নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কাছে জীবন মানে ক্ষণিক সুখে অপরকে ভুল না বোঝা।

অসিত কর্মকার সুজন

আমার আকাশে আমি ধ্রুবতারা।

অসিত কর্মকার সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আচারের আত্মকাহিনী

২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৪

টক ঝাল মিষ্টি আমস্বত্ত বাঙালীর কাছে এক টুকরো ভালোবাসা বা আবেগ ... সেই আবেগের রেসিপির সাথে আজকে থাকছে কিছু জানা-অজানা তথ্য 





উপকরণ : 

ক) কাঁচা আম ২ কেজি, চিনি ৫০০ গ্রাম, সিরকা ১  কাপ, পাঁচফোঁড়ন ১ চা চামচ,  লবণ সামান্য।  

খ)   সরষে তেল ১ কাপ, আদা কুঁচি  ১/২ কাপ,  ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা  কুঁচি ১ কাপ,  চিলি ফ্লেক্স ২ চা চামচ,  ১/২  চা চামচ  পাঁচফোঁড়ন ও ৪ টি তেজপাতা  টালা গুড়ো। 

প্রণালী :

কাঁচা আমের খোসা ফেলে সামান্য পানি দিয়ে ভাপিয়ে ঠান্ডা  করে পাল্প আলাদা করে রাখুন  । প্যানে এক কাপ সরষে তেল দিয়ে তাতে পাঁচফোঁড়ন , সিরকা ও  চিনি দিন । চিনি  গলে এলে আমের পাল্প ও সামান্য লবণ দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকুন ৷ কিছুটা ঘন হয়ে এলে একে একে বাকী সব মশলা দিয়ে নাড়তে থাকুন। আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে  বড় ট্রে-তে তেল মেখে ছড়িয়ে ৩/৪ দিন রোদে রেখে লম্বা / পছন্দমতো আকারে কেটে  সংরক্ষণ করুন ( আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত রেসিপি )।



পৃথিবীর প্রাচীনতম খাবারগুলোর মধ্যে এখনো যে খাবারগুলো মানুষ আগ্রহ নিয়ে খেয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আচার। প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত টক, মিষ্টি, ঝাল আর মশলাদার স্বাদে অনন্য এই খাবারটি তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে। মূলত, ফলমুল, সব্জিসহ বিভিন্ন খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য এই খাবারটির উদ্ভব ঘটে পৃথিবীতে। ধারণা করা হয়, এই খাবারটির উদ্ভব ঘটে ভারতীয় উপমহাদেশে। তবে এটাও ধারণা করা হয়, আজ থেকে ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মেসপটেমিয়ান সভ্যতার সময় থেকে মানুষ আচার খাওয়া শুরু করে। এটা উল্লেখ করতে হয় যে, বিভিন্ন ফরম্যাটে আচারের ইতিহাস মোটামুটি ৪,০০০ বছরের পুরাতন।সুলতানী আমলে মানসিংহের হাত ধরে বাংলায় প্রবেশ ঘটে আচারের।ঐতিহাসিকভাবে আচার প্রচলিত ছিল বনিক ও যাযাবরের মধ্যে, তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বানিজ্যের জন্য যেত, সঙে নিত আচার ।কলম্বাস আমেরিকা অভিজানের সময় আচার সাথে নিত এবং সৈনিকদের আচার খাওয়াত ভিটামিন সি র অভাব মিটিয়ে স্কার্ভি রোগ থেকে বাঁচিয়েছিল ফলে তারা অভিজানে সফল হয়েছে।
শোনা যায়, রাণী ক্লিওপেট্রা আচার খেতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন, আচার তার সৌন্দর্য রক্ষায় সহায়তা করে। এবার ভাবুন এই আচারের মাহাত্ম্য ।


দক্ষিণ এশিয়ার বাংলা, হিন্দী, উর্দূ, পাঞ্জাবীসহ বিভিন্ন ভাষায় এটি আচার নামেই পরিচিত। স্থানীয় ভাবে পাওয়া ফলমূল এবং সব্জির উপর নির্ভর করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের এবং স্বাদের আচার তৈরি হয়।দক্ষিণ এশিয়ায় সবচাইতে বেশি এবং বিভিন্ন ধরণের আচার তৈরি হয় যে ফলটি দিয়ে সোট হচ্ছে আম। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নানান জাতের আম উৎপন্ন হয়। এর পরেই আছে লেবু, আমড়া, জলপাই, আমলকি, তেঁতুল, বড়ই/ কুল, চালতা, আনারস, কামরাঙ্গা ইত্যাদি টক জাতীয় ফল। সব্জির মধ্যে শসা, গাজর, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, টমেট, বরবটি ইত্যাদি অন্যতম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এইসব ফল এবং সব্জি দিয়ে আচার তৈরি করা হয়।


