নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কাছে জীবন মানে ক্ষণিক সুখে অপরকে ভুল না বোঝা।

অসিত কর্মকার সুজন

আমার আকাশে আমি ধ্রুবতারা।

অসিত কর্মকার সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধুতুরা কাহন

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৯






তারপর, একদিন জল ভরা চোখে স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ালেন ছমিরন বিবি। আস্তে করে বললেন, তুমি আর একডা নিকা কর। বলতে গিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল তাঁর। দুগণ্ড বেয়ে অবিরাম পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।

তবু স্বামীকে নিজ হাতে সাজিয়ে দিলেন ছমিরন বিবি।হাতে মেহেদি দিলেন। মাথায় পাগড়ি পরালেন। ঘরটা লেপে মুছে নিয়ে নিজ হাতে বিছানা পাতলেন স্বামী আর তাঁর নতুন বিয়ে করা বউ-এর জন্য। আদর করে হাত ধরে এনে শোয়ালেন তাদের। নতুন বউ-এর দিকে তাকাতে সাহস পেলেন না ছমিরন বিবি। ছুটে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ছুরির তীক্ষ্ণ ফলা দিয়ে যেন তখন কলজেটা কুটিকুটি করে কাটছিলো তাঁর। নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারলেন না তিনি। পুকুর পাড়ে ধুতুরা ফুলের সমারোহ। গুনে গুনে চারটে ফুল হাতে নিলেন। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো মুখে পুরে দিয়ে নীরবে ঘুমিয়ে পড়লেন। দীঘির পাড়ে উঁচু ঢিপির মতো তাঁর কবরটা আজও চোখে পড়ে সবার আগে

বিলুপ্ত প্রায় এই ধুতুরা ফুলের কথা বলতে গেলে জহির রায়হান এর কাল জয়ী উপন্যাস " হাজার বছর ধরে ; এর কথা আগে আসে আমার মাথায় । ধুতুরা ফুলকে ভুলে গেলে অথবা কেও না চিনলেও এই উপন্যাস পড়লে নাম টা শুনে মনে আসবে এই ভেষজ ও বিষাক্ত ফুল ধুতুরার কথা । তাই আজকে এই ধুতুরা কাহন ।








গ্রামবাংলার ঝোপ – ঝাড়ে যে গাছটিকে ভয় বিষের চেয়েও কম নয় এর নাম‘ ধুতুরা’ । এ গাছ খেলে মানুষ অজ্ঞান ও পাগল হয় তা কারো অজানা নয় । জানা যায়, এর বৈজ্ঞানিক নাম ধুতুরা মিটিল । ধুতুরার ট্রোপেন এলকালোডিস নামের বিষক্রিয়ায় মানুষ বা পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । ধুতুরা মূলত : গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ । গ্রামাঞ্চলের ঝাড়- জঙ্গলে কয়েক কদম হাাঁটলে হয়তো এর দেখা পাওয়া যাবে । আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রাচার্য চিরঞ্জীব বনৌষধিতে ধুতুরার ফুল , ফল , পাতা , কান্ড , মূল সবই বিভিন্ন ভেষজ প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন । এর বীজ থেকে চেতনানাশক পদার্থ তৈরি করা হয় । এর সাধারণ গুণ কটুরস , উষ্ণবীর্য, মূর্ছাকারক , ভ্রমকারক, নিদ্রাকারক , বায়ুবর্ধক , ক্লান্তিবর্ধক , বেদনানাশক , মূত্রকর এবং জ্বর , কাশ , শ্বাসকষ্ট , চুলকানি , পাঁচড়া , ব্রণ নাশক । ধুতুরা পাতার রস মাখলে উকুন মরে যায় । রস ব্যথা ফুরায় দিলে উপশম হয় । চর্মরোগ , টেউমার , অর্শসহ বহু রোগের ওষুধ ধুতুরা। ১৮০৫ সালে হোমিওপ্যাথিকে হ্যানিমান পাকা ধুতুরা ফলের বীজ থেকে টিংচার প্রস্তুতের মাধ্যমে সুপরীক্ষিত ওষুধ তৈরি করেন । এই ওষুধ উন্মাদ রোগেই বেশি ব্যবহৃত হয়ে আসছে । চৈনিক ভেষজ চিকিৎসায় পঞ্চশটি প্রধান উদ্ভিদের একটি ধুতুরা ।









