere in net ltd.