দক্ষিণ এশিয়ায় সবচাইতে বেশি এবং বিভিন্ন ধরণের আচার তৈরি হয় আম দিয়েবাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর আম উৎপন্ন হয়। সে কারণে ওই অঞ্চলে আমের আচার উৎপাদন হয় বেশি। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের নানা ধরণের আমের আচার তৈরি হয় রাজশাহী অঞ্চলে। শুধুমাত্র কাঁচা আম দিয়ে আচার তৈরি করা হয়। পুরো বাংলাদেশেই মোটামুটি বড়ই বা কুল উৎপন্ন হয়। জনপ্রিয় আচারের মধ্যে তাই বড়ইর আচার অন্যতম। কাঁচা এবং শুকনো দু’ধরনের বড়ই দিয়েই আচার তৈরি করা হয়। গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরমে বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত আচার খেয়ে থাকে। তবে কমবেশি সারাবছরই আচার খাওয়া হয়- খাবারের স্বাদ বাড়াতে।বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে সাতকড়া নামে একধরণের লেবু জাতীয় ফল জন্মে। এই সাতকড়ার আচার অসাধারণ সুস্বাদু। এই আচারের সাথে গরুর মাংসের তরকাড়ি অতি উপাদেয় খাবার। এই অঞ্চলে নাগা মরিচ নামে একধরণের মরিচ উৎপন্ন হয়- যেটি প্রচন্ড ঝাল যুক্ত। এই ঝাল মরিচের আচারও তৈরি হয় এই অঞ্চলে। উল্লেখ করা দরকার, সিলেট অঞ্চলের সাতকড়া এবং নাগা মরিচের আচার দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে বিশেষত ব্রিটেনেও ভীষণ জনপ্রিয়।

এবার দেখে নেয়া যাক আচার তৈরির অন্যান্য উপাদানগুলো কী? ফল এবং সব্জি ছাড়া আচার তৈরির অন্যতম উপকরণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— খাবার তেল, সিরকা, বিভিন্ন ধরণের মসলা। তেলের উপকরণের ভিন্নতার কারণে আচারের স্বাদের ভিন্নতা তৈরি হয়। অর্থাৎ সরিসার তেল দিয়ে আচার বানালে এক ধরণের স্বাদ হবে। আবার সয়াবিন কিংবা অলিভ অয়েল দিয়ে আচার বানালে অন্যরকম স্বাদ হবে। একই ভাবে মসলার উপকরণের ভিন্নতাও আচারের স্বাদের ভিন্নতার কারণ।
আসুন আচার প্রস্তুত প্রণালী দেখে নেয়া যাক।ফল কিংবা সব্জি যা দিয়েই আচার বানানো হোক না কেন প্রথমে সাধারণত এগুলোতে থাকা পানি শুকিয়ে নেওয়া হয় রোদে শুকিয়ে কিংবা এগুলো কেটে নিয়ে মসলা মাখিয়ে অথবা পানিতে সিদ্ধ করে তারপর রোদে শুকিয়ে। তারপর এগুলোতে মসলা মাখিয়ে তেলে বা সিরকায় চুবিয়ে বয়ামে রাখা হয়। কাঁচের বয়ামে আচার রাখা ভালো। এতে আচার দীর্ঘ দিন ভালো থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে(নিউইয়র্ক) একটা দিন আছে আচার দিবশ "১৪ নভেম্বর "  