বাংলাদেশের প্রখ্যাত ভেষজ চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক জানান , লোকালয়ের ঝোপ- ঝাড় ধ্বংস করে আবাদী জমি তৈরির ফলে অন্যান্য মূল্যবান গাছের মত ধুতুরাও হারিয়ে যেতে বসেছে । মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) : নতুন বাজার শ্মশান সংলগ্ন জঙ্গলে ধুতুরা গাছ Solanaceae গোত্রের এক প্রকার উদ্ভিদ। বিজ্ঞানী লিনিয়াস এই গাছটি সম্পর্কে ১৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে একটি সাধারণ ব্যাখ্যা করেন এবং নামকরণ করেন Dutura metel। এই গাছ উচ্চতায় প্রায় ২-৬ ফুট হয়। এর কাণ্ড কোমল, গোলাকার মসৃণ এবং সবুজ। এর পাতাগুলো সরল। পাতার বিন্যাস একান্তর। এর পাতা ডিম্বাকার এবং জালিকা শিরাযুক্ত। পাতাগুলো ৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪ ইঞ্চি চওড়া। এই গাছের ফুল এককভাবে ফোটে। এর ফুল সম্পূর্ণ, আকারে বড় এবং রঙ সাদা। ফুলগুলো লম্বায় প্রায় ৩-৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ফুলে বৃত্তাংশ ৫টি যুক্তাবস্থায় থাকে। ফুলের পাপড়ি সংখ্যা ৫টি। এর পাপড়িগুলো সংযুক্ত হয়ে একটি ফানেলের আকার তৈরি করে। ফুলের পুংকেশর থাকে এবং পাপড়ির সাথে যুক্ত থাকে। পরাগধানীগুলো বেশ লম্বা হয়। এর গর্ভপত্র সংখ্যা ২টি। এর অমরা স্ফীত এবং মাতৃ-অক্ষের সাথে তীর্যকভাবে যুক্ত থাকে। এর ফল গোলাকার, গায়ে কাঁটা থাকে। ফলের রঙ ফিকে সবুজ। এর বীজ লঙ্কা বীজের মতো।ধুতুরার বীজ থেকে চেতনানাশক পদার্থ তৈরি করা হয়। ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে। চৈনিক ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে বর্ণিত পঞ্চাশটি প্রধান উদ্ভিদের একটি এই ধুতুরা। এই গাছকে সাধারণভাবে বিষাক্ত হিসাবে পরিচিত। কিন্তু আয়ুর্বেদে এই গাছের পাতা ফল, মূল ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কুকুরের কামড়ের বিষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধুতুরা গাছের মুলের রস পান করানোর বিধান আছে। এর পাতার রস কৃমি নাশক। অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য অস্বস্তি হলে এর বীজ খাওয়ার বিধান দেওয়া হয়। স্তনের ব্যাথা প্রশমনে ধুতুরা পাতার প্রলেপ মাখানোর বিধান আছে।






সাবধানতা : অভিজ্ঞ কবিরাজের পরামর্শ ছাড়া এই গাছের কোনো অংশই খাওয়া নিষিদ্ধ। বিশেষ করে এর কাঁচা ফল অত্যন্ত বিষাক্ত। অতিরিক্ত কাঁচা ফল খেলে মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতি করে। এতে বিপজ্জনক মাত্রার tropane alkaloids নামক বিষ আছে। এই গাছের বিষক্রিয়ায় মানুষ বা পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই কারণে অনেক দেশেই ধুতুরার উৎপাদন, বিপনন ও বহন আইনত নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে প্রতি বছর বহু লোক ধুতুরা বিষে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।


সূত্র : ব্যবহারিক জীববিজ্ঞান। গাজী আজমল ও গাজী আসমত।

ছবি ; সংগৃহীত





মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০৮

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: একাদশ শ্রেণির বইতেই আছে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০৯

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৪:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:


সাধারণ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০৮

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০০

আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ভালো পোস্ট। পড়ে অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ ভাইয়ু। :)

৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:১০

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.