নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃষ্টিতে আমার হাটঁতে ভাল লাগে কারন কেউ দেখেনা আমার চোখের জল।

আশিক হাসান

বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়

আশিক হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্ল্যাক উডসের দেশে -পথ চলার শুরু (১ম অধ্যায়)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:২৯

গল্পের শুরুটা এখান থেকে

যখন শুনলাম জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ডাক এসেছে এবার যেতে হবে যুদ্ধপীড়িত আফ্রিকার কংগোতে, তখন থেকেই মনের কল্পনাতে কাঠকয়লায় আঁকিবুঁকি শুরু হয়ে গেল। একদিকে প্রিয়জনদের ছেড়ে বহুদিন দুরে থাকা বেদনা অন্যদিকে হাজারো বিপদের হাতছানি। সমুদ্রে ভাসিয়েছি যখন তরী তখন কি আর আকাশ কোনে কালো মেঘ দেখে ভয় পেলে চলে? মনের শত সহস্র শংকাকে তাই অর্ধচন্দ্র দিয়ে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। আফ্রিকার সাথে প্রথম পরিচয় শৈশবে টিভি সিরিজ টারজানে জনি ওয়েসমুলারকে দেখে। তখন থেকেই আমার কাছে আফ্রিকা মানে গভীর বনে ভয়ন্কর সব জীবজন্তুর বাস, বনের ভেতর চোরাবালির হাতছানি অথবা মাংশাসী গাছের উপস্হিতি আর নয়তো নরখাদক কালোমানুষের আক্রমন। এইসব কিছু নিয়ে আমার কল্পনার আফ্রিকা।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য আমরা নির্বাচিত অফিসার এবং সৈনিকরা বিভিন্ন ইউনিট হতে এসে জড়ো হতে লাগলাম ঢাকা সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটে। সেখানে আমাদের নির্ধারিত দিন থেকে শুরু হয়ে গেল কন্গোতে যাওয়ার পূর্বপ্রস্ততি হিসেবে সে দেশের আবহাওয়া, সে দেশের ব্যবহৃত ফরাসী ভাষার দুএকটা কাজ চালাবার মত শব্দ শেখা। পাশাপাশি সেখানকার আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে আমাদের নিজস্ব পেশাগত দায়িত্ব কিভাবে পালন করব তার ওপর প্রশিক্ষন শুরু হল। একইসাথে কংগোর সামাজিক পরিবেশ এবং রোগবালাই ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আমরা সাধারন ধারনা লাভ করলাম কয়েক সপ্তাহের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে। তারপর দেখতে দেখতে সেই মহেন্দ্রক্ষন চলে আসলো সবাইকে বিদায় জানাবার, এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেওয়ার আগে পরে নিলাম চিরপরিচিত সেই জলপাই রঙের কমব্যাট। নিজেকে যখন আরেকটু পরিপাটি ও গুছিয়ে নেয়ার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়ালাম তখন হঠাৎ মনে হল আজকের এই চিরচেনা পোশাকটা যেন অন্যরকম মনে হচ্ছে। চোখ পড়ল আমার ডানহাতের আর্মব্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের লালসবুজের পতাকা। আজ থেকে বিদেশের মাটিতে যেখানেই যাবো সে যত প্রতিকুল পরিবেশই হোক না কেন আমি আমার পতাকা, আমার দেশকে ধারন করে থাকবো। একইসাথে নিজেকে মনে হল আজ থেকে আমার প্রতিটি মুহূর্তের কাজ, আমারকথা, আমার ব্যবহারে আমার আশেপাশের অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে আমি আমার দেশকে তুলে ধরবো। একদিকে ভাললাগা অন্যদিকে এক কঠিন দায়িত্ববোধ যেন আমার কাঁধে সেই মূহূর্ত থেকে চেপে বসলো।