আসুন এবার আচার সংরক্ষনের উপায়গুলো জেনে নেই
প্রথমেই বলে রাখি, সিরকা ও সোডিয়াম বেনজোয়েট দিলে আচার দীর্ঘ দিন ভালো থাকে।
পানি ব্যবহার করবেন না। পানি ব্যবহার করলে আচার তারাতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
হাত দিয়ে আচার নাড়বেন না, চামচ ব্যবহার করুন। চামচ ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখুন চামচে যেন পানি না থাকে।
কাঁচের বয়ামে আচার ভালো থাকে।মাঝে মাঝে আচার রোদে দিন।
তেলে আচার ডুবিয়ে রাখলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
তেল কম হলে তা গরম করে ঠান্ডা করে ব্যবহার করুন, এতে গন্ধ হবে না।
চুনের পানি বা ফিটকিরি গোলানো পানিতে আম ভিজিয়ে রাখলে আচার করার সময় আম ভেঙ্গে যায় না।
যাদের আচার রোদে দেওয়ার মতো জায়গা নেই তারা নিশ্চিন্তে সেটিকে ডিপফ্রিজে রেখেদিন। সেক্ষেত্রে সিরকা ও সোডিয়াম বেনজোয়েট না দিলেও চলবে।

এই পদ্ধতিগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সংস্কৃতিতে আচার তৈরি এবং সংরক্ষনের বিভিন্ন উপায় আছে।
মূলত, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতেই আচার তৈরি এবং রক্ষানাবেক্ষণ করে থাকে। পৃথিবীর প্রাচীনতম আচারের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় শসার তৈরি আচারের কথা।

ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২০৩০ সালে মেসপটেমিয়ানরা শসার আচার তৈরি করেছিলো তাদের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতেই।বলা হয়ে থাকে, আচার ছাড়া ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করতে পারতো না। ১৪৯২ সালের আমেরিকা অভিযানে কলম্বাস তার নাবিকদের রেশন হিসেবে আচার দিতো। এই আচার তাদের ভিটামিন সি এর অভাব মিটিয়ে স্কার্ভি রোগের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলো।শুধু ফল কিংবা সব্জি নয়। বিভিন্ন ধরণের মাংস, মাছ এবং ডিমেরও আচার তৈরি করা হয় এগুলোকে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য। বাংলাদেশে গরুর মাংস খাবারের একটা দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। গরুর মাংস আচার বানিয়ে দীর্ঘদিন পরে খাবারের একটা প্রচলনও আছে এই দেশে। এছাড়া চীনে ডিমের আচার, স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে হাঙ্গরের মাংস দীর্ঘদিন পরে খাওয়া হয় মূলত আচার বানিয়ে

রেসিপি ও ছবি ঃ অসিত কর্মকার সুজন
 আচার সম্পর্কীত তথ্য ঃ সংগৃহীত

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

বিজন রয় বলেছেন: বাহ!
আজই চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৫

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

২| ২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:২৪

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমার রেসিপি আরও সহজ! বাজারে এত কিছু কিনতে যাওয়ার পর, এত কিছু না কিনে শুধু আমসত্ব কিনে নিয়ে চলে আসো, পারলে একটু বিটলবন। ব্যাস, বসে বসে খাও..... এতো বানা-বানি কে করতে যাবেরে বাপু :P

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৬

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: আপনি খুব মজার মানুষ বুঝা যাচ্ছে । হুম আপনার রেসিপি আসলেই সহজ ।

৩| ২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:২১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আচারের ইংরেজি প্রতিশব্দ কি?

০৬ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১৩

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: যতদূর জানি আচারের ইংরেজি প্রতিশব্দ পিকলস বলা হয়ে থাকে । তবে উপমহাদেশের আচার এবং পাশ্চাত্যের পিকলস বা জারক কিন্তু আসলে এক নয় । যদিও দুটোর উদ্দেশ্য হলো সংরক্ষণ করা ।

৪| ২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:২১

ইসিয়াক বলেছেন:

বাহ! ইচ্ছে তো হচ্চে আজই বানাবো কিন্তু কাঁচা আম পাওয়া গেলে হয়।
চমৎকার পোস্ট।

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৭

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: হুম বানালে জানাতে ভুলবেন না ক্লিন্তু ভাই ।

৫| ২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আচারের নাম শুনেও জিবে জল আসে

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৮

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: কথা সত্য।

৬| ২৭ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: আচার বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ কত্রে খিচুড়ির সাথে অনেকের আচার লাগেই। অবশ্য আমি আচার খাই না।

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৯

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: খিচুড়ির সাথে খেতে আসলেই মজা আচার ।

৭| ২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:১৫

নৃ মাসুদ রানা বলেছেন: বাহ! পুরোপুরি...

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৯

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই ।

৮| ২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ৮:২৪

আজাদ প্রোডাক্টস বলেছেন: আচার আমার খুব ভালো লাগে

০১ লা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১০

অসিত কর্মকার সুজন বলেছেন: আচার পছন্দ করে না এমন লোক খুব কম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.