নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিচলিত প্রেম।

আশরাফুল আলম সানি

খুব ইচ্ছে করে এভারেস্টের উপর উঠে ভয়ংকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে!কিন্তু এ হারামী দুনিয়া কি সব ইচ্ছে মিটতে দেয়?ওর গৌড়ামির জন্যে আমরা নতুন সূত্র বানিয়ে বলি,সব ইচ্ছে মিটতে হয় না!

আশরাফুল আলম সানি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারমিতা,তোমার জন্য!

০২ রা মে, ২০১৭ রাত ৮:২১


যেদিন ছোট্ট ব্যালকনিটাতে তোমায় দেখেছিলাম,সেদিনের কোনো তারিখ বা বার আমার মনে নেই।আজকাল প্রায়ই দেখা যায়,টিভিঅনুষ্ঠানে বড় বড় সেলিব্রেটি কাপলরা এসে প্রথম দেখা,প্রথম প্রপোজ, প্রথম জর্গা সবকিছুরই তারিখ মুখস্ত বলে দেন।আর উপস্থাপিকা বিশেষণের পর বিশেষণে তাদের ভরিয়ে তুলেন।এদিক থেকে আমরা যে বড়ই পিছিয়ে।কোনো কিছুই মনে নেই শুধু প্রথম অনুভূতির স্মৃতিটুকু ছাড়া।আর মনে রাখবই কী করে বলো,আমরা তো এক ক্লাসে পড়া কোনো বন্ধু ছিলাম না বা পূর্ব পরিচিত কেউ ছিলাম না যে শুভ একটা দিন দেখে প্রপোজ করবো,যেটা মনে রাখতে ডায়েরীতে নোট করা লাগে না।অথবা ইচ্ছামতো রং তুলিতে অপূর্ব কিছু স্মৃতি সাঁজাব!আমাদের সব স্মৃতির ছবিই এঁকেছেন প্রকৃতি নামক এক সত্ত্বা।আর আমরা তো বিখ্যাতো কেউ নয় যে টিভিতে গিয়ে সময় তারিখ বলতে হবে।তবে প্রথম দেখার শুধু একটি ছবি দেখতে পাই মনের গহীনে।

সদ্য ঘুম জাগা এলোচুলা এক তরুণী
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে টবে ঝুলন্ত কিছু বৃক্ষে পানি দিচ্ছে।আমি তাঁকিয়ে আছি। হঠাৎ ক্ষণিকের জন্য,না,ক্ষণিকতরের জন্য চারটি চোখ এক হলো।সঙ্গে সঙ্গে সে ভয়ালো চোখে ভিতরে চলে গেলো।
তারপর কী করে কী হয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট কোনো স্মৃতিও নেই, কোনো ব্যাখ্যাও জানা নেই।শুধু খন্ড খন্ড কিছু ছবি হঠাৎ হঠাৎ স্মৃতিপটে ভেসে উঠে।
প্রথম বেলার স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটা স্মৃতি বার বার আসে।স্মৃতিটা একেবারই শুরুর দিকের।
:আপনি আমার দুটো প্রশ্নের উত্তর দিবেন?(ততদিনে ফোন নম্বর যোগাড় করা হয়ে গিয়েছিল)।
তুমি শান্তস্বরে জানতে চেয়েছিলে "কী প্রশ্ন"।তোমার জানতে চাওয়ার ভঙ্গিতে অনেকটা দমে গিয়েছিলাম।তাও জোর এনে বলেছিলাম
:আপনার কী কখনও ওয়াসরুমে যেতে হয়?
:মানে কী?
:(ক্ষীণস্বরে) মানে আমাদের যেমন যেতে হয়।
তুমি বুঝতে না পেরে চুপ করেছিলে।আমি আবার বলি........
: আমাদের যেভাবে ঘুম খেকে উঠলে মুখে গন্ধ হয়,ব্রাশ করে দাঁত পরাষ্কার করতে হয়।আবার নিয়মিত গোসল করতে হয়।প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়,এসব কি আপনাকে করতে হয়?

তুমি অঝোরে হেসেছিলে।আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম,যেনো সিলেটের সেই পাহাড়ি বর্ষণ অবিরল ঝরছে।
আচ্ছা,তুমি কী আমায় খুব বোকা ভেবেছিলে তখন??

এ জীবনে একটা উপহার দিতে পারি নি তোমায়।অর্থাভাব নয়,বাঁধা হয়েছিল তোমার তীব্র ব্যাক্তিত্ব।প্রায়ই উপহার কিনতাম,উপহারপত্রে নাম লিখে রেখে দিতাম আমার বাসায়।এক বইমেলায় ২৮ দিনে ২৩ টা বই কেনা হয়ে গিয়েছিল।প্রতিটা বই কিনতাম,লেখককে বলে তোমার নামে অটোগ্রাফও লিখিয়ে নিতাম।কিন্তু বইমেলা থেকে আসার পর মনে হতো এ বই তোমায় দেয়া চলে না।পরদিন নতুন আরেকটা কিনতাম।কিন্তু সেটার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার মনে হতো।ফলে নিজের বুকসেল্ফেই তুলে রেখে দিতাম।