ঘর থেকে বের হওয়ার আগে একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বাবাকে হারিয়েছি দুবছর হতে চললো। মাকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকলাম , মায়ের শরীরের গন্ধ যেন ক্ষনিকের জন্য আমার শৈশবকে মনে করিয়ে দিলো। সবার সাথে দুএকটা কথা বলে আমার সন্তান মালিহা আর সহধর্মিনী রুপাকে সাথে নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে বারবার মনে পড়ছিলো কতদিন এই প্রিয় ঢাকা শহর কে দেখা হবেনা , দেখা হবেনা আমার প্রিয় মুখগুলো। আমার সন্তান……. নাহ্ আর ভাবতে ইচ্ছে করছেনা জানালার বাইরে থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে তাকালাম সহধর্মিনীর মুখের দিকে ও আমার দিকে চেয়ে সামান্য হাসলো। আমি জানি ও এক ভীষন মানসিক শংকা আর ভীতি নিয়ে আমাকে বিদায় দিচ্ছে । রুপাকে একটু ভিতু বলেই জানতাম অথচ পরিস্থিতিতে পড়েও নিজেকে ঠিকই মানিয়ে নিয়েছে। শান্ত আর হাসিমুখে আমার বিদায় বেলায় সব পোশাক আশাক একে একে গুছিয়ে ব্যাগ আর লাগেজে ভরে দিয়েছে। আসলেই আমি ওকে খুব মিস করবো। হঠাৎ গাড়ীর হর্নে চিন্তার জগৎ থেকে ফিরে এলাম বাস্তবতায় তাকিয়ে দেখলাম দূর থেকে অন্ধকার আকাশে জ্বলজ্বল করে জিয়া আন্তজার্তিক বিমানবন্দর লেখাটি নিয়ন আলোয় দেখা যাচ্ছে।

এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছানোর সাথে সাথে সহজাত দায়িত্ববোধের টানে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের আনুষ্ঠানিকতা গুলো সম্পন্ন করতে শুরু করলাম। সামরিকরীতি অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তারা আমাদের দলটিকে বিদায় জানালেন। সেনাবাহিনীর ধর্মীয় শিক্ষক সকল অফিসার এবং সৈনিকদের সাথে নিয়ে আমাদের সার্বিক মংগল এবং দেশের সুনামের জন্য দোয়া করলেন। একে একে দ্রুততার সাথে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন শেষে এক সময় বিদায় ঘন্টা বেজে উঠলো। সৈনিকরা সারবেঁধে সামরিকরীতি অনুযায়ী ধীরে ধীরে রানওয়ে দাড়িয়ে থাকা জাতিসংঘের ভাড়া করা একটি বেসরকারী থাই বিমানের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। একসময় আমার যাওয়ার পালা চলে আসলো আমি আমার দলকে সাথে নিয়ে রওয়ানা দেবার আগে কিছু কথা সেরে বিদায় নিলাম আমার সহধর্মিনীর কাছ থেকে আর আমার সন্তানের গালে শেষবারের মত চুমু দিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেলাম আমার দলটি নিয়ে বিমানের দিকে।

রাত তখন আনুমানিক ১১০০ টা বাজে , আমরা প্রায় আনুমানিক ২৫০ জনের একটি দল ধীরে ধীরে সারি বেঁধে বিমানের পেটে প্রবেশ করছি। রানওয়েতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগে দেখা এক মুভির কথা, ভিয়েতনাম যুদ্ধের উপর এরকমই এক গভীর রাতে একদল আমেরিকান সৈন্যদের দল বেরিয়ে পড়েছিলো যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমেরিকা ছেড়ে ভিয়েতনামের পথে। তাদের স্ত্রী আর প্রিয়জনেরা ঠিক আমাদের প্রিয়জনদের মত একবুক শংকা নিয়ে বিদায় দিয়েছিলো তাদের। আসলে কিছু কিছু মানবিক অভিব্যক্তি মনে হয় ভাষা, কাল, পাত্রভেদে সার্বজনীন একইরূপ। প্রিয়মুখ ,প্রিয়ঘর, আমার জন্মস্হান, আমার বাংলাদেশকে বিদায় জানিয়ে গভীর রাতে উঠে পড়লাম উড়োজাহাজে। উড়োজাহাজ যখন আমাদেরকে নিয়ে ঢাকার রাতের আকাশ অতিক্রম করছিলো জানালা দিয়ে নিচে তাকালাম, দেখলাম সারা ঢাকা শহর সোডিয়ামের আলোতে ঝলমল করছে। সারা ঢাকা তখন গভীর ঘুমে অচেতন কিন্তু এই শহরে জানি আমরা যারা এই উড়োজাহাজে রওয়ানা হয়েছি বিপদসংকুল এক অচেনা দেশের উদ্দেশ্য, তাদের প্রিয়জনেদের চোখে আজ আর ঘুম নেই হয়তো আগামী একবছর তাদের চোখে পরম শান্তির নিদ্রা খুব কমই আসবে।

(চলবে)

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৪১

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: যাক ব্লগে আফ্রিকায় থাকা একজনের দেখা পেলাম।

