নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কালপুরুষ

কালপূরূষ

সহজ মানুষ

কালপূরূষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬

বাবু....বাবু....।
-কিরে বাবা তোর কি মন খারাপ ?
-না ।
-তাইলে এরকম মন খারাপ করে শুয়ে আছিস কেন ??
-মন খারাপ তোমারে কে বলল?
-তাইলে যে উত্তর দিচ্ছিস না?
-এমনেই,শুনতে পাইনি,বলো কেন ডাকতেছিলা?
-কাপড়গুলো বৃষ্টির ছিটায় ভিজে যাচ্ছিল তাই।
- আচ্ছা মা তুমি আমারে নাম ধইরা ডাকতে পার না? তোমারে কতবার বলব বাবু বইলা ডাকলে আমার বিরক্ত লাগে।
-আচ্ছা ঠিক আছে,আর বাবু বইলা ডাকব না...কিরে খাবি কিছু?
-না।
-আচ্ছা মা, আমি লম্বা হব না?
-কেন হবি না,আর তুই তো লম্বাই |
-ইহহ..ক্লাসের ছেলেরা আরও কত লম্বা আমার থেকে |
-আরে পাগল...ওদের থেকে তোর বয়স কম,আর মানুষ ২৩ বছর পর্যন্ত লম্বা হয় |
-তোমারে কে বলছিল আমারে আগে আগে স্কুলে দিতে...যওসব|

বাবু...বাবু....
-বাবু কি ঘুমাই পড়ছে?
-হমম,স্কুল থেকে এসে মন খারাপ করে শুয়ে ছিল,এখন খেয়ে শুয়ে পড়ল |
-মন খারাপ ছিল কেন?
-ওর বন্ধুরা নাকি ওর থেকে লম্বা,তাই মন খারাপ ছিল।
-আচ্ছা আমি ওরে একটু দেখে আসি |

বাবা আমার ঘরে এমনভাবে ঘরে ঢুকল যেন এঘরে জরুরী কোন মিটিঙ চলছে,বিন্দুমাত্র শব্দ হইলেও অনেক ব​ড় হ্মতি হ​য়ে যাবে। আমার বাবা এরকমই,তিনি যখনই আমার ঘরে ঢুকেন চেষ্টা করেন যেন আমার বিন্দুমাত্র ডিস্টার্ব না হ​য়,আর এটাই আমাকে খুব বিব্রত করে।

-কি ব্যাপার?কি পড়?
-কিছু না, গল্পের বই ।
-নাম কি বইয়ের?
-তিন গোয়েন্দা।
-গল্পটা একটু বল তো ।
-ঐযে তিন কিশোর গোয়েন্দা মিলে হিরা চুরি রহস্য উদ্ঘাটন করে।
-তিন গোয়েন্দার মধ্যে তুমি কারে বেশী পছন্দ কর?
- রবিন মিলফোর্ডরে |
-কেন বেশী পছন্দ করো, রবিন কি অনেক বেশী লম্বা?
-না সেরকম কিছুই না,মুসা বেশী লম্বা...আসলে রবিন অনেক কিছু জানে,আর আমার মত বই পড়তে পছন্দ করে।
-সূতরাঙ,মূসা বেশী লম্বা হওয়া সত্তেও যেমন তুমি আরেকজনকে বেশী পছন্দ করো কারন সে অনেক বেশী জানে বলে...মানুষও তেমনি তোমাকে বিচার করবে তুমি কত বেশী জান বা জ্ঞানী বলে,বুঝচ?
-হমম...আব্বু,আমার বইটা শেষের দিকে..এখন পড়ি?
-আচ্ছা,জলদি ঘুমাইও।

ও আমার নামই বলা হয় নাই,আমার ভাল নাম মো: আশরাফুল আলম,যদিও নামটা কিছুটা সেকেলে,কিন্তু নামটা নাকি নানুর দেওয়া।আশরাফুল আলম অর্থ নাকি উচ্চবংশীয় বা সন্মানীয়।আমি বুঝি না নামের সাথে সন্মানের কি সম্পর্ক?? মোড়ের মাথায় যে ভাতের হোটেলটা আছে,উনার দুই ছেলের নাম নাকি রাজা আর বাদশা,পইড়া থাকে ছেড়া প্যান্ট।যাইহোক,নানু শখ কইরা নাম দিছে কি আর করা।তবে নানু অনেক ভালমানুষ...আম্মার কাছে শুনছি যুদ্ধের সময় নাকি খানেরা [পাকী কুত্তারা] নানুরে অসুস্থ শরীরে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত পনের বিশটা গাছ কাটতে বাধ্য করেছিল।সেখান থেকেই নাকি নানুর হাপানীটা বাইড়া গেছিল,ইনহেলার ছাড়া একমূহুর্ত থাকত পারে না|ইনহেলার জিনিসটা আমার কাছে বড়ই আজব কিসিমের লাগে |যাইহোক, নানু আমারে খুব ভালবাসে।নানুদের বাড়িটা অনেকটা লম্বা স্কুলঘরের মত।নানু থাকে একেবারে পশ্চিমের ঘরটাই,নানুর ঘর বেয়ে যে পেয়ারা গাছটা ছিল ওটার পেয়ারা অনেক মিষ্টি হ্য়। নানু কাউরে গাছে উঠতে দেয় না, কিন্তু যখন আমি উঠি তখন নানু বলে...নানুভাই জলদি কর,তোর আম্মা আবার তোরে গাছে দেখলে আমারে বকবে।
-কিরে তুই এখনো ঘুমাস নাই...সকালে ডাকলি তো আবার উঠতে চাবি না,ঘুমাই পড়,আমি লাইট অফ করতেছি|
-হমম।


ঐযে উঠানের শেষ মাথায় বড় শিমুল গাছটার নিচে পাটিতে বসে যিনি কাথা সেলাই করেন উনি আমার দাদী,বয়স প্রায়ই ৭০,কিন্তু বেশ শক্ত সামর্থ্য | আমার দাদী অবসর সময়,কর্মঠ সময়,এককথায় খাওয়া,দাওয়া,ঘুম,নামাজ বাদে তিনি আর একটা কাজই করেন,পান চিবাইতে চিবাইতে কাথা সেলান ।দাদী মনে হয় আগামী সাত প্রজন্মের সবার জন্য কাথার নিশ্চয়্তা দানে বদ্ধ পরিকর ।আমার দাদীর মেজাজটা দাদীর চুলের মতই উস্কখুস্ক ।দাদীর যখন মেজাজ খারাপ হয় তখন তিনি কিছু সময়ের জন্য আম্মাকে বকাঝকা করেন [আমার ধারনা,আম্মা সেটা খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করে,কারন আম্মার মুখ তখন বাচ্চা মেয়েদের মত ঝলমলে দেখাই] ।আম্মার কাছে শুনছিলাম দাদী নাকি সাত ভাইয়ের একটা মাত্র বোন ছিল,এজন্য উনার মেজাজ এত কড়া ।তবে সন্ধায় যখন দাদী আর আম্মা একসাথে বসে টিভি দেখে তখন দুইজনরে আবার দুই বান্ধবীর মত লাগে।
-বৌমা,বাবুরে খাইতে দিবা না? সকাল থেকে না খাওয়াই রাখছো,শরীল না ঠিক থাকলে এত পইড়া কি হইব ??
-দি,মা ।বাবু গোসল কইরা খাইতে আয়।

চলবে.....।

প্রথম পোষ্ট, আপনার কমেন্ট আশা করছি :)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.