আমি প্রায়ই ভাবি,দুনিয়ার ক্লান্তি যদি কখনও আমায় চেপে ধরে আর তখন আমার হৃদয়াবেগ নামক বৃক্ষটির কলিগুলো ফুল হয়ে ফোটার জন্য যথেষ্ট রস না পায়,তবে কি অর্ধ প্রষ্ফুটিত ফুলের পূজা তুমি পায়ে ঠেলে দেবে।
মিস্ ফজিল্লাতুন্নেসার প্রেমলাভে ব্যর্থ হয়ে কাজী মোতাহের হোসেনকে লেখা এক চিঠিতে নজরুল লিখেছিলেন,"আমার ব্যথার রক্তকে রঙিন খেলা বলে উপহাস যিনি করেন,তিনি হয়তো দেবতা।আমার ব্যথা-অশ্রুর বহু উর্ধ্বে।আমি মাটির নজরুল হলেও সে দেবতার কাছে আর অশ্রুর অঞ্জলি নিয়ে যাব না।"নজরুল মাটির হলে আমি হয়তো পাতালের। আর নজরুলের মতো অহংকার কি আমার করা সাঁজে বলো?
আর পূজা কি মানুষ সর্বদা স্বইচ্ছাতেই দেয়?পূজা দিতে দিতে মানুষ কখন যে পূজার প্রেমে পড়ে যায়,তা মানুষ বুঝতেই পারে না।পূজা তখন অজ্ঞাতসারেই প্রতিদিনকার অভ্যাসে পরিণত হয়।আমার ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটেছে।তোমার পূজা ছাড়া কি নিয়ে বাঁচব বলো??
আচ্ছা তালতলার সেই রেস্টুরেন্টটার কথা মনে আছে তোমার?

সেই স্মৃতিচারণ খানিকটা করেই এ লেখা শেষ করব।সেদিন কোনো দিবস ছিলো না।ফোন দিয়েই তুমি তোমার চিরায়ত অভ্যাসমতো বললে,"তুমি চলে এসো"!আমিও আমার অভ্যাসমতো বললাম,"আমার মন তো কাঁদছে না"।কাকতালীয় ভাবেই সেদিন অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল।হয়তো ওপারে থেকে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ তাঁর প্রতি প্রগাঢ় ভালোভাসার প্রতিদানস্বরূপ স্রস্টার কাছে সে বৃষ্টি চেয়ে এনেদিয়েছিল,শুধু তোমার আর আমার জন্য,হয়তো বা তার কোনোটাই নয়।তবে বৃষ্টিযাপন আমরা ভালোভাবেই করেছিলাম।সারা রাস্তাই মানুষ ছিলো না।

খিলগাঁও রেলগেইটের কাছে যখন পৌঁছলাম,তখন কিছু রিক্সাওয়ালা,আর কিছু ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে দেখলাম।ততক্ষণে আমরা কাক ভেজা।আমি ভয় পাচ্ছিলাম,হয়তোবা তারা অন্যভাবে তাঁকাবে, হয়তোবা পিছনদিক থেকে কিছু উল্টাপাল্টা বলবে,তখন আমি রেগে গিয়ে কিছু করে বসব।আর তুমি তৎক্ষণাত চলে যাবে।দিনের পর দিন যাবে কথা বলবে না আমার সাথে।তারপর হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে বলবে,"আমার কালো টবটা ভেঙ্গে গেছে,দোয়েল চত্বর থেকে একটা টব এনে দিয়ে যাও তো"।ব্যাস!আমার রক্ত চলাৎ করে উঠবে,দীর্ঘ বিরহের ইতিতে।কিন্তু প্রকৃতির অপূর্ব করুণায় সেদিন তার কিছুই ঘটেনি।কিছু বলা তো দূরের কথা,কেউ তেমনভাবে তাকায়ওনি।এদেশের যুবসমাজের প্রতি এক অপূর্ব কৃতজ্ঞতায় আমার মন ছেঁয়ে গিয়েছিল।আচ্ছা ভয় কি খানিকটা তুমিও পাওনি?আমি রেগে গেলে কী পরিস্থিতি হবে অন্তত সেটা ভেবে।হয়তো পেয়েছিলে,হয়তোবা পাও নি।যখন তালতলায় পৌঁছলাম,তখন দুজনই খানিকটা সংকোচে ভুগছি,ভেজা কাঁপড়ে ঢুকব কিনা!ঠিক তখনই দেখলাম আমাদেরই মতো আরেকটা তরুণ তরুণী রেস্টুরেন্টের দিকে আসছে।তারাও কাক ভেজা।কিন্তু তাদের দুজনের মাথার উপরেই আড় করে একটা ছাতা ধরা ছিল।

তাদের ভাবভঙ্গি দেখতে অনেকটা আশিকি ২ মুভির সেই বিখ্যাতো দৃশ্যের মতো।এখানে কোর্টের বদলে ছাতা,এটাই প্রার্থক্য।
ঠিক তখনি তুমি আলতো করে আমার হাত স্পর্শ করলে।প্রথম স্পর্শের অনুভুতি আমার অপূর্ণ হৃদয় পূর্ণতায় ভরিয়ে দিলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.