নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিজড়াদের ছবি তুলেই অসীম পালিয়ে গেল

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮



মো: জাহাঙ্গীর আলম

২০০১ সালের কথা। হিজড়াদের নিয়ে পত্রিকায় একটি লেখা লিখবেন কুমিল্লার দৈনিক ‘শিরোনাম’ পত্রিকার চীফ রিপোর্টার সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ। কিন্তু ওদের খোঁজ পাওয়া গেল না সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। পরে একদিন যখন খোঁজ পাওয়া গেল , তখন আমাদের পত্রিকার রিপোর্টার কাম ফটোগ্রাফার জসীম উদ্দিন অসীমকে বলা হলো হিজড়াদের ছবি তুলতে। অসীম ছবি তুললো ঠিকই , বিপদ সামাল দিতে হলো আমাকে। আমি ‘শিরোনাম’ পত্রিকার দৈনিক হিসেবে শুরুর কথা বলছি। কুমিল্ল¬া থেকে প্রকাশিত জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘শিরোনাম’-এ একজন আলোকচিত্র সাংবাদিক প্রয়োজন। যারা এ শহরে আলোচিত সাংবাদিক হিসেবে খুব পরিচিত , তাদের মধ্য থেকে দৈনিক ‘শিরোনাম’ সম্পাদক নীতিশ সাহা কাউকেই নিতে চাইলেন না। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করা লোক। বললেন , অন্য রকম প্রেস ফটোগ্রাফার নেবো, যাকে দিয়ে নতুন নতুন কাজ করানো সম্ভব। যার পরিচিতি না থাকলেও মেধা থাকবে।

দৈনিক শিরোনাম এর চীফ রিপোর্টার সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ জসীম উদ্দিন অসীমের নাম প্রস্তাব করলেন। দাদা বললেন , নিয়ে আসো অসীমকে। কথা বলে দেখি।

দাদার সঙ্গে অসীম যেদিন প্রথম দেখা করলো , সেদিন আমিও উপস্থিত ছিলাম। অসীম সেদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র যেমন দৈনিক সংবাদ-অবজারভার-রূপসী বাংলা-সাপ্তাহিক আমোদ-নিরীক্ষণ...-এ প্রকাশিত তার কিছু ছবি নিয়ে এসেছিলো সম্পাদক দাদাকে দেখানোর জন্য।

দাদা অসীমকে তার নিজস্ব কোনো ক্যামেরা আছে কী না জিজ্ঞেস করলে সে ‘না’ বলেছিলো। আসলে অসীমের তখনও কোনো এস.এল.আর ক্যামেরাই ছিলো না। বিভিন্ন পত্রিকার ক্যামেরায় ছবি তোলার কারণে তার কিছু নির্মম অভিজ্ঞতাও ছিল। আমরা তখন অসীমের জন্য একটি এস.এল.আর ক্যামেরার ব্যবস্থা করে দেই। আমি তাকে আমার বিজ্ঞাপন বিভাগের একটি স্পেশাল সেলফ দেই তার সেই ক্যামেরা এবং ব্যক্তিগত কাগজপত্র রাখার জন্য।