আমিও আফ্রিকাতেই থাকি। যদি কখনো আসেন আমাদের এখানে দেখা হবে।

আফ্রিকাতে আসার আগে আমরাও অনেক ভয় নিয়ে আসছিলাম কিন্তু এখন দেখি আসলে যা ভেবেছিলাম তা না।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৭

আশিক হাসান বলেছেন: ফেরদৌসা রুহী আপু ভাল থাকবেন । আপনি কি সাউথ আফ্রিকায় আছেন? আমি অবশ্য আরেকটি শান্তিমিশনের দায়িত্বে আপাতত ধুসর সাহারায় আছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলে ভাল থাকুক এই কামনায়।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৫৭

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: নাইজেরিয়াতে আছি। যদি সুযোগ পান ঘুরে যাবেন। এর আগেও দুজন কর্নেল এসেছিলেন নাইজেরিয়া শুধু একটু দেখার জন্য। আমরা একটু ঘুরিয়ে দেখিয়েছি।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪২

আশিক হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার নিমন্ত্রনের জন্য , আল্লাহ যদি চান হয়ত একদিন যেতে পারি। আমার স্টাফ কলেজের কোর্সমেট ২/১জন আছে নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীতে আছে যেতে পারলে মন্দ হতনা তাদের সাথেও দেখা হত।

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৩৬

নীল-দর্পণ বলেছেন: কেমন একটা বিষাদ মাখা…
অর্পিত দ্বায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে নিরাপদে ফিরে আসুন সেই শুকামনা রইল।
সময় সুযোগ পেলে লিখবেন। ভাললাগা রেখে গেলাম।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩

আশিক হাসান বলেছেন: শুরুতে বিষাদ তবে বেশকিছু মজার এবং আনন্দের ঘটনাও রয়েছে তবে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আসবে। অপেক্ষায় থাকুন। মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৬

উচ্ছল বলেছেন: লিখাগুলো গোপনে অনুপ্রেরনা দিয়ে যায়।
একটি ছোট্ট সংশোধনী- পুরো লিখার অনেক জায়গাতেই দাঁড়ি (।) -এর আগে স্পেস এসেছে। ওখানে স্পেস হবে না।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৮

আশিক হাসান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য এবং সংশোধনীর বিষয়টির জন্য , ভুলটি সংশোধন করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে বিষয়টির দিক লক্ষ্য রাখা হবে। আশা করি আফ্রিকার এই অভিযানে আপনি আমাদের সাথে থাকবেন।

৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: একেবারেই নিজস্ব মনের টানাপোড়নের গল্প !
কর্তব্য আর প্রিয়জনের প্রতি মায়া ।


লেখায় ভালোলাগা ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩

আশিক হাসান বলেছেন: মনিরা সুলতানা একেবারে মনের কথাটা বলেছেন , একদিকে কঠিন কর্তব্যর টানে সবকিছু পেছনে ফেলে এই আফ্রিকায় প্রথমবার এসেছিলাম গহীন অরন্য বেষ্টিত কন্গোতে আর অনেক বছর বাদে আবার আসলাম সেই আফ্রিকায় তবে এবার প্রচন্ড তাপাদাহে জর্জরিত ধুসর সাহারা মরুভূমির এক দেশ মালিতে। কিন্ত মন পড়ে আছে আমার বাংলাদেশে যেখানে ফেলে এসেছি আমার মা, স্ত্রী আমার দুই মেয়ে আরও অনেক প্রিয়জনদের। ভাল থাকবেন।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৩

কালীদাস বলেছেন: এই শেষ হাঁটাটার সময় কিরকম কষ্ট লাগে, সেটা কোন ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব না। ব্যাপক স্মোগের কারণে ঢাকা বেশিক্ষণ দেখা যায় না আকাশ থেকে দিনে বা রাতে, দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলে মনে হয়......

অথচ যেতে হয়।

৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এখন তো আমার আপনাকে কিছু বলতেই ভয় লাগছে
দিন মিনিটের হিসেব গুনে শুনে পার হয়েছে বামাকোর দিনগুলো আমার খুব বন্ধু একজনের ; ঠিক গত বছরের গল্প সেটা ।
ও নিজে ও দেশে নিজের ছায়া ফেলে এসছিল সদ্যজাত কন্য , পিছুটান ভবিসৎ ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৮

আশিক হাসান বলেছেন: আমিও আপনার সেই বন্ধু যেই দেশে ছিলেন সেখান থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছি এবং আমার জন্য ও দুই রাজকন্যা আপেক্ষা করছে । জীবনের গল্পগুলো কখন কখনও চৌরাস্তার মত এসে কোন এক স্থানে মিলে যায় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.