হাতছানিতে খোলা চিঠি

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩

হাতছানিতে খোলা চিঠি

বরাবর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল



স্যার, সালাম নেবেন। আমি আপনার একজন পুরনো ভক্ত পাঠক। আপনার ইকারাস, জলমানবের মত বইগুলো একসময় খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। বলা যায় গোগ্রাসে গিলেছি। ক্লাসের সব বন্ধুরা মিলে কাড়াকাড়ি করে পড়েছিলাম ‘আমি তপু’। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি অনেকেই। আমি অবশ্য কাঁদিনি। আমার চোখ দিয়ে পানি খুব কম পড়ে। তবে বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠেছিলো তপু নামের অচেনা একটি ছেলের দুঃখে। এরপর আপনার আরো অনেক বই পড়েছি। সবগুলোর নামও মনে করতে পারিনা। বড় হওয়ার সাথে সাথে, বুঝতে শেখার সাথে সাথে আপনার অনেক বই পড়ে খটকা লাগতে শুরু করলো। এখানে এই কথাটা... কোন প্রয়োজন ছিলো? আগে পরের সাথে কেমন বেমানান বেখাপ্পা। ঠিক ভাবে মেলেওনি। তবু কথাটা আপনাকে বলতে হয়েছে। কেন স্যার? কারণ খুঁজে পাইনি।

আমার একজন আত্মীয় আছেন- শাবিপ্রবিতে পড়েছেন, আপনার ছাত্র ছিলেন, একবার বললেন, ওখানকার ছাত্রমহলে নাকি আপনার সম্পর্কে প্রচলিত, আপনি প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার একজন পেইড এজেন্ট। ভিনদেশী লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করে আপনার দরবারে। সিন্নি দিয়ে যায়। ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি কথাগুলো। কিন্তু দিনদিন আপনার লেখায় মতলবি অংশগুলো বেড়েই চলেছে। আপনার আজকালকার উপন্যাসগুলোতে সাহিত্যের চেয়ে মতলবই বেশি দেখা যায়। কেন স্যার? সিন্নির পরিমাণ কি বেড়ে গেছে? নিজের মতামত জানানোর অধিকার নিশ্চই সবার আছে। কিন্তু মনের কথাটা সরাসরি বলুন! এত ভেক ধরা কেন? এটা কিন্তু ঠিক না স্যার। মোটেই ঠিক না।

সম্প্রতি আপনি মুখোশ খুলতে শুরু করেছেন। এটা একটা ভালো সংবাদ। কিন্তু সেখানেও বুদ্ধিজীবী ভেক ধরে রাখার একটা চেষ্টা আছে। কিন্তু স্যার দালালির ভাষা বুঝতে সময় লাগে না। বুদ্ধিবৃত্তিক ভিন্নমতের ক্ষেত্র আছে। কিছু জায়গা আছে, যেখানে ন্যায় এবং অন্যায় খুব স্পষ্টভাবে আলাদা হয়ে যায়। ৫ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগ যা করেছে, সেটা সারা পৃথিবীর চোখে অন্যায়। বাংলাদেশের সব মতের সব দলের মানুষের চোখে অন্যায়। কিন্তু আপনি এই ঘৃণ্য কাজটিকে শুধু নির্লজ্জভাবে সমর্থন করলেন তাই নয়, আপনার সমগোত্রীয় সুশীলবাবুদের বাঁশেরকেল্লা ‘ওয়েবসাইটে’র অনুসারী বানিয়ে ফেললেন। কোন প্রয়োজন ছিল স্যার! কোন প্রয়োজন ছিলো না। যেসব সুশীলদের উপর আপনি খেপেছেন, যারা এই নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন, তাদের কেউ কি বিএনপি বা জামাতকে সমর্থন করেন? আপনি ভালো করেই জানেন তারা আপনার মতই আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু চক্ষুলজ্জার কিছুটা এখনো তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। আপনি সেইটুকুও ঝেড়ে ফেলে দিগম্বর হয়ে গেছেন। সিন্নি ঠিক রাখতে হবে তো!



( Faruk Ferdous)

১ টি +০/-০