২০০১ সালের ঘটনা। দৈনিক শিরোনাম বের হওয়া শুরু হলো। শুরু হলো অসীমের ঘুরে ঘুরে ছবি তোলার কাজ। অসীমের ছবি তোলার মধ্যে আমার একটি বিষয় স্মরণযোগ্য হলো একদিন কুমিল্লা শহরের পুবালী চত্বরের কাছ থেকে দেখলাম কিছু হিজড়া (নপুংসক) ‘নিরুপমা’ দোকানের ভিতর থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমি ভাবলাম , ওদের ছবি তুলে রাখলে হয়তো পরে ভালো একটি ফিচার করা যাবে। অফিসে এসে অসীমকে এ কথা বলতেই অসীম ক্যামেরা নিয়ে ছুটে গেল।কিন্তু হিজড়ারা তাকে ছবি তুলতে দিলো না। বললো , ছবি তুললে টাকা দিতে হবে। অসীম বললো , কতো দিতে হবে? হিজড়ার একজন নেত্রী বললো , আমাদের পাঁচজনকে মোট ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা দিতে হবে। অসীম রাজি হয়ে ওদের ‘নিরুপমা’ দোকান থেকে ডেকে মিষ্টির দোকান ‘পিপাসা’-র সামনে নিয়ে গেলো। অসীম ওদের দাঁড় করিয়ে পটাপট ছবি তুলে টাকা না দিয়েই দৌড়ে চলে এলো ‘শিরোনাম’ অফিসে। অসীমের পথ অনুসরণ করে শিরোনাম অফিসে উপস্থিত হলেন পাঁচ হিজড়া। এদিকে অসীম এদের উপস্থিতির বিষয়টা বুঝতে পেরে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে বাঁচলেও বাঁচতে পারলাম না আমি। হিজড়ার নেত্রী এসে আমাকে বলে , আপনার অফিসের ছবি তোলার লোকটা আমাগো ৫০/- টাকা দিবো কইয়া ছবি তুইলা টাকা না দিয়াই আপনার অফিসে আইয়া ঢুকছে, আমাগো টাকা দেন। ‘শিরোনাম’ এর সম্পাদক কর্তৃক পত্রিকার চীফ রিপোর্টার সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ হিজড়াদের উপর একটি প্রতিবেদন তৈরির কথা আগেই বলা হয়েছিল। তখন পারভেজ তার সেই সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে হিজড়াদের উপর সাক্ষাৎকার গ্রহণে সক্ষম হয়। পারভেজ সক্ষম হলেও অক্ষম রয়ে গেলাম আমি। কারণ কিছু হিজড়া অসীমের ওয়াদা করা টাকা না পেয়ে আমার টেবিলের গ্ল¬াস ভেঙ্গে ফেলতে চায়। এদেরকে শান্ত করতে গিয়ে চা খাওয়াতে চেষ্টা করি। এতে করে ওরা আরও ক্ষেপে গেলো। কারণ ওদেরকে মধু দিয়ে চা খাওয়ালেও যে ৫০/- টাকা উশুল হবেনা , সেটা তারা ভালোই বুঝে। অবশেষে তাদের চা-ও খাওয়ালাম এবং ৫০/-টি টাকাও দিলাম।

অসীম ছিল একজন প্রফেশনাল প্রেস ফটোগ্রাফার। স্বভাবে ভীষণ চঞ্চল হলেও প্রয়োজনের তাগিদে ছবি তুলতে গিয়ে হিজড়াদের পাওনা না মিটিয়ে অসীমের পালিয়ে বাঁচার স্মৃতিটা ভোলার মত নয়। স্মরণীয় একটি ঘটনা। ফটোগ্রাফারদের কাছে ছবি তোলাটা নিয়মিত একটা চ্যালেঞ্জ। যেমন আমিও একসময় ছবি তোলার প্রতি খুব দুর্বল ছিলাম। এতে করে ছবি তোলাটা একটা হবি মনে করতাম। এই হবিটা ধরে রাখতে গিয়ে ১৯৮২ সালের এপ্রিলের কোন এক তারিখে ক্যামেরায় ফিল্ম ভর্তি করে আমার এক বন্ধুসহ চট্টগ্রাম ফয়েজল্যাকের উত্তর পার্শ্বে চেরাগী পাহাড়ের পাদদেশে সবুজ অরণ্যে ছবি তুলতে গিয়ে ধরা পড়লাম একদল পাহাড়ী ডাকাতের হাতে। ডাকাত চক্র ক্যামেরাটা আমার খুব প্রিয় বুঝতে পেরে ক্যামেরাটাকে সেক্রিফাইজ করে। কিন্তু আমার বন্ধুর ১ ভরি ওজনের একটি গলার চেইন আমার এবং আমার বন্ধুর হাত ঘড়িসহ বেশ কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। এতে করেও ছবি তোলা থেকে বিরত থাকিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কখন যে ছবি তোলা ছেড়ে দিলাম জীবনের বাস্তবতায় পড়ে , সেটা এখন আর তেমন মনেও পড়ে না। রচনা:জানুয়ারি , ২০০৪ , কুমিল্লা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.